বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মোসলে উদ্দিন ভারতে গ্রেফতারের খবর

সত্যতা খতিয়ে দেখা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া খুনি ক্যাপ্টেন (বহিষ্কৃত) আবদুল মাজেদের পর পলাতক আরেক আসামি রিসেলদার মোসলে উদ্দিনকে ভারতে দেশটির পুলিশ আটক করে বাংলাদেশে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে খবর বেরিয়েছে। বিষয়টিকে গুঞ্জন বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরেন। গুঞ্জন রয়েছে বললেও পুলিশের গোয়েন্দা সূত্র এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলছে না। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি প্রকাশ করা হয়নি। তবে পুলিশের ইন্টারপোল বাংলাদেশ শাখার তথ্য মতে, সম্প্রতি গ্রেফতার হয়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া খুনি ক্যাপ্টেন (বহিষ্কৃত) আবদুল মাজেদের মতো রিসেলদার মোসলে উদ্দিনের অবস্থানও ভারতে বা পাকিস্তানে রয়েছে। মূলত আবদুল মাজেদ গ্রেফতার হওয়ার পর রিসেলদার মোসলে উদ্দিন ভারতে রয়েছেন বলে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা। মাজেদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে রিসেলদার মোসলে উদ্দিনকে গ্রেফতারের বিষয়ে ভারতীয় পুলিশের সহয়তা চায় বাংলাদেশ। এরপর তাকে গ্রেফতার করতে মাঠে নামে ভারতীয় গোয়েন্দারা। তবে, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করেনি বাংলাদেশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন জানিয়েছেন, আমাদের কাছ থেকে কোন স্পষ্ট ডিক্লারেশন পেয়েছেন? আমি তো শতভাগ কনফার্ম না হয়ে কিছু বলি না। আমার কাছে পুরোপুরি নিশ্চিত কোন খবর নেই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমরা সরকারিভাবে বিষয়টি জানি না। আমি আমার অফিসকে বলেছি এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিতে। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নিশ্চিত হওয়া গেলে অবশ্যই সবাইকে জানানো হবে।

পুলিশের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদকে যেভাবে পাওয়া গিয়েছিল, একইভাবে মোসলেহ উদ্দিনকে পাওয়া যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সে ধরনের সম্ভাবনা প্রকট। সূত্রটি আরও বলেছে, আবদুল মাজেদই রিসালদার মোসলে উদ্দিনের খবর গোয়েন্দাদের জানান। সেই সূত্র ধরেই মোসলে উদ্দিনের খোঁজ হয়।

পুলিশ সদর দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (এআইজি ইন্টারপোল শাখা) মহিউল ইসলাম জানান, বঙ্গবন্ধুর যে ৬ খুনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিল তাদের মধ্যে রিসালদার মোসলে উদ্দিন ও ক্যাপ্টেন মাজেদের সর্বশেষ অবস্থান ভারতে ছিল বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। কয়েকদিন আগে ভারত থেকে পালিয়ে এসে গ্রেফতার হন ক্যাপ্টেন মাজেদ। রিসালদার মোসলে উদ্দিনেরও ভারতে থাকার সম্ভবনা রয়েছে। মোসলে উদ্দিনকে গ্রেফতারে ভারতের কাছে আগেই সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশও জারি করা রয়েছে। তবে মোসলে উদ্দিন গ্রেফতারের বিষয়ে ভারত থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ সদর দফতরকে কিছু জানানো হয়নি।

ভারতের দৈনিক আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলে উদ্দিনকে উত্তর চব্বিশ পরগনায় একটি গ্রাম থেকে আটক করা হয়। আবার অন্য একটি সূত্রের খবর, মাজেদ আটক হওয়া মাত্রই নিজের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে গা-ঢাকা দেন বঙ্গবন্ধুর খুনী রিসালদার মোসলে উদ্দিন। ভারতের গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, লকডাউনের সময় এ দেশ থেকে মোসলে উদ্দিনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে বলে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি ভারতের গোয়েন্দাদের জানায়। ভারতীয় গোয়েন্দারা ওই খুনিকে কার্যত তাড়িয়ে সীমান্তের কোন একটি অরক্ষিত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেয়। ভারতের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, উত্তর ২৪ পরগনার একটি আধাশহরে ইউনানি চিকিৎসক সেজে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন মোসলে উদ্দিন। গতকাল ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা ‘মুজিবের আর এক খুনিও কি এই বঙ্গে?’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আবদুল মাজেদের মতো পরিচয় ভাঁড়িয়ে শেখ মুজিবের আর এক খুনিও দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্রের। মাজেদকে জেরা করে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা তার বিষয়ে জানতে পেরেছেন বলে ওই সূত্রের দাবি। ভারতের গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলে উদ্দিন নামে এই প্রাক্তন সেনা অফিসারকে উত্তর চব্বিশ পরগনায় তার ডেরা থেকে আটক করা গিয়েছে বলেও সূত্রের দাবি। আবার অন্য একটি সূত্রের খবর, মাজেদ আটক হওয়া মাত্রই নিজের মৃত্যু-সংবাদ ছড়িয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে মোসলে উদ্দিন।

এদিকে কলকাতা ও দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশন ইতোমধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ব্যস্ত ছিলাম ভারত থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে। হঠাৎ করে এই খবরে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় মোসলে উদ্দিন অন্য আসামিদের সঙ্গে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বলা হয়ে থাকে তিনিই বঙ্গবন্ধুর ওপর গুলি চালিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হানা দেয়া বিপদগামী সেনা সদস্য দলের সামনের সারিতে ছিলেন মোসলে উদ্দিন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এই হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করলে মোসলে উদ্দিন দেশ থেকে পালিয়ে যান। তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে গা-ঢাকা দেন। মোসলে উদ্দিনের যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। তার অবস্থানের বিষয়ে সরকারের কাছে নিশ্চিত কোন তথ্য না থাকলেও মনে করা হতো তিনি থাইল্যান্ডে পালিয়ে আছেন।

এর আগে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি আবদুল মাজেদকে ৭ এপ্রিল গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালতে দেয়া পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে রিকশায় করে সন্দেহজনকভাবে যাচ্ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তিনি নিজের পরিচয়ের কথা স্বীকার করেন। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমে ধারণা, সে দেশের গোয়েন্দারাই তাকে আটক করে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়। এরপর ১২ এপ্রিল রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মাজেদ ২২ থেকে ২৩ বছর ধরে ভারতে অবস্থান করছিল। তিনি সে দেশেরই পাসপোর্টও নিয়েছিলেন। মোসলে উদ্দিন গ্রেফতার হলে এখন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদ-প্রাপ্ত চার খুনি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও এএম রাশেদ চৌধুরী। তারা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা। এ ছাড়া খুনিদের মধ্যে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা।

আরও খবর
হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা ও উপকরণ ঘাটতি
রমজান মাসেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন -ডব্লিউএইচও
২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করবে সরকার প্রধানমন্ত্রী
অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে
চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ১০ জনসহ মৃত্যু শত পার
করোনা সংক্রমণ রোধে জরুরি নির্দেশনা
তিন শতাধিক ডাক্তার নার্স আক্রান্ত
পিপিই সংগ্রহে ১৭৬ কোটি টাকা খরচ
ভারতে আটক ১৬৪ বাংলাদেশিকে আনা হয়েছে
ডাক্তার ও নার্সদের আলাদা আবাসনের জন্য ডিসিদের নির্দেশ
লকডাউনে সীতাকুণ্ডে বেসরকারি কল-কারখানা চালু নিরুপম দাশ গুপ্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন
এসকে হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০ , ৮ বৈশাখ ১৪২৭, ২৬ শাবান ১৪৪১

বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মোসলে উদ্দিন ভারতে গ্রেফতারের খবর

সত্যতা খতিয়ে দেখা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া খুনি ক্যাপ্টেন (বহিষ্কৃত) আবদুল মাজেদের পর পলাতক আরেক আসামি রিসেলদার মোসলে উদ্দিনকে ভারতে দেশটির পুলিশ আটক করে বাংলাদেশে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে খবর বেরিয়েছে। বিষয়টিকে গুঞ্জন বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরেন। গুঞ্জন রয়েছে বললেও পুলিশের গোয়েন্দা সূত্র এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলছে না। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি প্রকাশ করা হয়নি। তবে পুলিশের ইন্টারপোল বাংলাদেশ শাখার তথ্য মতে, সম্প্রতি গ্রেফতার হয়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া খুনি ক্যাপ্টেন (বহিষ্কৃত) আবদুল মাজেদের মতো রিসেলদার মোসলে উদ্দিনের অবস্থানও ভারতে বা পাকিস্তানে রয়েছে। মূলত আবদুল মাজেদ গ্রেফতার হওয়ার পর রিসেলদার মোসলে উদ্দিন ভারতে রয়েছেন বলে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা। মাজেদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে রিসেলদার মোসলে উদ্দিনকে গ্রেফতারের বিষয়ে ভারতীয় পুলিশের সহয়তা চায় বাংলাদেশ। এরপর তাকে গ্রেফতার করতে মাঠে নামে ভারতীয় গোয়েন্দারা। তবে, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করেনি বাংলাদেশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন জানিয়েছেন, আমাদের কাছ থেকে কোন স্পষ্ট ডিক্লারেশন পেয়েছেন? আমি তো শতভাগ কনফার্ম না হয়ে কিছু বলি না। আমার কাছে পুরোপুরি নিশ্চিত কোন খবর নেই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আমরা সরকারিভাবে বিষয়টি জানি না। আমি আমার অফিসকে বলেছি এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিতে। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নিশ্চিত হওয়া গেলে অবশ্যই সবাইকে জানানো হবে।

পুলিশের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদকে যেভাবে পাওয়া গিয়েছিল, একইভাবে মোসলেহ উদ্দিনকে পাওয়া যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সে ধরনের সম্ভাবনা প্রকট। সূত্রটি আরও বলেছে, আবদুল মাজেদই রিসালদার মোসলে উদ্দিনের খবর গোয়েন্দাদের জানান। সেই সূত্র ধরেই মোসলে উদ্দিনের খোঁজ হয়।

পুলিশ সদর দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (এআইজি ইন্টারপোল শাখা) মহিউল ইসলাম জানান, বঙ্গবন্ধুর যে ৬ খুনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিল তাদের মধ্যে রিসালদার মোসলে উদ্দিন ও ক্যাপ্টেন মাজেদের সর্বশেষ অবস্থান ভারতে ছিল বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। কয়েকদিন আগে ভারত থেকে পালিয়ে এসে গ্রেফতার হন ক্যাপ্টেন মাজেদ। রিসালদার মোসলে উদ্দিনেরও ভারতে থাকার সম্ভবনা রয়েছে। মোসলে উদ্দিনকে গ্রেফতারে ভারতের কাছে আগেই সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশও জারি করা রয়েছে। তবে মোসলে উদ্দিন গ্রেফতারের বিষয়ে ভারত থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ সদর দফতরকে কিছু জানানো হয়নি।

ভারতের দৈনিক আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলে উদ্দিনকে উত্তর চব্বিশ পরগনায় একটি গ্রাম থেকে আটক করা হয়। আবার অন্য একটি সূত্রের খবর, মাজেদ আটক হওয়া মাত্রই নিজের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে গা-ঢাকা দেন বঙ্গবন্ধুর খুনী রিসালদার মোসলে উদ্দিন। ভারতের গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, লকডাউনের সময় এ দেশ থেকে মোসলে উদ্দিনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে বলে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি ভারতের গোয়েন্দাদের জানায়। ভারতীয় গোয়েন্দারা ওই খুনিকে কার্যত তাড়িয়ে সীমান্তের কোন একটি অরক্ষিত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেয়। ভারতের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, উত্তর ২৪ পরগনার একটি আধাশহরে ইউনানি চিকিৎসক সেজে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন মোসলে উদ্দিন। গতকাল ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা ‘মুজিবের আর এক খুনিও কি এই বঙ্গে?’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আবদুল মাজেদের মতো পরিচয় ভাঁড়িয়ে শেখ মুজিবের আর এক খুনিও দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্রের। মাজেদকে জেরা করে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা তার বিষয়ে জানতে পেরেছেন বলে ওই সূত্রের দাবি। ভারতের গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলে উদ্দিন নামে এই প্রাক্তন সেনা অফিসারকে উত্তর চব্বিশ পরগনায় তার ডেরা থেকে আটক করা গিয়েছে বলেও সূত্রের দাবি। আবার অন্য একটি সূত্রের খবর, মাজেদ আটক হওয়া মাত্রই নিজের মৃত্যু-সংবাদ ছড়িয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে মোসলে উদ্দিন।

এদিকে কলকাতা ও দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশন ইতোমধ্যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ব্যস্ত ছিলাম ভারত থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে। হঠাৎ করে এই খবরে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময় মোসলে উদ্দিন অন্য আসামিদের সঙ্গে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বলা হয়ে থাকে তিনিই বঙ্গবন্ধুর ওপর গুলি চালিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হানা দেয়া বিপদগামী সেনা সদস্য দলের সামনের সারিতে ছিলেন মোসলে উদ্দিন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এই হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করলে মোসলে উদ্দিন দেশ থেকে পালিয়ে যান। তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে গা-ঢাকা দেন। মোসলে উদ্দিনের যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। তার অবস্থানের বিষয়ে সরকারের কাছে নিশ্চিত কোন তথ্য না থাকলেও মনে করা হতো তিনি থাইল্যান্ডে পালিয়ে আছেন।

এর আগে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি আবদুল মাজেদকে ৭ এপ্রিল গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালতে দেয়া পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে রিকশায় করে সন্দেহজনকভাবে যাচ্ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তিনি নিজের পরিচয়ের কথা স্বীকার করেন। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমে ধারণা, সে দেশের গোয়েন্দারাই তাকে আটক করে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়। এরপর ১২ এপ্রিল রাত ১২টা ১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মাজেদ ২২ থেকে ২৩ বছর ধরে ভারতে অবস্থান করছিল। তিনি সে দেশেরই পাসপোর্টও নিয়েছিলেন। মোসলে উদ্দিন গ্রেফতার হলে এখন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদ-প্রাপ্ত চার খুনি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী ও এএম রাশেদ চৌধুরী। তারা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা। এ ছাড়া খুনিদের মধ্যে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা।