হাসপাতালে রুটিন অপারেশন বন্ধ

বাজারে নিম্নমানের মাস্ক ও গ্লাভস

করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রুটিন অপারেশন প্রায় বন্ধ রয়েছে। জরুরি অপারেশন ছাড়া অন্য অপারেশন এখন বন্ধ রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারগুলোতে সাধারণত ডাক্তার ও স্টাফরা সার্জিক্যাল আইটেম ব্যবহার করে। সার্জিক্যাল আইটেমগুলোর মধ্যে মাস্ক, গ্লাভস, ক্যাপ ও চোখের বিশেষ ধরনের চশমাসহ প্রায় ১০ ধরনের আইটেম রয়েছে। এরমধ্যে বেশির ভাগ সার্জিক্যাল আইটেম চীন, কোরিয়া, জাপান এবং তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে চীন থেকে বেশি আমদানি করা হয়। আর দেশে জেএমআইসহ ৪ থেকে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে সার্জিক্যাল আইটেম তৈরির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তারাও মাস্কসহ কিছু কিছু সার্জিক্যাল আইটেম তৈরি করেন। হাসপাতালগুলোতে এ সব আইটেম চললেও এখন করোনাভাইরাসের রোগীর কারণে সারাদেশের মানুষ করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক ও চশমাসহ অন্য সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে। হঠাৎ করে সার্জিক্যাল আইটেমের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। তবে সেই অনুপাতে এখন বাজারে সার্জিক্যাল ভালো মাস্কসহ অন্য উপরণ পাওয়া যাচ্ছে না। দুই/একটি দোকানে পাওয়া গেলেও দামও বেশি। যার কারণে সাধারণ মানুষ নিম্নমানের মাস্ক কিনে ব্যবহার করছে। উন্নত সার্জিক্যাল আইটেমের প্রচ- সংকট শুরু হয়েছে। এ সংকট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আবার করোনাভাইরাসের ভয়ে অনেকেই একই মাস্ক একাধিকবার ব্যবহার করে। এতে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সার্জিক্যাল ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানীর মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেট ও তোপখানা রোডস্থ বিএমএ ভবনস্থ মার্কেটসহ দেশের বিভিন্ন ওষুধ মার্কেটে এখন সার্জিকাল আইটেম ব্যবহার করা হয়। এই সব আইটেম সাধারণত ডাক্তারা ব্যবহার করে। আর কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ডাক্তারদের কাছে গিয়ে কোম্পানির সার্জিক্যাল আইটেম বিক্রির প্রস্তাব ও সুযোগ-সুবিধা জানাত। তবে রোগীদের অপারেশনের সময় অনেক সার্জিক্যাল আইটেম দরকার হয়। তা রোগীর স্বজনরা কিনে দেয়। আর কিছু হাসপাতাল বা সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হয়। করোনা মহামারী শুরুর পর সব সার্জিক্যাল আইটেম বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। এখন ভালো আইটেম পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এখন গ্লাভস সংকট শুরু হয়েছে। প্রতিদিন মাস্ক ও গ্লাভস দরকার। ডিজপোজেবল সিরিজের মতো একবার ব্যবহার করা যায়। এ কারণে চাহিদা বাড়ছে। দেশের তৈরিগুলো চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম। তাই বিদেশি মাস্কের ওপর ঝুঁকছে ক্রেতা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, হাসপাতালগুলোতে এখন সার্জিক্যাল আইটেমের কিছু সংকট আছে। তবে এখন রুটিন অপারেশনগুলো বন্ধ আছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গাইডলাইন অনুযায়ী জরুরি ছাড়া এখন অপাশেন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ মাস্ক সংকট কেটে ওঠতে নরমাল কাপড় দিয়ে মাস্ক তৈরি করতে পারে। কাপড়ের ডাবল লেয়ার দিয়ে নিজেই মাস্ক বানাতে পারে। মাস্ক প্রতিদিন ব্যবহার করার পর তা বাসায় ঢুকে হাত ওয়াশ করে মাস্ক খুলতে হবে। নিয়ম অনুয়ায়ী মাথা নিচু করে মাস্ক বেসিনে ফেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। আর একই মাস্ক না ধুয়ে বার বার ব্যবহার করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। ওই মাস্কে জীবাণু থাকে। তাই ব্যবহারের পর তা ধুয়ে ফেলতে হবে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, মাস্কসহ অধিকাংশ সার্জিক্যাল আইটেম আমদানি করা হয়। আর আমদানির জন্য ওষুধ প্রশাসন এখন ছাড়পত্র দেয়। যাতে কোন সমস্যা না হয়। এছাড়াও দেশে জেএমআইসহ ৪ থেকে ৫টি প্রতিষ্ঠান মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল চশমাসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট তৈরি করে। ওইগুলো বাজারে আছে। আশা করি সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে এই কর্মকর্তা দাবি করেন।

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০ , ৮ বৈশাখ ১৪২৭, ২৬ শাবান ১৪৪১

সার্জিক্যাল আইটেম সংকটের আশঙ্কা

হাসপাতালে রুটিন অপারেশন বন্ধ

বাজারে নিম্নমানের মাস্ক ও গ্লাভস

বাকিবিল্লাহ |

করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রুটিন অপারেশন প্রায় বন্ধ রয়েছে। জরুরি অপারেশন ছাড়া অন্য অপারেশন এখন বন্ধ রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারগুলোতে সাধারণত ডাক্তার ও স্টাফরা সার্জিক্যাল আইটেম ব্যবহার করে। সার্জিক্যাল আইটেমগুলোর মধ্যে মাস্ক, গ্লাভস, ক্যাপ ও চোখের বিশেষ ধরনের চশমাসহ প্রায় ১০ ধরনের আইটেম রয়েছে। এরমধ্যে বেশির ভাগ সার্জিক্যাল আইটেম চীন, কোরিয়া, জাপান এবং তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে চীন থেকে বেশি আমদানি করা হয়। আর দেশে জেএমআইসহ ৪ থেকে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে সার্জিক্যাল আইটেম তৈরির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তারাও মাস্কসহ কিছু কিছু সার্জিক্যাল আইটেম তৈরি করেন। হাসপাতালগুলোতে এ সব আইটেম চললেও এখন করোনাভাইরাসের রোগীর কারণে সারাদেশের মানুষ করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক ও চশমাসহ অন্য সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে। হঠাৎ করে সার্জিক্যাল আইটেমের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। তবে সেই অনুপাতে এখন বাজারে সার্জিক্যাল ভালো মাস্কসহ অন্য উপরণ পাওয়া যাচ্ছে না। দুই/একটি দোকানে পাওয়া গেলেও দামও বেশি। যার কারণে সাধারণ মানুষ নিম্নমানের মাস্ক কিনে ব্যবহার করছে। উন্নত সার্জিক্যাল আইটেমের প্রচ- সংকট শুরু হয়েছে। এ সংকট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আবার করোনাভাইরাসের ভয়ে অনেকেই একই মাস্ক একাধিকবার ব্যবহার করে। এতে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

সার্জিক্যাল ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানীর মিটফোর্ড পাইকারি ওষুধ মার্কেট ও তোপখানা রোডস্থ বিএমএ ভবনস্থ মার্কেটসহ দেশের বিভিন্ন ওষুধ মার্কেটে এখন সার্জিকাল আইটেম ব্যবহার করা হয়। এই সব আইটেম সাধারণত ডাক্তারা ব্যবহার করে। আর কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ডাক্তারদের কাছে গিয়ে কোম্পানির সার্জিক্যাল আইটেম বিক্রির প্রস্তাব ও সুযোগ-সুবিধা জানাত। তবে রোগীদের অপারেশনের সময় অনেক সার্জিক্যাল আইটেম দরকার হয়। তা রোগীর স্বজনরা কিনে দেয়। আর কিছু হাসপাতাল বা সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা হয়। করোনা মহামারী শুরুর পর সব সার্জিক্যাল আইটেম বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। এখন ভালো আইটেম পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এখন গ্লাভস সংকট শুরু হয়েছে। প্রতিদিন মাস্ক ও গ্লাভস দরকার। ডিজপোজেবল সিরিজের মতো একবার ব্যবহার করা যায়। এ কারণে চাহিদা বাড়ছে। দেশের তৈরিগুলো চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম। তাই বিদেশি মাস্কের ওপর ঝুঁকছে ক্রেতা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিয়া, অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, হাসপাতালগুলোতে এখন সার্জিক্যাল আইটেমের কিছু সংকট আছে। তবে এখন রুটিন অপারেশনগুলো বন্ধ আছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গাইডলাইন অনুযায়ী জরুরি ছাড়া এখন অপাশেন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ মাস্ক সংকট কেটে ওঠতে নরমাল কাপড় দিয়ে মাস্ক তৈরি করতে পারে। কাপড়ের ডাবল লেয়ার দিয়ে নিজেই মাস্ক বানাতে পারে। মাস্ক প্রতিদিন ব্যবহার করার পর তা বাসায় ঢুকে হাত ওয়াশ করে মাস্ক খুলতে হবে। নিয়ম অনুয়ায়ী মাথা নিচু করে মাস্ক বেসিনে ফেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। আর একই মাস্ক না ধুয়ে বার বার ব্যবহার করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। ওই মাস্কে জীবাণু থাকে। তাই ব্যবহারের পর তা ধুয়ে ফেলতে হবে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, মাস্কসহ অধিকাংশ সার্জিক্যাল আইটেম আমদানি করা হয়। আর আমদানির জন্য ওষুধ প্রশাসন এখন ছাড়পত্র দেয়। যাতে কোন সমস্যা না হয়। এছাড়াও দেশে জেএমআইসহ ৪ থেকে ৫টি প্রতিষ্ঠান মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল চশমাসহ বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট তৈরি করে। ওইগুলো বাজারে আছে। আশা করি সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলে এই কর্মকর্তা দাবি করেন।