সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন না মানলে মামলা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে পুলিশ। ঢাকায় লকডাউন অমান্য করে বাড়ির বাইরে ঘোরাফেরা করলে পুলিশ মামলা করবে, এমন কি মোবাইল কোর্টে তাৎক্ষণিক শাস্তি দেয়া হবে।

গত শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে জনগণকে লকডাউন বাস্তবায়নে বাধ্য করতে পুলিশকে কঠোর অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে ডিএমপির কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অহেতুক রাস্তায় ঘোরাফেরা, গাড়ি নিয়ে চলাচল, রাস্তায় আড্ডায় ঠেকাতে পুলিশকে কঠোর অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকের পরপরই বিভিন্ন এলাকায় মানুষের ঘোরাফেরা এবং আড্ডা ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান শুরু করেছে ডিএমপি।

সরকার সারাদেশে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ সে নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে নানা উছিলায় রাস্তায় চলাফেরা করছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশন অমান্য করে আড্ডায় মেতে উঠার দৃশ্য বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি পর্দায় দেখা যাচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে হোম কোয়ারেন্টিন ঠিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নামিয়েও রাস্তায় অবাধে সাধারণ মানুষের চলাফেরা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির এমন এক কর্মকর্তা জানান, করোনা পরিস্থিতি দিনে দিনে ভয়াবহ হয়ে উঠলেও এবং আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মানুষের মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশকে করোনার জন্য ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করার পরও মানুষের চলাফেরা, আড্ডা দেয়া বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।

ডিএমপির ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাস্তায় মানুষকে ঘোরাফেরার কারণ জানতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের নানাভাবে নাজেহাল হতে হয়েছে। অনেকেই পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। শুরুতে পুলিশ কঠোর থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনার কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষ নমনীয় থেকে সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিতে বা সতর্ক করতে বলা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, পুলিশের নমনীয় থাকার সুযোগ নিয়ে মানুষ উৎসব-আমেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব এবং হোম কোয়ারেন্টিন কার্যকরভাবে রাখতে না পারার কারণে গত কয়েকদিনে আক্রান্ত এবং মুত্যুর সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এ প্রেক্ষাপটে কিভাবে সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখা যায় তা নিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে করেন।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্তবর্তী জানান, পুলিশকে পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কঠোর অবস্থানে যেতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে আইন মানতে কঠোর হওয়ার কোন বিকল্প পথ নেই। দুপুর ২টার মধ্যে নিত্যপণ্যের সব দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করা হবে। ৫টার পর কাঁচাবাজার ও সুপার সপ বন্ধ থাকবে। ৬টার মধ্যে সাধারণ মানুষকে বাধ্যতামূলক ঘরে থাকতে হবে। ৬টার পর কোন মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এছাড়া যৌক্তিক কারণ ছাড়া যেমন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাওয়া অথবা অন্য কোন জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। আইন অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধম্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে রাস্তায় অযথা ঘোরাফেরা করার কারণে অনেককে জরিমানা করা হয়েছে।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান, রমনা বিভাগের রমনা, শাহবাগ, হাজারীবাগ, কলাবাগানসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় সামাজিক দূরত্ব এবং হোম কোয়ারেন্টিন কার্যকর রাখতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মামলা দেয়া হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যারা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৯২(১) ধারানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ২৬ মার্চ থেকে গত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৯২(১) ধারায় ৩৪৪৫টি মামলা রুজু করেছে। আর জরিমানা আদায় করেছে ৬৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা। গত শুক্রবার থেকে ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় রমনা বিভাগের নিউমার্কেট থানা এলাকায় ৭টি মামলায় ১৫ হাজার জরিমানা করে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত। লালবাগ বিভাগের সূত্রাপুর থানা এলাকার ৬টি মামলায় ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। মতিঝিল বিভাগের মুগদা থানা এলাকায় ৫ জনকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ও উত্তরা বিভাগের উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় ১৩ মামলায় ১৩ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত।

রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০ , ৬ বৈশাখ ১৪২৭, ২৪ শাবান ১৪৪১

কঠোর অবস্থানে পুলিশ

সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন না মানলে মামলা

সাইফ বাবলু

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে পুলিশ। ঢাকায় লকডাউন অমান্য করে বাড়ির বাইরে ঘোরাফেরা করলে পুলিশ মামলা করবে, এমন কি মোবাইল কোর্টে তাৎক্ষণিক শাস্তি দেয়া হবে।

গত শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে জনগণকে লকডাউন বাস্তবায়নে বাধ্য করতে পুলিশকে কঠোর অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে ডিএমপির কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অহেতুক রাস্তায় ঘোরাফেরা, গাড়ি নিয়ে চলাচল, রাস্তায় আড্ডায় ঠেকাতে পুলিশকে কঠোর অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকের পরপরই বিভিন্ন এলাকায় মানুষের ঘোরাফেরা এবং আড্ডা ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান শুরু করেছে ডিএমপি।

সরকার সারাদেশে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু মানুষ সে নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে নানা উছিলায় রাস্তায় চলাফেরা করছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশন অমান্য করে আড্ডায় মেতে উঠার দৃশ্য বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টিভি পর্দায় দেখা যাচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে হোম কোয়ারেন্টিন ঠিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী মাঠে নামিয়েও রাস্তায় অবাধে সাধারণ মানুষের চলাফেরা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির এমন এক কর্মকর্তা জানান, করোনা পরিস্থিতি দিনে দিনে ভয়াবহ হয়ে উঠলেও এবং আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মানুষের মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশকে করোনার জন্য ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করার পরও মানুষের চলাফেরা, আড্ডা দেয়া বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।

ডিএমপির ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাস্তায় মানুষকে ঘোরাফেরার কারণ জানতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের নানাভাবে নাজেহাল হতে হয়েছে। অনেকেই পুলিশের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। শুরুতে পুলিশ কঠোর থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনার কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষ নমনীয় থেকে সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিতে বা সতর্ক করতে বলা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, পুলিশের নমনীয় থাকার সুযোগ নিয়ে মানুষ উৎসব-আমেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব এবং হোম কোয়ারেন্টিন কার্যকরভাবে রাখতে না পারার কারণে গত কয়েকদিনে আক্রান্ত এবং মুত্যুর সংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এ প্রেক্ষাপটে কিভাবে সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখা যায় তা নিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে করেন।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্তবর্তী জানান, পুলিশকে পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কঠোর অবস্থানে যেতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে আইন মানতে কঠোর হওয়ার কোন বিকল্প পথ নেই। দুপুর ২টার মধ্যে নিত্যপণ্যের সব দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করা হবে। ৫টার পর কাঁচাবাজার ও সুপার সপ বন্ধ থাকবে। ৬টার মধ্যে সাধারণ মানুষকে বাধ্যতামূলক ঘরে থাকতে হবে। ৬টার পর কোন মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এছাড়া যৌক্তিক কারণ ছাড়া যেমন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাওয়া অথবা অন্য কোন জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ রাস্তায় গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে পারবে না। আইন অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধম্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে রাস্তায় অযথা ঘোরাফেরা করার কারণে অনেককে জরিমানা করা হয়েছে।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান, রমনা বিভাগের রমনা, শাহবাগ, হাজারীবাগ, কলাবাগানসহ বিভিন্ন থানা এলাকায় সামাজিক দূরত্ব এবং হোম কোয়ারেন্টিন কার্যকর রাখতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মামলা দেয়া হচ্ছে। করোনা প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যারা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৯২(১) ধারানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ২৬ মার্চ থেকে গত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৯২(১) ধারায় ৩৪৪৫টি মামলা রুজু করেছে। আর জরিমানা আদায় করেছে ৬৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা। গত শুক্রবার থেকে ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় রমনা বিভাগের নিউমার্কেট থানা এলাকায় ৭টি মামলায় ১৫ হাজার জরিমানা করে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত। লালবাগ বিভাগের সূত্রাপুর থানা এলাকার ৬টি মামলায় ১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। মতিঝিল বিভাগের মুগদা থানা এলাকায় ৫ জনকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ও উত্তরা বিভাগের উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় ১৩ মামলায় ১৩ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত।