লকডাউনে সীতাকুণ্ডে বেসরকারি কল-কারখানা চালু নিরুপম দাশ গুপ্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন। বন্ধ রয়েছে সরকারি অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ ও কল-কারখানা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শিল্প এলাকা হওয়ায় উপজেলাজুড়ে রয়েছে শতাধিক বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি দুই শতাধিক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও সীতাকুণ্ডের বেসরকারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ চালু রয়েছে। ফলে পুরো উপজেলাজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইতোমধ্যে সীতাকুণ্ডে দুই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তারা এখনও দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য শিল্প কারখানা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিএসআরএম, কেএসআরএম, সীমা স্টিল, শীতলপুর স্টিল, আবুল খায়ের স্টিল, পিএইচপি, জিপিএইচ, কেডিএস, ইউনিটেক্স ইত্যাদি। এছাড়া উপকূলজুড়ে রয়েছে কয়েকশ’ শিপব্রেকিং ইয়ার্ড। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে হাজার হাজার শ্রমিক। একদিকে সবাইকে ঘরে থাকার কথা বলা হলেও বেসরকারি কলকারখানাগুলো খোলা রাখার কারণে মানুষকে বের হতে হচ্ছে। এ যেন জানালা বন্ধ রেখে দরজা খোলা রাখা অবস্থা! চাকরি হারানোর ভয়ে কাজে যোগ দিচ্ছে সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা। এসব কারখানায় বিদেশিরাও কাজ করছে। যার ফলে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছে না প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সরকার সবাইকে যার যার ঘরে থাকার কথা বলে উপজেলাজুড়ে শতাধিক কারখানা খোলা রাখায় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিপিএইচ ইস্পাত কারখানা ১৫ এপ্রিল থেকে চালু রয়েছে। তিন শিফটে এখানে শ্রমিকরা কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শ্রমিকরা কুমিল্লা ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সুলতানা মন্দির এলাকার বাসিন্দা মো. স্বপন বলেন, সম্প্রতি জিপিএইচ কারখানা চালুর পর তারাসহ এলাকাবাসী করোনা বিস্তারের ভয় পাচ্ছেন। শ্রমিকরা এলাকায় অবাধে চলাফেরা করছেন।

জানতে চাইলে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানার ম্যানেজার খোকন মাসুদ বলেন, করোনায় দেশের পরিস্থিতি খারাপের কারণে শ্রমিকরা আগের মতো কর্মস্থলে নেই। যাদের বেশি প্রয়োজন তারা কর্মরত আছেন। তাদের সেফটির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মো. শফর আলী বলেন, প্রতিটি ইয়ার্ডে অসংখ্য শ্রমিক কাজ করে। সেখানে একবার কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়বে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার ছুটি দিয়েছে। কিন্তু মালিকরা ইয়ার্ড চালু রেখেছে। আমরা মালিকদের কারখানা বন্ধ করার জন্য চাপ দিচ্ছি। কিন্তু তারা কিছুতেই শুনছে না।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিএ)-সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ নঈম উদ্দিন বলেন, এখন বেশিরভাগ শিপইয়ার্ড বন্ধ। যে সব শ্রমিক চলে গেছে তারা আসতেছে না। যে কয়টি ইয়ার্ড চালু রয়েছে সেখানে করোনা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সীতাকুণ্ড করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর পুরো উপজেলাজুড়ে সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সচেতন মহলের একটাই দাবি, যে সব কল-কারখানা ও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড চালু আছে তা যেন বন্ধ করা হয়। এই দুর্যোগকালীন সরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রয়েছে। এতে করে কর্মস্থলে যেতে শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বাইরে বের হতে হচ্ছে। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা ঘরে থাকা কোন কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। প্রকারান্তরে পরস্পরের সংস্পর্শে এসে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

পিএইচপিতে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও আমাদেরটা চালু রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এদিকে পিএইচপির ম্যানেজার অভিজিৎ চক্রবর্তীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সোনাইছড়ি বিএসআরএম রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ম্যানেজার (প্রশাসন) মো. রেজাউল করিম জানান, আগে লোকবল শতভাগ থাকলেও এখন দশ পার্সেন্টের মতো আছে। করোনার থাবায় এখন লেবারও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যারা আছে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। গাড়ি চলাচলের জন্য আমরা ডিসির কাছ থেকে লিখিতভাবে অনুমতি নিয়েছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, সরকারিভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। যদি নিজেদের সুরক্ষায় মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধ রাখে তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০ , ৮ বৈশাখ ১৪২৭, ২৬ শাবান ১৪৪১

লকডাউনে সীতাকুণ্ডে বেসরকারি কল-কারখানা চালু নিরুপম দাশ গুপ্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন

নিরুপম দাশ গুপ্ত

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন। বন্ধ রয়েছে সরকারি অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ ও কল-কারখানা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড শিল্প এলাকা হওয়ায় উপজেলাজুড়ে রয়েছে শতাধিক বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পাশাপাশি দুই শতাধিক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও সীতাকুণ্ডের বেসরকারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ চালু রয়েছে। ফলে পুরো উপজেলাজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইতোমধ্যে সীতাকুণ্ডে দুই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তারা এখনও দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য শিল্প কারখানা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিএসআরএম, কেএসআরএম, সীমা স্টিল, শীতলপুর স্টিল, আবুল খায়ের স্টিল, পিএইচপি, জিপিএইচ, কেডিএস, ইউনিটেক্স ইত্যাদি। এছাড়া উপকূলজুড়ে রয়েছে কয়েকশ’ শিপব্রেকিং ইয়ার্ড। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে হাজার হাজার শ্রমিক। একদিকে সবাইকে ঘরে থাকার কথা বলা হলেও বেসরকারি কলকারখানাগুলো খোলা রাখার কারণে মানুষকে বের হতে হচ্ছে। এ যেন জানালা বন্ধ রেখে দরজা খোলা রাখা অবস্থা! চাকরি হারানোর ভয়ে কাজে যোগ দিচ্ছে সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা। এসব কারখানায় বিদেশিরাও কাজ করছে। যার ফলে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছে না প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সরকার সবাইকে যার যার ঘরে থাকার কথা বলে উপজেলাজুড়ে শতাধিক কারখানা খোলা রাখায় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিপিএইচ ইস্পাত কারখানা ১৫ এপ্রিল থেকে চালু রয়েছে। তিন শিফটে এখানে শ্রমিকরা কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শ্রমিকরা কুমিল্লা ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সুলতানা মন্দির এলাকার বাসিন্দা মো. স্বপন বলেন, সম্প্রতি জিপিএইচ কারখানা চালুর পর তারাসহ এলাকাবাসী করোনা বিস্তারের ভয় পাচ্ছেন। শ্রমিকরা এলাকায় অবাধে চলাফেরা করছেন।

জানতে চাইলে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানার ম্যানেজার খোকন মাসুদ বলেন, করোনায় দেশের পরিস্থিতি খারাপের কারণে শ্রমিকরা আগের মতো কর্মস্থলে নেই। যাদের বেশি প্রয়োজন তারা কর্মরত আছেন। তাদের সেফটির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মো. শফর আলী বলেন, প্রতিটি ইয়ার্ডে অসংখ্য শ্রমিক কাজ করে। সেখানে একবার কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়বে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার ছুটি দিয়েছে। কিন্তু মালিকরা ইয়ার্ড চালু রেখেছে। আমরা মালিকদের কারখানা বন্ধ করার জন্য চাপ দিচ্ছি। কিন্তু তারা কিছুতেই শুনছে না।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিএ)-সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ নঈম উদ্দিন বলেন, এখন বেশিরভাগ শিপইয়ার্ড বন্ধ। যে সব শ্রমিক চলে গেছে তারা আসতেছে না। যে কয়টি ইয়ার্ড চালু রয়েছে সেখানে করোনা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সীতাকুণ্ড করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর পুরো উপজেলাজুড়ে সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সচেতন মহলের একটাই দাবি, যে সব কল-কারখানা ও শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড চালু আছে তা যেন বন্ধ করা হয়। এই দুর্যোগকালীন সরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রয়েছে। এতে করে কর্মস্থলে যেতে শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বাইরে বের হতে হচ্ছে। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা ঘরে থাকা কোন কিছুই সম্ভব হচ্ছে না। প্রকারান্তরে পরস্পরের সংস্পর্শে এসে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

পিএইচপিতে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও আমাদেরটা চালু রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এদিকে পিএইচপির ম্যানেজার অভিজিৎ চক্রবর্তীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সোনাইছড়ি বিএসআরএম রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ম্যানেজার (প্রশাসন) মো. রেজাউল করিম জানান, আগে লোকবল শতভাগ থাকলেও এখন দশ পার্সেন্টের মতো আছে। করোনার থাবায় এখন লেবারও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যারা আছে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করেছি। গাড়ি চলাচলের জন্য আমরা ডিসির কাছ থেকে লিখিতভাবে অনুমতি নিয়েছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, সরকারিভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। যদি নিজেদের সুরক্ষায় মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধ রাখে তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।