করোনার কারণে শ্রমিকের অভাব

বোরোর ব্যাপক ফলন ধান কাটায় সংকট

সারাদেশে বোরো ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু ধান কাটার চরম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষি শ্রমিক সংকট। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারাদেশে এখন লকডাউন চলছে। বন্ধ হয়ে আছে গণপরিবহন। অন্য কোন যানবাহন সড়কে চলতে পারছে না। ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটা এলাকায় যেতে পারছেন না। স্থানীয়ভাবে পাওয়া কৃষি শ্রমিকরা যতটা পারছেন ধান কাটছেন। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইতোমধ্যে কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটায় বিঘœ ঘটছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ ও সিলেটের হাওর অঞ্চলের কৃষকরা ধান কাটার অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। যশোর, সাতক্ষীরাতে একই শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে অনেক জায়গায় ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে না পারলে দেশে খাদ্যসংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কৃষি বিভাগের উদ্যোগে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার পাশাপাশি শ্রমিক আনার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। ইতোমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি শ্রমিকদের লকডাউনের বাইরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, দেশে মোট উৎপাদিত ধানের ১৮ শতাংশের বেশি উৎপন্ন হয় হাওরের সাত জেলায়। খাদ্য সরবরাহের বড় অংশ নিশ্চিত হয় এখানকার ধানে। সরকারি গুদামে মজুদের মূল অংশটিও নির্ভর করে এই ফসলের ওপর। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং সিলেটের একাংশের অন্তত ২৫০টি হাওরে বোরো আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে দুই কোটি টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

বৈরী পরিস্থিতির মধ্যেই থাকেন হাওরের লোকজন। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ অঞ্চলের মানুষের নিত্যসঙ্গী। এর মধ্যে এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বোরো ফসল ঘরে তুলতে সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। এপ্রিলের শুরুতেই মূলত বোরো কাটা শুরু হয়। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে সারাদেশে যানবাহন বন্ধ থাকায় বাইরের জেলার কৃষিশ্রমিকরা এবার হাওরাঞ্চলে যেতে পারছেন না। ফলে এবার কিছুটা দেরিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধান কাটতে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংগ্রহ করতে পারেননি কৃষকরা। ইতোমধ্যে বিআর-২৮ ধান পেকে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কাটতে না পারলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যান্য জাতের ধান ১০ দিনের মধ্যে কেটে শেষ করতে হবে। না হলে হাওরে পানি চলে আসবে। শ্রমিকের অভাব ও পর্যাপ্ত মেশিন না থাকায় যথাসময়ে বোরো ধান কেটে গোলায় তুলতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হাওরের কৃষক।

এদিকে কৃষি যন্ত্রপাতি কিনতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি বিভাগকে ১০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রিপার ও হারভেস্টার কেনা হয়েছে। যন্ত্রপাতিগুলো হাওরে যাচ্ছে। কৃষকদের ধান ঘরে তোলার স্বার্থেই সরকার হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ইতোমধ্যে হাওরে বাঁধগুলোর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। শ্রমিক সঙ্কটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত ধান কাটার যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে অর্ধেক দাম পরিশোধের মাধ্যমে ধান কাটার মেশিন দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

সরকারের এই উদ্যোগ সত্ত্বেও হাওরাঞ্চলের কৃষকদের শঙ্কা দূর হয়নি। দেশজুড়ে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অন্য এলাকা থেকে কৃষি শ্রমিকরা আসতে পারছেন না। স্থানীয় শ্রমিকদের মাঝেও করোনা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শ্রমিকের অভাবে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না অনেক কৃষক। হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, বাহুবল, নবীগঞ্জ উপজেলায় রংপুর, কুড়িগ্রাম থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার ধান কাটার শ্রমিক আসতেন। তারা ফসল তোলার আগ পর্যন্ত এ জনপদে অবস্থান করে ধান কাটা, মাড়াই, ধান শুকানোর কাজ করতেন। এবার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারা আসতে পারছেন না।

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জে বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে সোনালী ফসলে ঢেউ। পাকা ধানের মধুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা হওয়ার পরিবর্তে চিন্তার ভাজ পড়েছে কৃষকের কপালে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক না আসায় পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে চিন্তিত কৃষক। তবে প্রশাসন বলছে, দুশ্চিন্তার কারণ নেই, প্রয়োজনে সরকারি উদ্যোগে শ্রমিক এনে ধান কাটার ব্যবস্থা করা হবে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮শ’ হেক্টর। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ধান কাটা শুরু করলেও শ্রমিক সঙ্কটে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। করোনাভাইরাসের কারণে বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক আসছে না। আবার এলাকার শ্রমিকও করোনা সংক্রমণ রোধে মাঠে যেতে আগ্রহী নন। এ অবস্থায় পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার কৃষক।

তাদের দাবি, প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিক আসে হবিগঞ্জে। কিন্তু এরপরও তীব্র শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়। করোনাভাইরাসের কারণে কোন অঞ্চল থেকেই শ্রমিক আসতে চাচ্ছে না। ফলে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে বন্যায় ফসলহানীর আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পইল এলাকার কৃষক সোহেল মিয়া বলেন, ‘আমি ১৫ একর জমিতে চাষ করেছি। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে বাইরে থেকে শ্রমিক আসছে না, আবার এলাকার শ্রমিকও ভয়ে কাজ করতে চাচ্ছে না।’ মো. মানিক মিয়া বলেন, ‘অন্য বছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর শ্রমিক আসে। কিন্তু এরপরও শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। কিন্তু এ বছর বাইরে থেকে শ্রমিক না আসায় কি করে হাওরের ধান কাটবো বুঝতে পারছি না।’ বানিয়াচংয়ের কৃষক আলাউদ্দীন বলেন, ‘শুনলাম এই সপ্তাহেই প্রচুর বৃষ্টি হবে। এতে হাওরের ভাটি এলাকার জমি পানিতে তলিয়ে যাবে। একদিকে এই আশঙ্কা অন্যদিকে শ্রমিক সংকট। কি করে ধান ঘরে তুলব চিন্তায় চোখে ঘুম আসে না।’

এদিকে হাওর অঞ্চলের বোরো ধান দ্রুত কাটার তাগিদ দিয়েছে হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয় বোর্ড। কারণ হবিগঞ্জসহ পুরো সিলেট অঞ্চলে আগাম বন্যার আশঙ্কা জানিয়েছে আবহাওয়া আধিদফতর। এতে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বোরো জমি প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, সরকারি উদ্যোগে শ্রমিক আনা এবং তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে। এজন্য বাইরের জেলার সঙ্গে আলোচনা চলছে।

শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০ , ৫ বৈশাখ ১৪২৭, ২৩ শাবান ১৪৪১

করোনার কারণে শ্রমিকের অভাব

বোরোর ব্যাপক ফলন ধান কাটায় সংকট

সাইফুল শুভ

image

হবিগঞ্জের হাওরে বোরো ক্ষেতে শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে একাই নেমেছেন জমির মালিক -সংবাদ

সারাদেশে বোরো ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু ধান কাটার চরম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষি শ্রমিক সংকট। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারাদেশে এখন লকডাউন চলছে। বন্ধ হয়ে আছে গণপরিবহন। অন্য কোন যানবাহন সড়কে চলতে পারছে না। ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটা এলাকায় যেতে পারছেন না। স্থানীয়ভাবে পাওয়া কৃষি শ্রমিকরা যতটা পারছেন ধান কাটছেন। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইতোমধ্যে কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটায় বিঘœ ঘটছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ ও সিলেটের হাওর অঞ্চলের কৃষকরা ধান কাটার অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। যশোর, সাতক্ষীরাতে একই শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে অনেক জায়গায় ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে না পারলে দেশে খাদ্যসংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কৃষি বিভাগের উদ্যোগে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার পাশাপাশি শ্রমিক আনার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। ইতোমধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি শ্রমিকদের লকডাউনের বাইরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, দেশে মোট উৎপাদিত ধানের ১৮ শতাংশের বেশি উৎপন্ন হয় হাওরের সাত জেলায়। খাদ্য সরবরাহের বড় অংশ নিশ্চিত হয় এখানকার ধানে। সরকারি গুদামে মজুদের মূল অংশটিও নির্ভর করে এই ফসলের ওপর। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং সিলেটের একাংশের অন্তত ২৫০টি হাওরে বোরো আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে দুই কোটি টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

বৈরী পরিস্থিতির মধ্যেই থাকেন হাওরের লোকজন। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ অঞ্চলের মানুষের নিত্যসঙ্গী। এর মধ্যে এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বোরো ফসল ঘরে তুলতে সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। এপ্রিলের শুরুতেই মূলত বোরো কাটা শুরু হয়। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে সারাদেশে যানবাহন বন্ধ থাকায় বাইরের জেলার কৃষিশ্রমিকরা এবার হাওরাঞ্চলে যেতে পারছেন না। ফলে এবার কিছুটা দেরিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধান কাটতে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংগ্রহ করতে পারেননি কৃষকরা। ইতোমধ্যে বিআর-২৮ ধান পেকে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কাটতে না পারলে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যান্য জাতের ধান ১০ দিনের মধ্যে কেটে শেষ করতে হবে। না হলে হাওরে পানি চলে আসবে। শ্রমিকের অভাব ও পর্যাপ্ত মেশিন না থাকায় যথাসময়ে বোরো ধান কেটে গোলায় তুলতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন হাওরের কৃষক।

এদিকে কৃষি যন্ত্রপাতি কিনতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি বিভাগকে ১০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রিপার ও হারভেস্টার কেনা হয়েছে। যন্ত্রপাতিগুলো হাওরে যাচ্ছে। কৃষকদের ধান ঘরে তোলার স্বার্থেই সরকার হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ইতোমধ্যে হাওরে বাঁধগুলোর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। শ্রমিক সঙ্কটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত ধান কাটার যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে অর্ধেক দাম পরিশোধের মাধ্যমে ধান কাটার মেশিন দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

সরকারের এই উদ্যোগ সত্ত্বেও হাওরাঞ্চলের কৃষকদের শঙ্কা দূর হয়নি। দেশজুড়ে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অন্য এলাকা থেকে কৃষি শ্রমিকরা আসতে পারছেন না। স্থানীয় শ্রমিকদের মাঝেও করোনা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শ্রমিকের অভাবে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না অনেক কৃষক। হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, বাহুবল, নবীগঞ্জ উপজেলায় রংপুর, কুড়িগ্রাম থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার ধান কাটার শ্রমিক আসতেন। তারা ফসল তোলার আগ পর্যন্ত এ জনপদে অবস্থান করে ধান কাটা, মাড়াই, ধান শুকানোর কাজ করতেন। এবার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারা আসতে পারছেন না।

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জে বিস্তীর্ণ হাওরজুড়ে সোনালী ফসলে ঢেউ। পাকা ধানের মধুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা হওয়ার পরিবর্তে চিন্তার ভাজ পড়েছে কৃষকের কপালে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক না আসায় পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে চিন্তিত কৃষক। তবে প্রশাসন বলছে, দুশ্চিন্তার কারণ নেই, প্রয়োজনে সরকারি উদ্যোগে শ্রমিক এনে ধান কাটার ব্যবস্থা করা হবে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮শ’ হেক্টর। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ধান কাটা শুরু করলেও শ্রমিক সঙ্কটে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। করোনাভাইরাসের কারণে বাইরের জেলা থেকে শ্রমিক আসছে না। আবার এলাকার শ্রমিকও করোনা সংক্রমণ রোধে মাঠে যেতে আগ্রহী নন। এ অবস্থায় পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার কৃষক।

তাদের দাবি, প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিক আসে হবিগঞ্জে। কিন্তু এরপরও তীব্র শ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়। করোনাভাইরাসের কারণে কোন অঞ্চল থেকেই শ্রমিক আসতে চাচ্ছে না। ফলে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে বন্যায় ফসলহানীর আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পইল এলাকার কৃষক সোহেল মিয়া বলেন, ‘আমি ১৫ একর জমিতে চাষ করেছি। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে বাইরে থেকে শ্রমিক আসছে না, আবার এলাকার শ্রমিকও ভয়ে কাজ করতে চাচ্ছে না।’ মো. মানিক মিয়া বলেন, ‘অন্য বছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর শ্রমিক আসে। কিন্তু এরপরও শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। কিন্তু এ বছর বাইরে থেকে শ্রমিক না আসায় কি করে হাওরের ধান কাটবো বুঝতে পারছি না।’ বানিয়াচংয়ের কৃষক আলাউদ্দীন বলেন, ‘শুনলাম এই সপ্তাহেই প্রচুর বৃষ্টি হবে। এতে হাওরের ভাটি এলাকার জমি পানিতে তলিয়ে যাবে। একদিকে এই আশঙ্কা অন্যদিকে শ্রমিক সংকট। কি করে ধান ঘরে তুলব চিন্তায় চোখে ঘুম আসে না।’

এদিকে হাওর অঞ্চলের বোরো ধান দ্রুত কাটার তাগিদ দিয়েছে হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয় বোর্ড। কারণ হবিগঞ্জসহ পুরো সিলেট অঞ্চলে আগাম বন্যার আশঙ্কা জানিয়েছে আবহাওয়া আধিদফতর। এতে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের বোরো জমি প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, সরকারি উদ্যোগে শ্রমিক আনা এবং তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে। এজন্য বাইরের জেলার সঙ্গে আলোচনা চলছে।