তিন পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার ৮ গ্রামের মানুষ কঠোর হোম কোয়ারেন্টিনে

তদন্ত কমিটি গঠন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জানাজায় ব্যাপক লোক সমাগম থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় ৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওদিকে জানাজাস্থল বেতবাড়িয়া গ্রামসহ ৩ উপজেলার ৮ গ্রামের মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। শনিবার সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলার ৪টি গ্রাম পানিশ্বর ইউনিয়নের শান্তিনগর, সীতাহরন, বড়ইবাড়ি, বেড়তলা ও সদর উপজেলার মালিহাতা এবং আশুগঞ্জ উপজেলার খড়িয়ালা, বগুইড়, মৈশার গ্রামের মানুষকে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনার বিষয়ে পুলিশের তরফ থেকে মাইকিং করা হয়। জোরদার করা হয় পুলিশের তৎপরতা। এই ৮ গ্রামে প্রায় ৩৫/৪০ হাজার মানুষ রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

লোকের স্রোত থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় সরাইল থানার ওসি সাহাদত হোসেন টিটু, সরাইল সার্কেলের এএসপি মো. মাসুদ রানা এবং সরাইল থানার ওসি-তদন্ত নূরুল হককে প্রত্যাহার করা হয়। এদিকে ঘটনার তদন্তে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইকবাল হোসেনকে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, জানাজায় এসব গ্রাম থেকেই প্রচুর লোক এসেছে। এসব গ্রামের লোকজন যাতে পুরোপুরি লকডাউনে থাকে সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এবং দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা এই নামাজে জানাজায় যোগ দেন। ট্রাক এবং পিকআপে করে স্রোতের মতো আসেন মানুষ। শুক্রবার প্রখ্যাত এই আলেমের মৃত্যুর পর জেলার বিভিন্নস্থানে মসজিদের মাইক থেকে তার মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয় এবং জানাজার সময় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তা প্রচার করা হয়।

যোবায়ের আহমেদ আনসারীর প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসাটি সরাইলের বেড়তলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। এই মাদ্রাসার মাঠে জানাজার আয়োজন করা হয়। কিন্তু লোকের ব্যাপকতায় তা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় ২ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়।

এদিকে ব্যাপক লোক সমাগমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে বলে মনে করছেন জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন মো. একরামুল্লাহ বলেন করোনার সংক্রমণ ঘটে আক্রান্ত লোকের সংস্পর্শে এলে। গণজমায়েত হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শনিবার জানাজার ঘটনায় তাই হয়েছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে।

সোমবার, ২০ এপ্রিল ২০২০ , ৭ বৈশাখ ১৪২৭, ২৫ শাবান ১৪৪১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লাখো লোক

তিন পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার ৮ গ্রামের মানুষ কঠোর হোম কোয়ারেন্টিনে

তদন্ত কমিটি গঠন

মো. সাদেকুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জানাজায় ব্যাপক লোক সমাগম থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় ৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওদিকে জানাজাস্থল বেতবাড়িয়া গ্রামসহ ৩ উপজেলার ৮ গ্রামের মানুষকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। শনিবার সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলার ৪টি গ্রাম পানিশ্বর ইউনিয়নের শান্তিনগর, সীতাহরন, বড়ইবাড়ি, বেড়তলা ও সদর উপজেলার মালিহাতা এবং আশুগঞ্জ উপজেলার খড়িয়ালা, বগুইড়, মৈশার গ্রামের মানুষকে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনার বিষয়ে পুলিশের তরফ থেকে মাইকিং করা হয়। জোরদার করা হয় পুলিশের তৎপরতা। এই ৮ গ্রামে প্রায় ৩৫/৪০ হাজার মানুষ রয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

লোকের স্রোত থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় সরাইল থানার ওসি সাহাদত হোসেন টিটু, সরাইল সার্কেলের এএসপি মো. মাসুদ রানা এবং সরাইল থানার ওসি-তদন্ত নূরুল হককে প্রত্যাহার করা হয়। এদিকে ঘটনার তদন্তে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইকবাল হোসেনকে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, জানাজায় এসব গ্রাম থেকেই প্রচুর লোক এসেছে। এসব গ্রামের লোকজন যাতে পুরোপুরি লকডাউনে থাকে সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এবং দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা এই নামাজে জানাজায় যোগ দেন। ট্রাক এবং পিকআপে করে স্রোতের মতো আসেন মানুষ। শুক্রবার প্রখ্যাত এই আলেমের মৃত্যুর পর জেলার বিভিন্নস্থানে মসজিদের মাইক থেকে তার মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয় এবং জানাজার সময় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তা প্রচার করা হয়।

যোবায়ের আহমেদ আনসারীর প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসাটি সরাইলের বেড়তলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। এই মাদ্রাসার মাঠে জানাজার আয়োজন করা হয়। কিন্তু লোকের ব্যাপকতায় তা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় ২ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়।

এদিকে ব্যাপক লোক সমাগমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে বলে মনে করছেন জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন মো. একরামুল্লাহ বলেন করোনার সংক্রমণ ঘটে আক্রান্ত লোকের সংস্পর্শে এলে। গণজমায়েত হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শনিবার জানাজার ঘটনায় তাই হয়েছে। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে।