ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য সেবা দিতে হবে

মহামারীর প্রবল ঢেউ চলছে, সুনামিও আসতে পারে : ডা. মোস্তাক

দেশে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপ কমিয়ে আনা। এখন চলছে মহামারীর প্রথম ঢেউ। এরপর সুনামীও আসতে পারে। তাই এখনই ঘরে ঘরে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। করোনা পরীক্ষা পজিটিভ হলে এবং লক্ষণ মৃদু (সামান্য জ্বর ও কাশি) হলে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে। এজন্য ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে সুরক্ষা দিয়ে হলেও আরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। ডাক্তাররা লড়াই করবে। আর এ লড়াইয়ের জন্য তাদেরকে হাতিয়ার দিতে হবে। মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদের সঙ্গে এক সাক্ষাতে এসব তথ্য জানান। ডা. মোস্তাক বলেন, দেশব্যাপী ঘরে ঘরে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের চিকিৎসা দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার সময় সন্দেহ হলে করোনাভাইরাসের নমুনা কালেকশন করে পরীক্ষায় পজেটিভ হলে তাকে বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে হবে। একই সঙ্গে ওই বাসার অন্যদেরকে ঘরে আলাদাভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। এর বাইরে এখন দেশে হাজার হাজার মানুষ মৃদু কোরানাভাইরাসে আক্রান্ত আছে। তীব্র শ্বাসকষ্ট না হলে অনেকেই হাসপাতালে যাচ্ছে না। এই ধরনের একটি বিরাট অংশ এখনও অশনাক্ত থাকছে। তাই ঘরে ঘরে গিয়ে সার্ভিস দেয়া উচিত বলে এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তার মতামত ব্যক্ত করেন।

এখন দেশে ভৌগোলিকভাবে জরুরিভিত্তিতে জরিপ করে সেখানে স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে আলোচনা করে তাদেরকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে বুঝাতে হবে। ওই সময় তাদের মধ্যে সংক্রমণ হচ্ছে এমন আলোচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক গ্রুপ করে জনপ্রতিনিধিদেরকে সঙ্গে রেখে তাদেরকে বুঝাতে ও বলতে হবে। কমিউনিটিভিত্তিক খোলা জায়গায় বা ঘনবসতি এলাকায় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। উদারণ হিসেবে বলা যায়, একাধিক ঘরে থাকা নিম্নআয়ের মহিলার একটি গ্যাসের চুলার রান্না করে। এক চুলায় অনেকেই রান্না করতে যায়। তখন সমস্যা হতে পারে। প্রত্যেকটি এলাকায় কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। ঘনবসতি এলাকাগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। সমস্যা হলে এলাকা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত ওয়ার্ডভিত্তিক খোঁজ নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পদক্ষেপ নেয়ার ওপর এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গুরুত্ব দেন। দেশে করোনাভাইরাস মহামারীর ঢেউ চলছে। এরপর সুনামি আসলে আরও খারাপ অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ডাক্তার, নার্স সেবাকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করে তাদেরকে কাজে লাগাতে আরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এখন সুরক্ষার ব্যবস্থা না করায় অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে বিনা বেতনে ছুটি নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামাতে হবে। এ লড়াইয়ের জন্য তাদেরকে হাতিয়ার দিয়ে উজ্জীবিত করে তুলতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক ডাক্তার ও নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই তাদের সুরক্ষা দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। এখন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কিছু ব্যবস্থা হয়েছে। আস্তে আস্তে সুরক্ষা আরও বাড়াতে হবে। তাহলে করোনা প্রতিরোধে চিকিৎসক সমাজ ঝাঁপিয়ে পড়বে।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসা দিলে হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। আর রোগীরা নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসাসেবা পেয়ে স্বস্তি বোধ করবেন। এভাবে সেবা দিলে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে। আর এখন করোনাভাইরাসের চিকিৎসা, শনাক্তে কেন্দ্র ও হাসপাতালের সংখ্যা দেশব্যাপী বাড়ছে। নমুনা কালেকশন বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তাই আরও জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী পুরো হাসপাতালকে করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করেছে। এজন্য ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরো হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী তাদেরকে সুরক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ডাক্তার সমাজ লড়াই করতে প্রস্তুত আছে। সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

আরও খবর
বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর চেয়ে সুস্থতার হার বেশি
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ৯ নতুন শনাক্ত ৪৩৪
কোভিড-১৯ : চরম বিপর্যয় আসতে এখনও বাকি
৪৫ দেশ ও অঞ্চলে এখনও কোন মৃত্যু হয়নি
দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মামলা
৩৩৩ নাম্বারে ফোন দিলে ত্রাণ ও খাদ্য পৌঁছে যাবে
‘বিশ্বস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে’
ইতিহাসে প্রথমবার জ্বালানি তেলের দাম শূন্যের নিচে
অবৈধভাবে করোনা শনাক্তকরণ কিট ও নকল সুরক্ষাসামগ্রী আমদানি
চাল চোরের ক্ষমা নেই কাদের
করোনায় ২০ ঘণ্টা অফিস করে চলেছেন তিনি
ব্যর্থতার দায় নিয়ে রোমানিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ
৩৬১ ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত

বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০ , ৯ বৈশাখ ১৪২৭, ২৭ শাবান ১৪৪১

ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য সেবা দিতে হবে

মহামারীর প্রবল ঢেউ চলছে, সুনামিও আসতে পারে : ডা. মোস্তাক

দেশে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপ কমিয়ে আনা। এখন চলছে মহামারীর প্রথম ঢেউ। এরপর সুনামীও আসতে পারে। তাই এখনই ঘরে ঘরে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। করোনা পরীক্ষা পজিটিভ হলে এবং লক্ষণ মৃদু (সামান্য জ্বর ও কাশি) হলে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে। এজন্য ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে সুরক্ষা দিয়ে হলেও আরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। ডাক্তাররা লড়াই করবে। আর এ লড়াইয়ের জন্য তাদেরকে হাতিয়ার দিতে হবে। মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সংবাদের সঙ্গে এক সাক্ষাতে এসব তথ্য জানান। ডা. মোস্তাক বলেন, দেশব্যাপী ঘরে ঘরে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের চিকিৎসা দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার সময় সন্দেহ হলে করোনাভাইরাসের নমুনা কালেকশন করে পরীক্ষায় পজেটিভ হলে তাকে বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে হবে। একই সঙ্গে ওই বাসার অন্যদেরকে ঘরে আলাদাভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে। এর বাইরে এখন দেশে হাজার হাজার মানুষ মৃদু কোরানাভাইরাসে আক্রান্ত আছে। তীব্র শ্বাসকষ্ট না হলে অনেকেই হাসপাতালে যাচ্ছে না। এই ধরনের একটি বিরাট অংশ এখনও অশনাক্ত থাকছে। তাই ঘরে ঘরে গিয়ে সার্ভিস দেয়া উচিত বলে এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তার মতামত ব্যক্ত করেন।

এখন দেশে ভৌগোলিকভাবে জরুরিভিত্তিতে জরিপ করে সেখানে স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গে আলোচনা করে তাদেরকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে বুঝাতে হবে। ওই সময় তাদের মধ্যে সংক্রমণ হচ্ছে এমন আলোচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক গ্রুপ করে জনপ্রতিনিধিদেরকে সঙ্গে রেখে তাদেরকে বুঝাতে ও বলতে হবে। কমিউনিটিভিত্তিক খোলা জায়গায় বা ঘনবসতি এলাকায় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। উদারণ হিসেবে বলা যায়, একাধিক ঘরে থাকা নিম্নআয়ের মহিলার একটি গ্যাসের চুলার রান্না করে। এক চুলায় অনেকেই রান্না করতে যায়। তখন সমস্যা হতে পারে। প্রত্যেকটি এলাকায় কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। ঘনবসতি এলাকাগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। সমস্যা হলে এলাকা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

রাজধানী থেকে গ্রাম পর্যন্ত ওয়ার্ডভিত্তিক খোঁজ নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পদক্ষেপ নেয়ার ওপর এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গুরুত্ব দেন। দেশে করোনাভাইরাস মহামারীর ঢেউ চলছে। এরপর সুনামি আসলে আরও খারাপ অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ডাক্তার, নার্স সেবাকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করে তাদেরকে কাজে লাগাতে আরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এখন সুরক্ষার ব্যবস্থা না করায় অনেকেই অতিষ্ঠ হয়ে বিনা বেতনে ছুটি নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামাতে হবে। এ লড়াইয়ের জন্য তাদেরকে হাতিয়ার দিয়ে উজ্জীবিত করে তুলতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক ডাক্তার ও নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই তাদের সুরক্ষা দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। এখন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কিছু ব্যবস্থা হয়েছে। আস্তে আস্তে সুরক্ষা আরও বাড়াতে হবে। তাহলে করোনা প্রতিরোধে চিকিৎসক সমাজ ঝাঁপিয়ে পড়বে।

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে চিকিৎসা দিলে হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। আর রোগীরা নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসাসেবা পেয়ে স্বস্তি বোধ করবেন। এভাবে সেবা দিলে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে। আর এখন করোনাভাইরাসের চিকিৎসা, শনাক্তে কেন্দ্র ও হাসপাতালের সংখ্যা দেশব্যাপী বাড়ছে। নমুনা কালেকশন বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তাই আরও জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী পুরো হাসপাতালকে করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করেছে। এজন্য ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরো হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী তাদেরকে সুরক্ষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ডাক্তার সমাজ লড়াই করতে প্রস্তুত আছে। সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।