বাড়িওয়ালার পুড়িয়ে মারার হুমকি, পালিয়ে আসে কার্তিক দাস

ভর্তি হলো কুমিল্লা আইসোলেশন সেন্টারে

লক্ষ্মীপুরে কার্তিক দাস নামে এক ব্যক্তির করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসায় বাড়িওয়ালা কর্তৃক আগুনে পুড়িয়ে মারার হুমকির কারণে নিরুপায় হয়ে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে পালিয়ে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসেন। এ ঘটনা জানার পর কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের হস্তক্ষেপে গত শনিবার রাত ১২টার দিকে উদ্ধার করে তাকে নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের গোহারোয়া সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে প্রেরণ করে স্থানীয় প্রশাসন। সে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া গ্রামের স্বহদেব দাসের ছেলে।

জানা গেছে, কার্তিক দাস কক্সবাজার জেলা সদরের কলাতলী এলাকায় একটি জুতার দোকানে শ্রমিক পদে চাকরি করতেন। করোনার প্রভাবের কারণে কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন ঘোষণার পর ওই দোকানটিও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি গত ১২ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ আঙ্গারপাড়া দাসবাড়িতে ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের কাছে চলে আসার পর তার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। পরদিন স্থানীয় স্বাস্থ্যবিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় প্রেরণ করে। গত ১৬ এপ্রিল তার করোনা পজেটিভ ফল আসে। এতে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ওই বাড়িটি লকডাউন করে দেয়। কার্তিক দাস জানান, ‘আমি লক্ষ্মীপুরের যেই বাড়িতে ভাড়া থাকি, সেই বাড়ির সবাই বাড়ি ছাড়ার জন্য আমাকে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে এবং বাইরে দিয়ে তালা লাগিয়ে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। এতে আমি বলেছি- প্রশাসনের সঙ্গে একটু কথা বলে নেই, ১০ মিনিট সময় দেন। তাও দেয়নি। বাইরে থেকে কেউ বলতেছে ঢিল মার, কেউ বলতেছে বাশ দিয়ে খোঁচা মার, আবার কেউ বলতেছে মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে ঘরে মার। এভাবে আমাকে মানসিকভাবে চাপ দেয়ার পর আমি ঘর থেকে বের হয়ে টার্মিনালে চলে আসি। পরে একটি চালবোঝাই ট্রাকে করে লাকসামে চলে আসি। সেখান থেকে রেললাইন দিয়ে হেটে নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশনে আসি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে আসার পর গত ১৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দিয়ে আসি। এরপর আমি কয়েকবার সেখানে ফোন দিয়েছি, ওরা বলেছে- রিপোর্ট আসে নাই। পরে রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে লক্ষ্মীপুরের প্রশাসনের লোকজন বাড়িটি লকডাউন করে দেয়। এতে বাড়িওয়ালাসহ স্থানীয় লোকজন আমার উপর এমন অত্যাচার শুরু করে করে দিলে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি।’

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লামিয়া সাইফুল জানান, ‘ডিসি স্যার বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি থানার ওসি এবং চৌদ্দগ্রামের সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে নাঙ্গলকোটে রেলওয়ে স্টেশনে যাই। এ সময় তার কাছে মাস্ক ছিল না, হ্যান্ড গ্লাভসও ছিল না। সেখানে গিয়ে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাইকের মাধ্যমে তার (কার্তিক দাস) সঙ্গে কথা বলি এবং তাকে আশ্বস্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দুটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নাঙ্গলকোট উপজেলার গোহারোয়া ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টারে প্রেরণ করা হয়।’

কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, সে এভাবে ঘোরাফেরা করার কারণে করোনার জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে তাকে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করি। বর্তমানে সে আইসোলেশনে রয়েছে। রোগীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি কোন বাড়িওয়ালা এ অবস্থায় তাকে চাপ প্রয়োগ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোমবার, ২০ এপ্রিল ২০২০ , ৭ বৈশাখ ১৪২৭, ২৫ শাবান ১৪৪১

লক্ষ্মীপুরে

বাড়িওয়ালার পুড়িয়ে মারার হুমকি, পালিয়ে আসে কার্তিক দাস

ভর্তি হলো কুমিল্লা আইসোলেশন সেন্টারে

প্রতিনিধি, কুমিল্লা

লক্ষ্মীপুরে কার্তিক দাস নামে এক ব্যক্তির করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসায় বাড়িওয়ালা কর্তৃক আগুনে পুড়িয়ে মারার হুমকির কারণে নিরুপায় হয়ে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে পালিয়ে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসেন। এ ঘটনা জানার পর কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের হস্তক্ষেপে গত শনিবার রাত ১২টার দিকে উদ্ধার করে তাকে নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের গোহারোয়া সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে প্রেরণ করে স্থানীয় প্রশাসন। সে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া গ্রামের স্বহদেব দাসের ছেলে।

জানা গেছে, কার্তিক দাস কক্সবাজার জেলা সদরের কলাতলী এলাকায় একটি জুতার দোকানে শ্রমিক পদে চাকরি করতেন। করোনার প্রভাবের কারণে কক্সবাজার জেলাকে লকডাউন ঘোষণার পর ওই দোকানটিও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি গত ১২ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ আঙ্গারপাড়া দাসবাড়িতে ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের কাছে চলে আসার পর তার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। পরদিন স্থানীয় স্বাস্থ্যবিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় প্রেরণ করে। গত ১৬ এপ্রিল তার করোনা পজেটিভ ফল আসে। এতে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ওই বাড়িটি লকডাউন করে দেয়। কার্তিক দাস জানান, ‘আমি লক্ষ্মীপুরের যেই বাড়িতে ভাড়া থাকি, সেই বাড়ির সবাই বাড়ি ছাড়ার জন্য আমাকে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে এবং বাইরে দিয়ে তালা লাগিয়ে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। এতে আমি বলেছি- প্রশাসনের সঙ্গে একটু কথা বলে নেই, ১০ মিনিট সময় দেন। তাও দেয়নি। বাইরে থেকে কেউ বলতেছে ঢিল মার, কেউ বলতেছে বাশ দিয়ে খোঁচা মার, আবার কেউ বলতেছে মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে ঘরে মার। এভাবে আমাকে মানসিকভাবে চাপ দেয়ার পর আমি ঘর থেকে বের হয়ে টার্মিনালে চলে আসি। পরে একটি চালবোঝাই ট্রাকে করে লাকসামে চলে আসি। সেখান থেকে রেললাইন দিয়ে হেটে নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশনে আসি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে আসার পর গত ১৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দিয়ে আসি। এরপর আমি কয়েকবার সেখানে ফোন দিয়েছি, ওরা বলেছে- রিপোর্ট আসে নাই। পরে রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে লক্ষ্মীপুরের প্রশাসনের লোকজন বাড়িটি লকডাউন করে দেয়। এতে বাড়িওয়ালাসহ স্থানীয় লোকজন আমার উপর এমন অত্যাচার শুরু করে করে দিলে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি।’

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লামিয়া সাইফুল জানান, ‘ডিসি স্যার বিষয়টি আমাকে জানানোর পর আমি থানার ওসি এবং চৌদ্দগ্রামের সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে নাঙ্গলকোটে রেলওয়ে স্টেশনে যাই। এ সময় তার কাছে মাস্ক ছিল না, হ্যান্ড গ্লাভসও ছিল না। সেখানে গিয়ে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাইকের মাধ্যমে তার (কার্তিক দাস) সঙ্গে কথা বলি এবং তাকে আশ্বস্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দুটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নাঙ্গলকোট উপজেলার গোহারোয়া ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি সরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টারে প্রেরণ করা হয়।’

কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, সে এভাবে ঘোরাফেরা করার কারণে করোনার জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে তাকে দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করি। বর্তমানে সে আইসোলেশনে রয়েছে। রোগীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি কোন বাড়িওয়ালা এ অবস্থায় তাকে চাপ প্রয়োগ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।