ত্রাণ কমিটি গঠন নিয়ে টিআইবির সতর্ক প্রতিক্রিয়া

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে যে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে তাতে সহায়তা দিতে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ‘ত্রাণ কমিটি’ গঠনের ঘোষণায় সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এই পদক্ষেপ যেন ‘স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দেয়া’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায় সংস্থাটি। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, জাতির ক্রান্তিলগ্নে সব ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে সবার সর্বাত্মক অংশগ্রহণ জরুরি হলেও; দেশের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণসামগ্রী চুরি ও আত্মসাৎসহ বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতি এবং তাতে দলীয় নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে তাতে এই দলীয় ‘ত্রাণ কমিটি’ কার্যত কতটুকু ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে তা নিয়ে সংশয় থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশ এবং দেশের মানুষ এখন এক মহাসংকট কাল অতিবাহিত করছেন। সবচেয়ে বেশি বিপন্ন অবস্থায় আছেন হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন করোনা সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থায় বেকার হয়ে যাওয়া মানুষ। এদের সবার কাছেই সরকারি সহায়তা পৌঁছাতে হবে এবং এক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা বা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কোন সুযোগ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানসহ এই বিষয়ে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা ঘোষণা করেছেন এবং আমরা আশ্বস্ত হতে চাই যে সরকার প্রধানের এই অবস্থান ত্রাণ তৎপরতার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে প্রতিফলিত হবে। নতুন যে দলীয় কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাদের দায়িত্বশীল অংশগ্রহণ হতদরিদ্রদের তালিকা তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা তখনই পালন করতে পারে যখন তারা দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারবেন। অন্ন সংকটে পড়া কেউ যেন বাদ না পড়েন তা নিশ্চিত করার একটা সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে, দেশের নানা প্রান্ত থেকে রোজই আমরা ত্রাণ আত্মসাৎ ও চুরির খবর পাচ্ছি এবং দুঃখজনকভাবে এই অপকর্মে যারা জড়িত বলে অভিযোগ আসছে, তাদের প্রায় সবারই দলীয় পরিচয় রয়েছে। এমন বাস্তবতায় নতুন করে যে ত্রাণ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা এই অনিয়মের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিবে কিনা সেই আশঙ্কা অমূলক নয়।’

তিনি বলেন, দলীয় ত্রাণ কমিটির ভূমিকা যেন স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং কোনভাবেই যেন এটা প্রশাসন যন্ত্রের ওপর দলীয় প্রভাব বিস্তার অনিয়মের মহোৎসব করার প্লাটফরমে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি যেকোন ধরনের অনিয়মের অভিযোগই প্রশাসন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে, দলীয় পরিচয় বিবেচনা না করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। এক্ষেত্রে উপকারভোগীদের তালিকা, ত্রাণের পরিমাণ এবং বিতরণের তারিখ প্রকাশ্যে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যেতে পারে। এতে করে যেকোন অনিয়ম বা ঘাটতি সংবাদকর্মী ও জনগণ যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পাবেন।

শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০ , ৫ বৈশাখ ১৪২৭, ২৩ শাবান ১৪৪১

ত্রাণ কমিটি গঠন নিয়ে টিআইবির সতর্ক প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে যে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে তাতে সহায়তা দিতে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ‘ত্রাণ কমিটি’ গঠনের ঘোষণায় সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এই পদক্ষেপ যেন ‘স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দেয়া’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায় সংস্থাটি। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, জাতির ক্রান্তিলগ্নে সব ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে সবার সর্বাত্মক অংশগ্রহণ জরুরি হলেও; দেশের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণসামগ্রী চুরি ও আত্মসাৎসহ বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতি এবং তাতে দলীয় নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে তাতে এই দলীয় ‘ত্রাণ কমিটি’ কার্যত কতটুকু ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে তা নিয়ে সংশয় থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশ এবং দেশের মানুষ এখন এক মহাসংকট কাল অতিবাহিত করছেন। সবচেয়ে বেশি বিপন্ন অবস্থায় আছেন হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন করোনা সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থায় বেকার হয়ে যাওয়া মানুষ। এদের সবার কাছেই সরকারি সহায়তা পৌঁছাতে হবে এবং এক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা বা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কোন সুযোগ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানসহ এই বিষয়ে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা ঘোষণা করেছেন এবং আমরা আশ্বস্ত হতে চাই যে সরকার প্রধানের এই অবস্থান ত্রাণ তৎপরতার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে প্রতিফলিত হবে। নতুন যে দলীয় কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাদের দায়িত্বশীল অংশগ্রহণ হতদরিদ্রদের তালিকা তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা তখনই পালন করতে পারে যখন তারা দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারবেন। অন্ন সংকটে পড়া কেউ যেন বাদ না পড়েন তা নিশ্চিত করার একটা সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে, দেশের নানা প্রান্ত থেকে রোজই আমরা ত্রাণ আত্মসাৎ ও চুরির খবর পাচ্ছি এবং দুঃখজনকভাবে এই অপকর্মে যারা জড়িত বলে অভিযোগ আসছে, তাদের প্রায় সবারই দলীয় পরিচয় রয়েছে। এমন বাস্তবতায় নতুন করে যে ত্রাণ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা এই অনিয়মের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিবে কিনা সেই আশঙ্কা অমূলক নয়।’

তিনি বলেন, দলীয় ত্রাণ কমিটির ভূমিকা যেন স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং কোনভাবেই যেন এটা প্রশাসন যন্ত্রের ওপর দলীয় প্রভাব বিস্তার অনিয়মের মহোৎসব করার প্লাটফরমে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি যেকোন ধরনের অনিয়মের অভিযোগই প্রশাসন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে, দলীয় পরিচয় বিবেচনা না করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। এক্ষেত্রে উপকারভোগীদের তালিকা, ত্রাণের পরিমাণ এবং বিতরণের তারিখ প্রকাশ্যে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যেতে পারে। এতে করে যেকোন অনিয়ম বা ঘাটতি সংবাদকর্মী ও জনগণ যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পাবেন।