লকডাউন কার্যকরে সরকারকে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করতে হবে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা এবং লকডাউন (অবরুদ্ধ) কার্যকর করার মাধ্যমে সারা দেশে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে মাঠপ্রশাসন। এ ক্ষেত্রে রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর চিত্র কিছুটা সন্তোষজনক হলেও জেলা শহর ও গ্রামের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সেখানে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে, সচেতনতা কম। গ্রামের মানুষের মধ্যে ঘরের বাইরে থাকার প্রবণতা বেশি। এ নিয়ে প্রতি দিনই গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

লকডাউন ভঙ্গ করা বা না মানার ক্ষেত্রে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা, এ দুটি জেলায় প্রায় ৩ কোটি মানুষের বসবাস। আবার যারা গিয়েছে তাদের অনেকেই ফিরে এসেছেন। ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিক, তাবলিগ জামাত, শ্রম ঘন শিল্পসহ নানা কারণে এ রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলাকে করোনা বিস্তারের ‘হটস্পট’ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জও করোনা সংক্রমণের বড় ঝুঁকিতে আছে। আর সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর জেলা এখন কক্সবাজার, সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছেন ১২ লাখের বেশি মানুষ।

সারা দেশ অলিখিতভাবে লকডাউনের আওতায় থাকলেও দুঃখজনকভাবে এক শ্রেণীর মানুষ এটা মানছেন না। কেউ কেউ এখনও ভ্রান্ত মতাদর্শ থেকে সরেননি। অনেকে আবার সচেতনও নন। ঘটনার সম্ভাব্য ভয়াবহতা আঁচ করতে পারছেন না। গত ৫ এপ্রিল থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে ঢাকা থেকে বহিরাগমন ও প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না পথচারীদের। এদিকে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, মৃতের সংখ্যাও ভয় ধরাচ্ছে অনেকের। এ অবস্থায় সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই অন্যকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা নেয়া উচিত এখন। ছোঁয়াচে এ রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে সবারই তৎপর হওয়া উচিত।

দেশের বিভিন্ন জায়গা আসছে লকডাউনের আওতায়। বাড়ছে পরিধি। রাজধানীর মিরপুর ও বাসাবো অঞ্চল করোনার জন্য বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হলেও পুরো ঢাকাতেই এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ফরিদপুর থেকে তাবলিগ জামাতে আসা ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বাসিন্দা তিনি। এ ঘটনায় সিংগাইর পৌর এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

একদিকে দেশে বিভিন্ন এলাকায় লকডাউনের পরিধি বাড়ছে। অন্যদিকে বাড়ছে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ার প্রবণতাও। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে নির্দেশনা অমান্য করে হাট বসানো হয়েছে। সরকারের দেয়া নির্দেশনা মানছেন না লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার সাধারণ মানুষ। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী মানুষকে সচেতন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও করোনা সংক্রমণ রোধে জনস্বার্থে নেয়া ওইসব কার্যক্রম মানা হচ্ছে না। এমনকি সাপ্তাহিক হাট বন্ধের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মানছেন না বাজারের ইজারাদাররাও। সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এখনও সাপ্তাহিক হাট বসছে। জীবন-জীবিকার তাগিদেই কেউ কেউ নির্দেশনা অমান্য করছেন। ভুলে গেলে চলবে না, এর সঙ্গে জড়িত আরও মানুষের জীবন। বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে সবার সরকারি বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। আমরা মনে করি, সরকারের কঠোর হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে লকডাউন নিশ্চিত করতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০ , ৩ বৈশাখ ১৪২৭, ২১ শাবান ১৪৪১

লকডাউন কার্যকরে সরকারকে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করতে হবে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা এবং লকডাউন (অবরুদ্ধ) কার্যকর করার মাধ্যমে সারা দেশে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে মাঠপ্রশাসন। এ ক্ষেত্রে রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর চিত্র কিছুটা সন্তোষজনক হলেও জেলা শহর ও গ্রামের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সেখানে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে, সচেতনতা কম। গ্রামের মানুষের মধ্যে ঘরের বাইরে থাকার প্রবণতা বেশি। এ নিয়ে প্রতি দিনই গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

লকডাউন ভঙ্গ করা বা না মানার ক্ষেত্রে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা, এ দুটি জেলায় প্রায় ৩ কোটি মানুষের বসবাস। আবার যারা গিয়েছে তাদের অনেকেই ফিরে এসেছেন। ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিক, তাবলিগ জামাত, শ্রম ঘন শিল্পসহ নানা কারণে এ রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলাকে করোনা বিস্তারের ‘হটস্পট’ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জও করোনা সংক্রমণের বড় ঝুঁকিতে আছে। আর সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর জেলা এখন কক্সবাজার, সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছেন ১২ লাখের বেশি মানুষ।

সারা দেশ অলিখিতভাবে লকডাউনের আওতায় থাকলেও দুঃখজনকভাবে এক শ্রেণীর মানুষ এটা মানছেন না। কেউ কেউ এখনও ভ্রান্ত মতাদর্শ থেকে সরেননি। অনেকে আবার সচেতনও নন। ঘটনার সম্ভাব্য ভয়াবহতা আঁচ করতে পারছেন না। গত ৫ এপ্রিল থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে ঢাকা থেকে বহিরাগমন ও প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না পথচারীদের। এদিকে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, মৃতের সংখ্যাও ভয় ধরাচ্ছে অনেকের। এ অবস্থায় সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। নিজেকে সুরক্ষিত রেখেই অন্যকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা নেয়া উচিত এখন। ছোঁয়াচে এ রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে সবারই তৎপর হওয়া উচিত।

দেশের বিভিন্ন জায়গা আসছে লকডাউনের আওতায়। বাড়ছে পরিধি। রাজধানীর মিরপুর ও বাসাবো অঞ্চল করোনার জন্য বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হলেও পুরো ঢাকাতেই এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ফরিদপুর থেকে তাবলিগ জামাতে আসা ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বাসিন্দা তিনি। এ ঘটনায় সিংগাইর পৌর এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

একদিকে দেশে বিভিন্ন এলাকায় লকডাউনের পরিধি বাড়ছে। অন্যদিকে বাড়ছে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ার প্রবণতাও। সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে নির্দেশনা অমান্য করে হাট বসানো হয়েছে। সরকারের দেয়া নির্দেশনা মানছেন না লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার সাধারণ মানুষ। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী মানুষকে সচেতন ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও করোনা সংক্রমণ রোধে জনস্বার্থে নেয়া ওইসব কার্যক্রম মানা হচ্ছে না। এমনকি সাপ্তাহিক হাট বন্ধের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মানছেন না বাজারের ইজারাদাররাও। সংক্রমণ ঝুঁকি নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে এখনও সাপ্তাহিক হাট বসছে। জীবন-জীবিকার তাগিদেই কেউ কেউ নির্দেশনা অমান্য করছেন। ভুলে গেলে চলবে না, এর সঙ্গে জড়িত আরও মানুষের জীবন। বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে সবার সরকারি বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। আমরা মনে করি, সরকারের কঠোর হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে লকডাউন নিশ্চিত করতে হবে।