করোনা নিয়ে সার্ক তহবিল ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সংস্থা গঠন

ড. আনু মাহ্মুদ

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটায় এ রোগ এখন আর কোন নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়। এটি হয়ে উঠেছে মানব জাতির সুস্থতার ওপরে বড় হুমকিস্বরূপ। করোনাভাইরাসের বিস্তারকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে। এটি শুধু স্বাস্থ্যগত সংকট হিসেবে বিবেচনা করলে ভুল হবে। এর বৈশ্বিক নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে অন্য খাতেও পড়তে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে গমনের সুযোগ স্থগিত রয়েছে। চিকিৎসার জন্য প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষকে সীমান্ত পেরুতে হয়। এখন সেটি আর সম্ভব নয়। দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জনবহুল দেশের সংখ্যা একাধিক। ফলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে মহামারী সামাল দেয়া বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে উঠবে। এমন একটি বাস্তবতায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) আওতাধীন দেশগুলোকে এক হয়ে শক্তিশালী যৌথ উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একাধিক টুইটে মোদি বলেন, ‘সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রতি প্রস্তাব রাখছি, যাতে তারা করোনা মোকাবিলা যৌথভাবে শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা চালাতে পারি। একজোট হয়ে আমরা বিশ্বের জন্য উদাহরণ তৈরি করতে পারি। স্বাস্থ্যসম্মত বিশ্ব গড়ায় ভূমিকাও রাখতে পারি।’

সার্কভুক্ত রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে তার প্রস্তাবটিতে সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার যে প্রতিফলন ঘটেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাত করে নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেন। ফলে এ বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি আশা করা যায়। নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবে পাকিস্তানও রাজি হয়েছে।

বিশ্বনেতারা প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী তার দেশে আসা প্রত্যেককে নিজ ঘরে কোয়ারেন্টিনে থাকার আবশ্যকতার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, আমরা জানি আলোচিত ভাইরাসটি দেশের সীমানার বাইরে থেকে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। তাই বিদেশ ফেরতদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজ ঘরে একা অর্থাৎ সঙ্গরোধ বা কোয়ারেন্টিন অবস্থায় থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেননা যদি বিদেশ ফেরত ব্যক্তি ভাইরাসটি বহন করে নিয়ে আসেন তবে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরেই রোগের লক্ষণ ফুটে উঠবে। তিনি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাবেন। পক্ষান্তরে তিনি যদি ঢালাওভাবে মেলামেশা করেন তবে তার সংস্পর্শে থাকা অন্যরাও একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকবেন।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিবারের একজন শুভানুধ্যায়ী স্বজনের মতোই সহজ-সরল ভাষায় মোক্ষম কথাগুলো বলেছেন। আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা বিদেশ থেকে আসবেন তারা অন্তত বাইরের কারও সঙ্গে মিশবেন না এবং কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখবেন এ ধরনের রোগের কোনরকম লক্ষণ দেখা যায় কিনা। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।’ দুঃখজনক হলো ইতালি ফেরত প্রবাসী বাঙালিদের হজ ক্যাম্পে নিলে অব্যবস্থাপনার জন্য তারা বিক্ষোভ করেন। এটি প্রত্যাশিত ছিল না।

দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশসমূহ আমাদের নিকট প্রতিবেশী। আমরা যদি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের বিষয়টিকে মর্যাদা দিই তবে প্রতিটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণে পদক্ষেপ নিতে হবে। তার সূচনা বার্তা সার্কভুক্ত একটি দেশের নেতা সামনে তুলে ধরেছেন। বাকি নেতারাও বিষয়টিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন এবং নিজ নিজ দেশের মানুষের করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য যা যা করা দরকার তা করবেন-এটিই প্রত্যাশা।

সার্ক তহবিল গঠন : বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ করোনা সংক্রমণ ও আতঙ্কের প্রেক্ষাপটে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের এক ভিডিও কনফারেন্সে একত্রিত হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যাঞ্জক। উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম এই উদ্যোগ নেন। মাধ্যমটা ভার্চুয়াল হলেও মনে রাখতে হবে যে, দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর এই প্রথমবারের মতো সার্কের নেতারা এক অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। ২০১৪ সালে সর্বশেষ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল নেপালের কাঠমাণ্ডুতে। ভিডিও কনফারেন্সে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে প্রতিনিধিত্ব করেন সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সম্মেলনের যেটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক তা হলো করোনা মোকাবিলায় ভারতের বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব, যেখানে শুরুতেই ১০ মিলিয়ন ডলার প্রায় ৮৫ কোটি টাকা দেবে ভারত। করোনা আতঙ্কে যেখানে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে এবং ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, সেখানে এটি একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলতেই হবে।

পাশাপাশি এও উল্লেখ করতে হবে যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রস্তাবটিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সার্ক দেশগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় পৃথক সংস্থা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ বিষয়ে আরও গবেষণার জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের ইনস্টিটিউট স্থাপনের কথাও বলেছেন। সদস্য দেশগুলো সম্মত হলে বাংলাদেশই এই সংস্থা গঠনে যথাযথ উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত। উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি দেশে-বিদেশে বহুল প্রশংসিত। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি সন্তোষজনক।

বিশ্বব্যাপী নতুন আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। প্রধানত তীব্র নিউমোনিয়ার লক্ষণসদৃশ শ্বাসকষ্টজনিত এই ব্যাধিতে মৃত্যুঝুঁকি ভয়াবহ। চীনে এই নতুন ভারাইরাসটির প্রথম সংক্রমণ ঘটে এবং অচিরেই ছড়িয়ে পড়ে তীব্র মহামারীর আকারে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঝুঁকি মোকাবিলায় সমূহ প্রস্তুত ও সতর্ক। এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। দেশের বিমানবন্দর ও স্থল সীমান্তপথে গ্রহণ করা হয়েছে যথেষ্ট নিরাপত্তা। আগত সব যাত্রী ও পর্যটককে সর্বাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা নিয়মিত পরীক্ষা করে তবেই প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। যেটা প্রভূত আশাব্যাঞ্জক বললেও অত্যুক্তি হবে না। করোনাভাইরাসজনিত আতঙ্কে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের আমদানি-রফতানিতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

সিঙ্গাপুরে একাধিক বাংলাদেশির করোনায় আক্রান্তের খবর আছে। দেশেও করোনা সন্দেহে কয়েক রোগী রয়েছে কোয়ারেন্টিনে। আর সে জন্যই সর্বদা সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে বাংলাদেশকে। ইতোমধ্যে এর প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত হয়েছে বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ। তবে মানুষের ক্ষেত্রে তার সফল প্রয়োগের উদাহরণ নেই এখন পর্যন্ত।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো অত্যাবশ্যক। বর্তমান বিশ্ব একটি অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি, মারামারি, রক্তারক্তি বিশ্বের কোথাও না কোথাও লেগেই আছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খরা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ভূমিকম্পসহ অপুষ্টি ও অনাহারও কম নয়। এর পাশাপাশি বাড়তি উপদ্রব নিত্যনতুন রোগব্যাধি, করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, এইচআইভি এইডস, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, এ্যানথ্রাক্স, ইবোলা, জিকা ভাইরাস ইত্যাদি। পুরনো ওষুধবিষুধ, এন্টিবায়োটিক ও প্রতিষেধক বাতিল হয়ে যাচ্ছে। সে অবস্থায় নতুন রোগব্যাধির বিরুদ্ধে নতুন প্রতিষেধক আবিষ্কার এখন সময়ের দাবি।

করোনা রোধ ও অর্থনীতি নিয়ে আরও ভাবতে হবে :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি একাত্তরের শহীদ ও জাতির পিতাসহ সবার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে মূল আলোচ্য বিষয় হিসেবে চলমান করোনা ভাইরাস সংকটকেই ভাষণে প্রাধ্যন্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা মোকাবিলার এই যুদ্ধে সবার দায়িত্ব হলো নিজ নিজ ঘরে থাকা। সরাসরি লকডাউনের কথা না বললেও গণপরিবহনের আন্তঃজেলা চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় নাগরিকদের নিজ নিজ অবস্থানে থাকতে হবে। শহর, বন্দর বা গ্রামেও চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। তবে এখনও মানুষ সেভাবে সচেতন হয়নি। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর ও রাস্তাঘাটে লোক চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সাম্প্রতিক নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ সুফল পাওয়া মুশকিল হবে। আর ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে রোগ একবার ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তখন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি রোধ করাও যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য তার ভাষণে পাঁচ হাজার কোটি টাকার আপৎকালীন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ টাকার অধিকাংশই রপ্তানি খাতের মূল শিল্প পোশাক কারখানাতেই যাবে। তবে আমাদের মনে হয়, দেশে কৃষি খাতে যেসব উদীয়মান শিল্প অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর কাজে বিপুলভাবে ভূমিকা রাখছে, তাদের পাশেও এ দুঃসময়ে সরকারকে দাঁড়াতে হবে। ইতোমধ্যে খামারিরা জানিয়েছেন, দুধশিল্পে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭ কোটি টাকার।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কৃষিশিল্পে একটি নীরব বিপ্লব ঘটেছে। দুধ, ডিম, মাংস, সবজি, দেশীয় ফল ইত্যাদি পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য দেশে উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। ফলে জাতির পুষ্টি চাহিদা অভ্যন্তরীণভাবেই মেটানো সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু করোনার ধাক্কায় যেহেতু বাজারজাতকরণ ব্যাহত হচ্ছে, সেহেতু এই উদ্যোক্তারা সংকটের মধ্যে পড়বেন। মনে রাখতে হবে, উদীয়মান শিল্পগুলোয় এখনও পুঁজি এবং উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক কোন কাঠামো তৈরি হয়নি। ফলে করোনাঝড়ে দুর্বল কাঠামো ভেঙে পড়লে এই উৎপাদকদের কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে। এর প্রভাব ভবিষ্যতে দেশের বাজারের ওপরও পড়বে।

অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব হয়তো ধীরে ধীরে কমে আসবে। কিন্তু এ ধরনের মারাত্মক অনুজীবের উদ্ভব ও সংক্রমণ সেখানেই থেমে থাকবে না। তারা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতেও থেকে থেকে নতুন নতুন অনুজীবের সংক্রমণে মানবজাতি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার মতো সম্ভাব্য এই সংকট মোকাবিলার জন্য দেশের সরকারপ্রধান ও শীর্ষ নেতার কাছ থেকে দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। আমরা আশা করব, সরকার ভবিষ্যতের বিপদের কথা চিন্তা করে এখন থেকেই অভ্যন্তরীণভাবে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে। একই সঙ্গে জনগণকেও বর্তমান ও আগামী দিনের সংকটগুলো মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখবেন। এখানে কোন রকম শৈথিল্য বা সংস্কার-কুসংস্কারের বশবর্তী হওয়া যাবে না।

[লেখক : প্রাবন্ধিক, অর্থনীতির বিশ্লেষক, কলামিস্ট ]

anumahmud@yahoo.com

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২০ , ৩ বৈশাখ ১৪২৭, ২১ শাবান ১৪৪১

করোনা নিয়ে সার্ক তহবিল ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সংস্থা গঠন

ড. আনু মাহ্মুদ

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটায় এ রোগ এখন আর কোন নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়। এটি হয়ে উঠেছে মানব জাতির সুস্থতার ওপরে বড় হুমকিস্বরূপ। করোনাভাইরাসের বিস্তারকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে। এটি শুধু স্বাস্থ্যগত সংকট হিসেবে বিবেচনা করলে ভুল হবে। এর বৈশ্বিক নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে অন্য খাতেও পড়তে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে গমনের সুযোগ স্থগিত রয়েছে। চিকিৎসার জন্য প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষকে সীমান্ত পেরুতে হয়। এখন সেটি আর সম্ভব নয়। দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জনবহুল দেশের সংখ্যা একাধিক। ফলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে মহামারী সামাল দেয়া বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে উঠবে। এমন একটি বাস্তবতায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) আওতাধীন দেশগুলোকে এক হয়ে শক্তিশালী যৌথ উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একাধিক টুইটে মোদি বলেন, ‘সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রতি প্রস্তাব রাখছি, যাতে তারা করোনা মোকাবিলা যৌথভাবে শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা চালাতে পারি। একজোট হয়ে আমরা বিশ্বের জন্য উদাহরণ তৈরি করতে পারি। স্বাস্থ্যসম্মত বিশ্ব গড়ায় ভূমিকাও রাখতে পারি।’

সার্কভুক্ত রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে তার প্রস্তাবটিতে সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার যে প্রতিফলন ঘটেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাত করে নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেন। ফলে এ বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি আশা করা যায়। নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবে পাকিস্তানও রাজি হয়েছে।

বিশ্বনেতারা প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী তার দেশে আসা প্রত্যেককে নিজ ঘরে কোয়ারেন্টিনে থাকার আবশ্যকতার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, আমরা জানি আলোচিত ভাইরাসটি দেশের সীমানার বাইরে থেকে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। তাই বিদেশ ফেরতদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজ ঘরে একা অর্থাৎ সঙ্গরোধ বা কোয়ারেন্টিন অবস্থায় থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেননা যদি বিদেশ ফেরত ব্যক্তি ভাইরাসটি বহন করে নিয়ে আসেন তবে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরেই রোগের লক্ষণ ফুটে উঠবে। তিনি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাবেন। পক্ষান্তরে তিনি যদি ঢালাওভাবে মেলামেশা করেন তবে তার সংস্পর্শে থাকা অন্যরাও একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকবেন।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিবারের একজন শুভানুধ্যায়ী স্বজনের মতোই সহজ-সরল ভাষায় মোক্ষম কথাগুলো বলেছেন। আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা বিদেশ থেকে আসবেন তারা অন্তত বাইরের কারও সঙ্গে মিশবেন না এবং কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখবেন এ ধরনের রোগের কোনরকম লক্ষণ দেখা যায় কিনা। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।’ দুঃখজনক হলো ইতালি ফেরত প্রবাসী বাঙালিদের হজ ক্যাম্পে নিলে অব্যবস্থাপনার জন্য তারা বিক্ষোভ করেন। এটি প্রত্যাশিত ছিল না।

দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশসমূহ আমাদের নিকট প্রতিবেশী। আমরা যদি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের বিষয়টিকে মর্যাদা দিই তবে প্রতিটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণে পদক্ষেপ নিতে হবে। তার সূচনা বার্তা সার্কভুক্ত একটি দেশের নেতা সামনে তুলে ধরেছেন। বাকি নেতারাও বিষয়টিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন এবং নিজ নিজ দেশের মানুষের করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য যা যা করা দরকার তা করবেন-এটিই প্রত্যাশা।

সার্ক তহবিল গঠন : বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ করোনা সংক্রমণ ও আতঙ্কের প্রেক্ষাপটে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের এক ভিডিও কনফারেন্সে একত্রিত হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যাঞ্জক। উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম এই উদ্যোগ নেন। মাধ্যমটা ভার্চুয়াল হলেও মনে রাখতে হবে যে, দীর্ঘ প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর এই প্রথমবারের মতো সার্কের নেতারা এক অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। ২০১৪ সালে সর্বশেষ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল নেপালের কাঠমাণ্ডুতে। ভিডিও কনফারেন্সে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে প্রতিনিধিত্ব করেন সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সম্মেলনের যেটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক তা হলো করোনা মোকাবিলায় ভারতের বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব, যেখানে শুরুতেই ১০ মিলিয়ন ডলার প্রায় ৮৫ কোটি টাকা দেবে ভারত। করোনা আতঙ্কে যেখানে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে এবং ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, সেখানে এটি একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলতেই হবে।

পাশাপাশি এও উল্লেখ করতে হবে যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রস্তাবটিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সার্ক দেশগুলোতে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় পৃথক সংস্থা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ বিষয়ে আরও গবেষণার জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের ইনস্টিটিউট স্থাপনের কথাও বলেছেন। সদস্য দেশগুলো সম্মত হলে বাংলাদেশই এই সংস্থা গঠনে যথাযথ উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত। উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি দেশে-বিদেশে বহুল প্রশংসিত। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি সন্তোষজনক।

বিশ্বব্যাপী নতুন আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। প্রধানত তীব্র নিউমোনিয়ার লক্ষণসদৃশ শ্বাসকষ্টজনিত এই ব্যাধিতে মৃত্যুঝুঁকি ভয়াবহ। চীনে এই নতুন ভারাইরাসটির প্রথম সংক্রমণ ঘটে এবং অচিরেই ছড়িয়ে পড়ে তীব্র মহামারীর আকারে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঝুঁকি মোকাবিলায় সমূহ প্রস্তুত ও সতর্ক। এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। দেশের বিমানবন্দর ও স্থল সীমান্তপথে গ্রহণ করা হয়েছে যথেষ্ট নিরাপত্তা। আগত সব যাত্রী ও পর্যটককে সর্বাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী দ্বারা নিয়মিত পরীক্ষা করে তবেই প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। যেটা প্রভূত আশাব্যাঞ্জক বললেও অত্যুক্তি হবে না। করোনাভাইরাসজনিত আতঙ্কে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের আমদানি-রফতানিতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

সিঙ্গাপুরে একাধিক বাংলাদেশির করোনায় আক্রান্তের খবর আছে। দেশেও করোনা সন্দেহে কয়েক রোগী রয়েছে কোয়ারেন্টিনে। আর সে জন্যই সর্বদা সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে বাংলাদেশকে। ইতোমধ্যে এর প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত হয়েছে বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ। তবে মানুষের ক্ষেত্রে তার সফল প্রয়োগের উদাহরণ নেই এখন পর্যন্ত।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ অবস্থায় বাংলাদেশেও ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো অত্যাবশ্যক। বর্তমান বিশ্ব একটি অস্থির পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে। যুদ্ধবিগ্রহ, হানাহানি, মারামারি, রক্তারক্তি বিশ্বের কোথাও না কোথাও লেগেই আছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খরা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ভূমিকম্পসহ অপুষ্টি ও অনাহারও কম নয়। এর পাশাপাশি বাড়তি উপদ্রব নিত্যনতুন রোগব্যাধি, করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, এইচআইভি এইডস, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, এ্যানথ্রাক্স, ইবোলা, জিকা ভাইরাস ইত্যাদি। পুরনো ওষুধবিষুধ, এন্টিবায়োটিক ও প্রতিষেধক বাতিল হয়ে যাচ্ছে। সে অবস্থায় নতুন রোগব্যাধির বিরুদ্ধে নতুন প্রতিষেধক আবিষ্কার এখন সময়ের দাবি।

করোনা রোধ ও অর্থনীতি নিয়ে আরও ভাবতে হবে :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি একাত্তরের শহীদ ও জাতির পিতাসহ সবার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে মূল আলোচ্য বিষয় হিসেবে চলমান করোনা ভাইরাস সংকটকেই ভাষণে প্রাধ্যন্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা মোকাবিলার এই যুদ্ধে সবার দায়িত্ব হলো নিজ নিজ ঘরে থাকা। সরাসরি লকডাউনের কথা না বললেও গণপরিবহনের আন্তঃজেলা চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় নাগরিকদের নিজ নিজ অবস্থানে থাকতে হবে। শহর, বন্দর বা গ্রামেও চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। তবে এখনও মানুষ সেভাবে সচেতন হয়নি। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর ও রাস্তাঘাটে লোক চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সাম্প্রতিক নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ সুফল পাওয়া মুশকিল হবে। আর ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে রোগ একবার ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ন্ত্রণে আনা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তখন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি রোধ করাও যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য তার ভাষণে পাঁচ হাজার কোটি টাকার আপৎকালীন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ টাকার অধিকাংশই রপ্তানি খাতের মূল শিল্প পোশাক কারখানাতেই যাবে। তবে আমাদের মনে হয়, দেশে কৃষি খাতে যেসব উদীয়মান শিল্প অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর কাজে বিপুলভাবে ভূমিকা রাখছে, তাদের পাশেও এ দুঃসময়ে সরকারকে দাঁড়াতে হবে। ইতোমধ্যে খামারিরা জানিয়েছেন, দুধশিল্পে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৭ কোটি টাকার।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কৃষিশিল্পে একটি নীরব বিপ্লব ঘটেছে। দুধ, ডিম, মাংস, সবজি, দেশীয় ফল ইত্যাদি পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য দেশে উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। ফলে জাতির পুষ্টি চাহিদা অভ্যন্তরীণভাবেই মেটানো সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু করোনার ধাক্কায় যেহেতু বাজারজাতকরণ ব্যাহত হচ্ছে, সেহেতু এই উদ্যোক্তারা সংকটের মধ্যে পড়বেন। মনে রাখতে হবে, উদীয়মান শিল্পগুলোয় এখনও পুঁজি এবং উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক কোন কাঠামো তৈরি হয়নি। ফলে করোনাঝড়ে দুর্বল কাঠামো ভেঙে পড়লে এই উৎপাদকদের কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে। এর প্রভাব ভবিষ্যতে দেশের বাজারের ওপরও পড়বে।

অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব হয়তো ধীরে ধীরে কমে আসবে। কিন্তু এ ধরনের মারাত্মক অনুজীবের উদ্ভব ও সংক্রমণ সেখানেই থেমে থাকবে না। তারা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতেও থেকে থেকে নতুন নতুন অনুজীবের সংক্রমণে মানবজাতি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার মতো সম্ভাব্য এই সংকট মোকাবিলার জন্য দেশের সরকারপ্রধান ও শীর্ষ নেতার কাছ থেকে দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। আমরা আশা করব, সরকার ভবিষ্যতের বিপদের কথা চিন্তা করে এখন থেকেই অভ্যন্তরীণভাবে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে। একই সঙ্গে জনগণকেও বর্তমান ও আগামী দিনের সংকটগুলো মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখবেন। এখানে কোন রকম শৈথিল্য বা সংস্কার-কুসংস্কারের বশবর্তী হওয়া যাবে না।

[লেখক : প্রাবন্ধিক, অর্থনীতির বিশ্লেষক, কলামিস্ট ]

anumahmud@yahoo.com