চার শতাধিক নার্সের থাকা ও খাওয়ায় চরম অব্যবস্থাপনা

কোন প্রতিশ্রুতিই রাখা হচ্ছে না

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চার শতাধিক নার্স মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবাসিক হোটেলে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলেও, নানা অজুহাতে এখনও সে ব্যবস্থা হয়নি। দিন-রাত রোগীদের সেবা দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর তাদের রাত্রিযাপন করতে হচ্ছে হাসপাতালের ফাঁকা ওয়ার্ড, কেবিন, পোশাক বদলানোর কক্ষ ও ডরমেটরিতে। অনেকের রাতে ঘুম না হলেও ভোরে উঠে ডিউটিতে যেতে হচ্ছে। তাদের জন্য উন্নতমানের খাবার সরবরাহের প্রতিশ্রুতি থাকলেও আলাদা কোন বাজেট নেই, এমন অজুহাতে রোগীদের জন্য বরাদ্দ বাজেট থেকে রান্না করা খাবারই নার্সদের তিন বেলা খেতে দেয়া হচ্ছে। তাদের জন্য সরবরাহকৃত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীও (পিপিই) নিম্নমানের। শুধু তাই নয়, নার্সদের জন্য নেই এন-৯৫ মাস্ক। সাধারণ যে মাস্ক দেয়া হচ্ছে তাও নিম্নমানের।

কুর্মিটোলা হাসপাতালের একাধিক নার্স জানান, কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আমরা বাসা থেকে কাপড়চোপড়সহ নিত্য ব্যবহার্য সব জিনিস নিয়ে ৪-৫ দিন আগে হাসপাতালে চলে আসি। আমাদের জন্য ডিউটি শেষে হাসপাতালের অদূরে রিজেন্সি হোটেলে রুম বুক করা হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও সেখানে নেয়ার কোন ব্যবস্থা হয়নি। ওই নার্স আরও জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুখে শুনেছি, করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত নার্সরা থাকবেন শুনে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি। পরে জানতে পারি গুলশানের একটি হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও নিয়ে যাওয়া হয়নি। নার্সরা জানান, করোনো রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাসসহ নানা সমস্যা থাকায় কর্তব্যরত নার্সদের শারীরিক ও মানসিক চাপ পড়ে। এ সময় সুস্থ থাকার জন্য প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হলেও, তাদের ভালো খাবার সরবরাহ করার জন্য আলাদা বাজেট নেই, এমন অজুহাতে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রোগীদের যে খাবার দেয়া হয় তাদেরকেও তিন বেলা সেই খাবার দেয়া হচ্ছে। রোগীর খাবার খেয়ে তাদের অনেকেরই পেটও ভরছে না বলে জানান। তারা আরও জানান, বর্তমানে হাসপাতালটির ওয়ার্ড ও কেবিনে প্রায় দুইশ’র মতো করোনা রোগী চিকিৎসাধীন। এছাড়া আইসোলেশন ওয়ার্ডেও রোগী রয়েছে। অথচ নার্সদের পিপিই দেয়া হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধুমাত্র যারা করোনা রোগীদের ওয়ার্ডে ডিউটি করবে তারাই পিপিই পরবে। কিন্তু ডেস্কে যারা রয়েছে তাদের পিপিই দেয়া হচ্ছে না। তবে এ মুহূর্তে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সব নার্সেরই পিপিই প্রয়োজনে বলে মনে করেন তারা। নার্সরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত নার্সদের সমস্যা দেখার জন্য নার্সিং অধিদফতর থেকে করোনা সেল গঠিত হলেও, সেলের কেউ তাদের খোঁজ নেন না। তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায় না। স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদ (স্বানাপ) ও বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্সদের আবাসিক ও খাওয়ার সমস্যা দ্রুত নিরসন না করলে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হবে। তারা আরও বলেন, চিকিৎসকদের জন্য থাকা ও খাওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়ে ব্যবস্থা করলেও, নার্সদের ক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার একজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, খুব দ্রুতই আবাসিক ও থাকা খাওয়ার সমস্যা সমাধান হবে। এর চেয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।

শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০ , ৫ বৈশাখ ১৪২৭, ২৩ শাবান ১৪৪১

কুর্মিটোলা হাসপাতালে

চার শতাধিক নার্সের থাকা ও খাওয়ায় চরম অব্যবস্থাপনা

কোন প্রতিশ্রুতিই রাখা হচ্ছে না

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চার শতাধিক নার্স মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আবাসিক হোটেলে থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলেও, নানা অজুহাতে এখনও সে ব্যবস্থা হয়নি। দিন-রাত রোগীদের সেবা দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর তাদের রাত্রিযাপন করতে হচ্ছে হাসপাতালের ফাঁকা ওয়ার্ড, কেবিন, পোশাক বদলানোর কক্ষ ও ডরমেটরিতে। অনেকের রাতে ঘুম না হলেও ভোরে উঠে ডিউটিতে যেতে হচ্ছে। তাদের জন্য উন্নতমানের খাবার সরবরাহের প্রতিশ্রুতি থাকলেও আলাদা কোন বাজেট নেই, এমন অজুহাতে রোগীদের জন্য বরাদ্দ বাজেট থেকে রান্না করা খাবারই নার্সদের তিন বেলা খেতে দেয়া হচ্ছে। তাদের জন্য সরবরাহকৃত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীও (পিপিই) নিম্নমানের। শুধু তাই নয়, নার্সদের জন্য নেই এন-৯৫ মাস্ক। সাধারণ যে মাস্ক দেয়া হচ্ছে তাও নিম্নমানের।

কুর্মিটোলা হাসপাতালের একাধিক নার্স জানান, কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আমরা বাসা থেকে কাপড়চোপড়সহ নিত্য ব্যবহার্য সব জিনিস নিয়ে ৪-৫ দিন আগে হাসপাতালে চলে আসি। আমাদের জন্য ডিউটি শেষে হাসপাতালের অদূরে রিজেন্সি হোটেলে রুম বুক করা হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও সেখানে নেয়ার কোন ব্যবস্থা হয়নি। ওই নার্স আরও জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুখে শুনেছি, করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত নার্সরা থাকবেন শুনে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি। পরে জানতে পারি গুলশানের একটি হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও নিয়ে যাওয়া হয়নি। নার্সরা জানান, করোনো রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাসসহ নানা সমস্যা থাকায় কর্তব্যরত নার্সদের শারীরিক ও মানসিক চাপ পড়ে। এ সময় সুস্থ থাকার জন্য প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হলেও, তাদের ভালো খাবার সরবরাহ করার জন্য আলাদা বাজেট নেই, এমন অজুহাতে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রোগীদের যে খাবার দেয়া হয় তাদেরকেও তিন বেলা সেই খাবার দেয়া হচ্ছে। রোগীর খাবার খেয়ে তাদের অনেকেরই পেটও ভরছে না বলে জানান। তারা আরও জানান, বর্তমানে হাসপাতালটির ওয়ার্ড ও কেবিনে প্রায় দুইশ’র মতো করোনা রোগী চিকিৎসাধীন। এছাড়া আইসোলেশন ওয়ার্ডেও রোগী রয়েছে। অথচ নার্সদের পিপিই দেয়া হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, শুধুমাত্র যারা করোনা রোগীদের ওয়ার্ডে ডিউটি করবে তারাই পিপিই পরবে। কিন্তু ডেস্কে যারা রয়েছে তাদের পিপিই দেয়া হচ্ছে না। তবে এ মুহূর্তে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সব নার্সেরই পিপিই প্রয়োজনে বলে মনে করেন তারা। নার্সরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত নার্সদের সমস্যা দেখার জন্য নার্সিং অধিদফতর থেকে করোনা সেল গঠিত হলেও, সেলের কেউ তাদের খোঁজ নেন না। তাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায় না। স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদ (স্বানাপ) ও বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্সদের আবাসিক ও খাওয়ার সমস্যা দ্রুত নিরসন না করলে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হবে। তারা আরও বলেন, চিকিৎসকদের জন্য থাকা ও খাওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়ে ব্যবস্থা করলেও, নার্সদের ক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার একজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, খুব দ্রুতই আবাসিক ও থাকা খাওয়ার সমস্যা সমাধান হবে। এর চেয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।