ধান কাটার ব্যবস্থা করুন

সারা দেশে বোরো ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু ধান কাটার চরম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষি শ্রমিক সংকট। এ বিষয়ে গতকাল সংবাদ-এ প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘বোরোর ব্যাপক ফলন ধান কাটায় সংকট’ শিরোনামের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে চলতি মওসুমে ধানের ফলন ভালো হলেও, ধান কাটায় বাধা হয়েছে কৃষি শ্রমিক সংকট। এই সময় আকস্মিক বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের কারণে ধান ঘরে তোলা কৃষকের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা দেশে এখন লকডাউন চলছে। বন্ধ হয়ে আছে গণপরিবহন। অন্য কোন যানবাহন সড়কে চলতে পারছে না। ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটা এলাকায় যেতে পারছেন না। স্থানীয়ভাবে পাওয়া কৃষি শ্রমিকরা যতটা পারছেন ধান কাটছেন।

জানা গেছে, দেশে মোট উৎপাদিত ধানের ১৮ শতাংশের বেশি উৎপন্ন হয় হাওরের সাত জেলায়। খাদ্য সরবরাহের বড় অংশ নিশ্চিত হয় এখানকার ধানে। সরকারি গুদামে মজুতের মূল অংশটিও নির্ভর করে এই ফসলের ওপর। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং সিলেটের একাংশের অন্তত ২৫০টি হাওরে বোরো আবাদ হয়। সেসব অঞ্চল থেকে ইতোমধ্যে কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটায় বিঘœ ঘটছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও সিলেটের হাওর অঞ্চলের কৃষকরা ধান কাটার অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। চলনবিল দেশের খাদ্যশস্যের অন্যতম উৎস। সেখানেও ধান কাটার লোক নেই। যশোর, সাতক্ষীরাতে একই শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা বন্ধ থাকার খবরটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে অনেক জায়গায় ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কৃষি বিভাগের উদ্যোগে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার পাশাপাশি শ্রমিক আনার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি শ্রমিকদের লকডাউনের বাইরে রাখার নির্দেশ দিতে হবে।

ধান কাটার মৌসুমে সাধারণত রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে দিনমজুররা দেশের বিভিন্ন জেলায় আসে। তারা চুক্তির ভিত্তিতে ধান কেটে আবার নিজ জেলায় ফিরে যায়। করোনার দুর্যোগে অন্য সবার মতো তারাও এখন ঘরে বন্দি। তাদের হাতে যেমন কাজ নেই তেমনি জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সঙ্গতিও নেই। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য নিরাপত্তার যাবতীয় বিষয়াদি মেনে জরুরি ভিত্তিতে তাদের সবাইকে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশের ফসলি জমিগুলোতে প্রেরণ করা দরকার। এখনই এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়া হলে এবং সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে না পারলে দেশে খাদ্যসংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

আরও খবর
এ দায় কার

রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০ , ৬ বৈশাখ ১৪২৭, ২৪ শাবান ১৪৪১

জরুরি ভিত্তিতে শ্রমিক এনে

ধান কাটার ব্যবস্থা করুন

সারা দেশে বোরো ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু ধান কাটার চরম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষি শ্রমিক সংকট। এ বিষয়ে গতকাল সংবাদ-এ প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘বোরোর ব্যাপক ফলন ধান কাটায় সংকট’ শিরোনামের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে চলতি মওসুমে ধানের ফলন ভালো হলেও, ধান কাটায় বাধা হয়েছে কৃষি শ্রমিক সংকট। এই সময় আকস্মিক বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের কারণে ধান ঘরে তোলা কৃষকের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা দেশে এখন লকডাউন চলছে। বন্ধ হয়ে আছে গণপরিবহন। অন্য কোন যানবাহন সড়কে চলতে পারছে না। ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষি শ্রমিকরা ধান কাটা এলাকায় যেতে পারছেন না। স্থানীয়ভাবে পাওয়া কৃষি শ্রমিকরা যতটা পারছেন ধান কাটছেন।

জানা গেছে, দেশে মোট উৎপাদিত ধানের ১৮ শতাংশের বেশি উৎপন্ন হয় হাওরের সাত জেলায়। খাদ্য সরবরাহের বড় অংশ নিশ্চিত হয় এখানকার ধানে। সরকারি গুদামে মজুতের মূল অংশটিও নির্ভর করে এই ফসলের ওপর। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং সিলেটের একাংশের অন্তত ২৫০টি হাওরে বোরো আবাদ হয়। সেসব অঞ্চল থেকে ইতোমধ্যে কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটায় বিঘœ ঘটছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও সিলেটের হাওর অঞ্চলের কৃষকরা ধান কাটার অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। চলনবিল দেশের খাদ্যশস্যের অন্যতম উৎস। সেখানেও ধান কাটার লোক নেই। যশোর, সাতক্ষীরাতে একই শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা বন্ধ থাকার খবরটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে অনেক জায়গায় ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কৃষি বিভাগের উদ্যোগে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার পাশাপাশি শ্রমিক আনার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি শ্রমিকদের লকডাউনের বাইরে রাখার নির্দেশ দিতে হবে।

ধান কাটার মৌসুমে সাধারণত রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে দিনমজুররা দেশের বিভিন্ন জেলায় আসে। তারা চুক্তির ভিত্তিতে ধান কেটে আবার নিজ জেলায় ফিরে যায়। করোনার দুর্যোগে অন্য সবার মতো তারাও এখন ঘরে বন্দি। তাদের হাতে যেমন কাজ নেই তেমনি জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সঙ্গতিও নেই। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য নিরাপত্তার যাবতীয় বিষয়াদি মেনে জরুরি ভিত্তিতে তাদের সবাইকে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশের ফসলি জমিগুলোতে প্রেরণ করা দরকার। এখনই এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়া হলে এবং সময়মতো ফসল ঘরে তুলতে না পারলে দেশে খাদ্যসংকট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।