গৃহবন্দী করোনা দর্শন

রণেশ মৈত্র

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এই নিবন্ধটি লিখতে বসে এবারের মার্চের আনন্দ বর্জিত ইতিহাসমণ্ডিত দিনগুলো কীভাবে যে হারিয়ে গেল, তা স্মরণে আসছিল। বাঙালির প্রাণের তিনটি দিন- ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ ও ২৬ মার্চ; কীভাবে যে হারিয়ে গেল তা ভাবলে বেদনার্ত না হয়ে পারা যায় না। যে মানুষ এই দিন তিনটিকে ইতিহাসের দিনে প্রায় অর্ধশত বছর আগে পরিণত করেছিলেন, সেই মানুষ এবার কোথাও সমবেত হতে পারেননি। মানুষকে এবার গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হয়েছে যা অতীতে কোনদিন হয়নি। যার যার বাড়িতে স্বেচ্ছা বন্দী হয়ে থেকে স্মৃতিতে দিনগুলোকে আনা আর টেলিভিশনে নানা চ্যানেল দেখেই কাটাতে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা ব্যাপক পূর্ব প্রস্তুতি সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে এসে স্থগিত করা হলো ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি বাতিল হলো। এপ্রিলে এসে জানা গেল পহেলা বৈশাখ বাঙালির নববর্ষের দিনমান সব অনুষ্ঠানও বাতিল। কল্পনার বাইরে ছিল এমন সব সিদ্ধান্ত। কিন্তু তা করতে হলো, মানুষ বাঁচানোর জন্য নিশ্চিত বিপদের হাত থেকে কোটি কোটি মানুষকে রক্ষা করার জন্য।

এমন সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশে নেয়া হচ্ছে তা নয়। সমগ্র বিশ্বব্যাপীই মানুষ কোথাও সমবেত হতে পারছেন না গানের, নাচের, আবৃতির কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারছেন না। এমনকি একে-অপরের খবর নিতে কেউ কারও কাছে ছুটেও যেতে পারছেন না। আনন্দে কেউ কারও সঙ্গে হাত মেলাতে, পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে আলিঙ্গন করতেও পারছেন না। যেন এক আতঙ্কের অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হয়েছে পৃথিবী।

মানুষ গৃহবন্দী কিন্তু তার ভাবনার অপমৃত্যু ঘটেনি। ঘটবেও না কোনদিন। কারণ ভাবনার মৃত্যু নেই আর ভাবনারাই তো এ বিশ্বকে গড়েছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উত্থান ও প্রসার ঘটিয়েছে। সেই ভাবনা থেকেই মানুষ উদ্বিগ্নচিত্তে আজ প্রশ্ন তুলছেন-

মেডিসিনের শহর সুইজারল্যান্ড অসহায়;

প্রযুক্তির শহর জার্মানি নিরুপায়;

মানবতার শহর ইতালি কাঁদছে;

ক্ষমতার দেশ আমেরিকা দিশেহারা;

বস্তুত ডিসেম্বরে চীনে শুরু হয়ে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে করোনাভাইরাস দৃশ্যত- বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে দেশে দেশে যে মৃত্যুও মিছিল সংগঠিত করেছে তার ভরাবহতা এবং মানুষের অসহায়ত্ব বোঝাতেই সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি ও আমেরিকার প্রসঙ্গ তুলেছেন। গোটা পৃথিবীর সংবাদ মাধ্যমগুলো ঘণ্টায় ঘণ্টায় মৃত্যু ও আক্রান্তের যে তালিকা প্রকাশ করে চলেছে তা থেকেই মানুষের মনে ওই চারটি দেশ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন ও ভাবনা স্থান পেয়েছে।

চীনে যখন ঘটলো-লাখের কাছাকাছি মানুষ আক্রান্ত হলো কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে হাজার তিনেক মানুষের মৃত্যুর পর তারা যে দ্রুততায় রোগটিকে বিদায় দিল- তেমন বা তার চাইতে দ্রুততার সঙ্গে ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা কেন পারলো না-তা ভেবে সত্যিই কূলকিনারা পাচ্ছেন না সারা পৃথিবীর চিন্তাশীল ঘরে বসে থাকা কোটি কোটি মানুষ। ওই উন্নত দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কি এতই দুর্বল? তাদের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা ও এতটাই পিছনে পড়ে আছেন যে করোনার হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর কোন ওষুধ আজও তারা আবিষ্কার করতে পারছেন না? বিস্মিত হতে হয়, কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুর পর এবং ৫ লক্ষাধিক মানুষের সংক্রমণের পর সংবাদ সম্মেলন করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এপ্রিলে আমেরিকায় আরও এক থেকে দুই লাখ লোক মারা যেতে পারেন।

অপরদিকে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত। আফ্রিকার (সম্ভবত) একটি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশবাসীকে করোনা আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। বহু গৌরবের অধিকারী, ফুটবলে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশ এবং আর অসংখ্য গৌরবের অধিকারী উন্নত দেশ ইতালি যখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়, ফ্রান্স-জার্মানির মতো জ্ঞান-বিজ্ঞান-সভ্যতায় শীর্ষ স্থানে অধিষ্ঠিত ইউরোপীয় দেশে যখন প্রতিদিন শত শত মানুষ আক্রান্ত হন, মৃত্যুবরণ করেন তখন মানুষ আতঙ্কিত না হওয়ার কোন কারণ খুঁজে পাওয়া দুরূহ।

আবার যখন দক্ষিণ আমেরিকার ছোট্ট সমাজতান্ত্রিক দেশ কিউবা করোনা আক্রমণ থেকে প্রায় মুক্ত থাকে। দশকের পর দশক ধরে আমেরিকার আরোপকৃত অবরোধের মতো চরম প্রতিকূলতাকে পরাজিত করে করোনার ওষুধ (স্বল্পমূল্যে) আবিষ্কার করে। অসংখ্য ডাক্তার নার্স গড়ে তুলে বিপুল সংখ্যায় ইতালি ও অন্যান্য দেশে পাঠায়। তখন একদিকে যেমন বিস্ময়-বিমূঢ় হয়ে পড়তে হয়- তেমনই আবার তাদের এই সাফল্যে বিপুল আশাবাদেরও সৃষ্টি হয়।

তবে বহু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা, চিকিৎসার সুযোগহীনতা এবং উপযুক্ত শিক্ষা, বিশেষ করে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার নিদারুণ অভাবের দেশ বাংলাদেশকে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মানুষের মনে কম নেই। ‘লকডাউন’। আনুষ্ঠানিকভাবে না ঘোষণা করা হলেও দেশব্যাপী সামরিক বাহিনীকে যখন নামানো হয় রাস্তাঘাটে চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে অথবা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে তখন আমাদের বিজ্ঞান মনস্কহীনতা উলঙ্গভাবে ধরা পড়ে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, বাজার-বিপণি, গণপরিবহন পর্যন্ত বন্ধ থাকা অবস্থায়, বারংবার টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় সবাইকে সতর্ক করে দেয়া সত্ত্বেও রাস্তাঘাটে জটলা আমাদের অসচেতনাকেই নগ্নভাবে প্রকাশ করছে মাত্র। ফলে বিপদের আশঙ্কা কমছে না- বাড়ছে বরং। সবাইর অন্তর থেকে বোঝা দরকার যে নিময় বিধি না মেনে বাইরে ঘোরাফেরা করলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবল। আর তা যদি হয়- তাহলে তার গোটা সংসার, প্রতিবেশীসহ বহু লোকের বিপদ ঘটে যেতে পারে।

আসলে মনে হয়, অনেকে এ বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছেন এই ভেবে যে বাংলাদেশে সরকারি প্রচারণা অনুযায়ীই করোনা সংক্রমণ নামমাত্র। তাই কঠোরভাবে ওই নিয়মগুলো প্রয়োগ, তাদের মতে যুক্তিহীন। সে কারণেই হয়তো নিয়ম মানার তেমন একটা প্রয়োজন অনুভব করছেন না আমাদের তরুণেরা। প্রকৃত পরিস্থিতি ঢাকায় বসে বোঝা যাবে না। যেতে হবে গ্রাম-গ্রামান্তরে সেখানে সরকারি নিষেধাজ্ঞা, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা এবং কথাবর্তার প্রয়োগ চোখেই পড়ে না প্রায়। হাটবাজার দোকান-পাট মোটামুটি স্বাভাবিকভাবেই চলছে। উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারাও পেরে উঠছেন না বহু ক্ষেত্রেই। কারণ নিজ নিজ এলাকার নির্বাচিত নানা স্তরের জনপ্রতিনিধির একটি বড় অংশই ব্যবসা বাণিজ্যে নিয়োজিত এবং তারা তাদের ব্যবসা যথারীতি চালিয়ে যেতে সচেষ্ট। স্বীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থ বা, এমনকি নিজ এলাকার ভোটারদের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসতে তাদের অনেকেই রাজি নন।

এ কথা ঠিক, বহু লোকই নিজেদের গৃহবন্দী করে রেখেছেন। কিন্তু তা কতদিন সম্ভব হবে? হাটবাজার তো দৈনন্দিন ব্যাপার ছিল। এখনকার পরিস্থিতিতে তা না হয় দৈনন্দিন না হয়ে সাপ্তাহিক ব্যাপার তো হবেই। অর্থাৎ সপ্তাহতে অন্তত একবার তো বাজারে যেতেই হবে এবং সেখানে অজস্র মানুষের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি এড়িয়ে চলা অসম্ভব। তাই বাজারের সংখ্যা বাড়ানো হলে এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হতে পারে। অন্তত সাময়িকভাবে।

সর্বাধিক সংকটে পড়েছেন গরিব মানুষেরা-বেকার মানুষেরা। রিকশাচালক, ভ্যানচালক প্রভৃতির সংখ্যা বিপুল। তাদের তো না বেরিয়ে উপায় নেই। পেটের দায়েই বেরোতে হয়। আবার বের হয়েও খুব একটা লাভ হচ্ছে না, তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছাতে হবে।

সরকার ও নানা সামাজিক সংগঠন যেভাবে গরিব মানুষদের মধ্যে খাবার পৌঁছাচ্ছেন- তাও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ তারা ক্যামেরাম্যান সঙ্গে নেন এবং বহুসংখ্যক মানুষকে একত্রে জমা করে বিলি করতে পছন্দ করেন। ঝুঁকির দিকটা এতে অবহেলিত হচ্ছে-ঝুঁকিও বাড়ছে। ফলে বিপদাশঙ্কা গরিব মানুষদের বিনা মূল্যে খাবার যেমন দিতে হবে, তেমনি তা আবার ঝুঁকিমুক্তভাবেও দিতে হবে। তাই পুলিশ বা প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে যতটা সম্ভব বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়াই সর্বাধিক নিরাপদ পদ্ধতি।

নিবন্ধের শেষপ্রান্তে এসে দেখছি আজ ৩ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৫৩,০০০ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসের শিকার হয়ে মারা গেছেন। ১০ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত। লক্ষণীয় যে উন্নততর দেশগুলোর অবস্থাই সর্বাধিক বেহাল। অপরাপক্ষে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো অবস্থাপন্ন। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।

এখন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যদি অধিকতর সচেতন হয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে পারে তবে হয়তো এই দেশগুলো অনেক কম ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারবে।

কিন্তু বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থা সরাসরি অভিযোগ এনেছে যে ‘বাংলাদেশের মানুষ অসচেতন-তাই সেখানে ২০ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। মানুষ যে অসচেতন আমরা নিজেরাই স্বীকার করি এবং সে কারণেই মানুষকে অথবা রাস্তায় না বেরিয়ে ঘরে থাকতে বাধ্য করার চেষ্টা করছি-প্রয়োজনে নিয়ম ভঙ্গকারীদের জেল-জরিমানার মতো শাস্তিও দিচ্ছি। তাই বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলো বাড়াবাড়িভাবে মানার ও মানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

এই অঞ্চলে ধর্মীয় অন্ধত্ব একটি মারাত্মক সমস্যা সংকট সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলা যায়, নববর্ষের সাংস্কৃতিক সমাবেশ, বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকীর যাবতীয় সমাবেশ, সব রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ করাতে কোন সমস্যা না হলেও মসজিদগুলোতে জমা আর নামায বন্ধ করতে সরকার অহেতুক দুর্বল চিত্ততার পরিচয় দিচ্ছে। যেখানে সৌদি আরব সব ধর্মীয় সমাবেশ বন্ধ করেছে, করোনা প্রতিরোধ করতে কারফিউ জারি করেছে, ইরান লকআউট করেছে সেখানে বাংলাদেশে কেন এটা করা হবে না? যতদিন সংকটটি থাকবে ততদিন জুমা, অন্যান্য জালছা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মীয় সমাবেশ কড়াকড়িভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক। ততদিন সব নামাজ, সব পূজা, সব প্রার্থনা ঘরে বসে করলে সওয়াব বা পুণ্য আদৌ কম হবে না।

গোটা বিশ্বের এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে সৌদি আরব এ বছরের জন্য মুসলিমদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পবিত্র হজ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করতে চলেছে। এ থেকেও আমাদের শিক্ষা নেয়া কর্তব্য।

সরকার অবলিম্বে সব জেলা করোনা টেস্ট ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন-পৌরসভা ও জেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদগুলো পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনায় সর্বত্র জীবাণুনাশক ওষুধ কেন্দ্র করার করার ব্যবস্থা করুন। মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সবার বাড়ি বাড়ি সুলভমূল্যে পৌঁছানোও জরুরি। আর আসুন, পারিবারিক পর্যায় থেকে সব পর্যায়ে আমরা স্ব-প্রণোদিত হয়ে গৃহবন্দী থেকে নিজেরা বাঁচি, প্রতিবেশীদের ও দেশবাসীকে বাঁচাই। মানুষই শ্রেষ্ঠ জীব-সেই শ্রেষ্ঠত্বেও সার্বিক পরীক্ষা দেয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।

এবারে কবি শঙ্খ ঘোষের একটি কবিতা দিয়ে নিবন্ধটির সমাপ্তি টানি। কবিতাটির নাম শঙ্খনীল

আমাদের দেখা হোক মহামারী শেষে

আমাদের দেখা হোক জিতে ফিরে এসে

আমাদের দেখা হোক জীবাণু-ঘুমালে

আমাদের দেখা হোক সবুজ সকালে

আমাদের দেখা হোক কান্নার ওপারে

আমাদের দেখা হোক সুখের শহরে

আমাদের দেখা হোক হাতের তালুতে

আমাদের দেখা হোক ভোরের আলোতে

আমাদের দেখা হোক বিজ্ঞান জিতলে

আমাদের দেখা হোক মৃত্যু হেরে গেলে

আমাদের দেখা হোক আগের মতো করে

আমাদের দেখা হোক সুস্থ শহরে।

আমরা রয়েছি, সেই সাক্ষাৎ, সেই হ্যান্ডসেক, সেই আলিঙ্গন, সেই নৈকট্য, সেই সমাবেশ, সেই হাট বাজার, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুখরিত পদচারণার দিনগুলো সবার জন্য ফিরে আসুক।

[লেখক : সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত

সভাপতিম-লীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ]

raneshmaitra@gmail.com

শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল ২০২০ , ৪ বৈশাখ ১৪২৭, ২২ শাবান ১৪৪১

গৃহবন্দী করোনা দর্শন

রণেশ মৈত্র

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এই নিবন্ধটি লিখতে বসে এবারের মার্চের আনন্দ বর্জিত ইতিহাসমণ্ডিত দিনগুলো কীভাবে যে হারিয়ে গেল, তা স্মরণে আসছিল। বাঙালির প্রাণের তিনটি দিন- ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ ও ২৬ মার্চ; কীভাবে যে হারিয়ে গেল তা ভাবলে বেদনার্ত না হয়ে পারা যায় না। যে মানুষ এই দিন তিনটিকে ইতিহাসের দিনে প্রায় অর্ধশত বছর আগে পরিণত করেছিলেন, সেই মানুষ এবার কোথাও সমবেত হতে পারেননি। মানুষকে এবার গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হয়েছে যা অতীতে কোনদিন হয়নি। যার যার বাড়িতে স্বেচ্ছা বন্দী হয়ে থেকে স্মৃতিতে দিনগুলোকে আনা আর টেলিভিশনে নানা চ্যানেল দেখেই কাটাতে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা ব্যাপক পূর্ব প্রস্তুতি সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে এসে স্থগিত করা হলো ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি বাতিল হলো। এপ্রিলে এসে জানা গেল পহেলা বৈশাখ বাঙালির নববর্ষের দিনমান সব অনুষ্ঠানও বাতিল। কল্পনার বাইরে ছিল এমন সব সিদ্ধান্ত। কিন্তু তা করতে হলো, মানুষ বাঁচানোর জন্য নিশ্চিত বিপদের হাত থেকে কোটি কোটি মানুষকে রক্ষা করার জন্য।

এমন সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশে নেয়া হচ্ছে তা নয়। সমগ্র বিশ্বব্যাপীই মানুষ কোথাও সমবেত হতে পারছেন না গানের, নাচের, আবৃতির কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারছেন না। এমনকি একে-অপরের খবর নিতে কেউ কারও কাছে ছুটেও যেতে পারছেন না। আনন্দে কেউ কারও সঙ্গে হাত মেলাতে, পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে আলিঙ্গন করতেও পারছেন না। যেন এক আতঙ্কের অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হয়েছে পৃথিবী।

মানুষ গৃহবন্দী কিন্তু তার ভাবনার অপমৃত্যু ঘটেনি। ঘটবেও না কোনদিন। কারণ ভাবনার মৃত্যু নেই আর ভাবনারাই তো এ বিশ্বকে গড়েছে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উত্থান ও প্রসার ঘটিয়েছে। সেই ভাবনা থেকেই মানুষ উদ্বিগ্নচিত্তে আজ প্রশ্ন তুলছেন-

মেডিসিনের শহর সুইজারল্যান্ড অসহায়;

প্রযুক্তির শহর জার্মানি নিরুপায়;

মানবতার শহর ইতালি কাঁদছে;

ক্ষমতার দেশ আমেরিকা দিশেহারা;

বস্তুত ডিসেম্বরে চীনে শুরু হয়ে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে করোনাভাইরাস দৃশ্যত- বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে দেশে দেশে যে মৃত্যুও মিছিল সংগঠিত করেছে তার ভরাবহতা এবং মানুষের অসহায়ত্ব বোঝাতেই সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি ও আমেরিকার প্রসঙ্গ তুলেছেন। গোটা পৃথিবীর সংবাদ মাধ্যমগুলো ঘণ্টায় ঘণ্টায় মৃত্যু ও আক্রান্তের যে তালিকা প্রকাশ করে চলেছে তা থেকেই মানুষের মনে ওই চারটি দেশ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন ও ভাবনা স্থান পেয়েছে।

চীনে যখন ঘটলো-লাখের কাছাকাছি মানুষ আক্রান্ত হলো কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে হাজার তিনেক মানুষের মৃত্যুর পর তারা যে দ্রুততায় রোগটিকে বিদায় দিল- তেমন বা তার চাইতে দ্রুততার সঙ্গে ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা কেন পারলো না-তা ভেবে সত্যিই কূলকিনারা পাচ্ছেন না সারা পৃথিবীর চিন্তাশীল ঘরে বসে থাকা কোটি কোটি মানুষ। ওই উন্নত দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কি এতই দুর্বল? তাদের স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা ও এতটাই পিছনে পড়ে আছেন যে করোনার হাত থেকে মানুষকে বাঁচানোর কোন ওষুধ আজও তারা আবিষ্কার করতে পারছেন না? বিস্মিত হতে হয়, কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুর পর এবং ৫ লক্ষাধিক মানুষের সংক্রমণের পর সংবাদ সম্মেলন করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এপ্রিলে আমেরিকায় আরও এক থেকে দুই লাখ লোক মারা যেতে পারেন।

অপরদিকে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত। আফ্রিকার (সম্ভবত) একটি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশবাসীকে করোনা আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। বহু গৌরবের অধিকারী, ফুটবলে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশ এবং আর অসংখ্য গৌরবের অধিকারী উন্নত দেশ ইতালি যখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়, ফ্রান্স-জার্মানির মতো জ্ঞান-বিজ্ঞান-সভ্যতায় শীর্ষ স্থানে অধিষ্ঠিত ইউরোপীয় দেশে যখন প্রতিদিন শত শত মানুষ আক্রান্ত হন, মৃত্যুবরণ করেন তখন মানুষ আতঙ্কিত না হওয়ার কোন কারণ খুঁজে পাওয়া দুরূহ।

আবার যখন দক্ষিণ আমেরিকার ছোট্ট সমাজতান্ত্রিক দেশ কিউবা করোনা আক্রমণ থেকে প্রায় মুক্ত থাকে। দশকের পর দশক ধরে আমেরিকার আরোপকৃত অবরোধের মতো চরম প্রতিকূলতাকে পরাজিত করে করোনার ওষুধ (স্বল্পমূল্যে) আবিষ্কার করে। অসংখ্য ডাক্তার নার্স গড়ে তুলে বিপুল সংখ্যায় ইতালি ও অন্যান্য দেশে পাঠায়। তখন একদিকে যেমন বিস্ময়-বিমূঢ় হয়ে পড়তে হয়- তেমনই আবার তাদের এই সাফল্যে বিপুল আশাবাদেরও সৃষ্টি হয়।

তবে বহু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা, চিকিৎসার সুযোগহীনতা এবং উপযুক্ত শিক্ষা, বিশেষ করে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার নিদারুণ অভাবের দেশ বাংলাদেশকে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মানুষের মনে কম নেই। ‘লকডাউন’। আনুষ্ঠানিকভাবে না ঘোষণা করা হলেও দেশব্যাপী সামরিক বাহিনীকে যখন নামানো হয় রাস্তাঘাটে চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে অথবা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে তখন আমাদের বিজ্ঞান মনস্কহীনতা উলঙ্গভাবে ধরা পড়ে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, বাজার-বিপণি, গণপরিবহন পর্যন্ত বন্ধ থাকা অবস্থায়, বারংবার টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় সবাইকে সতর্ক করে দেয়া সত্ত্বেও রাস্তাঘাটে জটলা আমাদের অসচেতনাকেই নগ্নভাবে প্রকাশ করছে মাত্র। ফলে বিপদের আশঙ্কা কমছে না- বাড়ছে বরং। সবাইর অন্তর থেকে বোঝা দরকার যে নিময় বিধি না মেনে বাইরে ঘোরাফেরা করলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা প্রবল। আর তা যদি হয়- তাহলে তার গোটা সংসার, প্রতিবেশীসহ বহু লোকের বিপদ ঘটে যেতে পারে।

আসলে মনে হয়, অনেকে এ বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছেন এই ভেবে যে বাংলাদেশে সরকারি প্রচারণা অনুযায়ীই করোনা সংক্রমণ নামমাত্র। তাই কঠোরভাবে ওই নিয়মগুলো প্রয়োগ, তাদের মতে যুক্তিহীন। সে কারণেই হয়তো নিয়ম মানার তেমন একটা প্রয়োজন অনুভব করছেন না আমাদের তরুণেরা। প্রকৃত পরিস্থিতি ঢাকায় বসে বোঝা যাবে না। যেতে হবে গ্রাম-গ্রামান্তরে সেখানে সরকারি নিষেধাজ্ঞা, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা এবং কথাবর্তার প্রয়োগ চোখেই পড়ে না প্রায়। হাটবাজার দোকান-পাট মোটামুটি স্বাভাবিকভাবেই চলছে। উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারাও পেরে উঠছেন না বহু ক্ষেত্রেই। কারণ নিজ নিজ এলাকার নির্বাচিত নানা স্তরের জনপ্রতিনিধির একটি বড় অংশই ব্যবসা বাণিজ্যে নিয়োজিত এবং তারা তাদের ব্যবসা যথারীতি চালিয়ে যেতে সচেষ্ট। স্বীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থ বা, এমনকি নিজ এলাকার ভোটারদের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসতে তাদের অনেকেই রাজি নন।

এ কথা ঠিক, বহু লোকই নিজেদের গৃহবন্দী করে রেখেছেন। কিন্তু তা কতদিন সম্ভব হবে? হাটবাজার তো দৈনন্দিন ব্যাপার ছিল। এখনকার পরিস্থিতিতে তা না হয় দৈনন্দিন না হয়ে সাপ্তাহিক ব্যাপার তো হবেই। অর্থাৎ সপ্তাহতে অন্তত একবার তো বাজারে যেতেই হবে এবং সেখানে অজস্র মানুষের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি এড়িয়ে চলা অসম্ভব। তাই বাজারের সংখ্যা বাড়ানো হলে এ সমস্যার অনেকটা সমাধান হতে পারে। অন্তত সাময়িকভাবে।

সর্বাধিক সংকটে পড়েছেন গরিব মানুষেরা-বেকার মানুষেরা। রিকশাচালক, ভ্যানচালক প্রভৃতির সংখ্যা বিপুল। তাদের তো না বেরিয়ে উপায় নেই। পেটের দায়েই বেরোতে হয়। আবার বের হয়েও খুব একটা লাভ হচ্ছে না, তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছাতে হবে।

সরকার ও নানা সামাজিক সংগঠন যেভাবে গরিব মানুষদের মধ্যে খাবার পৌঁছাচ্ছেন- তাও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ তারা ক্যামেরাম্যান সঙ্গে নেন এবং বহুসংখ্যক মানুষকে একত্রে জমা করে বিলি করতে পছন্দ করেন। ঝুঁকির দিকটা এতে অবহেলিত হচ্ছে-ঝুঁকিও বাড়ছে। ফলে বিপদাশঙ্কা গরিব মানুষদের বিনা মূল্যে খাবার যেমন দিতে হবে, তেমনি তা আবার ঝুঁকিমুক্তভাবেও দিতে হবে। তাই পুলিশ বা প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে যতটা সম্ভব বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়াই সর্বাধিক নিরাপদ পদ্ধতি।

নিবন্ধের শেষপ্রান্তে এসে দেখছি আজ ৩ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৫৩,০০০ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসের শিকার হয়ে মারা গেছেন। ১০ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত। লক্ষণীয় যে উন্নততর দেশগুলোর অবস্থাই সর্বাধিক বেহাল। অপরাপক্ষে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো অবস্থাপন্ন। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।

এখন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যদি অধিকতর সচেতন হয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে পারে তবে হয়তো এই দেশগুলো অনেক কম ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারবে।

কিন্তু বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থা সরাসরি অভিযোগ এনেছে যে ‘বাংলাদেশের মানুষ অসচেতন-তাই সেখানে ২০ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। মানুষ যে অসচেতন আমরা নিজেরাই স্বীকার করি এবং সে কারণেই মানুষকে অথবা রাস্তায় না বেরিয়ে ঘরে থাকতে বাধ্য করার চেষ্টা করছি-প্রয়োজনে নিয়ম ভঙ্গকারীদের জেল-জরিমানার মতো শাস্তিও দিচ্ছি। তাই বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলো বাড়াবাড়িভাবে মানার ও মানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

এই অঞ্চলে ধর্মীয় অন্ধত্ব একটি মারাত্মক সমস্যা সংকট সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলা যায়, নববর্ষের সাংস্কৃতিক সমাবেশ, বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকীর যাবতীয় সমাবেশ, সব রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ করাতে কোন সমস্যা না হলেও মসজিদগুলোতে জমা আর নামায বন্ধ করতে সরকার অহেতুক দুর্বল চিত্ততার পরিচয় দিচ্ছে। যেখানে সৌদি আরব সব ধর্মীয় সমাবেশ বন্ধ করেছে, করোনা প্রতিরোধ করতে কারফিউ জারি করেছে, ইরান লকআউট করেছে সেখানে বাংলাদেশে কেন এটা করা হবে না? যতদিন সংকটটি থাকবে ততদিন জুমা, অন্যান্য জালছা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মীয় সমাবেশ কড়াকড়িভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক। ততদিন সব নামাজ, সব পূজা, সব প্রার্থনা ঘরে বসে করলে সওয়াব বা পুণ্য আদৌ কম হবে না।

গোটা বিশ্বের এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে সৌদি আরব এ বছরের জন্য মুসলিমদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পবিত্র হজ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করতে চলেছে। এ থেকেও আমাদের শিক্ষা নেয়া কর্তব্য।

সরকার অবলিম্বে সব জেলা করোনা টেস্ট ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন-পৌরসভা ও জেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদগুলো পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনায় সর্বত্র জীবাণুনাশক ওষুধ কেন্দ্র করার করার ব্যবস্থা করুন। মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সবার বাড়ি বাড়ি সুলভমূল্যে পৌঁছানোও জরুরি। আর আসুন, পারিবারিক পর্যায় থেকে সব পর্যায়ে আমরা স্ব-প্রণোদিত হয়ে গৃহবন্দী থেকে নিজেরা বাঁচি, প্রতিবেশীদের ও দেশবাসীকে বাঁচাই। মানুষই শ্রেষ্ঠ জীব-সেই শ্রেষ্ঠত্বেও সার্বিক পরীক্ষা দেয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে।

এবারে কবি শঙ্খ ঘোষের একটি কবিতা দিয়ে নিবন্ধটির সমাপ্তি টানি। কবিতাটির নাম শঙ্খনীল

আমাদের দেখা হোক মহামারী শেষে

আমাদের দেখা হোক জিতে ফিরে এসে

আমাদের দেখা হোক জীবাণু-ঘুমালে

আমাদের দেখা হোক সবুজ সকালে

আমাদের দেখা হোক কান্নার ওপারে

আমাদের দেখা হোক সুখের শহরে

আমাদের দেখা হোক হাতের তালুতে

আমাদের দেখা হোক ভোরের আলোতে

আমাদের দেখা হোক বিজ্ঞান জিতলে

আমাদের দেখা হোক মৃত্যু হেরে গেলে

আমাদের দেখা হোক আগের মতো করে

আমাদের দেখা হোক সুস্থ শহরে।

আমরা রয়েছি, সেই সাক্ষাৎ, সেই হ্যান্ডসেক, সেই আলিঙ্গন, সেই নৈকট্য, সেই সমাবেশ, সেই হাট বাজার, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুখরিত পদচারণার দিনগুলো সবার জন্য ফিরে আসুক।

[লেখক : সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত

সভাপতিম-লীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ]

raneshmaitra@gmail.com