করোনার ভয় উপেক্ষা করে

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

করোনা আতঙ্ক উপক্ষো করে বকেয়া বেতনের দাবিতে আজও রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। ঢাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ ও সাভারসহ দেশের কয়েকটি এলাকাতেও বিক্ষোভ হয়েছে।

রাজধানীর মতিঝিলে দুটি পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছে। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন মোল্লা জানান, কমলাপুরের বিশ্বাস টাওয়ারের কাছে বিন্নী গার্মেন্ট ও সর্দার গার্মেন্টসের কয়েকশ’ পোশাক শ্রমিক গতকাল সকাল ৯টার দিকে সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। সর্দার গার্মেন্টসের মালিকপক্ষ পরে এসে বেতন দিতে শুরু করলে শ্রমিকরা শান্ত হয়। আর বিন্নী গার্মেন্টসের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা পুলিশকে জানায় দুপুর থেকে তাদের শ্রমিকদের তারা বেতন দেবে।

আদাবরে বকেয়া পাওনার দাবিতে ফ্যালকন ইন্টারন্যাশনাল নিট কম্পোজিটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন  প্রায় হাজার খানেক পোশাক শ্রমিক। আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, তিন দফা সময় নিয়েও মার্চের বেতন পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ, সেজন্য আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা। বেতন পরিশোধের জন্য তৃতীয় দফায় গতকাল সময় নেয়া হলেও কারখানার ফটকে তালা দিয়েছে মালিকপক্ষ।

র‌্যাব- ২-এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-২) মেজর এইচএম পারভেজ আরেফিন বলেন, আমরা বিষয়টি জেনে মালিকের সঙ্গে বসেছিলাম। মালিক আমাকে জানিয়েছেন, এ মাসের মধ্যেই শ্রমিকদের পাওনা দিয়ে দেয়া হবে। তবে ব্যাংকের কিছু ব্যাপার থাকে, এ জন্য নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না বলে মালিক জানিয়েছেন। জানতে চাইলে ফ্যালকন গার্মেন্টসের সুইং ডিপার্টমেন্টের কর্মী রোখসানা বেগম বলেন, আমাদের দিয়ে ১৪৫-১৭২ ঘণ্টা ওভারটাইম করিয়ে নিয়েছে। রাত ৩-৫টা পর্যন্ত কাজ করায়। এতো কষ্ট করায়, কিন্তু আমাদের টাকা দেয় না। খাবো কি, ঘরভাড়া দেব কীভাবে?

এ বিষয়ে আদাবর থানার ওসি কাজী শাহীদুজ্জামান বলেন, আমরা মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে তাদের ওভারটাইমের টাকা দিয়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন ফ্যালকনের মালিক। অবশ্য পরে বেতন দেয়া হচ্ছে জানিয়ে ফ্যালকনের মালিক মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা ২৮ দিনের বেতন দিচ্ছি। তবে এ মাসের মধ্যে তাদের ওভারটাইমের টাকা দিয়ে দেয়া হবে।

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মিজানুর জানান, বেতন না পেয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে বকেয়া বেতন ভাতা ও জরুরি ত্রাণ সহায়তার দাবিতে বিমানবন্দর গোল চত্বর এলাকার সড়ক অবরোধ করেন উত্তরা দক্ষিণখান এলাকার রেদওয়ান, সিএনবি ও স্যার ডেনিম গার্মেন্টসের কর্মীরা। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে বার বার সড়ক ছেড়ে দিতে বলা হলেও দাবি আদায়ে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। যোগাযোগ করে মালিকপক্ষের সাড়া না পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিএমইএকে জানিয়েছে পুলিশ।

দক্ষিণখান থানার ফাঁড়ির ইনচার্জ সবুজ রহমান বলেন, রেদওয়ান গার্মেন্টসের বেতন বকেয়া ৩ মাসের, সিএনবি ও স্যার ডেনিম গার্মেন্টসের মার্চ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের একজন কোয়ারেন্টিনে, একজন পলাতক, আরেকজন বেতন দিতে অপারগ বলে জানিয়েছেন। এ অবস্থায় বিজিএমইএ-কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের দক্ষিণখান জোনের এডিসি হাফিজুর রহমান বলেন, গার্মেন্টস কর্মীদের সামলানোর দায়িত্ব পুলিশের না, কিন্তু এখন সেটাই করতে হচ্ছে। আমরা গার্মেন্টস মালিকদের খোঁজ করেও পাচ্ছি না, বিজিএমইএ-কে জানানো হয়েছে।

মহামারী ছড়ানো ঠেকাতে সরকার ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বেশিরভাগ তৈরি পোশাকের কারখানাও এখন বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে কারখানার শ্রমিকদের বেতনের জন্য সরকার ৫ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে মালিকদের। ১৬ এপ্রিলের মধ্যে বেতন পরিশোধ না করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও মালিকদের হুঁশিয়ার করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক কারাখানায় বেতন না হওয়ায়  আশুলিয়া, উত্তরা, বাড্ডা, ভাটারা, মিরপুর, ভাষানটেক, শাহআলী, তেজগাঁও, মতিঝিল এলাকায় শতশত শ্রমিক বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামে।

শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল ২০২০ , ৪ বৈশাখ ১৪২৭, ২২ শাবান ১৪৪১

করোনার ভয় উপেক্ষা করে

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

গতকাল গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন -সংবাদ

করোনা আতঙ্ক উপক্ষো করে বকেয়া বেতনের দাবিতে আজও রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। ঢাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ ও সাভারসহ দেশের কয়েকটি এলাকাতেও বিক্ষোভ হয়েছে।

রাজধানীর মতিঝিলে দুটি পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছে। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন মোল্লা জানান, কমলাপুরের বিশ্বাস টাওয়ারের কাছে বিন্নী গার্মেন্ট ও সর্দার গার্মেন্টসের কয়েকশ’ পোশাক শ্রমিক গতকাল সকাল ৯টার দিকে সড়কে নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। সর্দার গার্মেন্টসের মালিকপক্ষ পরে এসে বেতন দিতে শুরু করলে শ্রমিকরা শান্ত হয়। আর বিন্নী গার্মেন্টসের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা পুলিশকে জানায় দুপুর থেকে তাদের শ্রমিকদের তারা বেতন দেবে।

আদাবরে বকেয়া পাওনার দাবিতে ফ্যালকন ইন্টারন্যাশনাল নিট কম্পোজিটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন  প্রায় হাজার খানেক পোশাক শ্রমিক। আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, তিন দফা সময় নিয়েও মার্চের বেতন পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ, সেজন্য আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা। বেতন পরিশোধের জন্য তৃতীয় দফায় গতকাল সময় নেয়া হলেও কারখানার ফটকে তালা দিয়েছে মালিকপক্ষ।

র‌্যাব- ২-এর কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-২) মেজর এইচএম পারভেজ আরেফিন বলেন, আমরা বিষয়টি জেনে মালিকের সঙ্গে বসেছিলাম। মালিক আমাকে জানিয়েছেন, এ মাসের মধ্যেই শ্রমিকদের পাওনা দিয়ে দেয়া হবে। তবে ব্যাংকের কিছু ব্যাপার থাকে, এ জন্য নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না বলে মালিক জানিয়েছেন। জানতে চাইলে ফ্যালকন গার্মেন্টসের সুইং ডিপার্টমেন্টের কর্মী রোখসানা বেগম বলেন, আমাদের দিয়ে ১৪৫-১৭২ ঘণ্টা ওভারটাইম করিয়ে নিয়েছে। রাত ৩-৫টা পর্যন্ত কাজ করায়। এতো কষ্ট করায়, কিন্তু আমাদের টাকা দেয় না। খাবো কি, ঘরভাড়া দেব কীভাবে?

এ বিষয়ে আদাবর থানার ওসি কাজী শাহীদুজ্জামান বলেন, আমরা মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে তাদের ওভারটাইমের টাকা দিয়ে দিবেন বলে জানিয়েছেন ফ্যালকনের মালিক। অবশ্য পরে বেতন দেয়া হচ্ছে জানিয়ে ফ্যালকনের মালিক মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা ২৮ দিনের বেতন দিচ্ছি। তবে এ মাসের মধ্যে তাদের ওভারটাইমের টাকা দিয়ে দেয়া হবে।

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মিজানুর জানান, বেতন না পেয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে বকেয়া বেতন ভাতা ও জরুরি ত্রাণ সহায়তার দাবিতে বিমানবন্দর গোল চত্বর এলাকার সড়ক অবরোধ করেন উত্তরা দক্ষিণখান এলাকার রেদওয়ান, সিএনবি ও স্যার ডেনিম গার্মেন্টসের কর্মীরা। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে বার বার সড়ক ছেড়ে দিতে বলা হলেও দাবি আদায়ে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। যোগাযোগ করে মালিকপক্ষের সাড়া না পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিএমইএকে জানিয়েছে পুলিশ।

দক্ষিণখান থানার ফাঁড়ির ইনচার্জ সবুজ রহমান বলেন, রেদওয়ান গার্মেন্টসের বেতন বকেয়া ৩ মাসের, সিএনবি ও স্যার ডেনিম গার্মেন্টসের মার্চ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাদের একজন কোয়ারেন্টিনে, একজন পলাতক, আরেকজন বেতন দিতে অপারগ বলে জানিয়েছেন। এ অবস্থায় বিজিএমইএ-কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের দক্ষিণখান জোনের এডিসি হাফিজুর রহমান বলেন, গার্মেন্টস কর্মীদের সামলানোর দায়িত্ব পুলিশের না, কিন্তু এখন সেটাই করতে হচ্ছে। আমরা গার্মেন্টস মালিকদের খোঁজ করেও পাচ্ছি না, বিজিএমইএ-কে জানানো হয়েছে।

মহামারী ছড়ানো ঠেকাতে সরকার ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বেশিরভাগ তৈরি পোশাকের কারখানাও এখন বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে কারখানার শ্রমিকদের বেতনের জন্য সরকার ৫ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে মালিকদের। ১৬ এপ্রিলের মধ্যে বেতন পরিশোধ না করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও মালিকদের হুঁশিয়ার করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক কারাখানায় বেতন না হওয়ায়  আশুলিয়া, উত্তরা, বাড্ডা, ভাটারা, মিরপুর, ভাষানটেক, শাহআলী, তেজগাঁও, মতিঝিল এলাকায় শতশত শ্রমিক বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামে।