চিকিৎসক নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীকে বাসা ছাড়তে বললে দুদক যাবে সম্পদের হিসাব দেখতে

করোনা সংক্রমণ আতঙ্কে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ভাড়া থাকা চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিতদের বাসা ছাড়তে বলেছেন যে সব বাড়িওয়ালা, তাদের সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরইমধ্যে চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিয়েছে এমন কয়েকজন বাড়িওয়ালার জমি-বাড়ির কাগজপত্র, আয়কর নথি ও ব্যাংকের হিসাব যাচাই শুরু করেছে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট।

গত ১৭ এপ্রিল সিলেট মহানগরের একটি বাসা থেকে একজন নার্সকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাড়ির মালিকের ভাতিজা। স্বেচ্ছায় বাসা না ছাড়লে জোর করে বের করে দেয়ারও হুমকি দিয়েছেন তারা। ময়মনসিংহে এক নারী চিকিৎসক করোনায় আক্রান্তের পর তাকে জোর করেই বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা। করোনায় আক্রান্ত অনেক চিকিৎসক ও নার্সকে বাড়িওয়ালারা বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মী, পুলিশসহ করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি সেবায় নিয়োজিত অনেককে তাদের বাড়িওয়ালার বাসা ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেন। বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে জানাজানি হলে সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে বাড়িওয়ালাদের সতর্ক করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। সর্বশেষ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বাড়িগুলোর বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ঘোষণা দেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যে সব বাড়িওয়ালা স্বাস্থ্যকর্মীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের বাড়ি ছাড়তে হুমকি দিয়েছেন বা দিচ্ছেন, তাদের বিষয়ে নিজস্ব সোর্স ও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের টিম। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন বাড়িওয়ালার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে যারা করোনা সংক্রান্ত চিকিৎসায় যুক্ত থাকা চিকিৎসকদের বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিয়েছে। এছাড়া অন্যন্য বাড়িওয়ালার তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘করোনার সময় শারীরিকভাবে চলাচল প্রায় বন্ধ। তাই ই-মেইল কিংবা অনলাইনের অন্যান্য মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাদের অবৈধ সম্পদসহ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না।

দুদক সূত্র জানায়, দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ও বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বাড়ির মালিকদের বিষয়ে খোজ খবর রাখা হচ্ছে। এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, নার্সসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণকারী বাড়ির মালিকদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এই সংকটকালে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মানবসেবায় নিয়োজিত। তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা ‘সংক্রামক রোগ আইন-২০০১৮’ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অরপরাধ।’ দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘যদি কোন বাড়ির মালিক স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কোন ব্যক্তিকে বাড়ি ছাড়ার কথা বলেন, তাহলে দুদক আইন অনুযায়ী তাদের বাড়ি নির্মাণের অর্থের উৎস খুঁজে দেখা হবে।’ এসব বাড়িওয়ালার অবৈধ সম্পদের উৎস পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০ , ৬ বৈশাখ ১৪২৭, ২৪ শাবান ১৪৪১

বাড়িওয়ালাদের প্রতি সতর্কবার্তা

চিকিৎসক নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীকে বাসা ছাড়তে বললে দুদক যাবে সম্পদের হিসাব দেখতে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

করোনা সংক্রমণ আতঙ্কে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ভাড়া থাকা চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিতদের বাসা ছাড়তে বলেছেন যে সব বাড়িওয়ালা, তাদের সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরইমধ্যে চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিয়েছে এমন কয়েকজন বাড়িওয়ালার জমি-বাড়ির কাগজপত্র, আয়কর নথি ও ব্যাংকের হিসাব যাচাই শুরু করেছে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট।

গত ১৭ এপ্রিল সিলেট মহানগরের একটি বাসা থেকে একজন নার্সকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাড়ির মালিকের ভাতিজা। স্বেচ্ছায় বাসা না ছাড়লে জোর করে বের করে দেয়ারও হুমকি দিয়েছেন তারা। ময়মনসিংহে এক নারী চিকিৎসক করোনায় আক্রান্তের পর তাকে জোর করেই বাসা থেকে বের করে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা। করোনায় আক্রান্ত অনেক চিকিৎসক ও নার্সকে বাড়িওয়ালারা বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মী, পুলিশসহ করোনা পরিস্থিতিতে জরুরি সেবায় নিয়োজিত অনেককে তাদের বাড়িওয়ালার বাসা ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেন। বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে জানাজানি হলে সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে বাড়িওয়ালাদের সতর্ক করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। সর্বশেষ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বাড়িগুলোর বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ঘোষণা দেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যে সব বাড়িওয়ালা স্বাস্থ্যকর্মীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের বাড়ি ছাড়তে হুমকি দিয়েছেন বা দিচ্ছেন, তাদের বিষয়ে নিজস্ব সোর্স ও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের টিম। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন বাড়িওয়ালার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে যারা করোনা সংক্রান্ত চিকিৎসায় যুক্ত থাকা চিকিৎসকদের বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিয়েছে। এছাড়া অন্যন্য বাড়িওয়ালার তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘করোনার সময় শারীরিকভাবে চলাচল প্রায় বন্ধ। তাই ই-মেইল কিংবা অনলাইনের অন্যান্য মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাদের অবৈধ সম্পদসহ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না।

দুদক সূত্র জানায়, দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ও বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বাড়ির মালিকদের বিষয়ে খোজ খবর রাখা হচ্ছে। এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে চিকিৎসক, নার্সসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণকারী বাড়ির মালিকদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এই সংকটকালে ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মানবসেবায় নিয়োজিত। তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা ‘সংক্রামক রোগ আইন-২০০১৮’ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অরপরাধ।’ দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘যদি কোন বাড়ির মালিক স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত কোন ব্যক্তিকে বাড়ি ছাড়ার কথা বলেন, তাহলে দুদক আইন অনুযায়ী তাদের বাড়ি নির্মাণের অর্থের উৎস খুঁজে দেখা হবে।’ এসব বাড়িওয়ালার অবৈধ সম্পদের উৎস পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে ।