স্বাস্থ্যসেবীদের বসতবাড়িতে হয়রানি বন্ধ করুন

বাংলাদেশ হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও টেকনিশিয়ান সংক্রমিত হয়ে আইসোলেশনে আছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবীরা এ কান্তিকালে অনেক ঝুঁকি নিয়ে করোনা প্রতিরোধের কাজ করছে। তাদের এ ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু অত্যন্ত মানবিক এ কাজকে অনেকে করোনা যুদ্ধ হিসাবে বিবেচনা করছে। সরকারও এ সমস্ত কর্মীকে করোনা যোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তাদের সহযোগিতা করা ও তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকদের মানবিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

কিন্তু অনেক গণমাধ্যম ও সোসাল মিডিয়ায় উদ্বেগজনক খবর বেরিয়েছে, যে সমস্ত স্বাস্থ্যসেবী চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও টেকনিশিয়ান বিভিন্ন হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সংক্রামিত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন বা দিয়ে যাচ্ছেন, তারা তাদের আবাসিক বসতবাড়িতে বিভিন্নভাবে হয়রানি বা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। তাদের পরিবার ও তাদের সদস্যদের সঙ্গেও সামাজিক বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে, দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে বা বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। কোন কোন এলাকার বাড়ি বা ফ্লাটের মালিক তাদের বাড়ি ছাড়ার নোটিস দিচ্ছেন বা অন্যভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন। অনেকের বাসায় আবার তালা ঝুলিয়েও দেয়া হচ্ছে। অনেককে বাড়িতে আসতে নিষেধ করে দেওয়া হচ্ছে। অনেক বাড়ি বা ফ্লাটের মালিক অবশ্য বলছেন, তারা অন্য ভাড়াটিয়া বা পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশীদের চাপে বাধ্য হয়ে এ ধরণের অনৈতিক হয়রানী বা চাপ প্রয়োগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তবে যে বা যারাই করোনা যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যসেবীদের সঙ্গে এ ধরনের জঘন্য অমানবিক হয়রানি বা হেনস্থার সঙ্গে জড়িত, তাদের এ ধরনের কাজ এখনই বন্ধ করা দরকার। এ চরম কান্তিকালে এ ধরনের অনৈতিক হয়রানি বা আচরণ শুধু অনভিপ্রেত ও দুঃখজনকই নয়, এক ধরনের অপরাধও বটে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবশ্য এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার স্বাস্থ্যসেবীদের ৯৯৯ কল দিয়ে সাহায্য নিতে বলেছে এবং সরকারও এ ধরনের অমানবিক হয়রানির সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।

তবে স্বাস্থ্যসেবীদের সঙ্গে এ ধরনের জঘন্য অমানবিক আচরণকারীদের প্রতিহত করতে হলে সরকারের সঙ্গে সঙ্গে সকল সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। নিকটস্থ কোথাও কোন স্বাস্থ্যসেবীদের সঙ্গে এ ধরনের হযরানি বা হেনস্থার ঘটনা অবহিত হলে সঙ্গে সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করতে হবে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবীদের সক্রিয় রাখতে হবে, তাদের মনোবল শক্ত রাখার জন্য সাহস যোগাতে হবে এবং এক্ষেত্রে সকলের সার্বিক সহযোগিতা দরকার। সুতরাং আসুন আমরা নিজেরা স্বাস্থ্যসেবীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করি, তাদেরকে হয়রানি করা থেকে নিজে বিরত থাকি এবং তাদের বসতবাড়ীতে যারা হয়রানি করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এগিয়ে আসি।

মো. জিল্লুর রহমান

সতিশ সরকার রোড,

গেণ্ডারিয়া, ঢাকা

আরও খবর

বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০ , ৯ বৈশাখ ১৪২৭, ২৭ শাবান ১৪৪১

স্বাস্থ্যসেবীদের বসতবাড়িতে হয়রানি বন্ধ করুন

বাংলাদেশ হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও টেকনিশিয়ান সংক্রমিত হয়ে আইসোলেশনে আছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবীরা এ কান্তিকালে অনেক ঝুঁকি নিয়ে করোনা প্রতিরোধের কাজ করছে। তাদের এ ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু অত্যন্ত মানবিক এ কাজকে অনেকে করোনা যুদ্ধ হিসাবে বিবেচনা করছে। সরকারও এ সমস্ত কর্মীকে করোনা যোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তাদের সহযোগিতা করা ও তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকদের মানবিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

কিন্তু অনেক গণমাধ্যম ও সোসাল মিডিয়ায় উদ্বেগজনক খবর বেরিয়েছে, যে সমস্ত স্বাস্থ্যসেবী চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও টেকনিশিয়ান বিভিন্ন হাসপাতালে করোনাভাইরাসে সংক্রামিত রোগীদের সেবা দিচ্ছেন বা দিয়ে যাচ্ছেন, তারা তাদের আবাসিক বসতবাড়িতে বিভিন্নভাবে হয়রানি বা হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। তাদের পরিবার ও তাদের সদস্যদের সঙ্গেও সামাজিক বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে, দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে বা বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। কোন কোন এলাকার বাড়ি বা ফ্লাটের মালিক তাদের বাড়ি ছাড়ার নোটিস দিচ্ছেন বা অন্যভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন। অনেকের বাসায় আবার তালা ঝুলিয়েও দেয়া হচ্ছে। অনেককে বাড়িতে আসতে নিষেধ করে দেওয়া হচ্ছে। অনেক বাড়ি বা ফ্লাটের মালিক অবশ্য বলছেন, তারা অন্য ভাড়াটিয়া বা পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশীদের চাপে বাধ্য হয়ে এ ধরণের অনৈতিক হয়রানী বা চাপ প্রয়োগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তবে যে বা যারাই করোনা যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যসেবীদের সঙ্গে এ ধরনের জঘন্য অমানবিক হয়রানি বা হেনস্থার সঙ্গে জড়িত, তাদের এ ধরনের কাজ এখনই বন্ধ করা দরকার। এ চরম কান্তিকালে এ ধরনের অনৈতিক হয়রানি বা আচরণ শুধু অনভিপ্রেত ও দুঃখজনকই নয়, এক ধরনের অপরাধও বটে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবশ্য এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার স্বাস্থ্যসেবীদের ৯৯৯ কল দিয়ে সাহায্য নিতে বলেছে এবং সরকারও এ ধরনের অমানবিক হয়রানির সঙ্গে যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।

তবে স্বাস্থ্যসেবীদের সঙ্গে এ ধরনের জঘন্য অমানবিক আচরণকারীদের প্রতিহত করতে হলে সরকারের সঙ্গে সঙ্গে সকল সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। নিকটস্থ কোথাও কোন স্বাস্থ্যসেবীদের সঙ্গে এ ধরনের হযরানি বা হেনস্থার ঘটনা অবহিত হলে সঙ্গে সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করতে হবে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবীদের সক্রিয় রাখতে হবে, তাদের মনোবল শক্ত রাখার জন্য সাহস যোগাতে হবে এবং এক্ষেত্রে সকলের সার্বিক সহযোগিতা দরকার। সুতরাং আসুন আমরা নিজেরা স্বাস্থ্যসেবীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করি, তাদেরকে হয়রানি করা থেকে নিজে বিরত থাকি এবং তাদের বসতবাড়ীতে যারা হয়রানি করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এগিয়ে আসি।

মো. জিল্লুর রহমান

সতিশ সরকার রোড,

গেণ্ডারিয়া, ঢাকা