কোভিড-১৯ : চ্যালেঞ্জ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি প্রশমন

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

কোভিড-১৯ মানব জাতির জন্য এক বড় আঘাত। করোনাভাইরাসে সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। গোটা পৃথিবীকে করোনা কাঁপিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের ২২০টি দেশ ও অঞ্চল করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত রোগী সাড়ে ১৭ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বেড়ে চলছে। বাংলাদেশে এ মহামারী দিন দিন আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষ আজ দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। চারিদিকে আর্ত-মানবতার হাহাকার। কর্মহীন শ্রমজীবীরা অনেকেই না খেয়ে আছেন। চাল-ডালের জন্য মানুষ ঘরের বাইরে আসেন। রাস্তায় নেমে তারা হাহাকার করছেন এবং একই সঙ্গে লকডাউনের নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন।

এ কঠিন পরিস্থিতিতে সরকারি ও বেসরকারি অনেক সংগঠন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে সরকারি ও বেসরকারি উভয় সেক্টরেই বিতরণকারী সংস্থার মধ্যে ছবি তোলা ও প্রচারমুখিতা বেশি বেশি পরিদৃষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে ত্রাণসামগ্রী আত্মসাতের খবর এসেছে যা খুবই অমানবিক ও নিকৃষ্ট মনের কাজ। অসহায় মানুষের খাবারের ওপর এই বিকৃত লালসার নরপশুগুলোকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নির্ভর করবে সততা, স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার ওপরে। সরকারের বা সরকার প্রধানের সদিচ্ছা আছে ঠিকই। কিন্তু সরকারি অব্যবস্থাপনা তথা একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের যদি নজরদারিতে রাখা যায় তাহলেই বড় রক্ষা হবে। এক্ষেত্রে সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় কর্মীদেরকে এক বড় চ্যালেঞ্জ ও মহাপরীক্ষার বৈতরণী পাড়ি দিয়েই হয়তো এ সংকট কালকে অতিক্রম করা সম্ভব হবে। অতীতে নজির আছে যে সরকার ন্যায্য মূল্যে চাল-ডাল বিক্রির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা সত্ত্বেও একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজও স্বার্থান্বেষী মহলের কূটচাল ও চক্রান্তের তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। সরকারের মধ্যে যে অব্যবস্থাপনার ভূত বা অনিয়মও দুর্নীতি আছে তা শক্ত হাতে দমন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১ নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন হলে অবশ্যই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আমরা লক্ষ্য করেছি বিগত দিনে বা বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক সুষ্ঠু নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানের অবয়বগত পরিবর্তনসহ গুণগত পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। তাকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে আইন ও বিধির পরিবর্তন আবশ্যক এবং নীতিমালা সমূহের ব্যাপক পরিবর্তন পরিবর্ধন সাপেক্ষে তাদেরকে সময়োপযোগী সংস্কারে হাত দিতে হবে।

সাধারণভাবে ব্যবস্থাপনা বলতে আমরা একটি সংগঠনের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য জনগণ ও অন্যান্য সম্পদকে সুষ্ঠুভাবে নিয়োজিত করা বুঝায়। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা একটি বিশেষ ধরনের ব্যবস্থাপনা যাতে দুর্যোগের প্রত্যেক পর্যায়ের নীতি নির্ধারণ, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এবং বাস্তব পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ সরকারের কার্যবিধি অনুযায়ী জাতীয় দুর্যোগ পরিকল্পনা প্রণয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার নীতি ও ত্রাণ কর্মসূচির নীতিনির্ধারণ, সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত। অনুরূপভাবে জরুরি পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীসমূহকে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের সহায়তায় নিয়ে আসার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিকসমূহ হচ্ছে-দুর্যোগ প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ, সতর্কীকরণ, অপসারণের স্থান নির্ধারণ, অপসারণ, উদ্ধার কার্য পরিচালনা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ নির্ধারণ, যোগাযোগ স্থাপন, তথ্য পরিবেশন, জরুরি সাহায্য ও ত্রাণ বণ্টন, পুনর্বাসনের ব্যবস্থাকরণ, দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগ প্রশমন পরিকল্পনা গ্রহণ ইত্যাদি। তবে কোভিড-১৯ এর প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো হচ্ছে- যথাযথ পিপিই সংগ্রহ ও সরবরাহকরণ, জেলায় জেলায় পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে করোনা বেশি করে রোগী শনাক্তকরণ, সোশাল ডিস্ট্যান্সিং, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন বিধি পালন ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা।

কোভিড-১৯ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে মারাত্মক ও মহাদুর্যোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ মহাদুর্যোগ কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় সব শ্রেণী-পেশার জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি, সম্ভাব্য আক্রমণের ক্ষতি ও মাত্রা নির্ণয় করতে হবে। কারণ সব জনগোষ্ঠী একই ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি নয়। কাজেই কোভিড-১৯ ঝুঁকি নিরসনের পূর্বশর্ত হবে ঝুঁকিকে নিরূপণ করা, যার পূর্বশর্ত হলো বাস্তবে করোনা আক্রান্ত রোগীকে শনাক্তকরণের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। বলা দরকার, শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক করোনা রোগী শনাক্তকরণ সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিটি জেলায় এ ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুততম সময়ে। অবশ্য এরই মধ্যে সরকার বিভাগীয় পর্যায়ে করোনা শনাক্তের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। যেসব এলাকায় বিদেশ ফেরত জনগোষ্ঠী অবস্থান করছে, সেসব এলাকা অতি দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের করোনা শনাক্তকরণের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশও প্রশাসন থেকে এসেছে। বর্তমান ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে ঝুঁকিপূর্ণ ও আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে শনাক্ত করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে। কার্যকর অ্যাকশন প্ল্যানের মাধ্যমে করোনা ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র ও নাজুক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এলাকা বা অঞ্চলভিত্তিক চিহ্নিত করা জরুরি। পাশাপাশি কন্টিনজেন্সি প্ল্যানের মাধ্যমে ঝুঁকি ও নাজুকতা ম্যানেজ করার সর্বাত্মক কর্মসূচি গ্রহণ করা।

দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। সব সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ও ডিপার্টমেন্টাল প্রধানদের বসে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করে রাখতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে আইসোলেশন জোনের ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। যাতে করে মহামারী প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। হাসপাতালে করোনা ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, অ্যানেস্থেসিস্ট, ইনটেনসিভিস্ট আছেন তারা সব বিভাগের জুনিয়র, মিড লেভেল চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। নিজ নিজ হাসপাতালে যে সব যন্ত্রাংশ অকার্যকর অবস্থায় আছে সেগুলো মেরামত সাপেক্ষে কার্যকর করার চেষ্টা করতে হবে। জরুরি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মজুদ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা ও চিকিৎসার সঙ্গে অসংখ্য চিকিৎসক নিয়োজিত আছেন। বিভিন্ন সার্জিক্যাল, মেডিকেল সোসাইটিসমূহ এ ব্যাপারে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিসিপিএস বাংলাদেশের কনটেক্সটে বিভিন্ন গাইডলাইন্স প্রকাশ করতে পারে। এ মুহূর্তে ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিও সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে।

শুধু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর বা তথাকথিত রোগ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে এ ধ্বংসযজ্ঞ বহুগুণ বেড়ে যাবে। চিকিৎসকরা তাদের নিষ্ঠা বা কমিটমেন্টের মাধ্যমে যেভাবে দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আগলে রেখেছেন তা সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ মহাদুর্যোগের সময়ে চিকিৎসক সমাজ হেরে গেলে এ দেশ আর কখনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। যে যার যার অবস্থানে থেকে যতটা সম্ভব প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করুন। সব হাসপাতাল, চিকিৎসক এবং নার্সদের যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা দিয়ে রোগীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে আর্ত মানবতা সেবার মহান ব্রত নিয়ে। আগামী ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রচুর সাহায্যের প্রয়োজন হবে। শুধু চিকিৎসক নয় অন্যান্য পেশাজীবি সংগঠন ও সব শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা ও সাহায্য ছাড়া কোনোভাবেই সরকারের পক্ষে এককভাবে এই মহাদুর্যোগের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করে ফুডব্যাংক স্থাপনের মাধ্যমে বেকার, দুস্থ, ভূমিহীন, অসহায় ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকে তাদের দোরগোড়ায় নিয়মিত খাবার ও সুপেয় পানি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সোশাল ডিস্টেন্সিং ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ার লক্ষ্যে সব পর্যায়ের মানুষকে নানা ধরনের কার্যকর করণীয় বিষয়ে ব্যাপক প্রচার ও সম্প্রচার চালানো অত্যন্ত জরুরি। বিত্তবানদের এ মহাবিপর্যয়ে তাদের উদ্বৃত্ত রিসোর্সসমূহ সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব নিরসনে সরকারের সংশ্লিষ্ট এজেন্সির মাধ্যমে দিতে হবে, যাতে আপৎকালীন ফান্ড/রিসোর্সের বাজার স্টক করা যেতে পারে। সরকারের আপৎকালীন ফান্ড স্থাপন ও দ্রুত অবমুক্তির মাধ্যমে সব ধরনের প্রয়োজন মেটানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে বাজেট ও এডিবি থেকে অর্থ জরুরি তহবিল বা এনডোর্সমেন্ট ফান্ডে হস্তান্তর করতে হবে। সর্বোপরি এটি কারো একক দায়িত্ব নয়, বরং ধনী-দরিদ্র্য, জাতি-গোষ্ঠী, ধর্ম-বর্ণ, নৃগোষ্ঠী, জেন্ডার নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে নিজেদের সুরক্ষার মাধ্যমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া যদি দ্রুততম সময়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম হয়, বাংলাদেশও পারবে এ মহামারী তথা মহাদুর্যোগকে রুখতে। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহের নিমিত্তে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল স্থাপন করতে হবে। হাসপাতালের জরুরি সেবায় নিয়োজিত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা, ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের জন্য সুরক্ষাবিষয়ক পরিবহনসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য দরকার কার্যকর স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সঠিক ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেগুলোর বাস্তবায়ন।

উপসংহারে বলা যায় যে, সরকারের প্রশাসন যন্ত্র বিশেষত মন্ত্রণালয়, দফতরসমূহের সচেতন কর্মচারী, সচেতন নাগরিক সমাজ, বেসরকারি সংগঠন ও সেবা সংস্থাসমূহের কার্যক্রমকে সুষ্ঠু, সমন্বিত ও সুসংগঠিত করতে হবে। এ মহাদুর্যোগে এর কোন বিকল্প নেই। অন্যথায় প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এর বিপর্যয় থেকে জাতির পরিত্রাণ পাওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠবে। প্রশাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। কঠোরতার পরিবর্তে ধৈর্য, সহনশীল মনোভাব, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সমস্ত মন্ত্রণালয়গুলোতে তাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নেতৃত্বে টিমওয়ার্ক স্পিরিটের ধারায় উদ্যমী হতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি চিকিৎসক, নার্স, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই মরণঘাতী করোনা কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও তা থেকে সুরক্ষা ব্যুহ তৈরি করতে হবে। এটা পুরো জাতির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে করোনা ভয়ে ভীত বা সন্ত্রস্ত হলে চলবে না। এটা আমাদের জন্য এক ইমানি পরীক্ষাও বটে। এ পরীক্ষায় এবং নিরস্ত্র যুদ্ধে ধৈর্য, ত্যাগ ও সাহসের সঙ্গে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে এবং পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রকে বিপর্যয়ের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে।

[ লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক ]

রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০ , ৬ বৈশাখ ১৪২৭, ২৪ শাবান ১৪৪১

কোভিড-১৯ : চ্যালেঞ্জ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি প্রশমন

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

কোভিড-১৯ মানব জাতির জন্য এক বড় আঘাত। করোনাভাইরাসে সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। গোটা পৃথিবীকে করোনা কাঁপিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের ২২০টি দেশ ও অঞ্চল করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত রোগী সাড়ে ১৭ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বেড়ে চলছে। বাংলাদেশে এ মহামারী দিন দিন আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষ আজ দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। চারিদিকে আর্ত-মানবতার হাহাকার। কর্মহীন শ্রমজীবীরা অনেকেই না খেয়ে আছেন। চাল-ডালের জন্য মানুষ ঘরের বাইরে আসেন। রাস্তায় নেমে তারা হাহাকার করছেন এবং একই সঙ্গে লকডাউনের নির্দেশনা ভঙ্গ করছেন।

এ কঠিন পরিস্থিতিতে সরকারি ও বেসরকারি অনেক সংগঠন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে সরকারি ও বেসরকারি উভয় সেক্টরেই বিতরণকারী সংস্থার মধ্যে ছবি তোলা ও প্রচারমুখিতা বেশি বেশি পরিদৃষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে ত্রাণসামগ্রী আত্মসাতের খবর এসেছে যা খুবই অমানবিক ও নিকৃষ্ট মনের কাজ। অসহায় মানুষের খাবারের ওপর এই বিকৃত লালসার নরপশুগুলোকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নির্ভর করবে সততা, স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার ওপরে। সরকারের বা সরকার প্রধানের সদিচ্ছা আছে ঠিকই। কিন্তু সরকারি অব্যবস্থাপনা তথা একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের যদি নজরদারিতে রাখা যায় তাহলেই বড় রক্ষা হবে। এক্ষেত্রে সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় কর্মীদেরকে এক বড় চ্যালেঞ্জ ও মহাপরীক্ষার বৈতরণী পাড়ি দিয়েই হয়তো এ সংকট কালকে অতিক্রম করা সম্ভব হবে। অতীতে নজির আছে যে সরকার ন্যায্য মূল্যে চাল-ডাল বিক্রির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা সত্ত্বেও একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজও স্বার্থান্বেষী মহলের কূটচাল ও চক্রান্তের তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। সরকারের মধ্যে যে অব্যবস্থাপনার ভূত বা অনিয়মও দুর্নীতি আছে তা শক্ত হাতে দমন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১ নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন হলে অবশ্যই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আমরা লক্ষ্য করেছি বিগত দিনে বা বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক সুষ্ঠু নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানের অবয়বগত পরিবর্তনসহ গুণগত পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। তাকে স্থায়ী রূপ দিতে হলে আইন ও বিধির পরিবর্তন আবশ্যক এবং নীতিমালা সমূহের ব্যাপক পরিবর্তন পরিবর্ধন সাপেক্ষে তাদেরকে সময়োপযোগী সংস্কারে হাত দিতে হবে।

সাধারণভাবে ব্যবস্থাপনা বলতে আমরা একটি সংগঠনের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য জনগণ ও অন্যান্য সম্পদকে সুষ্ঠুভাবে নিয়োজিত করা বুঝায়। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা একটি বিশেষ ধরনের ব্যবস্থাপনা যাতে দুর্যোগের প্রত্যেক পর্যায়ের নীতি নির্ধারণ, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এবং বাস্তব পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ সরকারের কার্যবিধি অনুযায়ী জাতীয় দুর্যোগ পরিকল্পনা প্রণয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার নীতি ও ত্রাণ কর্মসূচির নীতিনির্ধারণ, সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত। অনুরূপভাবে জরুরি পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীসমূহকে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের সহায়তায় নিয়ে আসার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিকসমূহ হচ্ছে-দুর্যোগ প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ, সতর্কীকরণ, অপসারণের স্থান নির্ধারণ, অপসারণ, উদ্ধার কার্য পরিচালনা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ নির্ধারণ, যোগাযোগ স্থাপন, তথ্য পরিবেশন, জরুরি সাহায্য ও ত্রাণ বণ্টন, পুনর্বাসনের ব্যবস্থাকরণ, দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগ প্রশমন পরিকল্পনা গ্রহণ ইত্যাদি। তবে কোভিড-১৯ এর প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো হচ্ছে- যথাযথ পিপিই সংগ্রহ ও সরবরাহকরণ, জেলায় জেলায় পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে করোনা বেশি করে রোগী শনাক্তকরণ, সোশাল ডিস্ট্যান্সিং, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন বিধি পালন ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা।

কোভিড-১৯ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে মারাত্মক ও মহাদুর্যোগের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ মহাদুর্যোগ কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় সব শ্রেণী-পেশার জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি, সম্ভাব্য আক্রমণের ক্ষতি ও মাত্রা নির্ণয় করতে হবে। কারণ সব জনগোষ্ঠী একই ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি নয়। কাজেই কোভিড-১৯ ঝুঁকি নিরসনের পূর্বশর্ত হবে ঝুঁকিকে নিরূপণ করা, যার পূর্বশর্ত হলো বাস্তবে করোনা আক্রান্ত রোগীকে শনাক্তকরণের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। বলা দরকার, শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক করোনা রোগী শনাক্তকরণ সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিটি জেলায় এ ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুততম সময়ে। অবশ্য এরই মধ্যে সরকার বিভাগীয় পর্যায়ে করোনা শনাক্তের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। যেসব এলাকায় বিদেশ ফেরত জনগোষ্ঠী অবস্থান করছে, সেসব এলাকা অতি দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের করোনা শনাক্তকরণের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশও প্রশাসন থেকে এসেছে। বর্তমান ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে ঝুঁকিপূর্ণ ও আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে শনাক্ত করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে। কার্যকর অ্যাকশন প্ল্যানের মাধ্যমে করোনা ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্র ও নাজুক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এলাকা বা অঞ্চলভিত্তিক চিহ্নিত করা জরুরি। পাশাপাশি কন্টিনজেন্সি প্ল্যানের মাধ্যমে ঝুঁকি ও নাজুকতা ম্যানেজ করার সর্বাত্মক কর্মসূচি গ্রহণ করা।

দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের মানসিকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। সব সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ও ডিপার্টমেন্টাল প্রধানদের বসে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করে রাখতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে আইসোলেশন জোনের ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। যাতে করে মহামারী প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। হাসপাতালে করোনা ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, অ্যানেস্থেসিস্ট, ইনটেনসিভিস্ট আছেন তারা সব বিভাগের জুনিয়র, মিড লেভেল চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। নিজ নিজ হাসপাতালে যে সব যন্ত্রাংশ অকার্যকর অবস্থায় আছে সেগুলো মেরামত সাপেক্ষে কার্যকর করার চেষ্টা করতে হবে। জরুরি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মজুদ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা ও চিকিৎসার সঙ্গে অসংখ্য চিকিৎসক নিয়োজিত আছেন। বিভিন্ন সার্জিক্যাল, মেডিকেল সোসাইটিসমূহ এ ব্যাপারে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিসিপিএস বাংলাদেশের কনটেক্সটে বিভিন্ন গাইডলাইন্স প্রকাশ করতে পারে। এ মুহূর্তে ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিও সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে।

শুধু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর বা তথাকথিত রোগ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে এ ধ্বংসযজ্ঞ বহুগুণ বেড়ে যাবে। চিকিৎসকরা তাদের নিষ্ঠা বা কমিটমেন্টের মাধ্যমে যেভাবে দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আগলে রেখেছেন তা সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ মহাদুর্যোগের সময়ে চিকিৎসক সমাজ হেরে গেলে এ দেশ আর কখনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। যে যার যার অবস্থানে থেকে যতটা সম্ভব প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করুন। সব হাসপাতাল, চিকিৎসক এবং নার্সদের যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা দিয়ে রোগীদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে আর্ত মানবতা সেবার মহান ব্রত নিয়ে। আগামী ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রচুর সাহায্যের প্রয়োজন হবে। শুধু চিকিৎসক নয় অন্যান্য পেশাজীবি সংগঠন ও সব শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা ও সাহায্য ছাড়া কোনোভাবেই সরকারের পক্ষে এককভাবে এই মহাদুর্যোগের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করে ফুডব্যাংক স্থাপনের মাধ্যমে বেকার, দুস্থ, ভূমিহীন, অসহায় ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকে তাদের দোরগোড়ায় নিয়মিত খাবার ও সুপেয় পানি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সোশাল ডিস্টেন্সিং ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ার লক্ষ্যে সব পর্যায়ের মানুষকে নানা ধরনের কার্যকর করণীয় বিষয়ে ব্যাপক প্রচার ও সম্প্রচার চালানো অত্যন্ত জরুরি। বিত্তবানদের এ মহাবিপর্যয়ে তাদের উদ্বৃত্ত রিসোর্সসমূহ সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব নিরসনে সরকারের সংশ্লিষ্ট এজেন্সির মাধ্যমে দিতে হবে, যাতে আপৎকালীন ফান্ড/রিসোর্সের বাজার স্টক করা যেতে পারে। সরকারের আপৎকালীন ফান্ড স্থাপন ও দ্রুত অবমুক্তির মাধ্যমে সব ধরনের প্রয়োজন মেটানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে বাজেট ও এডিবি থেকে অর্থ জরুরি তহবিল বা এনডোর্সমেন্ট ফান্ডে হস্তান্তর করতে হবে। সর্বোপরি এটি কারো একক দায়িত্ব নয়, বরং ধনী-দরিদ্র্য, জাতি-গোষ্ঠী, ধর্ম-বর্ণ, নৃগোষ্ঠী, জেন্ডার নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে নিজেদের সুরক্ষার মাধ্যমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া যদি দ্রুততম সময়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম হয়, বাংলাদেশও পারবে এ মহামারী তথা মহাদুর্যোগকে রুখতে। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহের নিমিত্তে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল স্থাপন করতে হবে। হাসপাতালের জরুরি সেবায় নিয়োজিত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা, ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের জন্য সুরক্ষাবিষয়ক পরিবহনসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য দরকার কার্যকর স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সঠিক ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেগুলোর বাস্তবায়ন।

উপসংহারে বলা যায় যে, সরকারের প্রশাসন যন্ত্র বিশেষত মন্ত্রণালয়, দফতরসমূহের সচেতন কর্মচারী, সচেতন নাগরিক সমাজ, বেসরকারি সংগঠন ও সেবা সংস্থাসমূহের কার্যক্রমকে সুষ্ঠু, সমন্বিত ও সুসংগঠিত করতে হবে। এ মহাদুর্যোগে এর কোন বিকল্প নেই। অন্যথায় প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এর বিপর্যয় থেকে জাতির পরিত্রাণ পাওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠবে। প্রশাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। কঠোরতার পরিবর্তে ধৈর্য, সহনশীল মনোভাব, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সমস্ত মন্ত্রণালয়গুলোতে তাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নেতৃত্বে টিমওয়ার্ক স্পিরিটের ধারায় উদ্যমী হতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি চিকিৎসক, নার্স, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই মরণঘাতী করোনা কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও তা থেকে সুরক্ষা ব্যুহ তৈরি করতে হবে। এটা পুরো জাতির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে করোনা ভয়ে ভীত বা সন্ত্রস্ত হলে চলবে না। এটা আমাদের জন্য এক ইমানি পরীক্ষাও বটে। এ পরীক্ষায় এবং নিরস্ত্র যুদ্ধে ধৈর্য, ত্যাগ ও সাহসের সঙ্গে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে এবং পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রকে বিপর্যয়ের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে।

[ লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক ]