লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না কেন?

করোনাভাইরাসের কারণে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বিষয়টি বুঝে না অনেকেই, ধর্মীয় অপচারের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোন জোড় প্রচারণা ও জনসচেনতার অভারের কারণে কার্যকর হচ্ছে না লকডাউন। তাই শহর ও গ্রামাঞ্চলে কোথাও মানুষ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছে না। হাঁট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, পাড়া-মহল্লা, অলি-গলি ও বাসা-বাড়ির ছাদে বন্ধ হয়নি মানুষের আড্ডা ও আনাগোনা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রাম অঞ্চলের। যেখানে মসজিদে ৫ জনের বেশি নামাজ আদায় করা নিষেধ সেখানে লাখো মুসল্লি নিয়ে জানাজা আদায় করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে। শুধু জানাজা নয় লকডাউন উপেক্ষা পাড়া-মহল্লা ঘুরে বেড়ানো, যুবকদের আড্ডা, মাছ শিকার, বাজার করা ও কোন কোন স্থানে পিকনিকের আয়োজন করা হয় বলে স্থানীয়রা জানায়।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচতে ৩ ফুট বা ১ মিটার দূরত্বে মানুষ চলাচল করার নিয়ম। কিন্তু অনেকেই এই শারীরিক দূরত্বে বিষয়টি বুঝে না। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। এছাড়া ধর্মীয়ভাবে বিভিন্ন স্থানে মসজিদ ও মাদ্রাসার হুজুররা করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের মতে করোনাভাইরাস বলতে কিছু না, এটা মুসলমানদের কোন ক্ষতি করবে না। এটা বিধর্মীদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি গজব। পাঁচ ওয়াক্ত অজু করে নামাজ আদায় করলেই এই মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এ সব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন প্রচারণা নেই। এই কারণে এছাড়া বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে মানুষ করোনাভাইরাসকে অবহেলা করছে। তাই এ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে শারীরিক দূরুত্ব বজায় রাখা খুবেই জরুরি। এক্ষেত্রে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে বিষয়টি মানুষকে বুঝাতে হবে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে প্রচারণা চালাতে হবে। শুধু টেলিভিশনে প্রচারণা করলে হবে না। গ্রাম পর্যায়ে মা-বোনেদের মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে বুঝাতে হবে।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ছিল মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। কোনরকম শারীরিক দূরত্ব ছাড়াই বাজার করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। অনেক ক্রেতা মুখের মাস্ক খুলে বিক্রেতার কাছে জানতে চাচ্ছেন ‘আপনার পটল, আলুর দাম কত’। এভাবেই অনেকে আবার রীতিমতো দরদামও করছেন। আর ক্রেতা ধরে রাখতে সামাজিক দূরত্বের কোন কথা বলছেন না বিক্রেতারা। তাদের আশঙ্কা, এমনটা বললে হয়তো ক্রেতারা চলে যাবেন অন্য বিক্রেতার কাছে। কারোনাভাইরাস প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সচেতনতা বাড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি কাজ করছেন সেনা সদস্যরা। সন্ধ্যা ৬টার পর বাড়ির বাইরে না যাওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ সচেতন হচ্ছে না কিছুতেই। রাস্তাঘাটে চলাফেরায় সামাজিক দূরত্ব কিছুটা মানা হলেও রাজধানীর বাজারগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম। ভিড় জমিয়ে গায়ে গা ঘেঁষে বাজার করছেন সবাই। মনে হচ্ছে, করোনার সঙ্গে আলিঙ্গন করছে মানুষ।

কাওসার নামে এক ক্রেতা রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর এলাকায় মুখের মাস্ক খুলে সবজির দরদাম করতে দেখা গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে বাজারে সব সময় কোলাহল থাকে, মাস্ক পরা অবস্থায় বিক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তিনি শুনতে পাবেন না। তাই মাস্ক থেকে মুখ সরিয়ে কথা বলছি।’ একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর মালিবাগ, জুরাইন ও মিরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে। অনেক বিক্রেতা মাস্ক ছাড়াই বিক্রি করছেন পণ্য। রাজধানীর মালিবাগ বাজারের আলী আজম নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘এখানে খুচরা বাজারের ক্রেতারা আসেন। বাজারে মানুষের ভিড় থাকায় শব্দের কারণে ক্রেতার কথা বোঝা অসুবিধা হয়। এ কারণে মাস্ক পরা হয় না। তবে মাস্ক পরা ভালো, না হলে বিপদ হতে পারে।’

এছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় দেখা গেছে রাজধানীর মগবাজার কাঁচাবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার এবং মালিবাগ রেলগেট কাঁচাবাজারেও। সেখানেও মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। যে যার খেয়াল-খুশি মতো বাজার করতে দেখা গেছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচার ২ নম্বর গেটের পাশের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স নামের একটি মুদি দোকার প্রতিদিন সকাল-দুপুর পর্যন্ত প্রচ- ভিড় থাকে। এই দোকানের কাছে গিয়ে দেখা গেল মানুষ গাদাগাদি করে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করছে। একজনের গায়ের সঙ্গে অন্যজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বাজার করছে। নেই কোন সামাজিক দূরত্ব। এ বিষয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘ভাই কাস্টমারের চাপ বেশি। সবাই আগে কিনতে চাই। তাই এত নিয়ম মানা সম্ভব নয়। করোনা আতঙ্কের কারণে দোকানির মুখ মাস্ক করা হলেও কর্মচারীদের মুখে কোন মাস্ক নেই।

মেয়ে নিয়ে মুরগি কিনতে আসা আসমা নামের এক মহিলা বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে তারা বাসায় বসে আছে। তাই সবাই বাসা থেকে একটু বের হয়েছি। বাইরে আলো-বাতাসেরও প্রয়োজন আছে। তবে বাজার থেকে ফিরে গোসল করেই বাসার কাজে হাত দেব।’ মালিবাগ রেলগেট এলাকায় আনিস নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘সময় খুব খারাপ যাচ্ছে আমাদের। আমার তিন থেকে চার দিনের বাজার একবারে করলে তো অসুবিধা নেই। তবে কেন বার বার কারণে-অকারণে বাজারে আসতে হবে। নিজেরা সচেতন না হওয়া মানে মৃত্যু ডেকে আনা।’ মালিবাগ বাজারে মিলন নামের এক দোকানদার বলেন, ‘দেখেন আমি কাকে কি বলব, সব কিছু জেনেও কিছু বলতে পারি না, অনেকেই বাজারে দরকার না থাকলেও আসছে। তাদের নাকি বাসায় থাকতে অসুবিধা হয়, তাই ঘুরতে আসে। যদি কাস্টমারকে বলি একটু দূর থেকে বাজার নেন। হয়তো একথা শুনে কাস্টমার অন্যের দোকানে চলে যাবে।’

এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পেটের ক্ষুধা মেটাতে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন চালকরা। কিন্তু রাস্তায় নামলেই পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। উল্টে রাখা হচ্ছে রিকশা, দেয়া হচ্ছে শাস্তি। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই বেশ বিপদেই আছেন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ। রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় স্বপন নামের রিকশাচালক বলেন, ‘পেটের খিদায় রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হইছি। আগে আমি একটা হোটেলে কাজ করতাম। এখন হোটেল বন্ধ থাকে। সব কিছুই বন্ধ। এ কারণেই রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হইছি। কিন্তু আমাগো রিকশা আটকায়া রাখছে পুলিশ। ঘরে বউ-বাচ্চা সবাই না খায়া আছে। খাওন তো লাগবে। না খাইতে পারলে বাঁচমু কীভাবে?’ পাভেল নামের অপর রিকশাচালক বলেন, আমরা সাহায্য বা ত্রাণ কারও কাছ থেকে পাইনি। যদি সাহায্য পেতাম তাহলে কি রাস্তায় আমরা এভাবে বের হতাম? আমার ঘরে ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে। মেয়েটারে খাওয়ানোর দুধ নাই। দুধ কেনার জন্য রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি। সকাল আটটা থেকে আমাদের রিকশা আটকে রাখা হইছে।

আরও খবর
সারাদেশে দু’শতাধিক ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত
পাঁচ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে প্রধানমন্ত্রী
করোনার নতুন কেন্দ্র হতে পারে আফ্রিকা
যেসব দেশ যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করলো সংক্রমণ
মৃত্যু দেড় লাখ ও আক্রান্ত সাড়ে ২২ লাখ ছাড়িয়েছে
২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৯ মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৩০৬
লকডাউন না মেনে লাখো মানুষের ঢল
ঈদের নামাজও বাসায় সৌদির গ্র্যান্ড মুফতি
লকডাউন না মানলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা
ছুটি আরও বাড়তে পারে
কৃষক বাঁচাতে কৃষিপণ্যের বাজারজাত নিশ্চিত করতে হবে : দেবপ্রিয়
পুলিশের ৬৫ সদস্য করোনায় আক্রান্ত
দশ মিনিটে করোনা শনাক্ত
নারায়ণগঞ্জে নেই করোনা পরীক্ষাগার
ঈদের আগে খুলছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০ , ৬ বৈশাখ ১৪২৭, ২৪ শাবান ১৪৪১

লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না কেন?

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

করোনাভাইরাসের কারণে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বিষয়টি বুঝে না অনেকেই, ধর্মীয় অপচারের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোন জোড় প্রচারণা ও জনসচেনতার অভারের কারণে কার্যকর হচ্ছে না লকডাউন। তাই শহর ও গ্রামাঞ্চলে কোথাও মানুষ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছে না। হাঁট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, পাড়া-মহল্লা, অলি-গলি ও বাসা-বাড়ির ছাদে বন্ধ হয়নি মানুষের আড্ডা ও আনাগোনা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রাম অঞ্চলের। যেখানে মসজিদে ৫ জনের বেশি নামাজ আদায় করা নিষেধ সেখানে লাখো মুসল্লি নিয়ে জানাজা আদায় করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে। শুধু জানাজা নয় লকডাউন উপেক্ষা পাড়া-মহল্লা ঘুরে বেড়ানো, যুবকদের আড্ডা, মাছ শিকার, বাজার করা ও কোন কোন স্থানে পিকনিকের আয়োজন করা হয় বলে স্থানীয়রা জানায়।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে বাঁচতে ৩ ফুট বা ১ মিটার দূরত্বে মানুষ চলাচল করার নিয়ম। কিন্তু অনেকেই এই শারীরিক দূরত্বে বিষয়টি বুঝে না। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। এছাড়া ধর্মীয়ভাবে বিভিন্ন স্থানে মসজিদ ও মাদ্রাসার হুজুররা করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের মতে করোনাভাইরাস বলতে কিছু না, এটা মুসলমানদের কোন ক্ষতি করবে না। এটা বিধর্মীদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি গজব। পাঁচ ওয়াক্ত অজু করে নামাজ আদায় করলেই এই মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এ সব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন প্রচারণা নেই। এই কারণে এছাড়া বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে মানুষ করোনাভাইরাসকে অবহেলা করছে। তাই এ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে শারীরিক দূরুত্ব বজায় রাখা খুবেই জরুরি। এক্ষেত্রে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে বিষয়টি মানুষকে বুঝাতে হবে। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে প্রচারণা চালাতে হবে। শুধু টেলিভিশনে প্রচারণা করলে হবে না। গ্রাম পর্যায়ে মা-বোনেদের মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে বুঝাতে হবে।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ছিল মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। কোনরকম শারীরিক দূরত্ব ছাড়াই বাজার করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। অনেক ক্রেতা মুখের মাস্ক খুলে বিক্রেতার কাছে জানতে চাচ্ছেন ‘আপনার পটল, আলুর দাম কত’। এভাবেই অনেকে আবার রীতিমতো দরদামও করছেন। আর ক্রেতা ধরে রাখতে সামাজিক দূরত্বের কোন কথা বলছেন না বিক্রেতারা। তাদের আশঙ্কা, এমনটা বললে হয়তো ক্রেতারা চলে যাবেন অন্য বিক্রেতার কাছে। কারোনাভাইরাস প্রতিরোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সচেতনতা বাড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি কাজ করছেন সেনা সদস্যরা। সন্ধ্যা ৬টার পর বাড়ির বাইরে না যাওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ সচেতন হচ্ছে না কিছুতেই। রাস্তাঘাটে চলাফেরায় সামাজিক দূরত্ব কিছুটা মানা হলেও রাজধানীর বাজারগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম। ভিড় জমিয়ে গায়ে গা ঘেঁষে বাজার করছেন সবাই। মনে হচ্ছে, করোনার সঙ্গে আলিঙ্গন করছে মানুষ।

কাওসার নামে এক ক্রেতা রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর এলাকায় মুখের মাস্ক খুলে সবজির দরদাম করতে দেখা গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে বাজারে সব সময় কোলাহল থাকে, মাস্ক পরা অবস্থায় বিক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তিনি শুনতে পাবেন না। তাই মাস্ক থেকে মুখ সরিয়ে কথা বলছি।’ একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর মালিবাগ, জুরাইন ও মিরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে। অনেক বিক্রেতা মাস্ক ছাড়াই বিক্রি করছেন পণ্য। রাজধানীর মালিবাগ বাজারের আলী আজম নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘এখানে খুচরা বাজারের ক্রেতারা আসেন। বাজারে মানুষের ভিড় থাকায় শব্দের কারণে ক্রেতার কথা বোঝা অসুবিধা হয়। এ কারণে মাস্ক পরা হয় না। তবে মাস্ক পরা ভালো, না হলে বিপদ হতে পারে।’

এছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় দেখা গেছে রাজধানীর মগবাজার কাঁচাবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার এবং মালিবাগ রেলগেট কাঁচাবাজারেও। সেখানেও মানা হচ্ছে না শারীরিক দূরত্ব। যে যার খেয়াল-খুশি মতো বাজার করতে দেখা গেছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচার ২ নম্বর গেটের পাশের বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স নামের একটি মুদি দোকার প্রতিদিন সকাল-দুপুর পর্যন্ত প্রচ- ভিড় থাকে। এই দোকানের কাছে গিয়ে দেখা গেল মানুষ গাদাগাদি করে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করছে। একজনের গায়ের সঙ্গে অন্যজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বাজার করছে। নেই কোন সামাজিক দূরত্ব। এ বিষয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘ভাই কাস্টমারের চাপ বেশি। সবাই আগে কিনতে চাই। তাই এত নিয়ম মানা সম্ভব নয়। করোনা আতঙ্কের কারণে দোকানির মুখ মাস্ক করা হলেও কর্মচারীদের মুখে কোন মাস্ক নেই।

মেয়ে নিয়ে মুরগি কিনতে আসা আসমা নামের এক মহিলা বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে তারা বাসায় বসে আছে। তাই সবাই বাসা থেকে একটু বের হয়েছি। বাইরে আলো-বাতাসেরও প্রয়োজন আছে। তবে বাজার থেকে ফিরে গোসল করেই বাসার কাজে হাত দেব।’ মালিবাগ রেলগেট এলাকায় আনিস নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘সময় খুব খারাপ যাচ্ছে আমাদের। আমার তিন থেকে চার দিনের বাজার একবারে করলে তো অসুবিধা নেই। তবে কেন বার বার কারণে-অকারণে বাজারে আসতে হবে। নিজেরা সচেতন না হওয়া মানে মৃত্যু ডেকে আনা।’ মালিবাগ বাজারে মিলন নামের এক দোকানদার বলেন, ‘দেখেন আমি কাকে কি বলব, সব কিছু জেনেও কিছু বলতে পারি না, অনেকেই বাজারে দরকার না থাকলেও আসছে। তাদের নাকি বাসায় থাকতে অসুবিধা হয়, তাই ঘুরতে আসে। যদি কাস্টমারকে বলি একটু দূর থেকে বাজার নেন। হয়তো একথা শুনে কাস্টমার অন্যের দোকানে চলে যাবে।’

এদিকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পেটের ক্ষুধা মেটাতে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন চালকরা। কিন্তু রাস্তায় নামলেই পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। উল্টে রাখা হচ্ছে রিকশা, দেয়া হচ্ছে শাস্তি। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাই বেশ বিপদেই আছেন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ। রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় স্বপন নামের রিকশাচালক বলেন, ‘পেটের খিদায় রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হইছি। আগে আমি একটা হোটেলে কাজ করতাম। এখন হোটেল বন্ধ থাকে। সব কিছুই বন্ধ। এ কারণেই রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হইছি। কিন্তু আমাগো রিকশা আটকায়া রাখছে পুলিশ। ঘরে বউ-বাচ্চা সবাই না খায়া আছে। খাওন তো লাগবে। না খাইতে পারলে বাঁচমু কীভাবে?’ পাভেল নামের অপর রিকশাচালক বলেন, আমরা সাহায্য বা ত্রাণ কারও কাছ থেকে পাইনি। যদি সাহায্য পেতাম তাহলে কি রাস্তায় আমরা এভাবে বের হতাম? আমার ঘরে ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে। মেয়েটারে খাওয়ানোর দুধ নাই। দুধ কেনার জন্য রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি। সকাল আটটা থেকে আমাদের রিকশা আটকে রাখা হইছে।