প্রতিদিন টেলিফোন করেই ধরা খায় মাজেদ

কলকাতায় থাকা অবস্থায় প্রতিদিন দুটি নম্বরে নিয়মিত ফোন করে বাংলাদেশে কথা বলতো বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদ। নম্বর দুটি হলো +৮৮০১৫৫২৩৮৭৯১৩ ও +৮৮০১৭১১১৮৬২৩৯। কলকাতার ‘বর্তমান’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ঘাতকের ডেরা’ নামের বিশেষ প্রতিবেদনের শেষ পর্বে এসে প্রতিবেদক সুজিত ভৌমিক বলছেন, সম্ভবত বাংলাদেশে নিয়মিত ফোন করতে গিয়েই ধরা পড়েছে মাজেদ। বর্তমান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অনুমান বাংলাদেশে থাকা মাজেদের পরিবারের সদস্যদের ফোনে নিয়মিত আড়ি পাততো গোয়েন্দারা। ফলে মাজেদ কোথায় লুকিয়ে রয়েছে, সেই তথ্য সহজেই জেনে যায় তারা। এরপরই তাকে গ্রেফতারের নকশা তৈরি হয়।

বর্তমান পত্রিকায় বলা হয়েছে, কলকাতা শহরে মাজেদের অবস্থান জানতে খুব সম্ভবত ভারতের কোন গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিয়েছিল বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। যদিও এ নিয়ে দুই দেশের কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তদন্তে জানা গেছে, কলকাতায় মাজেদ যে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করত, তার একটিও নিজের নামে ছিল না, স্ত্রীর নামে ছিল। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন হওয়ার পর দেশ ছাড়ে মাজেদ। সেই সময় ভারত হয়ে লিবিয়া ও পাকিস্তানে যায় সে। তবে সুবিধা করতে না পারায় সেখান থেকে কলকাতায় চলে আসে। তার পার্ক স্ট্রিটের ভাড়া বাড়ি থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। গোয়েন্দারা এখন খতিয়ে দেখছে সেখানে মাজেদ কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাহায্য পেয়েছিল কিনা।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ওই পাসপোর্ট বানানো হয়েছে। নিয়ম মেনে পার্ক স্ট্রিট থানা পুলিশ ভেরিফিকেশন করার পর পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে হাওড়া উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের সব কাগজপত্রই ছিল মাজেদের। আধার কার্ডও বানিয়েছে অনায়াসে। তার আধার কার্ড নম্বর হলো ৭৯৪১ ৯৫৯১ ২৮৬৪। এছাড়া ২০১২ সালে মাজেদ সচিত্র ভোটার কার্ড বানিয়েছিল। মাজেদের স্ত্রী সেলিনা ওরফে জরিনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানা যায়, ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে চলতো মাজেদ। এমনকি খেতে দিতে সামান্য দেরি হলে রেগে আগুন হয়ে যেত সে।

মাজেদ নিখোঁজ রহস্যের তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয় বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বেরনোর পর তাকে কেউ জোর করে অপহরণ করেনি। তেমন হলে চিৎকার কিংবা ধস্তাধস্তির প্রমাণ থাকত। তাছাড়া একজন হলেও প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যেত। এর মানে মাজেদ স্বেচ্ছাতেই ওই চার লোকের সঙ্গে গিয়েছিল। গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পৈত্রিক বাড়ি ভোলার স্থানীয় জনগণ বঙ্গবন্ধুর খুনির মরদেহ তাদের মাটিতে দাফন করতে আপত্তি তোলায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত ৮ এপ্রিল মৃত্যুর পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চায় আবদুল মাজেদ। প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি বাতিল করে দেয়ার পর সেই চিঠিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। কারাবিধি অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম চলে এবং শনিবার রাত ১২টা ১মিনিটে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলায় মোট ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হলো। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকরের আগেই ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা যান আজিজ পাশা। পলাতক রয়েছেন খন্দকার আবদুর রশিদ, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেহ উদ্দিন।

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০ , ৩ বৈশাখ ১৪২৭, ২১ শাবান ১৪৪১

প্রতিদিন টেলিফোন করেই ধরা খায় মাজেদ

সংবাদ ডেস্ক |

কলকাতায় থাকা অবস্থায় প্রতিদিন দুটি নম্বরে নিয়মিত ফোন করে বাংলাদেশে কথা বলতো বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদ। নম্বর দুটি হলো +৮৮০১৫৫২৩৮৭৯১৩ ও +৮৮০১৭১১১৮৬২৩৯। কলকাতার ‘বর্তমান’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ঘাতকের ডেরা’ নামের বিশেষ প্রতিবেদনের শেষ পর্বে এসে প্রতিবেদক সুজিত ভৌমিক বলছেন, সম্ভবত বাংলাদেশে নিয়মিত ফোন করতে গিয়েই ধরা পড়েছে মাজেদ। বর্তমান পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের অনুমান বাংলাদেশে থাকা মাজেদের পরিবারের সদস্যদের ফোনে নিয়মিত আড়ি পাততো গোয়েন্দারা। ফলে মাজেদ কোথায় লুকিয়ে রয়েছে, সেই তথ্য সহজেই জেনে যায় তারা। এরপরই তাকে গ্রেফতারের নকশা তৈরি হয়।

বর্তমান পত্রিকায় বলা হয়েছে, কলকাতা শহরে মাজেদের অবস্থান জানতে খুব সম্ভবত ভারতের কোন গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিয়েছিল বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। যদিও এ নিয়ে দুই দেশের কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তদন্তে জানা গেছে, কলকাতায় মাজেদ যে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করত, তার একটিও নিজের নামে ছিল না, স্ত্রীর নামে ছিল। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন হওয়ার পর দেশ ছাড়ে মাজেদ। সেই সময় ভারত হয়ে লিবিয়া ও পাকিস্তানে যায় সে। তবে সুবিধা করতে না পারায় সেখান থেকে কলকাতায় চলে আসে। তার পার্ক স্ট্রিটের ভাড়া বাড়ি থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। গোয়েন্দারা এখন খতিয়ে দেখছে সেখানে মাজেদ কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাহায্য পেয়েছিল কিনা।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক জানিয়েছে, ২০১৭ সালে ওই পাসপোর্ট বানানো হয়েছে। নিয়ম মেনে পার্ক স্ট্রিট থানা পুলিশ ভেরিফিকেশন করার পর পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে। পাসপোর্টে জন্মস্থান হিসেবে হাওড়া উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের সব কাগজপত্রই ছিল মাজেদের। আধার কার্ডও বানিয়েছে অনায়াসে। তার আধার কার্ড নম্বর হলো ৭৯৪১ ৯৫৯১ ২৮৬৪। এছাড়া ২০১২ সালে মাজেদ সচিত্র ভোটার কার্ড বানিয়েছিল। মাজেদের স্ত্রী সেলিনা ওরফে জরিনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানা যায়, ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে চলতো মাজেদ। এমনকি খেতে দিতে সামান্য দেরি হলে রেগে আগুন হয়ে যেত সে।

মাজেদ নিখোঁজ রহস্যের তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয় বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বেরনোর পর তাকে কেউ জোর করে অপহরণ করেনি। তেমন হলে চিৎকার কিংবা ধস্তাধস্তির প্রমাণ থাকত। তাছাড়া একজন হলেও প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যেত। এর মানে মাজেদ স্বেচ্ছাতেই ওই চার লোকের সঙ্গে গিয়েছিল। গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পৈত্রিক বাড়ি ভোলার স্থানীয় জনগণ বঙ্গবন্ধুর খুনির মরদেহ তাদের মাটিতে দাফন করতে আপত্তি তোলায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত ৮ এপ্রিল মৃত্যুর পরোয়ানা পড়ে শোনানোর পর সব দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চায় আবদুল মাজেদ। প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি বাতিল করে দেয়ার পর সেই চিঠিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। কারাবিধি অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম চলে এবং শনিবার রাত ১২টা ১মিনিটে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলায় মোট ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হলো। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। রায় কার্যকরের আগেই ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা যান আজিজ পাশা। পলাতক রয়েছেন খন্দকার আবদুর রশিদ, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেহ উদ্দিন।