করোনা সৃষ্টি করছে দীর্ঘমেয়াদি প্রাণঘাতী সংকট

করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর ‘কোভিড-১৯’ সংক্রমণের পাঁচ মাস চলছে। স্বল্প সময়েই এই ভাইরাস মানবসভ্যতার জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রাণঘাতী সংকট সৃষ্টি করছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। কারণ মাত্র পাঁচ মাসে বিশে্ব কোভিড-১৯-এর আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২১ লাখ এবং মারা গেছেন প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার মানুষ। করোনাভাইরাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও সর্বশেষ ভার্সন ‘কোভিড-১৯’ সর্ম্পকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন চিকিৎসা গবেষকরা।

করোনাভাইরাসের কয়েকটি ভার্সনের কমন (সাধারণ) লক্ষণ হলো- ঠাণ্ডা এবং এর আগে এই ভাইরাসের দুটি প্রাণঘাতী রূপ বিশে্ব শনাক্ত হয়- ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিমটম’ (সার্স) এবং ‘মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিমটম’ (মার্স)। সার্স ও মার্সের গতি প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক কাঠামো বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলেও ‘কোভিড-১৯’ নিয়ে মহা সংকটে পরেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। তাছাড়া সার্স ও মার্সের তুলনায় ‘কোভিড-১৯’-এর আক্রমণের ধরণ, গতি-প্রকৃতি ও ধবংসাত্মক ক্ষমতাও অতিমাত্রায় ভয়ঙ্কর। কোভিড-১৯ মহামারী দ্রুত বিস্তার ঘটছে।

করোনা সংক্রমণের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্বে হাহাকার চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, প্রতিষেধক ছাড়া করোনাভাইরাস রোখা অসম্ভব। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিশে্বর উন্নত দেশগুলোর খ্যাতমান চিকিৎসা গবেষক ও বিজ্ঞানীরা করোনার প্রতিষেধক, ভ্যাকসিন (ওষুধ) ও টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, প্রতিষেধক, শারীরিক বা রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে হত্যা করা অণুজীব (ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া ও অন্যান্য) থেকে তৈরি করা হয়। প্রয়োগের পরে প্রতিষেধক, আক্রান্তের দেহে অ্যান্টিজেনগুলোকে প্রতিলিপি তৈরি করতে বাধা দেয় ফলে সংক্রামিত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠে।

চিকিৎসা গবেষকরা জানান, ক্রমবর্ধমান কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে এ ভাইরাসের জিনচক্র সম্পর্কে জানা একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে। কোভিড-১৯ বা সার্স-কভ-২ নামে এ ভাইরাসটির জিনে অন্তত ৩ হাজার বেস বা লেটার রয়েছে। অনেক দেশই রোগীর নমুনা থেকে ভাইরাসটির জিনোমিক সিকোয়েন্সগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছে। কোন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এর জিনগত উপাদানগুলোয় ছোট ছোট পরিবর্তন আসে, যা পরীক্ষা করে বোঝা যায় ভাইরাসটির জিনের রহস্য।

করোনার এই জেনেটিক পরিবর্তনগুলো মিউটেশন হিসেবে পরিচিত। এটি গড়ে প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর পরিবর্তন হয়। অনেক রোগীর কাছ থেকে পাওয়া ভাইরাসটির জিনগত ক্রম এবং সময়ের সঙ্গে এর সামান্য পরিবর্তনগুলোও চিহ্নিত করে বিজ্ঞানীরা এটি কীভাবে ছড়ায়, সে সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে পারেন। এটি করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।

যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা গবেষকরা মনে করছেন, সার্স-কভ-২-এর থেকেই কোভিড-১৯-এর সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচ মাস আগেও এই ভাইরাসের জিন কাঠামো সম্পর্কে গবেষকদের কোন ধারণা ছিল না। আজকে সারাবিশে্বই গবেষণার বিষয়বস্তু হলো- ‘কোভিড-১৯’।

কীভাবে করোনার উৎপত্তি এবং কীভাবে এটি মানুষকে প্রথম সংক্রমিত করে?

গবেষকর জানিয়েছেন, সার্স-কভ-২ বা করোনা মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছিল বাদুড় থেকেই। করোনার উৎপত্তি হওয়ার পর থেকেই এর সংক্রমণের কারণ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকরা। এখন এটি প্রায় নিশ্চিত যে, বাদুড় থেকেই এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। আবার এমনও একটি সম্ভাবনা রয়েছে যে, প্রথমে ওই ভাইরাস বাদুড় থেকে প্যাঙ্গোলিনের শরীরে ছয়ায়। যেহেতু চীনে পাঙ্গোলিন খাওয়া হয় তাই মনে করা হচ্ছে, সেখান থেকেও এটি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এই ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়ায় ও সংক্রমিত হয়।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভাইরোলজিস্ট’ প্রফেসর অ্যাডওয়ার্ড হোলমস মনে করেন, ‘এই ভাইরাস সম্ভবত বাদুড় থেকে অন্য প্রাণীর দেহে সংক্রমিত হয়েছে, সম্ভবত একটি মার্কেটে। মার্কেটে যারা প্রাণী নিয়ে কাজ করেন, তারা যখন বাড়িতে যান, তখন তাদের মধ্য থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ভালো সুযোগ রয়েছে।’

যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভাইরোলজিস্ট’ প্রফেসর জোনাথান ভল বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ সাধারণ মৃদু হয়। এটিই ভাইরাসের সাফল্যের রহস্য। অনেক মানুষই জানেন না যে, তারা আক্রান্ত হয়েছেন, এর ফলে বিভিন্ন কর্মস্থলে যাচ্ছেন, সুপার মার্কেটে ঘুরছেন এবং অন্যদের সংক্রমিত করছেন।’

করোনার ভ্যাকসিনের খোঁজে বিজ্ঞানীরা :

গত শক্রবার আন্তজার্তিক একটি গবেষণা সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যে সারাবিশে্বর ৭৮টি ভ্যাকসিন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরও ৩৭টি প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ‘ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম’র প্রথম পর্বের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষামূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন বিশ্বখ্যাত ‘অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা। এছাড়াও দুটি ভ্যাকসিনের প্রথম পর্বের পরীক্ষামূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেকনোলজি করপোরেশনস এবং তিনটি ভ্যাকসিনের প্রথম পর্বের পরীক্ষামূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন চীনের বিজ্ঞানীদের কয়েকটি দল। আরও কয়েকটি গবেষক দল এই বছরই মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করেছেন। এসব গবেষণামূলক কার্যক্রম থেকে আশা করা হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হতে পারে।

ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রুটগার্স ইউনিভার্সিটির বায়োএথিক্স বিভাগের অধ্যাপক নির আইয়েল বলেন, ‘এই অভিযাত্রা ঝুঁকিমুক্ত নয়, কিন্তু বেশ কয়েক মাসের মধ্যে মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো আশা করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের লক্ষ্যে কাজ করছেন, তাদের তরুণ ও স্বাস্থ্যবান হতে হবে। স্বাস্থ্যের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধের যোগান দিতে হবে।’

এদিকে চীন সরকার ১৪ এপ্রিল করোনার দুই ধরনের প্রতিষেধকের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য অনুমতি দিয়েছে চীনা। দেশটির উহান ইনস্টিটিউট অব বায়োলোজিকাল প্রোডাক্টসের জাতীয় ওষুধ বিশেষজ্ঞ দল ও বেইজিংয়ের সিনোভেক বায়োটেকের যৌথ প্রচেষ্টা তৈরি হয়েছে ওষুধ।

এর আগে সার্স, হেপাটাইটিস-এ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের কাজে গবেষণা করেছিলেন সিনোভেক বায়োটেকের সিইও ইয়িন ওয়েডং। তিনি জানিয়েছেন, চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন তারা। তিনি বলেন, ‘যদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হওয়া যায়, তাহলে দ্রুত প্রতিষেধক তৈরি করা হবে। বছরে ১০ কোটির বেশি প্রতিষেধক তৈরি করতে সক্ষম তারা।’

চীনা বিজ্ঞানীরা যেসব উপায়ে প্রতিষেধক আবিষ্কারের কথা ভাবছেন সেগুলো হলো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সাবইউনিট ভ্যাকসিন, অ্যাডেনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড ভ্যাকসিন। চীনের অ্যাকাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্স আগেই অ্যাডেনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন তৈরি করেছে যা এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে।

আরও খবর
সারাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ
জাতিসংঘ তহবিল গঠন না করলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে ডাব্লিউএফপি সংবাদ ডেস্ক করোনাভাইরাসের কারণে থমকে যাওয়া বিশ
আরও ৫০ লাখ দরিদ্র লোককে রেশনকার্ড দেয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী
বাদুরের দুই প্রজাতির মধ্যে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে
আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস
ইরানের ম্যাজিকাল ডিভাইসে ৫ সেকেন্ডে শনাক্ত হবে করোনা রোগী
মাঠে নামছে ‘দুর্যোগে আলোর গেরিলা’
আইইডিসিআরের ৬ কর্মী আক্রান্ত
এসএসসি ফল নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ হচ্ছে না
করোনায় মৃত্যুর চেয়ে সুস্থতার হার বেশি
টিভি চ্যানেলের আরও ৪ জন করোনা আক্রান্ত
২৫০ ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ডিলার আটক
করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশি ১৩০০ ছাড়াল

শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল ২০২০ , ৪ বৈশাখ ১৪২৭, ২২ শাবান ১৪৪১

বিজ্ঞানীদের অভিমত

করোনা সৃষ্টি করছে দীর্ঘমেয়াদি প্রাণঘাতী সংকট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর ‘কোভিড-১৯’ সংক্রমণের পাঁচ মাস চলছে। স্বল্প সময়েই এই ভাইরাস মানবসভ্যতার জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রাণঘাতী সংকট সৃষ্টি করছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। কারণ মাত্র পাঁচ মাসে বিশে্ব কোভিড-১৯-এর আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২১ লাখ এবং মারা গেছেন প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার মানুষ। করোনাভাইরাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও সর্বশেষ ভার্সন ‘কোভিড-১৯’ সর্ম্পকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন চিকিৎসা গবেষকরা।

করোনাভাইরাসের কয়েকটি ভার্সনের কমন (সাধারণ) লক্ষণ হলো- ঠাণ্ডা এবং এর আগে এই ভাইরাসের দুটি প্রাণঘাতী রূপ বিশে্ব শনাক্ত হয়- ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিমটম’ (সার্স) এবং ‘মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিমটম’ (মার্স)। সার্স ও মার্সের গতি প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক কাঠামো বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলেও ‘কোভিড-১৯’ নিয়ে মহা সংকটে পরেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। তাছাড়া সার্স ও মার্সের তুলনায় ‘কোভিড-১৯’-এর আক্রমণের ধরণ, গতি-প্রকৃতি ও ধবংসাত্মক ক্ষমতাও অতিমাত্রায় ভয়ঙ্কর। কোভিড-১৯ মহামারী দ্রুত বিস্তার ঘটছে।

করোনা সংক্রমণের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্বে হাহাকার চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, প্রতিষেধক ছাড়া করোনাভাইরাস রোখা অসম্ভব। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বিশে্বর উন্নত দেশগুলোর খ্যাতমান চিকিৎসা গবেষক ও বিজ্ঞানীরা করোনার প্রতিষেধক, ভ্যাকসিন (ওষুধ) ও টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, প্রতিষেধক, শারীরিক বা রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে হত্যা করা অণুজীব (ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া ও অন্যান্য) থেকে তৈরি করা হয়। প্রয়োগের পরে প্রতিষেধক, আক্রান্তের দেহে অ্যান্টিজেনগুলোকে প্রতিলিপি তৈরি করতে বাধা দেয় ফলে সংক্রামিত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠে।

চিকিৎসা গবেষকরা জানান, ক্রমবর্ধমান কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে এ ভাইরাসের জিনচক্র সম্পর্কে জানা একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে। কোভিড-১৯ বা সার্স-কভ-২ নামে এ ভাইরাসটির জিনে অন্তত ৩ হাজার বেস বা লেটার রয়েছে। অনেক দেশই রোগীর নমুনা থেকে ভাইরাসটির জিনোমিক সিকোয়েন্সগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছে। কোন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এর জিনগত উপাদানগুলোয় ছোট ছোট পরিবর্তন আসে, যা পরীক্ষা করে বোঝা যায় ভাইরাসটির জিনের রহস্য।

করোনার এই জেনেটিক পরিবর্তনগুলো মিউটেশন হিসেবে পরিচিত। এটি গড়ে প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর পরিবর্তন হয়। অনেক রোগীর কাছ থেকে পাওয়া ভাইরাসটির জিনগত ক্রম এবং সময়ের সঙ্গে এর সামান্য পরিবর্তনগুলোও চিহ্নিত করে বিজ্ঞানীরা এটি কীভাবে ছড়ায়, সে সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে পারেন। এটি করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।

যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা গবেষকরা মনে করছেন, সার্স-কভ-২-এর থেকেই কোভিড-১৯-এর সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচ মাস আগেও এই ভাইরাসের জিন কাঠামো সম্পর্কে গবেষকদের কোন ধারণা ছিল না। আজকে সারাবিশে্বই গবেষণার বিষয়বস্তু হলো- ‘কোভিড-১৯’।

কীভাবে করোনার উৎপত্তি এবং কীভাবে এটি মানুষকে প্রথম সংক্রমিত করে?

গবেষকর জানিয়েছেন, সার্স-কভ-২ বা করোনা মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছিল বাদুড় থেকেই। করোনার উৎপত্তি হওয়ার পর থেকেই এর সংক্রমণের কারণ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকরা। এখন এটি প্রায় নিশ্চিত যে, বাদুড় থেকেই এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। আবার এমনও একটি সম্ভাবনা রয়েছে যে, প্রথমে ওই ভাইরাস বাদুড় থেকে প্যাঙ্গোলিনের শরীরে ছয়ায়। যেহেতু চীনে পাঙ্গোলিন খাওয়া হয় তাই মনে করা হচ্ছে, সেখান থেকেও এটি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। এই ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়ায় ও সংক্রমিত হয়।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভাইরোলজিস্ট’ প্রফেসর অ্যাডওয়ার্ড হোলমস মনে করেন, ‘এই ভাইরাস সম্ভবত বাদুড় থেকে অন্য প্রাণীর দেহে সংক্রমিত হয়েছে, সম্ভবত একটি মার্কেটে। মার্কেটে যারা প্রাণী নিয়ে কাজ করেন, তারা যখন বাড়িতে যান, তখন তাদের মধ্য থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ভালো সুযোগ রয়েছে।’

যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভাইরোলজিস্ট’ প্রফেসর জোনাথান ভল বলেন, ‘কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ সাধারণ মৃদু হয়। এটিই ভাইরাসের সাফল্যের রহস্য। অনেক মানুষই জানেন না যে, তারা আক্রান্ত হয়েছেন, এর ফলে বিভিন্ন কর্মস্থলে যাচ্ছেন, সুপার মার্কেটে ঘুরছেন এবং অন্যদের সংক্রমিত করছেন।’

করোনার ভ্যাকসিনের খোঁজে বিজ্ঞানীরা :

গত শক্রবার আন্তজার্তিক একটি গবেষণা সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যে সারাবিশে্বর ৭৮টি ভ্যাকসিন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরও ৩৭টি প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ‘ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম’র প্রথম পর্বের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষামূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন বিশ্বখ্যাত ‘অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা। এছাড়াও দুটি ভ্যাকসিনের প্রথম পর্বের পরীক্ষামূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেকনোলজি করপোরেশনস এবং তিনটি ভ্যাকসিনের প্রথম পর্বের পরীক্ষামূলক কাজ সম্পন্ন করেছেন চীনের বিজ্ঞানীদের কয়েকটি দল। আরও কয়েকটি গবেষক দল এই বছরই মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করেছেন। এসব গবেষণামূলক কার্যক্রম থেকে আশা করা হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হতে পারে।

ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রুটগার্স ইউনিভার্সিটির বায়োএথিক্স বিভাগের অধ্যাপক নির আইয়েল বলেন, ‘এই অভিযাত্রা ঝুঁকিমুক্ত নয়, কিন্তু বেশ কয়েক মাসের মধ্যে মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো আশা করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের লক্ষ্যে কাজ করছেন, তাদের তরুণ ও স্বাস্থ্যবান হতে হবে। স্বাস্থ্যের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধের যোগান দিতে হবে।’

এদিকে চীন সরকার ১৪ এপ্রিল করোনার দুই ধরনের প্রতিষেধকের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য অনুমতি দিয়েছে চীনা। দেশটির উহান ইনস্টিটিউট অব বায়োলোজিকাল প্রোডাক্টসের জাতীয় ওষুধ বিশেষজ্ঞ দল ও বেইজিংয়ের সিনোভেক বায়োটেকের যৌথ প্রচেষ্টা তৈরি হয়েছে ওষুধ।

এর আগে সার্স, হেপাটাইটিস-এ ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের কাজে গবেষণা করেছিলেন সিনোভেক বায়োটেকের সিইও ইয়িন ওয়েডং। তিনি জানিয়েছেন, চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন তারা। তিনি বলেন, ‘যদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সফল হওয়া যায়, তাহলে দ্রুত প্রতিষেধক তৈরি করা হবে। বছরে ১০ কোটির বেশি প্রতিষেধক তৈরি করতে সক্ষম তারা।’

চীনা বিজ্ঞানীরা যেসব উপায়ে প্রতিষেধক আবিষ্কারের কথা ভাবছেন সেগুলো হলো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সাবইউনিট ভ্যাকসিন, অ্যাডেনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড ভ্যাকসিন। চীনের অ্যাকাডেমি অব মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্স আগেই অ্যাডেনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন তৈরি করেছে যা এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে।