করোনা দু-র্যো-গে তাঁত বন্ধ অনাহারে-অর্ধাহারে তাঁতিরা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশে পাবনার সাঁথিয়ায় বন্ধ রয়েছে সকল তাঁতের কারখানা। তাঁতপল্লীতে এখন বিরাজ করছে সুনশান নীরবতা, নিস্তদ্ধতা। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার তাঁত শ্রমিকসহ মালিকগণ। এক নাগারে বন্ধের কারণে তাঁতীদের অর্ধাহারে, অনাহারে দিন যাপন করতে হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা না পেলে ধ্বংসের মুখে পতিত হবে পাবনার তাঁত শিল্প এমনটাই মনে করছেন তাঁত ব্যবসায়ীরা। তাঁতিরা জানান, মহামারী করোনার কারণে কারখানা বন্ধ ঘোষণার ২২ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোন ত্রাণ সহায়তা পাননি তারা কেউ। অপরদিকে হাট-বাজার বন্ধ থাকায় উৎপাদিত পণ্যের পাহাড় জমে গেলেও বিক্রি করতে পারছেন না তারা। তাঁত মালিকেরা বলেন, এ অবস্থায় নিজেরাই চলতে পারছি না শ্রমিকদের দেব কি। কয়দিনই বা চালানো যায়। এমনিতেই সঙ্কটের মধ্যে চলছিল তাঁত ব্যবসা, তার ওপর করোনা মহামারীতে বন্ধ ঘোষণায় আরও লোকসানে যাচ্ছে তাঁতশিল্প। অপরদিকে ব্যবসা বন্ধ হলেও ব্যাংকের ঋণের সুদ বাড়ছে হু হু করে। এ নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন তাঁতীরা। সরকারী-বেসরকারী কোন ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না। সরকার যদি তাদের সহযোগিতা না করে তবে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

সরেজমিন উপজেলার তাঁত সমৃদ্ধ পিপুলিয়া,শশদিয়া,ফকিরপাড়া,ছেচানিয়া,করমজা, ধুলাউড়ি, ঘুঘুদহ, তেতুঁলিয়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায় ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে যেসব তাঁতপল্লীতে খটখট শব্দে মুখরিত ছিল। হঠাৎ করোনার প্রভাবে তাঁতীপাড়া যেন সুনশান, নিস্তব্ধ নীরবতা। অথচ রমজানের আগের মাস থেকে তাঁতীদের ব্যবসার কাক্সিক্ষত সময়। সারাবছর ধরে তাঁতীরা এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এই সময়েই কাপড়ের সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকায় তাদের দম ফেলার সময় থাকে না। অথচ বছরের সবচেয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাঁতীরা। সাংবাদিকদের দেখে কয়েকজন শ্রমিক এগিয়ে এসে বলেন, ভাই আমরা না খেয়ে মরে যাচ্ছি। প্লিজ আমাদের জন্য কিছু করেন। সাঁথিয়ার নজরুল ইসলাম নজু নামের এক প্রবীণ তাঁত শ্রমিক জানান, আজ তিন সপ্তাহ আমাদের কোন কাজকর্ম নেই। মহাজন কাপড় বিক্রি না করলে টাকা দিতে পারবে না। ঘরে খাবার নেই, পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে চলতে পারছি না। বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড সূত্রে জানা যায়, পাবনার সাঁথিয়া বেসিক সেন্টারের অধীনে প্রায় ৩৫ হাজার তাঁত রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছে এখানে। এখানকার বেশিরভাগ কারখানাগুলো ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। মহামারী করোনা রোধে ক্রমাগত বন্ধের কারণে একদিকে যেমন তারা বেকার হয়ে পড়েছে অপরদিকে খাদ্যাভাবে তাদের অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটছে। এ পর্যন্ত সরকারি কোন প্রকার ত্রাণ সহায়তা আসেনি। তবে তালিকা প্রস্তুত চলছে বলে জানান তাঁত বোর্ডের এক কর্মচারী।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জামাল আহম্মেদ জানান, সরকারের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ এসেছিল তা বিভিন্ন উপজেলায় চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে অসহায়দের মাঝে বণ্টন করা হচ্ছে। ত্রাণ অপর্যাপ্ত থাকায় সবাইকে দেয়া সম্ভব হয়নি। আবার আসবে। এলে পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেয়া হবে। তাঁত মালিকদের ঋণের সুদ মওকুফের জন্য সুপারিশ করা হবে।

সোমবার, ২০ এপ্রিল ২০২০ , ৭ বৈশাখ ১৪২৭, ২৫ শাবান ১৪৪১

করোনা দু-র্যো-গে তাঁত বন্ধ অনাহারে-অর্ধাহারে তাঁতিরা

রতন দাস, সাঁথিয়া (পাবনা)

image

সাঁথিয়া (পাবনা) : করোনা সংক্রমণ রোধে বন্ধ তাঁতের কারখানা -সংবাদ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশে পাবনার সাঁথিয়ায় বন্ধ রয়েছে সকল তাঁতের কারখানা। তাঁতপল্লীতে এখন বিরাজ করছে সুনশান নীরবতা, নিস্তদ্ধতা। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার তাঁত শ্রমিকসহ মালিকগণ। এক নাগারে বন্ধের কারণে তাঁতীদের অর্ধাহারে, অনাহারে দিন যাপন করতে হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা না পেলে ধ্বংসের মুখে পতিত হবে পাবনার তাঁত শিল্প এমনটাই মনে করছেন তাঁত ব্যবসায়ীরা। তাঁতিরা জানান, মহামারী করোনার কারণে কারখানা বন্ধ ঘোষণার ২২ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোন ত্রাণ সহায়তা পাননি তারা কেউ। অপরদিকে হাট-বাজার বন্ধ থাকায় উৎপাদিত পণ্যের পাহাড় জমে গেলেও বিক্রি করতে পারছেন না তারা। তাঁত মালিকেরা বলেন, এ অবস্থায় নিজেরাই চলতে পারছি না শ্রমিকদের দেব কি। কয়দিনই বা চালানো যায়। এমনিতেই সঙ্কটের মধ্যে চলছিল তাঁত ব্যবসা, তার ওপর করোনা মহামারীতে বন্ধ ঘোষণায় আরও লোকসানে যাচ্ছে তাঁতশিল্প। অপরদিকে ব্যবসা বন্ধ হলেও ব্যাংকের ঋণের সুদ বাড়ছে হু হু করে। এ নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন তাঁতীরা। সরকারী-বেসরকারী কোন ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না। সরকার যদি তাদের সহযোগিতা না করে তবে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

সরেজমিন উপজেলার তাঁত সমৃদ্ধ পিপুলিয়া,শশদিয়া,ফকিরপাড়া,ছেচানিয়া,করমজা, ধুলাউড়ি, ঘুঘুদহ, তেতুঁলিয়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায় ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে যেসব তাঁতপল্লীতে খটখট শব্দে মুখরিত ছিল। হঠাৎ করোনার প্রভাবে তাঁতীপাড়া যেন সুনশান, নিস্তব্ধ নীরবতা। অথচ রমজানের আগের মাস থেকে তাঁতীদের ব্যবসার কাক্সিক্ষত সময়। সারাবছর ধরে তাঁতীরা এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এই সময়েই কাপড়ের সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকায় তাদের দম ফেলার সময় থাকে না। অথচ বছরের সবচেয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাঁতীরা। সাংবাদিকদের দেখে কয়েকজন শ্রমিক এগিয়ে এসে বলেন, ভাই আমরা না খেয়ে মরে যাচ্ছি। প্লিজ আমাদের জন্য কিছু করেন। সাঁথিয়ার নজরুল ইসলাম নজু নামের এক প্রবীণ তাঁত শ্রমিক জানান, আজ তিন সপ্তাহ আমাদের কোন কাজকর্ম নেই। মহাজন কাপড় বিক্রি না করলে টাকা দিতে পারবে না। ঘরে খাবার নেই, পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে চলতে পারছি না। বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড সূত্রে জানা যায়, পাবনার সাঁথিয়া বেসিক সেন্টারের অধীনে প্রায় ৩৫ হাজার তাঁত রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করছে এখানে। এখানকার বেশিরভাগ কারখানাগুলো ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। মহামারী করোনা রোধে ক্রমাগত বন্ধের কারণে একদিকে যেমন তারা বেকার হয়ে পড়েছে অপরদিকে খাদ্যাভাবে তাদের অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটছে। এ পর্যন্ত সরকারি কোন প্রকার ত্রাণ সহায়তা আসেনি। তবে তালিকা প্রস্তুত চলছে বলে জানান তাঁত বোর্ডের এক কর্মচারী।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জামাল আহম্মেদ জানান, সরকারের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ এসেছিল তা বিভিন্ন উপজেলায় চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে অসহায়দের মাঝে বণ্টন করা হচ্ছে। ত্রাণ অপর্যাপ্ত থাকায় সবাইকে দেয়া সম্ভব হয়নি। আবার আসবে। এলে পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেয়া হবে। তাঁত মালিকদের ঋণের সুদ মওকুফের জন্য সুপারিশ করা হবে।