ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন

মেহেরপুর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন

অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গতকাল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেয়া প্রাণঘাতী করোনভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশেও দিন দিন বাড়তে থাকায় দিবসটি ঘরে বসে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য চিরভাস্বর : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল দুপুরে রাজধানীতে নিজের সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন সরকার গঠন করা হয়। সেদিনই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। আজকে সারাবিশ্বব্যাপী মহাদুর্যোগ করোনাভাইরাসের কারণে দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করতে না পারলেও আমাদের চেতনায় বিশ্বাসে এ ঐতিহাসিক দিনটির তাৎপর্য চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।

মেহেরপুরে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন : সংবাদের মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার সকালে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের পক্ষে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিবছর ১৭ এপ্রিল রাজাকারমুক্ত, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশগড়ার শপথ করা হয়। কিন্তু করোনার কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে এখানে এবার দিবসটি সেইভাবে পালিত হচ্ছে না। আমাদের এবারের শপথ নিতে হচ্ছে সচেতন হয়ে করোনা প্রতিরোধের। পরে জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা, জেলা আওয়ামী লীগ, অন্য দফতরের পক্ষ থেকে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর ওই বছর ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। ওইদিন ঘোষিত ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। ঘোষণাপত্রে সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহমেদকে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঘাষণা করা হয়।

একাত্তরের ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। তাজউদ্দিনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

শনিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২০ , ৫ বৈশাখ ১৪২৭, ২৩ শাবান ১৪৪১

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন

মেহেরপুর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গতকাল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য এক দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়। বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেয়া প্রাণঘাতী করোনভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশেও দিন দিন বাড়তে থাকায় দিবসটি ঘরে বসে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য চিরভাস্বর : আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল দুপুরে রাজধানীতে নিজের সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীন সরকার গঠন করা হয়। সেদিনই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। আজকে সারাবিশ্বব্যাপী মহাদুর্যোগ করোনাভাইরাসের কারণে দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করতে না পারলেও আমাদের চেতনায় বিশ্বাসে এ ঐতিহাসিক দিনটির তাৎপর্য চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।

মেহেরপুরে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন : সংবাদের মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার সকালে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের পক্ষে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিবছর ১৭ এপ্রিল রাজাকারমুক্ত, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশগড়ার শপথ করা হয়। কিন্তু করোনার কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে এখানে এবার দিবসটি সেইভাবে পালিত হচ্ছে না। আমাদের এবারের শপথ নিতে হচ্ছে সচেতন হয়ে করোনা প্রতিরোধের। পরে জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা, জেলা আওয়ামী লীগ, অন্য দফতরের পক্ষ থেকে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর ওই বছর ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। ওইদিন ঘোষিত ঘোষণাপত্রে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। ঘোষণাপত্রে সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহমেদকে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ঘাষণা করা হয়।

একাত্তরের ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতার ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচারিত হয়। তাজউদ্দিনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠিত হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে।