তিনটি সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা

পিস প্রোডাকশনে কাজ করেন পোশাক শ্রমিক আখলাছ আলী। ২৬ দিনের কাজের কোন বিল পাননি তিনি। এদিকে বাড়িওয়ালা তা মানছেন না বাড়িওয়ালা। ভাড়া দিতে না পারলে বাড়ি ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন তিনি। উপায় না দেখে স্ত্রীর নুপুর বিক্রি করে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করেছেন বলে জানালেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর মার্টিন নিটওয়্যার লিমিটেড নামে কারখানার এই শ্রমিক।

নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে। করোনার ভয় উপেক্ষা করে বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসছে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ করেছে পাঁচটি পোশাক কারখানার কয়েকশ’ শ্রমিক। এ সময় তারা ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কগুলো অবরোধ করে রাখেন।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রায় ছয় ঘণ্টা ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কটি অবরোধ করে রাখে মার্টিন নিটওয়্যার লিমিটেডের কয়েকশ’ শ্রমিক। রাস্তার ওপর বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। একই সময়ে বিসিকে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন মনোরম অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা।

মার্টিন নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানা মালিক বকেয়া বেতন দিচ্ছেন না। বিকাশ নম্বর নেয়ার পরও তাদের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। গতকাল সকালে বেতন দেয়ার কথা বললে শ্রমিকরা কারখানায় আসেন। কিন্তু মালিকপক্ষ জানায় আজ নয় আগামী রোববার বেতন দেয়া হবে।

গত কয়েকদিন যাবত বেতনের কথা বলে মালিকপক্ষ এভাবেই ঘুরাচ্ছেন বলে অভিযোগ করে কারখানাটির কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘আজকে বেতন দেয়ার কথা ছিল। গাড়ি ভাড়া দিয়ে এত দূর আসছি। কিন্তু আসার পর বলে রবিবার আসবা। এমন কেন করবে? আগে বললেই তো হতো। আর রবিবার দিবো কিনা তারও ঠিক নাই।’

এদিকে গতকাল সকালে ফতুল্লা থানার পোস্ট অফিস চত্বর ও পুলিশ লাইনস এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন হামিদ ফ্যাশন ও টিএস স্পোর্টস লিমিটেড নামে দুইটি পোশাক কারখানার প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক। তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কটি প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া শ্রমিকরা জানান, করোনাকে ইস্যু করে মালিকপক্ষ বেতন দিচ্ছে না। তার উপরে শ্রমিক ছাটাই করে দিচ্ছে। কবে বেতন দিবে, কবে কারখানা খুলবে তাও বলছে না। এসব কারণে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিকে উপেক্ষ করেও তারা রাস্তায় নেমে এসেছেন।

বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা বলেন, বাড়ি ভাড়া দিতে পারছি না, ঘরে চাল নাই। বেতন না দিলে তো না খাইয়া মরমু। করোনায় না মরলেও পেটের খিদায় মরমু।

একই সময়ে সোনারগাঁ উপজেলার ত্রিবরদি এলাকায় ইউবামিট নামে একটি পোশাক কারখানায় চার মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা। সেখানেও পরবর্তীতে শ্রমিকরা পুলিশের আশ্বাসে তাদের অবরোধ তুলে নেন।

শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল ২০২০ , ৪ বৈশাখ ১৪২৭, ২২ শাবান ১৪৪১

না’গঞ্জে

তিনটি সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ

পিস প্রোডাকশনে কাজ করেন পোশাক শ্রমিক আখলাছ আলী। ২৬ দিনের কাজের কোন বিল পাননি তিনি। এদিকে বাড়িওয়ালা তা মানছেন না বাড়িওয়ালা। ভাড়া দিতে না পারলে বাড়ি ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন তিনি। উপায় না দেখে স্ত্রীর নুপুর বিক্রি করে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করেছেন বলে জানালেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর মার্টিন নিটওয়্যার লিমিটেড নামে কারখানার এই শ্রমিক।

নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছে। করোনার ভয় উপেক্ষা করে বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসছে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ করেছে পাঁচটি পোশাক কারখানার কয়েকশ’ শ্রমিক। এ সময় তারা ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কগুলো অবরোধ করে রাখেন।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রায় ছয় ঘণ্টা ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়কটি অবরোধ করে রাখে মার্টিন নিটওয়্যার লিমিটেডের কয়েকশ’ শ্রমিক। রাস্তার ওপর বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। একই সময়ে বিসিকে বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন মনোরম অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা।

মার্টিন নিটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানা মালিক বকেয়া বেতন দিচ্ছেন না। বিকাশ নম্বর নেয়ার পরও তাদের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। গতকাল সকালে বেতন দেয়ার কথা বললে শ্রমিকরা কারখানায় আসেন। কিন্তু মালিকপক্ষ জানায় আজ নয় আগামী রোববার বেতন দেয়া হবে।

গত কয়েকদিন যাবত বেতনের কথা বলে মালিকপক্ষ এভাবেই ঘুরাচ্ছেন বলে অভিযোগ করে কারখানাটির কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘আজকে বেতন দেয়ার কথা ছিল। গাড়ি ভাড়া দিয়ে এত দূর আসছি। কিন্তু আসার পর বলে রবিবার আসবা। এমন কেন করবে? আগে বললেই তো হতো। আর রবিবার দিবো কিনা তারও ঠিক নাই।’

এদিকে গতকাল সকালে ফতুল্লা থানার পোস্ট অফিস চত্বর ও পুলিশ লাইনস এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন হামিদ ফ্যাশন ও টিএস স্পোর্টস লিমিটেড নামে দুইটি পোশাক কারখানার প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক। তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কটি প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া শ্রমিকরা জানান, করোনাকে ইস্যু করে মালিকপক্ষ বেতন দিচ্ছে না। তার উপরে শ্রমিক ছাটাই করে দিচ্ছে। কবে বেতন দিবে, কবে কারখানা খুলবে তাও বলছে না। এসব কারণে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিকে উপেক্ষ করেও তারা রাস্তায় নেমে এসেছেন।

বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা বলেন, বাড়ি ভাড়া দিতে পারছি না, ঘরে চাল নাই। বেতন না দিলে তো না খাইয়া মরমু। করোনায় না মরলেও পেটের খিদায় মরমু।

একই সময়ে সোনারগাঁ উপজেলার ত্রিবরদি এলাকায় ইউবামিট নামে একটি পোশাক কারখানায় চার মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা। সেখানেও পরবর্তীতে শ্রমিকরা পুলিশের আশ্বাসে তাদের অবরোধ তুলে নেন।