এ দায় কার

সারা দেশ কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত বৃহস্পতিবার অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঝুঁকির কথা জানানো হয়। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮-এর ১১(১) ধারার ক্ষমতাবলে অধিদফতর উক্ত ঘোষণা দেয়।

সারা দেশ যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে সেটা বুঝতে স্বাস্থ্য অধিদফতর যথেষ্ট দেরি করে ফেলেছে। ১১ জানুয়ারি চীনে যখন এ রোগে প্রথম রোগীর মৃত্যু ঘটল তখনই আমাদের সতর্ক হওয়া জরুরি ছিল। কারণ দেশটির সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। শুরুতে যেসব দেশ সতর্ক হয়েছে সেসব দেশই আজ সাফল্যের সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করছে। আর ইউরোপ-আমেরিকাসহ যেসব দেশ একে উপেক্ষা করেছে তারাই আজ চরম মূল্য দিচ্ছে। কোভিড-১৯ নিয়ে উদাসীন দেশগুলোতে লাখো মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন হাজারও।

দেশে যখন ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সন্ধান মিলল তখনও যদি সরকার সতর্ক হতো তাহলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যেত। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টেস্টিং কিট, মাস্ক, পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি যথাসময়ে পূরণ করেনি। তারা ফাঁকা বুলি আওড়ে গেছে। যার খেসারত আজ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসক পর্যন্ত সবাইকে দিতে হচ্ছে। খোদ চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসসেবায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। আইইডিসিআরের কর্মীরাই এতে সংক্রমিত হয়েছেন। দেশে একজন চিকিৎসক এ রোগে মারা গেছেন। দেশে মৃত্যুতে আর সংক্রমণে প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। রোগ সংক্রমণের লক্ষ্যে যেমন প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের জোগান নিশ্চিত করা হয়নি, তেমন পর্যাপ্ত টেস্টেরও ব্যবস্থা করা হয়নি।

সারা দেশ আজ করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়েছে কাদের ব্যর্থতায় সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন বলে আমরা মনে করি। দেশের কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি তো চিকিৎসকদেরই নিরাপত্তা দিতে পারেননি। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে দেশের একজন চিকিৎসক মারা গেলেও তিনি ঘরে বসে ছিলেন। তার নেতৃত্বে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার কথা। তিনি নিজে ঘরে বসে আছেন আর ঢাল-তলোয়ার না দিয়েই বা ঘাটতি রেখে চিকিৎসকদের যুদ্ধক্ষেত্রে ঠেলে দিয়েছেন। এ অবস্থায় না রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে, না চিকিৎসকদের ন্যূনতম সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন কী করে সেই প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমান সরকার যেসব ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছে তাদের অনেকের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, রাজনীতি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান নেই, ব্যবসায়ী মনোভাবাপন্ন এমন অনেক ব্যক্তি মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন। এ ধরনের ব্যক্তিই দেশ ও সরকারকে নানাভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছেন। দেশকে রক্ষা করতে হলে যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হবে।

রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০ , ৬ বৈশাখ ১৪২৭, ২৪ শাবান ১৪৪১

সারা দেশ করোনার ঝুঁকিতে

এ দায় কার

সারা দেশ কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত বৃহস্পতিবার অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ঝুঁকির কথা জানানো হয়। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮-এর ১১(১) ধারার ক্ষমতাবলে অধিদফতর উক্ত ঘোষণা দেয়।

সারা দেশ যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে সেটা বুঝতে স্বাস্থ্য অধিদফতর যথেষ্ট দেরি করে ফেলেছে। ১১ জানুয়ারি চীনে যখন এ রোগে প্রথম রোগীর মৃত্যু ঘটল তখনই আমাদের সতর্ক হওয়া জরুরি ছিল। কারণ দেশটির সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। শুরুতে যেসব দেশ সতর্ক হয়েছে সেসব দেশই আজ সাফল্যের সঙ্গে নভেল করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করছে। আর ইউরোপ-আমেরিকাসহ যেসব দেশ একে উপেক্ষা করেছে তারাই আজ চরম মূল্য দিচ্ছে। কোভিড-১৯ নিয়ে উদাসীন দেশগুলোতে লাখো মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন হাজারও।

দেশে যখন ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তির সন্ধান মিলল তখনও যদি সরকার সতর্ক হতো তাহলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যেত। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টেস্টিং কিট, মাস্ক, পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি যথাসময়ে পূরণ করেনি। তারা ফাঁকা বুলি আওড়ে গেছে। যার খেসারত আজ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসক পর্যন্ত সবাইকে দিতে হচ্ছে। খোদ চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসসেবায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। আইইডিসিআরের কর্মীরাই এতে সংক্রমিত হয়েছেন। দেশে একজন চিকিৎসক এ রোগে মারা গেছেন। দেশে মৃত্যুতে আর সংক্রমণে প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। রোগ সংক্রমণের লক্ষ্যে যেমন প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের জোগান নিশ্চিত করা হয়নি, তেমন পর্যাপ্ত টেস্টেরও ব্যবস্থা করা হয়নি।

সারা দেশ আজ করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়েছে কাদের ব্যর্থতায় সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন বলে আমরা মনে করি। দেশের কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি তো চিকিৎসকদেরই নিরাপত্তা দিতে পারেননি। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে দেশের একজন চিকিৎসক মারা গেলেও তিনি ঘরে বসে ছিলেন। তার নেতৃত্বে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার কথা। তিনি নিজে ঘরে বসে আছেন আর ঢাল-তলোয়ার না দিয়েই বা ঘাটতি রেখে চিকিৎসকদের যুদ্ধক্ষেত্রে ঠেলে দিয়েছেন। এ অবস্থায় না রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে, না চিকিৎসকদের ন্যূনতম সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যক্তি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন কী করে সেই প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমান সরকার যেসব ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছে তাদের অনেকের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, রাজনীতি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান নেই, ব্যবসায়ী মনোভাবাপন্ন এমন অনেক ব্যক্তি মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন। এ ধরনের ব্যক্তিই দেশ ও সরকারকে নানাভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছেন। দেশকে রক্ষা করতে হলে যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হবে।