মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৫০ শতাংশ

করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানে মৃতের সংখ্যা পর্যালোচনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনায় মৃতের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও ১২৯০ জনের নাম। তাতে উহানে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৮৬৯ জনে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও পর্যালোচনায় বেড়ে গেছে; ৩২৫ জন বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার ৩৩৩ জন। এই পর্যালোচনার ফলে চীনে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৬৩২, যা আগের সংখ্যার চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি।

উহান শহরের একটি সি ফুড মার্কেট থেকেই গতবছরের শেষদিকে নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করে বলে ধারণা করে আসছেন গবেষকরা। ৩১ ডিসেম্বর চীন নতুন ধরনের নিউমোনিয়ার সংক্রমণের কথা প্রকাশ করে। পরে সেই নিউমোনিয়ার কারণ হিসেবে এই করোনাভাইরাসকে শনাক্ত করা হয়, যাকে বলা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস। আর এ ভাইরাসের সংক্রমণে যে রোগ হয়, তাকে বলা হচ্ছে কোভিড-১৯। চীন প্রথম এ ভাইরাসে কারও মৃত্যুর কথা জানায় ১১ জানুয়ারি। কিন্তু ততদিনে এত দ্রুত এ ভাইরাস ছড়াতে শুরু করেছে যে জানুয়ারির শেষ দিকে উহানসহ হুবেই প্রদেশের বড় একটি এলাকা লকডাউন করে ফেলা হয়।

নানা কঠোর পদক্ষেপের ফলে মার্চের শুরু থেকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে চীনের পরিস্থিতি। কিন্তু ততদিনে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসের বিস্তার ব্যাপক মাত্রা পেতে শুরু করেছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত সাড়ে তিন মাসে বিশ্বের ১৮৫টি দেশে ২১ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার মানুষের।

আক্রান্ত এবং মৃত্যু- দু’দিক দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র এখন শীর্ষে। সেখানে ৬ লাখ ৭১ হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৩৩ হাজার ২৮৫ জনের। আর চীন এ পর্যন্ত ৮৩ হাজার ৭৫৩ জনের আক্রান্তের তথ্য দিয়েছে, সেই সঙ্গে ৪ হাজার ৬৩৬ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। চীনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অন্য দেশের তুলনায় এত কম হওয়ায় সন্দেহ আর অবিশ্বাস ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

চীনের বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এ মৃতদের সৎকার করতে বিশাল ফাঁকা যায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিল দেশটির সরকার। সেখানে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন শত শত মানুষকে রাখা হয়েছে; অথচ বলা হয়েছে অনেক কম। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উহানের হানকাউ ক্রিমেশন সেন্টারে প্রতিদিন ১৯ ঘণ্টা ধরে মৃতদেহ পোড়ানো হয়েছে। তাতে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১২ দিনে কেবল উহানেই ৪০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে ধারণা দেয়া হয়।

তিন মাস অবরুদ্ধ দশার পর গত ৮ এপ্রিল উহান থেকে লকডাউন তুলে নেয়া হয়। তার এক সপ্তাহের বেশি সময় পর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা পর্যালোচনা করার কথা জানিয়ে এর একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছে উহানের মিউনিসিপাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতেই মারা গেছেন, যারা এতদিন হিসাবের বাইরে ছিল। রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে হিসাব রাখার ক্ষেত্রেও ভুল থেকে গেছে, যা পর্যালোচনায় সংশোধন করা হয়েছে।

শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০ , ৫ বৈশাখ ১৪২৭, ২৩ শাবান ১৪৪১

চীনের উহানে

মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৫০ শতাংশ

সংবাদ ডেস্ক |

করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহানে মৃতের সংখ্যা পর্যালোচনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনায় মৃতের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও ১২৯০ জনের নাম। তাতে উহানে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৮৬৯ জনে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও পর্যালোচনায় বেড়ে গেছে; ৩২৫ জন বেড়ে হয়েছে ৫০ হাজার ৩৩৩ জন। এই পর্যালোচনার ফলে চীনে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৬৩২, যা আগের সংখ্যার চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি।

উহান শহরের একটি সি ফুড মার্কেট থেকেই গতবছরের শেষদিকে নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করে বলে ধারণা করে আসছেন গবেষকরা। ৩১ ডিসেম্বর চীন নতুন ধরনের নিউমোনিয়ার সংক্রমণের কথা প্রকাশ করে। পরে সেই নিউমোনিয়ার কারণ হিসেবে এই করোনাভাইরাসকে শনাক্ত করা হয়, যাকে বলা হচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস। আর এ ভাইরাসের সংক্রমণে যে রোগ হয়, তাকে বলা হচ্ছে কোভিড-১৯। চীন প্রথম এ ভাইরাসে কারও মৃত্যুর কথা জানায় ১১ জানুয়ারি। কিন্তু ততদিনে এত দ্রুত এ ভাইরাস ছড়াতে শুরু করেছে যে জানুয়ারির শেষ দিকে উহানসহ হুবেই প্রদেশের বড় একটি এলাকা লকডাউন করে ফেলা হয়।

নানা কঠোর পদক্ষেপের ফলে মার্চের শুরু থেকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে চীনের পরিস্থিতি। কিন্তু ততদিনে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসের বিস্তার ব্যাপক মাত্রা পেতে শুরু করেছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত সাড়ে তিন মাসে বিশ্বের ১৮৫টি দেশে ২১ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার মানুষের।

আক্রান্ত এবং মৃত্যু- দু’দিক দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র এখন শীর্ষে। সেখানে ৬ লাখ ৭১ হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৩৩ হাজার ২৮৫ জনের। আর চীন এ পর্যন্ত ৮৩ হাজার ৭৫৩ জনের আক্রান্তের তথ্য দিয়েছে, সেই সঙ্গে ৪ হাজার ৬৩৬ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। চীনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অন্য দেশের তুলনায় এত কম হওয়ায় সন্দেহ আর অবিশ্বাস ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

চীনের বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এ মৃতদের সৎকার করতে বিশাল ফাঁকা যায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিল দেশটির সরকার। সেখানে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন শত শত মানুষকে রাখা হয়েছে; অথচ বলা হয়েছে অনেক কম। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উহানের হানকাউ ক্রিমেশন সেন্টারে প্রতিদিন ১৯ ঘণ্টা ধরে মৃতদেহ পোড়ানো হয়েছে। তাতে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ১২ দিনে কেবল উহানেই ৪০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে ধারণা দেয়া হয়।

তিন মাস অবরুদ্ধ দশার পর গত ৮ এপ্রিল উহান থেকে লকডাউন তুলে নেয়া হয়। তার এক সপ্তাহের বেশি সময় পর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা পর্যালোচনা করার কথা জানিয়ে এর একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছে উহানের মিউনিসিপাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতেই মারা গেছেন, যারা এতদিন হিসাবের বাইরে ছিল। রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে হিসাব রাখার ক্ষেত্রেও ভুল থেকে গেছে, যা পর্যালোচনায় সংশোধন করা হয়েছে।