করোনায় মানুষ অমানুষ

মোস্তাফা জব্বার

ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম মহামারী আকারে বিস্তৃত করোনার বাংলাদেশে সংক্রমণকে সংখ্যার দিক থেকে এখনও অতি ভয়ঙ্কর হিসেবে দেখা যায় না। যদিও দিনে দিনে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তবুও আক্রান্ত মানুষ বা মৃত্যুর হিসাব কোনটাই আমেরিকা, ইতালি, স্পেন বা চীনের তুলনায় আতঙ্ক তৈরির মতো নয়। তবে করোনার বিস্তার বেড়েছে অনেক। দেশের প্রায় সবগুলো জেলা এরই মাঝে আক্রান্ত। জেলা-উপজেলা, শহর, গ্রাম বা গলি এখন লকডাউনের আওতায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে বা করোনাকে মোকাবিলা করার জন্য যত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাতে আতঙ্কে থাকার কোন কারণ নাই। তবে সংক্রামক ব্যধি বিধায় করোনার বিস্তার রোধে সতর্কতা-বিধি মেনে চলা ও সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা বা অন্যকে বাঁচানোর বিষয়টি কোন কোন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মাঝে আছে। মানুষ সঙ্গনিরোধ ও সমাবেশ বন্ধ থাকা থেকে বিরত থাকছে না। তবে স্বস্তিদায়ক বিষয় হলো: এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের মানুষের সচেতনতার স্তর অনেকটাই ওপরে উঠেছে এটি নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে করোনাবিষয়ক সতর্কতা। দেশে দেশে সঙ্গনিরোধ, রুমবন্দী, সামাজিকতা বর্জন কেবল স্বেচ্ছাপ্রয়োগ নয় আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনীর মাধ্যমে প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী নিযুক্ত রয়েছে। বিশ্বটা যেহেতু ডিজিটাল সেহেতু সারা বিশ্বের মানুষই এখন দুনিয়ার এক প্রান্তের খবর অন্য প্রান্ত থেকে পাচ্ছে। যেমন করে ভালোটা ওরা জানতে পারছে তেমনি খারাপটাও তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এই ভালো মন্দ তথ্যের মাঝে ভয়ঙ্করভাবে যুক্ত হচ্ছে ভুয়া তথ্য বা গুজব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বাহন হয়ে উঠেছে ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-বিশেষত ফেসবুক। অবস্থা আয়ত্তের বাইরে যাবার মতো হওয়ায় এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে তীব্রভাবে সতর্কও করতে হয়েছে।

মানব সভ্যতার শুরু থেকেই সত্য-মিথ্যা তথ্য জন্ম নিয়েছে এবং একদল মানুষ মিথ্যা তথ্য অপপ্রচার করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মানুষ যখন গুহায় বা গুচ্ছভাবে গ্রামভিত্তিক বসবাস করতো তখন সত্য বা মিথ্যা তথ্যের বিস্তারের পরিধিটাও সেই ভৌগোলিক সীমানাতেই সীমিত থাকতো। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের বিকাশ ঘটতে থাকায় এর বিস্তৃতি ব্যাপক হয়েছে। এখনকার দুনিয়াতে এ ভয়াবহ বিস্তৃতির নাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এই মাধ্যমগুলো যেমনি মানুষকে সহায়তা করে তেমনি এর অপূরণীয় ক্ষতি করার সক্ষমতা রয়েছে। দুনিয়ার অন্য কোথাও যাই থাকুক বাংলাদেশে এটি স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিরও হাতিয়ার। একে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বা আতঙ্ক ছড়ানো ছাড়াও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জিং এজন্য যে শুধু দেশের ভেতরেই নয়, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমকে দেশের বাইরে থেকেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে মুল ধারার গণমাধ্যমের বাইরে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমকে ব্যবহার করে বিপুলসংখ্যক মিডিয়া লাইক ও বিজ্ঞাপন পাবার আশায় গুজবের বাণিজ্য করছে। খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখলে এটি বোঝা যায় যে এসব গুজব বা অপপ্রচারের রাজনৈতিক চরিত্রও আছে। দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি শেখ হাসিনার সরকারকে হেয়-অক্ষম ও ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য করোনাভাইরাস নিয়ে মিথ্যা-বানোয়াট ভিত্তিহীন ও মনগড়া তথ্য প্রচার করছে। মার্চের শেষ দিকেও অনেকের প্রচারণা এমন ছিল যে বাংলাদেশে কেন আক্রান্তের সংখ্যা বেশি নয় বা কেন মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি নয় সেটি যেন আফসোসের বিষয়। সরকারের মন্ত্রী থেকে মসজিদের ইমাম অবধি এইসব গুজবের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। গুজবে তাদের মৃত বানানো হয়েছে। এসব গুজব প্রতিরোধে আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনী নিজে বারবার চেষ্টা করেও বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়ার গুজব নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যার প্রভাব বাংলাদেশে অত্যন্ত প্রবল তারা বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধকে মোটেই গ্রাহ্য করছে না। সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুকের কাছে ২৩ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল ৩১২টি গুজবের লিঙ্ক বন্ধ করার আবেদন করার বিপরীতে ফেসবুকে মাত্র ৩০টি লিঙ্ক বন্ধ করেছে। দৃশ্যত মনে হচ্ছে ফেসবুকের অনিচ্ছা ছাড়াও বাংলা বোঝা এবং রোমান হরফে বাংলা বোঝা নিয়ে তাদের সংকট আছে। বিষয়টি যাই হোক ক্ষতিটা যা হবার তা আমাদের হচ্ছে। অশ্য এমন গুজব নিয়ে সমস্যা এবারই প্রথম নয়। যতবারই আমরা কোন সংকটের মুখোমুখি হই ততবারই ফেসবুকে গুজবের ডালপালা ছড়াতে থাকে। প্রশ্ন ফাঁস থেকে করোনা কোনটাকেই ওরা বাদ দেয়নি। ফেসবুকের ভাইস প্রেসিডেন্ট গ্যায় রোজেন নিজেই সিএনএনকে জানিয়েছেন যে শুধু করোনা নিয়েই ফেসবুকে দুনিয়াজোড়া ৪ কোটি গুজব রয়েছে। এর পাশাপাশি ইউটিউবে ভুয়া ভিডিওর দাপটও রয়েছে।

করোনার আরও অমানবিকতা চোখে পড়ে যখন আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে আপনজনসহ আত্মীয়স্বজন বা পাড়া প্রতিবেশীদের আচরণ ব্যাখ্যা করা হয়। কখনও কখনও মনে হয় আমরা যেন মনুষ্যত্ব চরমভাবে হারিয়ে ফেলেছি। যে দেশে একজন অতি সাধারণ মানুষও অন্য একজন মানুষের পাশে না থেকে নিজেকে স্বস্তিতে রাখতো না সেখানে এখন মা-বাবা, সন্তানাদির সঙ্গে ভয়ঙ্কর আচরণ করা হচ্ছে। মানুষ তার প্রিয়জনকে ফেলে চলে যাচ্ছে বা মৃতদেহ সৎকার করছে না। ইমাম সাহেব জানাজা পড়াচ্ছেন না-বা জানাজায় শরিক হচ্ছে না কেউ অথবা গোসল করানোর মানুষ নেই। বাড়িওয়ালা ডাক্তার-নার্সকে বাড়ি ছাড়তে নোটিস দিচ্ছে। মসজিদের খাটিয়া করোনা আক্রান্ত রোগী বহন করতে দেয়া হয়নি এমন নজিরও রয়েছে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে মৃতদেহ থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা ক্ষীণ। এসব দৃশ্য মানব ইতিহাসে অমানবিকতারই প্রমাণ। এটি সত্য যে ভাইরাসটি ছোয়াচে সংক্রামক। ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবনযাপন করা অতি প্রয়োজনীয়। তবে সেটি মানার ক্ষেত্রেও এমন কোন কারণ নেই যে আমরা অমানুষ হয়ে যাব।

সাধারণ মানুষ তো বটেই অমানবিকতার ধারাটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যুক্ত একাংশের মাঝেও বিস্তৃত ছিল। কোন কোন বেসরকারি হাসপাতালে বন্ধ নোটিস, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, ডাক্তার ও নার্স না পাওয়া, হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও ডাক্তার না পাওয়া বা হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়া অতীতের সব নির্মমতাকে হার মানিয়েছিল। বিশেষ করে আমাদের দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলো এই সময়ে তাদের কর্তব্য ভুলে ছিল বলেই মনে হচ্ছে। আমার নিজের ব্যাখ্যা হচ্ছে তাদের নিজেদের সুরক্ষা প্রস্তুতি না থাকায় তারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলো যাদের ওপর দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শতকরা ৬০ ভাগ নির্ভর করে তাদের নীরবতা সবাইকে বিস্মিত করেছিল। তবে ৯ এপ্রিল ২০২০ বেসরকারি হাসপাতাল ও কলেজের সমিতি প্রকাশ্যে ঘোষণা প্রদান করে যে, দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা খোলা থেকে জনগণকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে থাকবে। এটি প্রকৃতার্থে একটি বড় ঘোষণা। কারণ এর ফলে চিকিৎসাসেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত হতে পারে। তবে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ এলেও মাত্র দুটি বেসরকারি হাসপাতাল নিজেদের প্রস্তুত করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। বাকিরা কবে প্রস্তুত হবে এবং এই দুঃসময়ে কবে জনগণের পাশে থাকবে সেটি কেউ জানে না। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে যে করোনা তো দূরের কথা কোন কোন হাসপাতাল অন্য রোগীর সেবাও দিচ্ছে না।

এতে মুদ্রার উল্টো পিঠটার কথাও আমরা স্মরণ করতে পারছি। করোনার প্রাদুর্ভাব হবার পর সরকার জনগণের পাশে থাকার সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ প্রণোদনা, ত্রাণ বিতরণ ও স্বাস্থ্যসেবায় সহায়তা প্রদান করার ক্ষেত্রে সরকারের এই উদ্যোগ অবশ্যই সর্ব মহলে প্রশংসিত। সরকারের প্রচেষ্টার বাইরেও সাধারণ মানুষ হতো দরিদ্র-দরিদ্র, নিম্নবিত্ত-দিনমজুরসহ সব মানুষের পাশেই যার যার সাধ্যমতো এগিয়ে আসছেন। একজন আশি ঊর্ধ্ব মহিলা তার হজের টাকা গরিব মানুষকে দিয়ে দিলেন। অনেক বেসরকারি সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন নিজেরা নিজেদের সামর্থ্য থেকে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেক বাসায় বাসায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। অনেকে স্থানীয়ভাবে হতদরিদ্র-দরিদ্র-দিনমজুর বা দুস্থদের পাশে রয়েছেন। এরই মাঝে নতুন ধরনের মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে শুরু করেছে। বহু মানুষ নিজেরা তাদের গ্রাম, পাড়া, মহল্লা বা এলাকাকে অন্তরীণ করে রাখছে। এসব এলাকায় কেউ ঢুকতে পারে না-বেরোতেও পারে না। দেশের বাণিজ্য সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, যুব সংস্থা ইতাদির স্বেচ্ছাসেবা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। কেউ কেউ ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের ব্যবস্থাও করেছেন। এলাকা জীবাণমুক্ত করা থেকে শুরু করে মাস্ক-সুরক্ষাসামগ্রী ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। মানুষ আবার প্রমাণ করছে-মানুষ মানুষের জন্যই।

প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর অভাব থাকায় বাংলাদেশের ডাক্তার ও নার্সদের মাঝে করোনায় সেবা দেবার বিষয়ে সংশয় ছিল হয়তো। কিন্তু যখনই ন্যূনতম সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা হয়েছে তখন অন্তত সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিজের ও পরিবারের ঝুঁকি নিয়েও রোগীদের পাশে থাকার এই মহতী প্রচেষ্টাকে একটি অসাধারণ মানবিক উদ্যোগ বলে মনে করা যায়। নারী পুরুষ-যুবা-বয়ষ্ক নির্বিশেষে বাংলাদেশের ডাক্তার ও নার্সদের এই অবদান জাতি অবশ্যই স্মরণ রাখবে। এটি অবশ্য শুধু বাংলাদেশে নয়, যে চীনে করোনার সূচনা সেখান থেকে সারা দুনিয়ার ডাক্তার ও নার্সরা এই মহাবিপদে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এদের অনেক জীবন দিয়েছেন এবং তারা প্রতি মুহূর্তে বিপদের মাঝেই থাকছেন। তাদের একে অপরের মানবিক সম্পর্ক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ডাক্তারি বা নার্স শিক্ষা গ্রহণের সময় তারা ও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এখন বা এ রকম মহামারীর সময়ে সেটি পূরণ করে তারা সেরা মানুষের পরিচয় দিতে পারেন। যেসব ডাক্তার ও নার্স এখনও এই পথে পা দেননি তারাও আশা করি তাদের প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। এটি বস্তুত শুধু একটি চাকরি নয়। এটি বস্তুত মানবতার পাশে থাকা ও বিপন্ন মানুষের সেবা করা। সব পেশায় থেকে এই অসাধারণ কাজ করা সম্ভব হয় না।

ডাক্তারদের মতোই বিপদ মাথায় নিয়ে ব্যাংক, ডাক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, টেলিফোন, পরিবহন, ই-কমার্স, ওষুধসহ জরুরি পণ্য সরবরাহ ও বিতরণ অব্যাহত রাখার কাজে নিয়োজিত ইত্যাদি বিভিন্ন খাতের কর্মীরা জরুরি অবস্থায় জনগণকে সেবা দিচ্ছে। আমি একটি খবর শুনে বিস্মিত হয়েছি যে আমার ডাক বিভাগের মহিলা ড্রাইভাররা (এমনকি গর্ভবতী অবস্থাতেও) গাড়ি চালিয়ে জেলায় জেলায় চিকিৎসা ও সুরক্ষাসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ডাকঘর খুলে সাধারণ মানুষকে ডাক সঞ্চয়পত্র ও পেনসনের টাকা দিয়েছে। টেলিফোনের বা ইন্টারনেটের লাইনম্যানরা ভয়কে জয় করে তাদের সেবা অব্যাহত রেখেছে। এই অবস্থাতে নিরলস কাজ করছেন কৃষিকর্মীরা। বিশেষ করে এখন ধানকাটার সময়। এই সময়ে দিনে রাতে শ্রম দিয়ে ধান কাটায় যারা নিযুক্ত তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।

সরকার পুরো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বীমা ছাড়াও জরুরি কাজে নিয়োজিতদের জন্য প্রণোদণার ঘোষণাও দিয়েছে।

যদি আমরা সামগ্রিক অবস্থার ব্যাখ্যা করি তবে এই কথা বলতেই হবে যে বিশ্বজুড়ে বিরাজিত এই মহাদুর্যোগ থেকে অবশ্যই আমরা পরিত্রাণ পাবো। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সেই বাণীটা আমাদের স্মরণ রাখা দরকার। তিনি বলেছেন যে, বাঙালি বীরের জাতি এবং এবারও আমরা বিজয়ী হবো। আমাদের সবার বিশ্বাসও তা-ই।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

ঢাকা। ১৮ এপ্রিল, ২০২০।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যার-বিজয় ডিজিটাল শিক্ষার প্রণেতা]

mustafajabbar@gmail.com

মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০ , ৮ বৈশাখ ১৪২৭, ২৬ শাবান ১৪৪১

করোনায় মানুষ অমানুষ

মোস্তাফা জব্বার

ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম মহামারী আকারে বিস্তৃত করোনার বাংলাদেশে সংক্রমণকে সংখ্যার দিক থেকে এখনও অতি ভয়ঙ্কর হিসেবে দেখা যায় না। যদিও দিনে দিনে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তবুও আক্রান্ত মানুষ বা মৃত্যুর হিসাব কোনটাই আমেরিকা, ইতালি, স্পেন বা চীনের তুলনায় আতঙ্ক তৈরির মতো নয়। তবে করোনার বিস্তার বেড়েছে অনেক। দেশের প্রায় সবগুলো জেলা এরই মাঝে আক্রান্ত। জেলা-উপজেলা, শহর, গ্রাম বা গলি এখন লকডাউনের আওতায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে বা করোনাকে মোকাবিলা করার জন্য যত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাতে আতঙ্কে থাকার কোন কারণ নাই। তবে সংক্রামক ব্যধি বিধায় করোনার বিস্তার রোধে সতর্কতা-বিধি মেনে চলা ও সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা বা অন্যকে বাঁচানোর বিষয়টি কোন কোন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মাঝে আছে। মানুষ সঙ্গনিরোধ ও সমাবেশ বন্ধ থাকা থেকে বিরত থাকছে না। তবে স্বস্তিদায়ক বিষয় হলো: এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশের মানুষের সচেতনতার স্তর অনেকটাই ওপরে উঠেছে এটি নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে করোনাবিষয়ক সতর্কতা। দেশে দেশে সঙ্গনিরোধ, রুমবন্দী, সামাজিকতা বর্জন কেবল স্বেচ্ছাপ্রয়োগ নয় আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনীর মাধ্যমে প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী নিযুক্ত রয়েছে। বিশ্বটা যেহেতু ডিজিটাল সেহেতু সারা বিশ্বের মানুষই এখন দুনিয়ার এক প্রান্তের খবর অন্য প্রান্ত থেকে পাচ্ছে। যেমন করে ভালোটা ওরা জানতে পারছে তেমনি খারাপটাও তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এই ভালো মন্দ তথ্যের মাঝে ভয়ঙ্করভাবে যুক্ত হচ্ছে ভুয়া তথ্য বা গুজব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বাহন হয়ে উঠেছে ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-বিশেষত ফেসবুক। অবস্থা আয়ত্তের বাইরে যাবার মতো হওয়ায় এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে তীব্রভাবে সতর্কও করতে হয়েছে।

মানব সভ্যতার শুরু থেকেই সত্য-মিথ্যা তথ্য জন্ম নিয়েছে এবং একদল মানুষ মিথ্যা তথ্য অপপ্রচার করে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মানুষ যখন গুহায় বা গুচ্ছভাবে গ্রামভিত্তিক বসবাস করতো তখন সত্য বা মিথ্যা তথ্যের বিস্তারের পরিধিটাও সেই ভৌগোলিক সীমানাতেই সীমিত থাকতো। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের বিকাশ ঘটতে থাকায় এর বিস্তৃতি ব্যাপক হয়েছে। এখনকার দুনিয়াতে এ ভয়াবহ বিস্তৃতির নাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এই মাধ্যমগুলো যেমনি মানুষকে সহায়তা করে তেমনি এর অপূরণীয় ক্ষতি করার সক্ষমতা রয়েছে। দুনিয়ার অন্য কোথাও যাই থাকুক বাংলাদেশে এটি স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিরও হাতিয়ার। একে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বা আতঙ্ক ছড়ানো ছাড়াও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জিং এজন্য যে শুধু দেশের ভেতরেই নয়, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমকে দেশের বাইরে থেকেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে মুল ধারার গণমাধ্যমের বাইরে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমকে ব্যবহার করে বিপুলসংখ্যক মিডিয়া লাইক ও বিজ্ঞাপন পাবার আশায় গুজবের বাণিজ্য করছে। খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখলে এটি বোঝা যায় যে এসব গুজব বা অপপ্রচারের রাজনৈতিক চরিত্রও আছে। দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি শেখ হাসিনার সরকারকে হেয়-অক্ষম ও ব্যর্থ প্রমাণ করার জন্য করোনাভাইরাস নিয়ে মিথ্যা-বানোয়াট ভিত্তিহীন ও মনগড়া তথ্য প্রচার করছে। মার্চের শেষ দিকেও অনেকের প্রচারণা এমন ছিল যে বাংলাদেশে কেন আক্রান্তের সংখ্যা বেশি নয় বা কেন মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি নয় সেটি যেন আফসোসের বিষয়। সরকারের মন্ত্রী থেকে মসজিদের ইমাম অবধি এইসব গুজবের হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। গুজবে তাদের মৃত বানানো হয়েছে। এসব গুজব প্রতিরোধে আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনী নিজে বারবার চেষ্টা করেও বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়ার গুজব নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যার প্রভাব বাংলাদেশে অত্যন্ত প্রবল তারা বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধকে মোটেই গ্রাহ্য করছে না। সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুকের কাছে ২৩ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল ৩১২টি গুজবের লিঙ্ক বন্ধ করার আবেদন করার বিপরীতে ফেসবুকে মাত্র ৩০টি লিঙ্ক বন্ধ করেছে। দৃশ্যত মনে হচ্ছে ফেসবুকের অনিচ্ছা ছাড়াও বাংলা বোঝা এবং রোমান হরফে বাংলা বোঝা নিয়ে তাদের সংকট আছে। বিষয়টি যাই হোক ক্ষতিটা যা হবার তা আমাদের হচ্ছে। অশ্য এমন গুজব নিয়ে সমস্যা এবারই প্রথম নয়। যতবারই আমরা কোন সংকটের মুখোমুখি হই ততবারই ফেসবুকে গুজবের ডালপালা ছড়াতে থাকে। প্রশ্ন ফাঁস থেকে করোনা কোনটাকেই ওরা বাদ দেয়নি। ফেসবুকের ভাইস প্রেসিডেন্ট গ্যায় রোজেন নিজেই সিএনএনকে জানিয়েছেন যে শুধু করোনা নিয়েই ফেসবুকে দুনিয়াজোড়া ৪ কোটি গুজব রয়েছে। এর পাশাপাশি ইউটিউবে ভুয়া ভিডিওর দাপটও রয়েছে।

করোনার আরও অমানবিকতা চোখে পড়ে যখন আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে আপনজনসহ আত্মীয়স্বজন বা পাড়া প্রতিবেশীদের আচরণ ব্যাখ্যা করা হয়। কখনও কখনও মনে হয় আমরা যেন মনুষ্যত্ব চরমভাবে হারিয়ে ফেলেছি। যে দেশে একজন অতি সাধারণ মানুষও অন্য একজন মানুষের পাশে না থেকে নিজেকে স্বস্তিতে রাখতো না সেখানে এখন মা-বাবা, সন্তানাদির সঙ্গে ভয়ঙ্কর আচরণ করা হচ্ছে। মানুষ তার প্রিয়জনকে ফেলে চলে যাচ্ছে বা মৃতদেহ সৎকার করছে না। ইমাম সাহেব জানাজা পড়াচ্ছেন না-বা জানাজায় শরিক হচ্ছে না কেউ অথবা গোসল করানোর মানুষ নেই। বাড়িওয়ালা ডাক্তার-নার্সকে বাড়ি ছাড়তে নোটিস দিচ্ছে। মসজিদের খাটিয়া করোনা আক্রান্ত রোগী বহন করতে দেয়া হয়নি এমন নজিরও রয়েছে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে মৃতদেহ থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা ক্ষীণ। এসব দৃশ্য মানব ইতিহাসে অমানবিকতারই প্রমাণ। এটি সত্য যে ভাইরাসটি ছোয়াচে সংক্রামক। ফলে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবনযাপন করা অতি প্রয়োজনীয়। তবে সেটি মানার ক্ষেত্রেও এমন কোন কারণ নেই যে আমরা অমানুষ হয়ে যাব।

সাধারণ মানুষ তো বটেই অমানবিকতার ধারাটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যুক্ত একাংশের মাঝেও বিস্তৃত ছিল। কোন কোন বেসরকারি হাসপাতালে বন্ধ নোটিস, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, ডাক্তার ও নার্স না পাওয়া, হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও ডাক্তার না পাওয়া বা হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়া অতীতের সব নির্মমতাকে হার মানিয়েছিল। বিশেষ করে আমাদের দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলো এই সময়ে তাদের কর্তব্য ভুলে ছিল বলেই মনে হচ্ছে। আমার নিজের ব্যাখ্যা হচ্ছে তাদের নিজেদের সুরক্ষা প্রস্তুতি না থাকায় তারাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। অবস্থা এমন হয়েছিল যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলো যাদের ওপর দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শতকরা ৬০ ভাগ নির্ভর করে তাদের নীরবতা সবাইকে বিস্মিত করেছিল। তবে ৯ এপ্রিল ২০২০ বেসরকারি হাসপাতাল ও কলেজের সমিতি প্রকাশ্যে ঘোষণা প্রদান করে যে, দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা খোলা থেকে জনগণকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে থাকবে। এটি প্রকৃতার্থে একটি বড় ঘোষণা। কারণ এর ফলে চিকিৎসাসেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত হতে পারে। তবে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ এলেও মাত্র দুটি বেসরকারি হাসপাতাল নিজেদের প্রস্তুত করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। বাকিরা কবে প্রস্তুত হবে এবং এই দুঃসময়ে কবে জনগণের পাশে থাকবে সেটি কেউ জানে না। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে যে করোনা তো দূরের কথা কোন কোন হাসপাতাল অন্য রোগীর সেবাও দিচ্ছে না।

এতে মুদ্রার উল্টো পিঠটার কথাও আমরা স্মরণ করতে পারছি। করোনার প্রাদুর্ভাব হবার পর সরকার জনগণের পাশে থাকার সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ প্রণোদনা, ত্রাণ বিতরণ ও স্বাস্থ্যসেবায় সহায়তা প্রদান করার ক্ষেত্রে সরকারের এই উদ্যোগ অবশ্যই সর্ব মহলে প্রশংসিত। সরকারের প্রচেষ্টার বাইরেও সাধারণ মানুষ হতো দরিদ্র-দরিদ্র, নিম্নবিত্ত-দিনমজুরসহ সব মানুষের পাশেই যার যার সাধ্যমতো এগিয়ে আসছেন। একজন আশি ঊর্ধ্ব মহিলা তার হজের টাকা গরিব মানুষকে দিয়ে দিলেন। অনেক বেসরকারি সংস্থা ও সামাজিক সংগঠন নিজেরা নিজেদের সামর্থ্য থেকে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেক বাসায় বাসায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। অনেকে স্থানীয়ভাবে হতদরিদ্র-দরিদ্র-দিনমজুর বা দুস্থদের পাশে রয়েছেন। এরই মাঝে নতুন ধরনের মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে শুরু করেছে। বহু মানুষ নিজেরা তাদের গ্রাম, পাড়া, মহল্লা বা এলাকাকে অন্তরীণ করে রাখছে। এসব এলাকায় কেউ ঢুকতে পারে না-বেরোতেও পারে না। দেশের বাণিজ্য সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, যুব সংস্থা ইতাদির স্বেচ্ছাসেবা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে। কেউ কেউ ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের ব্যবস্থাও করেছেন। এলাকা জীবাণমুক্ত করা থেকে শুরু করে মাস্ক-সুরক্ষাসামগ্রী ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। মানুষ আবার প্রমাণ করছে-মানুষ মানুষের জন্যই।

প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রীর অভাব থাকায় বাংলাদেশের ডাক্তার ও নার্সদের মাঝে করোনায় সেবা দেবার বিষয়ে সংশয় ছিল হয়তো। কিন্তু যখনই ন্যূনতম সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা হয়েছে তখন অন্তত সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিজের ও পরিবারের ঝুঁকি নিয়েও রোগীদের পাশে থাকার এই মহতী প্রচেষ্টাকে একটি অসাধারণ মানবিক উদ্যোগ বলে মনে করা যায়। নারী পুরুষ-যুবা-বয়ষ্ক নির্বিশেষে বাংলাদেশের ডাক্তার ও নার্সদের এই অবদান জাতি অবশ্যই স্মরণ রাখবে। এটি অবশ্য শুধু বাংলাদেশে নয়, যে চীনে করোনার সূচনা সেখান থেকে সারা দুনিয়ার ডাক্তার ও নার্সরা এই মহাবিপদে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এদের অনেক জীবন দিয়েছেন এবং তারা প্রতি মুহূর্তে বিপদের মাঝেই থাকছেন। তাদের একে অপরের মানবিক সম্পর্ক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ডাক্তারি বা নার্স শিক্ষা গ্রহণের সময় তারা ও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এখন বা এ রকম মহামারীর সময়ে সেটি পূরণ করে তারা সেরা মানুষের পরিচয় দিতে পারেন। যেসব ডাক্তার ও নার্স এখনও এই পথে পা দেননি তারাও আশা করি তাদের প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। এটি বস্তুত শুধু একটি চাকরি নয়। এটি বস্তুত মানবতার পাশে থাকা ও বিপন্ন মানুষের সেবা করা। সব পেশায় থেকে এই অসাধারণ কাজ করা সম্ভব হয় না।

ডাক্তারদের মতোই বিপদ মাথায় নিয়ে ব্যাংক, ডাক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, টেলিফোন, পরিবহন, ই-কমার্স, ওষুধসহ জরুরি পণ্য সরবরাহ ও বিতরণ অব্যাহত রাখার কাজে নিয়োজিত ইত্যাদি বিভিন্ন খাতের কর্মীরা জরুরি অবস্থায় জনগণকে সেবা দিচ্ছে। আমি একটি খবর শুনে বিস্মিত হয়েছি যে আমার ডাক বিভাগের মহিলা ড্রাইভাররা (এমনকি গর্ভবতী অবস্থাতেও) গাড়ি চালিয়ে জেলায় জেলায় চিকিৎসা ও সুরক্ষাসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ডাকঘর খুলে সাধারণ মানুষকে ডাক সঞ্চয়পত্র ও পেনসনের টাকা দিয়েছে। টেলিফোনের বা ইন্টারনেটের লাইনম্যানরা ভয়কে জয় করে তাদের সেবা অব্যাহত রেখেছে। এই অবস্থাতে নিরলস কাজ করছেন কৃষিকর্মীরা। বিশেষ করে এখন ধানকাটার সময়। এই সময়ে দিনে রাতে শ্রম দিয়ে ধান কাটায় যারা নিযুক্ত তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।

সরকার পুরো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বীমা ছাড়াও জরুরি কাজে নিয়োজিতদের জন্য প্রণোদণার ঘোষণাও দিয়েছে।

যদি আমরা সামগ্রিক অবস্থার ব্যাখ্যা করি তবে এই কথা বলতেই হবে যে বিশ্বজুড়ে বিরাজিত এই মহাদুর্যোগ থেকে অবশ্যই আমরা পরিত্রাণ পাবো। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সেই বাণীটা আমাদের স্মরণ রাখা দরকার। তিনি বলেছেন যে, বাঙালি বীরের জাতি এবং এবারও আমরা বিজয়ী হবো। আমাদের সবার বিশ্বাসও তা-ই।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

ঢাকা। ১৮ এপ্রিল, ২০২০।

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কিবোর্ড ও সফটওয়্যার-বিজয় ডিজিটাল শিক্ষার প্রণেতা]

mustafajabbar@gmail.com