২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করবে সরকার প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে চলতি মৌসুমে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বোরো মৌসুমে আগের বছরের চেয়ে বেশি ধান, আতপ চাল ও গম সংগ্রহ করা হবে। প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য সংগ্রহ করবে সরকার।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ বোরোতে আগে যা আমরা নিতাম, তার চেয়ে অনেক বেশি নিচ্ছি। এখন আমরা প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করব। ’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এটা সরকার কিনে রাখবে। তাতে আমাদের আর ভবিষ্যতে কোন অভাব হবে না। আমরা মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে পারব।’ আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে উল্লেখ করে তিনি বাজারে পণ্য সরবরাহ বজায় রাখতে মনিটরিং জোরদারকরণেও প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের আটটি জেলার জনপ্রতিনিধি ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে একথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসনসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসক, স্থানীয় মসজিদের ইমাম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সাংবাদিকসহ ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং আইইডিসিআর সংযুক্ত ছিল।

জেলাগুলো হচ্ছে, ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ সদর।

এরআগে শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ৪ দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট এবং বরিশাল বিভাগের ৪৩টি জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের খাদ্যের কোন অভাব হবে না। তাছাড়া এখন ধান উঠছে। ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে। আগামীতেও ফসল উঠবে। সেই সঙ্গে তরিতরকারি ফলমূল যে যা পারেন উৎপাদন করবেন।’

ধান কাটায় সহযোগিতার জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক এবং ছাত্রসমাজের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশে কোন জমি ফেলে না রাখার পাশাপাশি একই জমিতে একাধিক ফসল ফলানোর অংশ হিসেবে ধান কাটার পরপরই সেই জমিতে অন্য ফসল লাগানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘এই সংকটে দেশে যেন খাদ্যের সমস্যা না হয় সেজন্য সব জমিতে ফসল ফলাতে হবে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে সবাই দৃষ্টি দেবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছি, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। কৃষিখাতে আরও বেশি। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে আমরা কৃষি ঋণ দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ধাপে ধাপে রপ্তানিমুখী খাত, বৃহৎ শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসায়ীর জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। পরে কৃষি খাতের জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। এই প্রণোদনা কেবল ধান চাষিদের জন্য নয়, মৎস্য, পোল্ট্রি-ডেইরি সব খাতকে প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং কোন খাত প্রণোদনা থেকে বাদ পড়বে না।’

করোনাযুদ্ধ মোকাবিলায় সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশই এই প্যাকেজ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, তা শুধু এই বছরের জন্য না। আগামী তিন বছর দেশের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেটা মাথায় রেখেই এই প্রণোদনা। এটা অব্যাহত রাখা হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত ৫০ লাখ সুবিধাভোগীর সঙ্গে রেশন কার্ডের মাধ্যমে আরও ৫০ লাখ যোগ করে সুবিধাভোগীর সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করা এবং এর মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি লোককে সহযোগিতা প্রদানের সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তারা ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস’র চাল ক্রয়ের সুযোগ পাবেন।

তিনি নতুন ৫০ লাখ লোকের তালিকায় দলমত নির্বিশেষে যাদের প্রয়োজন সেরকম কেউ যেন বাদ না পড়ে এবং যারা হাত পাততে পারেন না তেমন কেউ যেন খাদ্য সাহায্য বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।

ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং যেকোন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও প্রধানমন্ত্রী সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং অবস্থান পরিবর্তন না করে নিজ নিজ অবস্থানে থাকার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘করোনা সংকট মোকাবিলায় আমরা মানুষকে সচেতন করতে পেরেছি বলেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সবাই সচেতন হলে করোনা থেকে বাঁচা সম্ভব হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটু সচেতন হলেই বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং অযথা ঘোরাঘুরি করে নিজেকে এবং অন্যের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না।’

সারাদেশে করোনা চিকিৎসায় কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার জন্য ৫০৭ প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনার কারণে সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। বিশ্বের প্রায় আড়াইশ কোটি মানুষ ঘরবন্দী। বিশ্ব আগে কখনো এমন পরিস্থিতি দেখেনি। করোনায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির। বন্ধ রয়েছে মসজিদ-মন্দির-গির্জা, প্যাগোডাসহ সব প্রার্থনার কেন্দ্র।’ সবাইকে ঘরে বসেই নামাজ আদায় করার এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার আহ্বানও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ভালো আছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি চলমান এপ্রিল মাসে যেন সংক্রমণ অধিকহারে বাড়তে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক করে বলেন, ‘এপ্রিল মাসটি আমাদের জন্য একটু কষ্টকর হবে। এ মাসে সাবধানে থাকতে হবে। তারপরও ইউরোপ-আমেরিকায় যে পরিমাণ রোগ সংক্রমিত হয়েছে তার তুলনায় আমাদের দেশে কম। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেই বাঙালি মারা গেছে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশিদের মৃত্যুতে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।

আরও খবর
হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা ও উপকরণ ঘাটতি
রমজান মাসেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন -ডব্লিউএইচও
অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে
চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ১০ জনসহ মৃত্যু শত পার
করোনা সংক্রমণ রোধে জরুরি নির্দেশনা
বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মোসলে উদ্দিন ভারতে গ্রেফতারের খবর
তিন শতাধিক ডাক্তার নার্স আক্রান্ত
পিপিই সংগ্রহে ১৭৬ কোটি টাকা খরচ
ভারতে আটক ১৬৪ বাংলাদেশিকে আনা হয়েছে
ডাক্তার ও নার্সদের আলাদা আবাসনের জন্য ডিসিদের নির্দেশ
লকডাউনে সীতাকুণ্ডে বেসরকারি কল-কারখানা চালু নিরুপম দাশ গুপ্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন
এসকে হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০ , ৮ বৈশাখ ১৪২৭, ২৬ শাবান ১৪৪১

ভবিষ্যতে সহায়তার জন্য

২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করবে সরকার প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে চলতি মৌসুমে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বোরো মৌসুমে আগের বছরের চেয়ে বেশি ধান, আতপ চাল ও গম সংগ্রহ করা হবে। প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য সংগ্রহ করবে সরকার।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ বোরোতে আগে যা আমরা নিতাম, তার চেয়ে অনেক বেশি নিচ্ছি। এখন আমরা প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করব। ’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘এটা সরকার কিনে রাখবে। তাতে আমাদের আর ভবিষ্যতে কোন অভাব হবে না। আমরা মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে পারব।’ আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে উল্লেখ করে তিনি বাজারে পণ্য সরবরাহ বজায় রাখতে মনিটরিং জোরদারকরণেও প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের আটটি জেলার জনপ্রতিনিধি ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে একথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসনসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসক, স্থানীয় মসজিদের ইমাম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সাংবাদিকসহ ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং আইইডিসিআর সংযুক্ত ছিল।

জেলাগুলো হচ্ছে, ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ সদর।

এরআগে শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ৪ দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট এবং বরিশাল বিভাগের ৪৩টি জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের খাদ্যের কোন অভাব হবে না। তাছাড়া এখন ধান উঠছে। ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে। আগামীতেও ফসল উঠবে। সেই সঙ্গে তরিতরকারি ফলমূল যে যা পারেন উৎপাদন করবেন।’

ধান কাটায় সহযোগিতার জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক এবং ছাত্রসমাজের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশে কোন জমি ফেলে না রাখার পাশাপাশি একই জমিতে একাধিক ফসল ফলানোর অংশ হিসেবে ধান কাটার পরপরই সেই জমিতে অন্য ফসল লাগানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, ‘এই সংকটে দেশে যেন খাদ্যের সমস্যা না হয় সেজন্য সব জমিতে ফসল ফলাতে হবে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে সবাই দৃষ্টি দেবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছি, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। কৃষিখাতে আরও বেশি। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে আমরা কৃষি ঋণ দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ধাপে ধাপে রপ্তানিমুখী খাত, বৃহৎ শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসায়ীর জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। পরে কৃষি খাতের জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। এই প্রণোদনা কেবল ধান চাষিদের জন্য নয়, মৎস্য, পোল্ট্রি-ডেইরি সব খাতকে প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং কোন খাত প্রণোদনা থেকে বাদ পড়বে না।’

করোনাযুদ্ধ মোকাবিলায় সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশই এই প্যাকেজ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, তা শুধু এই বছরের জন্য না। আগামী তিন বছর দেশের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেটা মাথায় রেখেই এই প্রণোদনা। এটা অব্যাহত রাখা হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত ৫০ লাখ সুবিধাভোগীর সঙ্গে রেশন কার্ডের মাধ্যমে আরও ৫০ লাখ যোগ করে সুবিধাভোগীর সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করা এবং এর মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি লোককে সহযোগিতা প্রদানের সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তারা ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস’র চাল ক্রয়ের সুযোগ পাবেন।

তিনি নতুন ৫০ লাখ লোকের তালিকায় দলমত নির্বিশেষে যাদের প্রয়োজন সেরকম কেউ যেন বাদ না পড়ে এবং যারা হাত পাততে পারেন না তেমন কেউ যেন খাদ্য সাহায্য বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।

ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং যেকোন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও প্রধানমন্ত্রী সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং অবস্থান পরিবর্তন না করে নিজ নিজ অবস্থানে থাকার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘করোনা সংকট মোকাবিলায় আমরা মানুষকে সচেতন করতে পেরেছি বলেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সবাই সচেতন হলে করোনা থেকে বাঁচা সম্ভব হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটু সচেতন হলেই বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং অযথা ঘোরাঘুরি করে নিজেকে এবং অন্যের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না।’

সারাদেশে করোনা চিকিৎসায় কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার জন্য ৫০৭ প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনার কারণে সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। বিশ্বের প্রায় আড়াইশ কোটি মানুষ ঘরবন্দী। বিশ্ব আগে কখনো এমন পরিস্থিতি দেখেনি। করোনায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির। বন্ধ রয়েছে মসজিদ-মন্দির-গির্জা, প্যাগোডাসহ সব প্রার্থনার কেন্দ্র।’ সবাইকে ঘরে বসেই নামাজ আদায় করার এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার আহ্বানও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ভালো আছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি চলমান এপ্রিল মাসে যেন সংক্রমণ অধিকহারে বাড়তে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক করে বলেন, ‘এপ্রিল মাসটি আমাদের জন্য একটু কষ্টকর হবে। এ মাসে সাবধানে থাকতে হবে। তারপরও ইউরোপ-আমেরিকায় যে পরিমাণ রোগ সংক্রমিত হয়েছে তার তুলনায় আমাদের দেশে কম। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেই বাঙালি মারা গেছে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশিদের মৃত্যুতে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।