পুলিশের ৬৫ সদস্য করোনায় আক্রান্ত

পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও করোনার সংক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। গতকাল পর্যন্ত দেশে পুলিশের ৬৫ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ ঠেকাতে শুধু লাঠি হাতেই নয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, কখনও কখনও পলায়নকৃত করোনা রোগীকে ধরে আনা, করোনা আক্রান্তের বাসা, ভবন ও এলাকা লকডাউন করা, ত্রাণ বিতরণসহ নানা কাজ করছে পুলিশ। এসব করতে গিয়েই সংক্রমিত হচ্ছেন তারা। পুলিশ সদর দফতরের তথ্যমতে, আক্রান্ত ৬৫ জনের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ২৯ জন। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্যকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও বিভিন্ন ইউনিটে নিয়োজিত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, করোনা রোগীর সবচেয়ে বেশি কাছে থাকা বা সংস্পর্শে থাকতে হয় চিকিৎসকদের। তারপরই স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ। পুলিশের সুরক্ষার বিষয়ে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা যায়নি। আবার দায়িত্ব পালনের সময় অসাবধানতাবশত সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসেও অনেক পুলিশ সদস্য সংক্রমিত হয়েছেন ও ঝুঁকি বাড়িয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। পুলিশ সদর দফতরের করোনা সেলের প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ তথ্যমতে, পুলিশের আক্রান্ত ৬৫ জনের মধ্যে ২৯ জন ডিএমপিতে, এর মধ্যে সিভিল স্টাফ রয়েছেন। আগে আক্রান্ত ছিলেন ২৬ জন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও তিনজন। ঢাকা রেঞ্জ অফিসে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন একজন, পুলিশের টিঅ্যান্ডআইএমে একজন, সিএমপিতে দুইজন (নতুন আক্রান্ত একজন)। গাজীপুর মহানগর পুলিশে আগে একজনসহ নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনজন।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) দুইজন, ময়মনসিংহে একজন, নৌ পুলিশে একজন, অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন একজন, নারায়ণগঞ্জে আগের তিনজনের সঙ্গে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন দুইজন। গাজীপুর, নরসিংদী ও শেরপুরে নতুন একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ঢাকার বাইরে গোপালগঞ্জে, ১১ জন। এই মুহূর্তে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৬২৬ জন এবং এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৪৩ জন। আইসোলেশনে ৯ জন।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় দুই থানার সব পুলিশ সদস্যকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা আক্রান্ত হওয়ার পর ২২ কর্মকর্তাকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। গুলশান উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে এক সাধারণ কর্মচারী আক্রান্ত হলে ছয় কর্মকর্তা কোয়ারেন্টিনে গেছেন। রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাকে ও পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) দুই সদস্য আক্রান্তের পর তাদের পাশে থাকা সদস্যদেরও আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনস ব্যারাকে একজন আক্রান্ত হওয়ার পর ব্যারাকে থাকা ২০০ পুলিশ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে, ঢাকা থেকে যাওয়া এক পুলিশ সদস্যের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা ক্রান্তিকালে ‘সম্মুখযোদ্ধা’ পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সাবেক আইজিপি শহীদুল হক। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেক পুলিশ সদস্যই মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। ব্যারাক ও জেলাগুলোর পুলিশ লাইনসে বসবাস করা প্রত্যেকটি সদস্যের সুরক্ষায় যা যা করণীয় দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, পুলিশের কল্যাণ তহবিল উর্বর। তাছাড়া কোন দাতা-ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছে সহযোগিতা চাইলে কেউ পুলিশকে ফেরাবে না। এখনই ইনিশিয়েটিভ নিতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যেকটি ইউনিট প্রধানকে দায়িত্ব নিতে হবে। কোন সদস্য যেন আক্রান্ত না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ আক্রান্ত হলে তাকে আইসোলেটেড করা, সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ পুলিশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে তা খুব খারাপ ম্যাসেজ যাবে সর্বমহলে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার পর্যন্ত আক্রান্ত ছিল ২৬ জন। গতকাল আরও তিন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা সবাই বাইরে দায়িত্ব পালনে গিয়েছিলেন। অসাবধানতাবশত মানুষের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় তারা সংক্রমিত হয়েছেন। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের যেসব পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, পুলিশ হাসপাতালে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে করোনার জন্য আলাদা ইউনিট খোলা হয়েছে। কোন কারণে যদি আরও উন্নত চিকিৎসা কিংবা অবজারভেশনের দরকার হয় বা কোন কারণে সম্ভব না হয়, তাহলে পুলিশ হাসপাতালে যোগাযোগ করে করোনার যে স্পেশালাইজড হাসপাতাল রয়েছে সেখানে পাঠানো হচ্ছে।

পুলিশ ব্যারাকগুলোর প্রতিটা ফ্লোর বা যেখানে যেখানে করোনার জীবাণু থাকতে পারে সেগুলো প্রতিনিয়ত জীবাণুনাশক দ্বারা ধৌত করা হচ্ছে। যারা ডিউটিতে যাচ্ছেন তাদের আলাদাভাবে হাত ধোয়ার সরঞ্জাম ও মাস্ক, পিপিই সরবরাহ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন তারা নিজেরা যেন আগে বিধিগুলো মেনে চলেন, সেজন্য নিয়মিত ব্রিফ করা হচ্ছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের সংস্পর্শে আসা বা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যদের আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করেছি। রাজধানীর ডেমরায় ১০০ শয্যার একটা আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া মিরপুর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মেহমানখানা এবং রাজারবাগ স্কুলকে আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। দিয়াবাড়ী পুলিশ লাইনেও কাজ চলছে। ২-৩ দিনের মধ্যে সেখানেই দেড়শ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত হয়ে যাবে।

পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকে রিলেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, আইইডিসিআরের নিয়ম অনুসরণ করে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে করোনার স্পেশালাইজড হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষায় প্রথম থেকেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে করোনায় মাঠপর্যায়ে ডিউটিরতদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা এখন আরও জোরদার করা হচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে-এমন পুলিশ সদস্যদের আলাদা করে ফেলা হচ্ছে।

আরও খবর
সারাদেশে দু’শতাধিক ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত
পাঁচ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে প্রধানমন্ত্রী
করোনার নতুন কেন্দ্র হতে পারে আফ্রিকা
যেসব দেশ যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করলো সংক্রমণ
মৃত্যু দেড় লাখ ও আক্রান্ত সাড়ে ২২ লাখ ছাড়িয়েছে
২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৯ মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৩০৬
লকডাউন না মেনে লাখো মানুষের ঢল
ঈদের নামাজও বাসায় সৌদির গ্র্যান্ড মুফতি
লকডাউন না মানলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা
ছুটি আরও বাড়তে পারে
কৃষক বাঁচাতে কৃষিপণ্যের বাজারজাত নিশ্চিত করতে হবে : দেবপ্রিয়
দশ মিনিটে করোনা শনাক্ত
নারায়ণগঞ্জে নেই করোনা পরীক্ষাগার
লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না কেন?
ঈদের আগে খুলছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০ , ৬ বৈশাখ ১৪২৭, ২৪ শাবান ১৪৪১

পুলিশের ৬৫ সদস্য করোনায় আক্রান্ত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও করোনার সংক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। গতকাল পর্যন্ত দেশে পুলিশের ৬৫ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সংক্রমণ ঠেকাতে শুধু লাঠি হাতেই নয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, কখনও কখনও পলায়নকৃত করোনা রোগীকে ধরে আনা, করোনা আক্রান্তের বাসা, ভবন ও এলাকা লকডাউন করা, ত্রাণ বিতরণসহ নানা কাজ করছে পুলিশ। এসব করতে গিয়েই সংক্রমিত হচ্ছেন তারা। পুলিশ সদর দফতরের তথ্যমতে, আক্রান্ত ৬৫ জনের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ২৯ জন। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্যকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও বিভিন্ন ইউনিটে নিয়োজিত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, করোনা রোগীর সবচেয়ে বেশি কাছে থাকা বা সংস্পর্শে থাকতে হয় চিকিৎসকদের। তারপরই স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ। পুলিশের সুরক্ষার বিষয়ে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা যায়নি। আবার দায়িত্ব পালনের সময় অসাবধানতাবশত সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে এসেও অনেক পুলিশ সদস্য সংক্রমিত হয়েছেন ও ঝুঁকি বাড়িয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। পুলিশ সদর দফতরের করোনা সেলের প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ তথ্যমতে, পুলিশের আক্রান্ত ৬৫ জনের মধ্যে ২৯ জন ডিএমপিতে, এর মধ্যে সিভিল স্টাফ রয়েছেন। আগে আক্রান্ত ছিলেন ২৬ জন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও তিনজন। ঢাকা রেঞ্জ অফিসে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন একজন, পুলিশের টিঅ্যান্ডআইএমে একজন, সিএমপিতে দুইজন (নতুন আক্রান্ত একজন)। গাজীপুর মহানগর পুলিশে আগে একজনসহ নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনজন।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) দুইজন, ময়মনসিংহে একজন, নৌ পুলিশে একজন, অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন একজন, নারায়ণগঞ্জে আগের তিনজনের সঙ্গে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন দুইজন। গাজীপুর, নরসিংদী ও শেরপুরে নতুন একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ঢাকার বাইরে গোপালগঞ্জে, ১১ জন। এই মুহূর্তে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৬২৬ জন এবং এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৪৩ জন। আইসোলেশনে ৯ জন।

জানা গেছে, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানায় পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় দুই থানার সব পুলিশ সদস্যকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা আক্রান্ত হওয়ার পর ২২ কর্মকর্তাকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। গুলশান উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে এক সাধারণ কর্মচারী আক্রান্ত হলে ছয় কর্মকর্তা কোয়ারেন্টিনে গেছেন। রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাকে ও পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) দুই সদস্য আক্রান্তের পর তাদের পাশে থাকা সদস্যদেরও আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনস ব্যারাকে একজন আক্রান্ত হওয়ার পর ব্যারাকে থাকা ২০০ পুলিশ সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে, ঢাকা থেকে যাওয়া এক পুলিশ সদস্যের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা ক্রান্তিকালে ‘সম্মুখযোদ্ধা’ পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সাবেক আইজিপি শহীদুল হক। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেক পুলিশ সদস্যই মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। ব্যারাক ও জেলাগুলোর পুলিশ লাইনসে বসবাস করা প্রত্যেকটি সদস্যের সুরক্ষায় যা যা করণীয় দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, পুলিশের কল্যাণ তহবিল উর্বর। তাছাড়া কোন দাতা-ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছে সহযোগিতা চাইলে কেউ পুলিশকে ফেরাবে না। এখনই ইনিশিয়েটিভ নিতে হবে। পাশাপাশি প্রত্যেকটি ইউনিট প্রধানকে দায়িত্ব নিতে হবে। কোন সদস্য যেন আক্রান্ত না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ আক্রান্ত হলে তাকে আইসোলেটেড করা, সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ পুলিশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে তা খুব খারাপ ম্যাসেজ যাবে সর্বমহলে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার পর্যন্ত আক্রান্ত ছিল ২৬ জন। গতকাল আরও তিন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা সবাই বাইরে দায়িত্ব পালনে গিয়েছিলেন। অসাবধানতাবশত মানুষের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় তারা সংক্রমিত হয়েছেন। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের যেসব পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, পুলিশ হাসপাতালে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে করোনার জন্য আলাদা ইউনিট খোলা হয়েছে। কোন কারণে যদি আরও উন্নত চিকিৎসা কিংবা অবজারভেশনের দরকার হয় বা কোন কারণে সম্ভব না হয়, তাহলে পুলিশ হাসপাতালে যোগাযোগ করে করোনার যে স্পেশালাইজড হাসপাতাল রয়েছে সেখানে পাঠানো হচ্ছে।

পুলিশ ব্যারাকগুলোর প্রতিটা ফ্লোর বা যেখানে যেখানে করোনার জীবাণু থাকতে পারে সেগুলো প্রতিনিয়ত জীবাণুনাশক দ্বারা ধৌত করা হচ্ছে। যারা ডিউটিতে যাচ্ছেন তাদের আলাদাভাবে হাত ধোয়ার সরঞ্জাম ও মাস্ক, পিপিই সরবরাহ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন তারা নিজেরা যেন আগে বিধিগুলো মেনে চলেন, সেজন্য নিয়মিত ব্রিফ করা হচ্ছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যের সংস্পর্শে আসা বা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যদের আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করেছি। রাজধানীর ডেমরায় ১০০ শয্যার একটা আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া মিরপুর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মেহমানখানা এবং রাজারবাগ স্কুলকে আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। দিয়াবাড়ী পুলিশ লাইনেও কাজ চলছে। ২-৩ দিনের মধ্যে সেখানেই দেড়শ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত হয়ে যাবে।

পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকে রিলেশন্স বিভাগের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, আইইডিসিআরের নিয়ম অনুসরণ করে করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে করোনার স্পেশালাইজড হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষায় প্রথম থেকেই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে করোনায় মাঠপর্যায়ে ডিউটিরতদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা এখন আরও জোরদার করা হচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে-এমন পুলিশ সদস্যদের আলাদা করে ফেলা হচ্ছে।