এসকে হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল

চিকিৎসকদের অসন্তোষ

বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক করোনা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ময়মনসিংহ জেলার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ময়মনসিংহের খোদ চিকিৎসক সমাজের মাঝে। প্রতিটি জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের সব ধরনের সেবা দেয়ার জন্য ২০০ শয্যার হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে এমন কথা সরকারিভাবে বলা হয়েছে। তবে ময়মনসিংহ জেলা ষাট শয্যার এসকে হাসপাতালটি কোভিড চিকিৎসার একমাত্র কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু সেই হাসপাতালটি অত্যন্ত পুরোনো হওয়ায় অবকাঠামোগতভাবে অত্যন্ত দুর্বল ও আধুনিক কোন সুযোগ-সুবিধাই নেই সেখানে। আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেই বাথরুম সুবিধা। এই হাসপাতালটিতে মূলত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন উদরাময় রোগের চিকিৎসা দেয়া হয় যা এখনও চালু আছে।

তাছাড়া এই কোভিড চিকিৎসাকেন্দ্রে ময়মনসিংহ জেলার রোগী ছাড়াও ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা জেলার রোগী ও ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার দুইজন ও টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর উপজেলার তিনজন রোগী ভর্তি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে দিন যতই যাবে এসব আশপাশের জেলা থেকে আরও রোগী এখানে আসবে। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (বিএমএ)-এর সভাপতি ডা. মতিউর রহমান গতকাল এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফেসবুকে একটি স্টেটাস দিয়েছেন। এতে জেলার চিকিৎসক সমাজ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা সহমত পোষণ করে মতামত দিয়েছেন। ডা. মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আবারও উদ্বেক প্রকাশ করে বলেন, এসকে হাসপাতালটি আইসোলেশনের জন্য সম্পূর্ণ অনোপযুক্ত। এটি অনেক পুরোনো একটি ভবন। এটি আইসোলেশনের জন্য উপযুক্ত না, কারণ এখানে কোন বাথরুম নেই। লোকবলের অভাব রয়েছে। ভ্যান্টিলেশন সুবিধা থাকলেও অপারেট করার জন্য উপযুক্ত লোক নেই। অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। নার্স ও ওয়ার্ড বয়ের অভাব রয়েছে। এখানে একজন রোগী একদিন থাকার পরেই আর থাকতে চায় না। তিনি আরও বলেন, ষাট শয্যার এসকে হাসপাতালটি যা কোভিড চিকিৎসার একমাত্র কেন্দ্র তা অবকাঠামোগতভাবে দুর্বল। এই কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আমলতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কতৃপক্ষ। দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোভিড হাসপাতালের ব্যাপারে না হয় ময়মনসিংহ বিভাগবাসীদের ভুগতে হবে। তবে একমাত্র আশার আলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবটি যা আগে থেকেই ছিল। শত প্রতিকূলতার মাঝেও একদল স্বাস্থ্যকর্মী রাত দিন পরিশ্রম করছে এটা চালু রাখতে। এখানে প্রতিদিন দুই দফায় ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখনই জেলায় এবং আশপাশের জেলাগুলোতে যে পরিমাণে রোগী হচ্ছে কোভিড-১৯-এর জন্য এখনই যদি একটি বড় আধুনিক হাসপাতাল না নেয়া যায় তবে সামনের দিনগুলোতে চরম সমস্যা দেখা দেবে। কারণ আমাদের এসব এলাকায় বাসায় আইসোলেশনে থাকার মতো বাসা খুব কমই আছে। তিনি জানান, আমাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি ভাগ রয়েছে একটি নতুন ভবন অন্যটি পুরোনো ভবন এর যে কোন একটিকে আলাদা করে কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করে সেখানে আইসোলেশনের সব ধরনের সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও শহরের পাশেই চুরখাই। এলাকায় একটি বেসরকারি বড় হাসপতাল সিবিএমসি হাসপাতালকেও কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কোভিড চিকিৎসার জন্য এসকে হাসপাতালের পাশপাশি তাড়াতাড়িই অন্য আরও একটি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।

ময়মনসিংহ জেলা এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় তিনজন চিকিৎসক, একজন দন্ত চিকিৎসকসহ ১৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে শতাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে গতকাল পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার জনের করোনা সন্দেহে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. চিত্ত রঞ্জন দেবনাথ।

আরও খবর
হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা ও উপকরণ ঘাটতি
রমজান মাসেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন -ডব্লিউএইচও
২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করবে সরকার প্রধানমন্ত্রী
অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে
চব্বিশ ঘণ্টায় আরও ১০ জনসহ মৃত্যু শত পার
করোনা সংক্রমণ রোধে জরুরি নির্দেশনা
বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মোসলে উদ্দিন ভারতে গ্রেফতারের খবর
তিন শতাধিক ডাক্তার নার্স আক্রান্ত
পিপিই সংগ্রহে ১৭৬ কোটি টাকা খরচ
ভারতে আটক ১৬৪ বাংলাদেশিকে আনা হয়েছে
ডাক্তার ও নার্সদের আলাদা আবাসনের জন্য ডিসিদের নির্দেশ
লকডাউনে সীতাকুণ্ডে বেসরকারি কল-কারখানা চালু নিরুপম দাশ গুপ্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০ , ৮ বৈশাখ ১৪২৭, ২৬ শাবান ১৪৪১

ময়মনসিংহে করোনার জন্য নির্ধারিত

এসকে হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা অপ্রতুল

চিকিৎসকদের অসন্তোষ

শরীফুজ্জামান টিটু, ময়মনসিংহ

বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক করোনা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ময়মনসিংহ জেলার প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ময়মনসিংহের খোদ চিকিৎসক সমাজের মাঝে। প্রতিটি জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের সব ধরনের সেবা দেয়ার জন্য ২০০ শয্যার হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে এমন কথা সরকারিভাবে বলা হয়েছে। তবে ময়মনসিংহ জেলা ষাট শয্যার এসকে হাসপাতালটি কোভিড চিকিৎসার একমাত্র কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু সেই হাসপাতালটি অত্যন্ত পুরোনো হওয়ায় অবকাঠামোগতভাবে অত্যন্ত দুর্বল ও আধুনিক কোন সুযোগ-সুবিধাই নেই সেখানে। আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেই বাথরুম সুবিধা। এই হাসপাতালটিতে মূলত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন উদরাময় রোগের চিকিৎসা দেয়া হয় যা এখনও চালু আছে।

তাছাড়া এই কোভিড চিকিৎসাকেন্দ্রে ময়মনসিংহ জেলার রোগী ছাড়াও ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা জেলার রোগী ও ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার দুইজন ও টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর উপজেলার তিনজন রোগী ভর্তি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে দিন যতই যাবে এসব আশপাশের জেলা থেকে আরও রোগী এখানে আসবে। এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (বিএমএ)-এর সভাপতি ডা. মতিউর রহমান গতকাল এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফেসবুকে একটি স্টেটাস দিয়েছেন। এতে জেলার চিকিৎসক সমাজ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা সহমত পোষণ করে মতামত দিয়েছেন। ডা. মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আবারও উদ্বেক প্রকাশ করে বলেন, এসকে হাসপাতালটি আইসোলেশনের জন্য সম্পূর্ণ অনোপযুক্ত। এটি অনেক পুরোনো একটি ভবন। এটি আইসোলেশনের জন্য উপযুক্ত না, কারণ এখানে কোন বাথরুম নেই। লোকবলের অভাব রয়েছে। ভ্যান্টিলেশন সুবিধা থাকলেও অপারেট করার জন্য উপযুক্ত লোক নেই। অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। নার্স ও ওয়ার্ড বয়ের অভাব রয়েছে। এখানে একজন রোগী একদিন থাকার পরেই আর থাকতে চায় না। তিনি আরও বলেন, ষাট শয্যার এসকে হাসপাতালটি যা কোভিড চিকিৎসার একমাত্র কেন্দ্র তা অবকাঠামোগতভাবে দুর্বল। এই কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আমলতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন কতৃপক্ষ। দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোভিড হাসপাতালের ব্যাপারে না হয় ময়মনসিংহ বিভাগবাসীদের ভুগতে হবে। তবে একমাত্র আশার আলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবটি যা আগে থেকেই ছিল। শত প্রতিকূলতার মাঝেও একদল স্বাস্থ্যকর্মী রাত দিন পরিশ্রম করছে এটা চালু রাখতে। এখানে প্রতিদিন দুই দফায় ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এখনই জেলায় এবং আশপাশের জেলাগুলোতে যে পরিমাণে রোগী হচ্ছে কোভিড-১৯-এর জন্য এখনই যদি একটি বড় আধুনিক হাসপাতাল না নেয়া যায় তবে সামনের দিনগুলোতে চরম সমস্যা দেখা দেবে। কারণ আমাদের এসব এলাকায় বাসায় আইসোলেশনে থাকার মতো বাসা খুব কমই আছে। তিনি জানান, আমাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি ভাগ রয়েছে একটি নতুন ভবন অন্যটি পুরোনো ভবন এর যে কোন একটিকে আলাদা করে কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করে সেখানে আইসোলেশনের সব ধরনের সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও শহরের পাশেই চুরখাই। এলাকায় একটি বেসরকারি বড় হাসপতাল সিবিএমসি হাসপাতালকেও কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কোভিড চিকিৎসার জন্য এসকে হাসপাতালের পাশপাশি তাড়াতাড়িই অন্য আরও একটি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।

ময়মনসিংহ জেলা এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় তিনজন চিকিৎসক, একজন দন্ত চিকিৎসকসহ ১৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে শতাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে গতকাল পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার জনের করোনা সন্দেহে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. চিত্ত রঞ্জন দেবনাথ।