ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের হুমকি : মতপ্রকাশে বাধা দেয়া ও দুর্নীতি অব্যাহত রাখার হাতিয়ার

দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরবরাহকৃত মাস্ক নিয়ে অপপ্রচার বা অসত্য তথ্য প্রচার করা থেকে বিরত না থাকলে ডিজিটাল আইনে মামলা করার হুমকি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এন-৯৫ মাস্ক ক্রয় সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। সেখানে আরও বলা হয়, উল্লিখিত ইস্যুতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে, স্বাস্থ্যসেবা সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে জড়িয়ে মানহানিকর সংবাদ প্রচার হচ্ছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

এন-৯৫-এর মোড়কে যে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে নাকি ভুলবশত করা হয়েছে সেটা তদন্তসাপেক্ষ বিষয়। অনেকেই এটাকে সাধারণ ভুল হিসেবে দেখতে নারাজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাস্ক সরবরাহে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এন-৯৫ মাস্কের নামে সার্জিক্যাল মাস্ক দিয়ে কেউ চুরি-দুর্নীতি করল নাকি ঠাট্টা-মশকরা করল সেটা খুঁজে দেখার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার কর্তৃপক্ষ সংবাদ প্রকাশে কে ভুল করল বা কার মানহানি হলো সেটা দেখা শুরু করেছে। আমরা জানতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অর্থ কী সংবাদ প্রকাশের জন্য ডিজিটাল আইন প্রয়োগের হুমকি দেয়া নাকি মাস্ক নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া। কারও কোনভাবে মানহানি হোক সেটা কাম্য নয়। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা তার ছেলের মান রক্ষার গুরু দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে নিজের ঘাড়ে তুলে নিতে হবে কেন- সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের বরং সঠিক মাস্ক সঠিক জায়গায় পৌঁছানোর কাজে মনোনিবেশ করা উচিত।

ডিজিটাল আইন শুরু থেকেই মতপ্রকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। নিবর্তনমূলক এ আইনের খারাপ রূপটি দুর্দিনে আরও ভয়ংকর হয়েছে। এটি নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে একাধিক সম্পাদকসহ সাংবাদিকরা মামলার শিকার হয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একই সঙ্গে সাংবাদিক নির্যাতন ও দুর্নীতি অব্যাহত রাখার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। চলমান বৈশ্বিক মহামারীতে অবাধ তথ্য প্রকাশ ও দুর্নীতি রোধ করার প্রয়োজন আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। কারণ মিথ্য তথ্য ও গুজব সরকারের কাজকে কঠিন করে তুলেছে আর অনিয়ম-দুর্নীতি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুঃসহ করে তুলেছে। কোভিড-১৯ রোগের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করতে হলে মতপ্রকাশের পথ অবারিত করতে হবে। যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ করছে বা করার হুমকি দিচ্ছে তাদের নিবৃত করতে হবে। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, এ আইন অবিলম্বে বাতিল করা।

বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০ , ৯ বৈশাখ ১৪২৭, ২৭ শাবান ১৪৪১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের হুমকি : মতপ্রকাশে বাধা দেয়া ও দুর্নীতি অব্যাহত রাখার হাতিয়ার

দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরবরাহকৃত মাস্ক নিয়ে অপপ্রচার বা অসত্য তথ্য প্রচার করা থেকে বিরত না থাকলে ডিজিটাল আইনে মামলা করার হুমকি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এন-৯৫ মাস্ক ক্রয় সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। সেখানে আরও বলা হয়, উল্লিখিত ইস্যুতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে, স্বাস্থ্যসেবা সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে জড়িয়ে মানহানিকর সংবাদ প্রচার হচ্ছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

এন-৯৫-এর মোড়কে যে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে নাকি ভুলবশত করা হয়েছে সেটা তদন্তসাপেক্ষ বিষয়। অনেকেই এটাকে সাধারণ ভুল হিসেবে দেখতে নারাজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাস্ক সরবরাহে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এন-৯৫ মাস্কের নামে সার্জিক্যাল মাস্ক দিয়ে কেউ চুরি-দুর্নীতি করল নাকি ঠাট্টা-মশকরা করল সেটা খুঁজে দেখার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার কর্তৃপক্ষ সংবাদ প্রকাশে কে ভুল করল বা কার মানহানি হলো সেটা দেখা শুরু করেছে। আমরা জানতে চাই, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অর্থ কী সংবাদ প্রকাশের জন্য ডিজিটাল আইন প্রয়োগের হুমকি দেয়া নাকি মাস্ক নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া। কারও কোনভাবে মানহানি হোক সেটা কাম্য নয়। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা তার ছেলের মান রক্ষার গুরু দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকে নিজের ঘাড়ে তুলে নিতে হবে কেন- সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের বরং সঠিক মাস্ক সঠিক জায়গায় পৌঁছানোর কাজে মনোনিবেশ করা উচিত।

ডিজিটাল আইন শুরু থেকেই মতপ্রকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। নিবর্তনমূলক এ আইনের খারাপ রূপটি দুর্দিনে আরও ভয়ংকর হয়েছে। এটি নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশ করে একাধিক সম্পাদকসহ সাংবাদিকরা মামলার শিকার হয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একই সঙ্গে সাংবাদিক নির্যাতন ও দুর্নীতি অব্যাহত রাখার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। চলমান বৈশ্বিক মহামারীতে অবাধ তথ্য প্রকাশ ও দুর্নীতি রোধ করার প্রয়োজন আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। কারণ মিথ্য তথ্য ও গুজব সরকারের কাজকে কঠিন করে তুলেছে আর অনিয়ম-দুর্নীতি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুঃসহ করে তুলেছে। কোভিড-১৯ রোগের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করতে হলে মতপ্রকাশের পথ অবারিত করতে হবে। যারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ করছে বা করার হুমকি দিচ্ছে তাদের নিবৃত করতে হবে। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, এ আইন অবিলম্বে বাতিল করা।