৫৮ শতাংশ মানুষের আয় নেই

চিকিৎসকদের ২৫ শতাংশ এবং নার্সদের ৬০ শতাংশ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পাননি। যারা পেয়েছেন তারাও সেইসব পিপিইর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। গার্মেন্টস শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের ৫৮ শতাংশ মানুষের আয় নেই। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের জরিপে এসব তথ্য জানা গেছে।

এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ। করোনাভাইরাসের কারণে সামনের সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মী, বস্তিবাসী, পোশাক শ্রমিক এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত এবং আর্থিক বিষয় নিয়ে ছয়টি আলাদা জরিপে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। একেবারেই আয় উপার্জন নেই এমন গৃহস্থালির মানুষজন সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপে রয়েছেন বলে জরিপে ওঠে এসেছে। মানুষের উপার্জন, পুষ্টি, লিঙ্গ, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদির ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে জরিপটি করা হয়। মোবাইল ফোনে ৬-১৩ এপ্রিল চালানো জরিপে অংশ নেন এক হাজার ৩০৯ জন। তাদের ৩৭ শতাংশ বলেছেন, প্রধানত ভাত, ডাল এবং আলু খেয়ে তারা জীবনধারণ করছেন। জরিপে অংশ নেয়ারা গার্মেন্টস শ্রমিক ও শহরের তরুণ। জরিপে অংশ নেয়া ৫৮ শতাংশের আয় নেই। আংশিক আয় আছে ২৯ শতাংশের আর আয়ের ওপর কোন প্রভাব নেই ১৩ শতাংশের। মাত্র ৩৮ শতাংশ ব্যক্তি জানেন তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কথা। মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ হাঁচি-কাশি দিলে কনুই দিয়ে মুখ ঢাকেন। বহু মানুষ এখনও জানেন না, রোগটি কীভাবে ছড়ায়। টেলিফোনে ৯-১৪ এপ্রিল দেশের ১৪ জেলার ৪৩ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৬০ চিকিৎসক ও নার্স টেলিফোনে জানান, চিকিৎসকরা পিপিই পরিধান, ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন নিজ উদ্যোগে জেনে নিলেও নার্সদের অধিকাংশই এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পাননি।

জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরার সময় গবেষক বুশরা জেরিন ইসলাম বলেন, সামনের সারিতে থাকা ৭৫ ভাগ চিকিৎসক এবং ৪০ শতাংশ নার্স পিপিই পেয়েছেন। কিন্তু রেইনকোটের মতো যে পিপিই দেয়া হয়েছে, সেটা আদৌ কাজ করে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তারা। আবার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ হচ্ছে, এগুলো একবার ব্যবহার করে ধ্বংস করতে হবে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের পুনরায় ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। এসব বিষয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বড় রকমের মানসিক চাপ তৈরি করছে। বস্তিবাসী ও হিজড়াদের ওপর চালানো জরিপে উঠে এসেছে, ঢাকা শহরের দরিদ্র ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে উচ্চ মাত্রার ভয় ও আতঙ্ক রয়েছে। বস্তিতে সাধারণ জ্বর-সর্দি হলে তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এর কারণ হিসেবে জরিপে বলা হয়েছে, ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নেয়া এসব বস্তিবাসীরা এখন ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আবার করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলেও তারা আতঙ্কিত হচ্ছেন। কারণ করোনা পজিটিভ হলেই পুরো পরিবারকে বস্তি ছাড়া করা হতে পারে।

ব্র্যাকের জরিপে উঠে এসেছে, হিজড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে, তারা করোনাভাইরাসে মারা যাবেন, কিন্তু চিকিৎসা পাবেন না। আবার তাদের উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দল বেধে চলাফেরা করায় তাদের করোনাভাইরাস বহনকারী বলে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। এ কারণে তারা আরও প্রান্তিক হয়ে যাচ্ছেন।

রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০ , ৬ বৈশাখ ১৪২৭, ২৪ শাবান ১৪৪১

৫৮ শতাংশ মানুষের আয় নেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

চিকিৎসকদের ২৫ শতাংশ এবং নার্সদের ৬০ শতাংশ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) পাননি। যারা পেয়েছেন তারাও সেইসব পিপিইর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। গার্মেন্টস শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের ৫৮ শতাংশ মানুষের আয় নেই। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের জরিপে এসব তথ্য জানা গেছে।

এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ। করোনাভাইরাসের কারণে সামনের সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মী, বস্তিবাসী, পোশাক শ্রমিক এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত এবং আর্থিক বিষয় নিয়ে ছয়টি আলাদা জরিপে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। একেবারেই আয় উপার্জন নেই এমন গৃহস্থালির মানুষজন সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপে রয়েছেন বলে জরিপে ওঠে এসেছে। মানুষের উপার্জন, পুষ্টি, লিঙ্গ, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদির ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে জরিপটি করা হয়। মোবাইল ফোনে ৬-১৩ এপ্রিল চালানো জরিপে অংশ নেন এক হাজার ৩০৯ জন। তাদের ৩৭ শতাংশ বলেছেন, প্রধানত ভাত, ডাল এবং আলু খেয়ে তারা জীবনধারণ করছেন। জরিপে অংশ নেয়ারা গার্মেন্টস শ্রমিক ও শহরের তরুণ। জরিপে অংশ নেয়া ৫৮ শতাংশের আয় নেই। আংশিক আয় আছে ২৯ শতাংশের আর আয়ের ওপর কোন প্রভাব নেই ১৩ শতাংশের। মাত্র ৩৮ শতাংশ ব্যক্তি জানেন তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কথা। মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ হাঁচি-কাশি দিলে কনুই দিয়ে মুখ ঢাকেন। বহু মানুষ এখনও জানেন না, রোগটি কীভাবে ছড়ায়। টেলিফোনে ৯-১৪ এপ্রিল দেশের ১৪ জেলার ৪৩ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৬০ চিকিৎসক ও নার্স টেলিফোনে জানান, চিকিৎসকরা পিপিই পরিধান, ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন নিজ উদ্যোগে জেনে নিলেও নার্সদের অধিকাংশই এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পাননি।

জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরার সময় গবেষক বুশরা জেরিন ইসলাম বলেন, সামনের সারিতে থাকা ৭৫ ভাগ চিকিৎসক এবং ৪০ শতাংশ নার্স পিপিই পেয়েছেন। কিন্তু রেইনকোটের মতো যে পিপিই দেয়া হয়েছে, সেটা আদৌ কাজ করে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তারা। আবার বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ হচ্ছে, এগুলো একবার ব্যবহার করে ধ্বংস করতে হবে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের পুনরায় ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। এসব বিষয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বড় রকমের মানসিক চাপ তৈরি করছে। বস্তিবাসী ও হিজড়াদের ওপর চালানো জরিপে উঠে এসেছে, ঢাকা শহরের দরিদ্র ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে উচ্চ মাত্রার ভয় ও আতঙ্ক রয়েছে। বস্তিতে সাধারণ জ্বর-সর্দি হলে তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এর কারণ হিসেবে জরিপে বলা হয়েছে, ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নেয়া এসব বস্তিবাসীরা এখন ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আবার করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলেও তারা আতঙ্কিত হচ্ছেন। কারণ করোনা পজিটিভ হলেই পুরো পরিবারকে বস্তি ছাড়া করা হতে পারে।

ব্র্যাকের জরিপে উঠে এসেছে, হিজড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে, তারা করোনাভাইরাসে মারা যাবেন, কিন্তু চিকিৎসা পাবেন না। আবার তাদের উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দল বেধে চলাফেরা করায় তাদের করোনাভাইরাস বহনকারী বলে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। এ কারণে তারা আরও প্রান্তিক হয়ে যাচ্ছেন।