‘বিশ্বস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে’

কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়ে এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্বস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। সব প্রকার প্রভাবমুক্ত হয়ে তাদের কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন দৈনিক সংবাদ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২ টায় ঢাকায় “স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি ৬ দফা প্রস্তাবনা” শীর্ষক মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস (এমডব্লিউইআর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরেন এমডব্লিউইআরের আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফ। খন্দকার মুনীরুজ্জামান বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাস্থ্যসেবাখাতের অবস্থাটি আমাদের কাছে উন্মোচন করে দিয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে নতুন করে নীতিমাল তৈরি করে সামনে আগাতে হবে। কোন দেশ বা ব্যক্তির প্রভাব এখানে প্রশ্রয় না দিয়ে স্বাধীন চিন্তার স্থান দিতে হবে।

এমডব্লিউইআরের ৬ দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয়গুলো বিভিন্ন দেশ বাস্তবায়ন করলে একসাথে সবাই ফল পাবে। আমরা আশা করি রাষ্ট্রপ্রধানগণ বিষয়গুলো আমলে নেবেন।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান স্বাস্থ্যসেবা খাতের বাজেটে আরও বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলে জানান, বাংলাদেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মোট জাতীয় বাজেটের ৪ দশমিক ৯২% এবং জিডিপির ০ দশমিক ৮৯%। এই বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এটি কমপক্ষে জাতীয় বাজেটের ১০-১২ শতাংশ করতে হবে।

তিনি গবেষণায় দৃষ্টি দিতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিভিন্ন দেশে গবেষকরা কাজ করছে। গবেষণালব্ধ ফলাফল যেন সমানভাগে সবাই পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি গবেষণার জন্য আলাদা অধিদফতর তৈরির প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রতিটি দেশ আলাদা করে শুধু গবেষণার জন্য অধিদফতর তৈরি করতে পারে। সেখানে চিকিৎসকগণ উন্নততর গবেষণায় নিয়োজিত থাকবে।

বিশ্বনেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরা প্রস্তাব ৬টি হচ্ছে- ১. পাঠক্রমে স্বাস্থ্যশিক্ষা অন্তর্ভুক্তকরণ : তৃতীয় হতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত (১০ বছর) মানবজীবনের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক জ্ঞানের ৪০ শতাংশ এসব পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তকরণ ও বাধ্যতামূলক করা, ২. বিশ্বস্বাস্থ্যসেবা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে বিশ্বস্বাস্থ্যসেবা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা, যার সদস্য হবে প্রতিটি রাষ্ট্র ও প্রতিটি দেশেই এর শাখা থাকবে ও প্রত্যেক ব্যক্তি সেখানে চাঁদা দেবে এবং প্রত্যেক দেশের স্বাস্থ্যসেবায় আলাদা নামে ব্যাংক থাকবে, ৩. বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ : ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এমনকি সম্ভব হলে প্রতিটি প্রাণীর স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে করতে হবে। এজন্যে কমিউনিটিবেজড স্বাস্থ্যসেবা ও প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় নিয়ে আসতে হবে, ৪. স্বাস্থ্যসেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি : স্বাস্থ্যসেবায় রোবোটিক্স ও অন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ও টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, ৫. স্বাস্থ্যবিষয়ক টিম গঠন : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিষয়ক টিম গঠন ও প্রান্তিক মানুষের কাছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আবেদন পৌঁছে দেয়ার সহজ উপায় বের করা, ৬. গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি : স্বাস্থ্যসেবাখাতের গবেষণায় অধিক হারে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা।

আরিফ বলেন, বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের অনুরোধ হচ্ছে, আপনার দেশেও দাবি ৬টি বাস্তবায়ন করুন। কেননা এখন অনেক রোগই কোন একটি দেশে সীমিত না থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় প্রতিটি দেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না হলে আমরা শান্তি ও স্বস্তিতে থাকতে পারবো না।

তিনি বলেন, আজ থেকে জাতিসংঘ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান তথা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, গবেষক, দাতাসংস্থা, দাতা ব্যক্তিবর্গ, জাতীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সম্পাদক ও বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকবৃন্দ, কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট, এশিয়ান পার্লামেন্ট, আফ্রিকান পার্লামেন্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট, আমেরিকান পালার্মেন্টের স্পিকার, ওআইসিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার কাছে ই-মেইলে, প্রিন্ট কপি ও বাংলাদেশে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূতদের কাছে প্রস্তাবনা ৬টি পাঠানো হবে। যাতে করে তারা নিজ নিজ দেশের সরকার প্রধানদের কাছে চিঠিটি পাঠাতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলেন উপস্থিত ছিলেন এমডব্লিউইআরের সদস্য মাইনুল ইসলাম ও মো. রিয়াদ চৌধুরী।

বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০ , ৯ বৈশাখ ১৪২৭, ২৭ শাবান ১৪৪১

‘বিশ্বস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়ে এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্বস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। সব প্রকার প্রভাবমুক্ত হয়ে তাদের কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেছেন দৈনিক সংবাদ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২ টায় ঢাকায় “স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি ৬ দফা প্রস্তাবনা” শীর্ষক মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস (এমডব্লিউইআর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরেন এমডব্লিউইআরের আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফ। খন্দকার মুনীরুজ্জামান বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাস্থ্যসেবাখাতের অবস্থাটি আমাদের কাছে উন্মোচন করে দিয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে নতুন করে নীতিমাল তৈরি করে সামনে আগাতে হবে। কোন দেশ বা ব্যক্তির প্রভাব এখানে প্রশ্রয় না দিয়ে স্বাধীন চিন্তার স্থান দিতে হবে।

এমডব্লিউইআরের ৬ দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয়গুলো বিভিন্ন দেশ বাস্তবায়ন করলে একসাথে সবাই ফল পাবে। আমরা আশা করি রাষ্ট্রপ্রধানগণ বিষয়গুলো আমলে নেবেন।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান স্বাস্থ্যসেবা খাতের বাজেটে আরও বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলে জানান, বাংলাদেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মোট জাতীয় বাজেটের ৪ দশমিক ৯২% এবং জিডিপির ০ দশমিক ৮৯%। এই বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এটি কমপক্ষে জাতীয় বাজেটের ১০-১২ শতাংশ করতে হবে।

তিনি গবেষণায় দৃষ্টি দিতে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিভিন্ন দেশে গবেষকরা কাজ করছে। গবেষণালব্ধ ফলাফল যেন সমানভাগে সবাই পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি গবেষণার জন্য আলাদা অধিদফতর তৈরির প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রতিটি দেশ আলাদা করে শুধু গবেষণার জন্য অধিদফতর তৈরি করতে পারে। সেখানে চিকিৎসকগণ উন্নততর গবেষণায় নিয়োজিত থাকবে।

বিশ্বনেতৃবৃন্দের কাছে তুলে ধরা প্রস্তাব ৬টি হচ্ছে- ১. পাঠক্রমে স্বাস্থ্যশিক্ষা অন্তর্ভুক্তকরণ : তৃতীয় হতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত (১০ বছর) মানবজীবনের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক জ্ঞানের ৪০ শতাংশ এসব পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তকরণ ও বাধ্যতামূলক করা, ২. বিশ্বস্বাস্থ্যসেবা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে বিশ্বস্বাস্থ্যসেবা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা, যার সদস্য হবে প্রতিটি রাষ্ট্র ও প্রতিটি দেশেই এর শাখা থাকবে ও প্রত্যেক ব্যক্তি সেখানে চাঁদা দেবে এবং প্রত্যেক দেশের স্বাস্থ্যসেবায় আলাদা নামে ব্যাংক থাকবে, ৩. বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ : ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এমনকি সম্ভব হলে প্রতিটি প্রাণীর স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে করতে হবে। এজন্যে কমিউনিটিবেজড স্বাস্থ্যসেবা ও প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় নিয়ে আসতে হবে, ৪. স্বাস্থ্যসেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি : স্বাস্থ্যসেবায় রোবোটিক্স ও অন্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ও টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, ৫. স্বাস্থ্যবিষয়ক টিম গঠন : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিষয়ক টিম গঠন ও প্রান্তিক মানুষের কাছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আবেদন পৌঁছে দেয়ার সহজ উপায় বের করা, ৬. গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি : স্বাস্থ্যসেবাখাতের গবেষণায় অধিক হারে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখা।

আরিফ বলেন, বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের অনুরোধ হচ্ছে, আপনার দেশেও দাবি ৬টি বাস্তবায়ন করুন। কেননা এখন অনেক রোগই কোন একটি দেশে সীমিত না থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় প্রতিটি দেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না হলে আমরা শান্তি ও স্বস্তিতে থাকতে পারবো না।

তিনি বলেন, আজ থেকে জাতিসংঘ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেস্কো, ইউনিসেফ, বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান তথা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, গবেষক, দাতাসংস্থা, দাতা ব্যক্তিবর্গ, জাতীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সম্পাদক ও বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকবৃন্দ, কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট, এশিয়ান পার্লামেন্ট, আফ্রিকান পার্লামেন্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট, আমেরিকান পালার্মেন্টের স্পিকার, ওআইসিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার কাছে ই-মেইলে, প্রিন্ট কপি ও বাংলাদেশে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূতদের কাছে প্রস্তাবনা ৬টি পাঠানো হবে। যাতে করে তারা নিজ নিজ দেশের সরকার প্রধানদের কাছে চিঠিটি পাঠাতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলেন উপস্থিত ছিলেন এমডব্লিউইআরের সদস্য মাইনুল ইসলাম ও মো. রিয়াদ চৌধুরী।