হাট-বাজার অলি-গলিতে ভিড় গ্রামাঞ্চলে আরও খারাপ অবস্থা হনিষেধাজ্ঞা প্রয়োগেও কঠোরতা নেই
করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের এই ঘোষণায় কর্ণপাত করছে না সাধারণ মানুষ। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে দৈনন্দিন কাজ করছে সবাই। এর ফলে হাটবাজার, অলি-গলি ও বিভিন্ন দোকানের সামনে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রামাঞ্চলে। কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামের মানুষ। করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে দল বেধে পুকুরে মাছ শিকার ও পথেঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে যুবকরা। অনেকের বক্তব্য রাতের বেলা ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ, কিন্তু দিনে তো নিষেধ না। তাই গ্রামের মানুষদের আরও সতর্ক করার আহ্বান স্থানীয়দের।
গত বৃহস্পতিবার পুরো বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে এর কোন ধরনের ছাপ নেই সড়ক কিংবা অলি-গলিতে। সন্ধ্যা থেকে রাত হয়ে ভোর পর্যন্ত চলাচল নিষিদ্ধ, দিনে না। আর এ সুযোগ কাজ লাগিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভিড় করছে মানুষ। বাজার কেন্দ্র করে ভিড় আরও বেশি। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জনসাধারণের ব্যাপক চলাচলের এমন চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে শুক্রবার হওয়ায় বাজারগুলোতে ছিল ব্যাপক ভিড়। কাঁচাবাজারের মতো স্থান করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এখানে আসা ক্রেতারা মানছেন না ন্যূনতম সামাজিক দূরত্ব। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাজার করতে আসা সাইদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘চলাচল তো রাতে নিষিদ্ধ, দিনে না। শুক্রবার বাজার করে থাকি। বাজার করার জন্য বের হয়েছি। রাতে বের হওয়া যাবে না তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখতে দিনেই বের হয়েছি।’ সাইফুল নামের অপর ব্যক্তি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে শুনলাম এখন থেকে নাকি রাতে একেবারেই বের হওয়া যাবে না। সন্ধ্যার পর প্রয়োজন হতে পারে ভেবে কিছু জিনিস কেনার জন্য বের হয়েছি।’
নাগরিকদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে নিজেদের আন্তরিক চেষ্টার কথা জানান মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। টহল টিমের মাধ্যমে একটু পরপরই মাইকিং করা হচ্ছে। যারা বের হয়েছেন ঘর থেকে তাদের বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করছি। কোথাও আমাদের গাড়ি গেলে সেখানে লোকজন কিছু সময়ের জন্য কমে যায়। পরে শুনি আবার নাকি মানুষ বের হয়েছে। আসলে আমরা নিজেরা যদি এ বিপদের ভয়াবহতা না বুঝি তাহলে কোন কিছু দিয়েই হবে না।’
এদিকে করোনাভাইরানের কারণে সারাদেশে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই সড়কে গাড়ি চলাচল। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল কিছুটা বেশি ছিল। সড়কে চলছে বিভিন্ন ধরনের বাহন। হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে মানুষদের। বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে ফুটপাতে তরমুজসহ বিভিন্ন ফলমূল ও সিগারেট বিক্রয় করতে দেখা গেছে। রাস্তার পাশে ভ্যানে বিক্রয় করা হয় শাক-সবজি ও ফল। এ সব ভ্যানে ভিড় জমিয়ে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করতে দেখা গেছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই। যেখানে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, সেখানে প্রধান সড়কে এখন চলছে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় কাসেম নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘রিকশায় দুইজন ওঠা নিষেধ কিস্তু তারপরও অনেক যাত্রী ওঠে। নিষেধ করলে শোনে না। কোন সময় পুলিশ দেখলে নামায় দেয়। আবার কিছুদূর এসে আবর ওঠে। রাস্তায় যাত্রী কম। তাই আমরাও কম টাকায় যাত্রী নেই। কি করব পেট তো চালাতে হবে।’
গতকাল রাস্তাঘাট এমনিতেই ফাঁকা থাকে সাধারণত। এর মধ্যে করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ গোটা দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। যানবাহন চলাচল কিংবা মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া সীমিত করেছে সরকার। বেঁধে দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট সময়। শুধু জরুরি কাজে নিয়োজিতদের চলাচলে কোন বাধা নেই।
এছাড়া ঘর থেকে বের হলেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে না নগরবাসী। বাজারসহ বিভিন্ন দোকানের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থানের জন্য চিহ্ন এঁকে দিলেও সেগুলো খুব একটা মানছে না কেউ। বরিশালের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক খাইরুল আলম সংবাদকে বলেন, আমার দোকানের সামনে একটু পর পর গোল বৃত্ত এঁকে দেয়া আছে। সবার সেখানে অবস্থান করার কথা। কিন্তু কেউ মানে না। একজন আরেকজনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, শুধু বাজার না। গ্রামের বিভিন্ন স্থানে দেখা যুবকদের আড্ডা বন্ধ হয়নি। রাস্তার পাশে ডোবা-নালায় দলবেধে মাছ শিকার ও ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাদের।
শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০ , ৫ বৈশাখ ১৪২৭, ২৩ শাবান ১৪৪১
হাট-বাজার অলি-গলিতে ভিড় গ্রামাঞ্চলে আরও খারাপ অবস্থা হনিষেধাজ্ঞা প্রয়োগেও কঠোরতা নেই
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের এই ঘোষণায় কর্ণপাত করছে না সাধারণ মানুষ। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে দৈনন্দিন কাজ করছে সবাই। এর ফলে হাটবাজার, অলি-গলি ও বিভিন্ন দোকানের সামনে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রামাঞ্চলে। কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামের মানুষ। করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে দল বেধে পুকুরে মাছ শিকার ও পথেঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে যুবকরা। অনেকের বক্তব্য রাতের বেলা ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ, কিন্তু দিনে তো নিষেধ না। তাই গ্রামের মানুষদের আরও সতর্ক করার আহ্বান স্থানীয়দের।
গত বৃহস্পতিবার পুরো বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে এর কোন ধরনের ছাপ নেই সড়ক কিংবা অলি-গলিতে। সন্ধ্যা থেকে রাত হয়ে ভোর পর্যন্ত চলাচল নিষিদ্ধ, দিনে না। আর এ সুযোগ কাজ লাগিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভিড় করছে মানুষ। বাজার কেন্দ্র করে ভিড় আরও বেশি। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জনসাধারণের ব্যাপক চলাচলের এমন চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে শুক্রবার হওয়ায় বাজারগুলোতে ছিল ব্যাপক ভিড়। কাঁচাবাজারের মতো স্থান করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এখানে আসা ক্রেতারা মানছেন না ন্যূনতম সামাজিক দূরত্ব। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাজার করতে আসা সাইদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘চলাচল তো রাতে নিষিদ্ধ, দিনে না। শুক্রবার বাজার করে থাকি। বাজার করার জন্য বের হয়েছি। রাতে বের হওয়া যাবে না তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখতে দিনেই বের হয়েছি।’ সাইফুল নামের অপর ব্যক্তি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে শুনলাম এখন থেকে নাকি রাতে একেবারেই বের হওয়া যাবে না। সন্ধ্যার পর প্রয়োজন হতে পারে ভেবে কিছু জিনিস কেনার জন্য বের হয়েছি।’
নাগরিকদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে নিজেদের আন্তরিক চেষ্টার কথা জানান মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা। পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। টহল টিমের মাধ্যমে একটু পরপরই মাইকিং করা হচ্ছে। যারা বের হয়েছেন ঘর থেকে তাদের বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করছি। কোথাও আমাদের গাড়ি গেলে সেখানে লোকজন কিছু সময়ের জন্য কমে যায়। পরে শুনি আবার নাকি মানুষ বের হয়েছে। আসলে আমরা নিজেরা যদি এ বিপদের ভয়াবহতা না বুঝি তাহলে কোন কিছু দিয়েই হবে না।’
এদিকে করোনাভাইরানের কারণে সারাদেশে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই সড়কে গাড়ি চলাচল। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল কিছুটা বেশি ছিল। সড়কে চলছে বিভিন্ন ধরনের বাহন। হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে মানুষদের। বিভিন্ন স্থানে সড়কের পাশে ফুটপাতে তরমুজসহ বিভিন্ন ফলমূল ও সিগারেট বিক্রয় করতে দেখা গেছে। রাস্তার পাশে ভ্যানে বিক্রয় করা হয় শাক-সবজি ও ফল। এ সব ভ্যানে ভিড় জমিয়ে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করতে দেখা গেছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই। যেখানে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, সেখানে প্রধান সড়কে এখন চলছে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় কাসেম নামের এক রিকশাচালক বলেন, ‘রিকশায় দুইজন ওঠা নিষেধ কিস্তু তারপরও অনেক যাত্রী ওঠে। নিষেধ করলে শোনে না। কোন সময় পুলিশ দেখলে নামায় দেয়। আবার কিছুদূর এসে আবর ওঠে। রাস্তায় যাত্রী কম। তাই আমরাও কম টাকায় যাত্রী নেই। কি করব পেট তো চালাতে হবে।’
গতকাল রাস্তাঘাট এমনিতেই ফাঁকা থাকে সাধারণত। এর মধ্যে করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ গোটা দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। যানবাহন চলাচল কিংবা মানুষের ঘর থেকে বের হওয়া সীমিত করেছে সরকার। বেঁধে দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট সময়। শুধু জরুরি কাজে নিয়োজিতদের চলাচলে কোন বাধা নেই।
এছাড়া ঘর থেকে বের হলেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে না নগরবাসী। বাজারসহ বিভিন্ন দোকানের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থানের জন্য চিহ্ন এঁকে দিলেও সেগুলো খুব একটা মানছে না কেউ। বরিশালের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক খাইরুল আলম সংবাদকে বলেন, আমার দোকানের সামনে একটু পর পর গোল বৃত্ত এঁকে দেয়া আছে। সবার সেখানে অবস্থান করার কথা। কিন্তু কেউ মানে না। একজন আরেকজনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, শুধু বাজার না। গ্রামের বিভিন্ন স্থানে দেখা যুবকদের আড্ডা বন্ধ হয়নি। রাস্তার পাশে ডোবা-নালায় দলবেধে মাছ শিকার ও ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাদের।