বর্তমান সেটআপ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সক্ষম নয়

করোনাভাইরাসের রোগী চিকিৎসা করতে গিয়ে সারা দেশে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রায় দুই শতাধিক ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মানসম্মত পোশাকসহ (পিপিই) সুরক্ষার অন্যান্য মানসম্মত উপকরণ না দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যে পিপিই দেয়া হচ্ছে তা মানসম্মত নয়। এন৯৫ মাস্ক (মুখাবরণ) নিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে চিকিৎসকদের। সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ না করায় এবং মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

করোনার দুর্যোগে দেশের স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থার চিত্রটি অত্যন্ত হতাশাজনক। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব যে চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের, ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর অভাবে খোদ তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন ভয়ানক ছোঁয়াচে এ ভাইরাসে। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুবই স্পর্শকাতর চোখ, নাক ও মুখ। অথচ এ তিন অঙ্গের মাধ্যমে সংক্রমণ রোধে নেই স্বাস্থ্যসম্মত মাস্ক, নেই আই প্রটেক্টর। আবার যেসব সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে সেগুলোও নকল, ত্রুটিপূর্ণ ও মানহীন। অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের এবং কেন্দ্রীয় ওষুধালয়ের ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র পরস্পর যোগসাজশে লাভবান হওয়ায় জন্য পিপিই ও মাস্ক নিয়ে বাণিজ্য করছে। বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাসের প্রস্তুতি নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানানোর পরও তাদের কথার গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছে বাঙালির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। কিছু হবে না। মন্ত্রণালয় কাগজে- কলমে প্রস্তুতির কথা জানালেও বাস্তব ছিল তার উল্টো।

দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেহাল দশা। এ মন্ত্রণালয়ের নানা কেনাকাটায় বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হয়েছেন, বিতর্কিত হয়েছেন। সর্বশেষ বর্তমান মন্ত্রী জাহিদ মালেকও মন্ত্রণালয়ে কোন শৃঙ্খলা আনতে পারেননি। টানা ৭ বছর ধরে তিনি এ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি কাজের কাজ কিছু করতে না পারলেও নানা ইস্যুতে একাধিকবার সমালোচিত হয়েছেন। চীনের উহানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর যথেষ্ট সময় হাতে পেয়েও সেই সময়কে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন মন্ত্রী চলে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। এ নিয়েও সমালোচিত হয়েছিলেন সব মহলে। এবার করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের পিপিই সরবরাহ নিয়েও তীব্র সমালোচনার মুখে জাহিদ মালেক। বিশেষ করে এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে মাস্ক সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সঙ্গে মন্ত্রীর পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে।

একটি জনগুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর এমন ব্যর্থতা, অযোগ্যতা এবং অবিমৃশ্যকারিতা কোনভাবেই কাম্য নয়। এটা সবারই জানা যে, জাহিদ মালিক স্বাস্থ্য খাতে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তি নন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। কাজেই গোটা স্বাস্থ্য খাতকে নিজের ব্যবসার উপকরণ বানিয়ে নেয়া তার জন্য অস্বাভাবিক কোন কাজ নয়। আমরা চাই, এ অযোগ্য ব্যক্তিকে অতি দ্রুত অপসারণ করা হোক এবং স্বাস্থ্য খাতে অভিজ্ঞ, দায়িত্বশীল এবং কর্মনিষ্ঠ কোন ব্যক্তিকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হোক।

এ মুহূর্তে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কর্মীরাই সামনে থেকে করোনা প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। করোনায় আক্রান্ত কোন ব্যক্তি শনাক্ত হলে তার চিকিৎসার দায়িত্ব পড়ছে চিকিৎসকের ওপর। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। এসব রোগীর সার্বক্ষণিক সেবা-শুশ্রুষার দায়িত্ব পালন করছেন নার্সরা। কিন্তু সেবা দিতে গিয়ে একের পর এক চিকিৎসা কর্মী আক্রান্ত হতে থাকলে এর পর তো চিকিৎসা দেয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকিতে থাকলে সবাই ঝুঁকিতে থাকবেন। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সঠিক তথ্য জানাতে হবে এবং পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সন্দেহভাজন ও শনাক্ত করোনা রোগীর সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষাসামগ্রী দিতে হবে। দোষারোপহীন পরিবেশে তাদের কাজের সুযোগ দিতে হবে। প্রতিদিন কাজের মধ্যে ছুটিসহ যথাযথ কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের মানসিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ কাজে যে কোন ধরনের শিথিলতা চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে।

সোমবার, ২০ এপ্রিল ২০২০ , ৭ বৈশাখ ১৪২৭, ২৫ শাবান ১৪৪১

চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা দিন

বর্তমান সেটআপ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সক্ষম নয়

করোনাভাইরাসের রোগী চিকিৎসা করতে গিয়ে সারা দেশে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রায় দুই শতাধিক ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মানসম্মত পোশাকসহ (পিপিই) সুরক্ষার অন্যান্য মানসম্মত উপকরণ না দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যে পিপিই দেয়া হচ্ছে তা মানসম্মত নয়। এন৯৫ মাস্ক (মুখাবরণ) নিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে চিকিৎসকদের। সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ না করায় এবং মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

করোনার দুর্যোগে দেশের স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থার চিত্রটি অত্যন্ত হতাশাজনক। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার দায়িত্ব যে চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের, ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর অভাবে খোদ তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন ভয়ানক ছোঁয়াচে এ ভাইরাসে। বিশেষ করে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুবই স্পর্শকাতর চোখ, নাক ও মুখ। অথচ এ তিন অঙ্গের মাধ্যমে সংক্রমণ রোধে নেই স্বাস্থ্যসম্মত মাস্ক, নেই আই প্রটেক্টর। আবার যেসব সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে সেগুলোও নকল, ত্রুটিপূর্ণ ও মানহীন। অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের এবং কেন্দ্রীয় ওষুধালয়ের ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্র পরস্পর যোগসাজশে লাভবান হওয়ায় জন্য পিপিই ও মাস্ক নিয়ে বাণিজ্য করছে। বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাসের প্রস্তুতি নিয়ে মন্ত্রণালয়কে জানানোর পরও তাদের কথার গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছে বাঙালির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। কিছু হবে না। মন্ত্রণালয় কাগজে- কলমে প্রস্তুতির কথা জানালেও বাস্তব ছিল তার উল্টো।

দীর্ঘদিন ধরেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেহাল দশা। এ মন্ত্রণালয়ের নানা কেনাকাটায় বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হয়েছেন, বিতর্কিত হয়েছেন। সর্বশেষ বর্তমান মন্ত্রী জাহিদ মালেকও মন্ত্রণালয়ে কোন শৃঙ্খলা আনতে পারেননি। টানা ৭ বছর ধরে তিনি এ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি কাজের কাজ কিছু করতে না পারলেও নানা ইস্যুতে একাধিকবার সমালোচিত হয়েছেন। চীনের উহানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর যথেষ্ট সময় হাতে পেয়েও সেই সময়কে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন মন্ত্রী চলে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। এ নিয়েও সমালোচিত হয়েছিলেন সব মহলে। এবার করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের পিপিই সরবরাহ নিয়েও তীব্র সমালোচনার মুখে জাহিদ মালেক। বিশেষ করে এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে মাস্ক সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের সঙ্গে মন্ত্রীর পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে।

একটি জনগুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর এমন ব্যর্থতা, অযোগ্যতা এবং অবিমৃশ্যকারিতা কোনভাবেই কাম্য নয়। এটা সবারই জানা যে, জাহিদ মালিক স্বাস্থ্য খাতে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তি নন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। কাজেই গোটা স্বাস্থ্য খাতকে নিজের ব্যবসার উপকরণ বানিয়ে নেয়া তার জন্য অস্বাভাবিক কোন কাজ নয়। আমরা চাই, এ অযোগ্য ব্যক্তিকে অতি দ্রুত অপসারণ করা হোক এবং স্বাস্থ্য খাতে অভিজ্ঞ, দায়িত্বশীল এবং কর্মনিষ্ঠ কোন ব্যক্তিকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হোক।

এ মুহূর্তে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কর্মীরাই সামনে থেকে করোনা প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। করোনায় আক্রান্ত কোন ব্যক্তি শনাক্ত হলে তার চিকিৎসার দায়িত্ব পড়ছে চিকিৎসকের ওপর। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। এসব রোগীর সার্বক্ষণিক সেবা-শুশ্রুষার দায়িত্ব পালন করছেন নার্সরা। কিন্তু সেবা দিতে গিয়ে একের পর এক চিকিৎসা কর্মী আক্রান্ত হতে থাকলে এর পর তো চিকিৎসা দেয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটা মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকিতে থাকলে সবাই ঝুঁকিতে থাকবেন। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সঠিক তথ্য জানাতে হবে এবং পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সন্দেহভাজন ও শনাক্ত করোনা রোগীর সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষাসামগ্রী দিতে হবে। দোষারোপহীন পরিবেশে তাদের কাজের সুযোগ দিতে হবে। প্রতিদিন কাজের মধ্যে ছুটিসহ যথাযথ কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের মানসিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ কাজে যে কোন ধরনের শিথিলতা চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে।