রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের হাতে থাকল না

চিররঞ্জন সরকার

বৈশ্বিক মহামারীর এ ক্রান্তিলগ্নে যখন সাধারণ মানুষের পাশে থাকার কথা রাজনীতিবিদদের, তখন তারা ক্রমেই ‘নিখোঁজ’ ও অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণ নিয়ে লুটপাটের ঘটনা অবশ্য রাজনীতিবিদদের অযোগ্যতাকেই নতুনভাবে তুলে ধরেছে। তারা শুধুই খেতে চান, কাঙালের ধনও চুরি করতে চান। তাই তো ক্রমেই তারা অপাঙ্ক্তেয় হয়ে উঠছেন!

এদিকে জনবিচ্ছিন্ন ও দুর্নীতি গোপনে সিদ্ধহস্ত চতুর আমলারা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। যাদের কাজের কোনো জবাবদিহি নেই, স্বচ্ছতা নেই, তারাই আজ রাষ্ট্রের চালিকাশক্তিতে পরিণত হচ্ছেন।

সর্বশেষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য প্রতি জেলায় একজন করে সচিবকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। সোমবার এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কেন এটা করতে হলো? স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজকে নিয়ে কমিটি গঠন করে সেই কমিটির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের কাজটা কী তাতে এগুবে?

নাকি অতিদুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাদের এড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেষ ভরসা হিসেবে আমলাদেরই মন্দের ভালো হিসেবে বেছে নিলেন? আমলাদের ওপরই যদি ভরসা করবেন, তাহলে সেনাবাহিনীকে কেন বিবেচনায় নেয়া হলো না? ত্রাণ বিতরণে তাদের যুক্ত করার দাবিটি তো নানা মহল থেকেই উঠেছিল। তবে কি তারা অনিচ্ছুক? নাকি এর পেছনেও আছে ভিন্ন কোন রাজনীতি?

এই সরকারের দর্শন, মতলব, আকাক্সক্ষা-কোন কিছুই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না! সংকট মোকাবিলার কোন মরিয়া প্রয়াস এখনও চোখে পড়েনি। যা চলছে, যেভাবে চলছে, সেটাকেই ‘সহি’ মনে করা হচ্ছে। যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে এত এত অদক্ষতা, অযোগ্যতা, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাদেরও সরিয়ে দেয়া হচ্ছে না! মানবিক দুর্যোগে সরকার এই লোকগুলোর প্রতি কী অসীম মানবিকতা প্রদর্শন করে চলেছে!

ভেতরের সব গলদ ঢেকে রেখে জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে দেশ পরিচালনা করা হচ্ছে, যা শুধুই আরও বেশি অব্যবস্থাপনা আর নৈরাজ্যকেই আমন্ত্রণ জানাচ্ছে! সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতা, আর সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে একদিকে বিপুল মানুষের করোনায় মৃত্যুর আশঙ্কা, অন্যদিকে গরিব মানুষের না-খেয়ে মরার বাস্তবতা তৈরি করে দেশকে নিশ্চিত জাহান্নামের পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

তবে কি আমরা বেঁচে আছি আসন্ন মৃত্যু-উৎসব দেখার জন্য? ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই’ এই আপ্তবাক্য আওড়ানোর জন্য?

ফেসবুক থেকে

বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২০ , ১০ বৈশাখ ১৪২৭, ২৮ শাবান ১৪৪১

রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের হাতে থাকল না

চিররঞ্জন সরকার

বৈশ্বিক মহামারীর এ ক্রান্তিলগ্নে যখন সাধারণ মানুষের পাশে থাকার কথা রাজনীতিবিদদের, তখন তারা ক্রমেই ‘নিখোঁজ’ ও অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণ নিয়ে লুটপাটের ঘটনা অবশ্য রাজনীতিবিদদের অযোগ্যতাকেই নতুনভাবে তুলে ধরেছে। তারা শুধুই খেতে চান, কাঙালের ধনও চুরি করতে চান। তাই তো ক্রমেই তারা অপাঙ্ক্তেয় হয়ে উঠছেন!

এদিকে জনবিচ্ছিন্ন ও দুর্নীতি গোপনে সিদ্ধহস্ত চতুর আমলারা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। যাদের কাজের কোনো জবাবদিহি নেই, স্বচ্ছতা নেই, তারাই আজ রাষ্ট্রের চালিকাশক্তিতে পরিণত হচ্ছেন।

সর্বশেষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য প্রতি জেলায় একজন করে সচিবকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। সোমবার এ বিষয়ে আদেশ জারি করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কেন এটা করতে হলো? স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজকে নিয়ে কমিটি গঠন করে সেই কমিটির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের কাজটা কী তাতে এগুবে?

নাকি অতিদুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাদের এড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেষ ভরসা হিসেবে আমলাদেরই মন্দের ভালো হিসেবে বেছে নিলেন? আমলাদের ওপরই যদি ভরসা করবেন, তাহলে সেনাবাহিনীকে কেন বিবেচনায় নেয়া হলো না? ত্রাণ বিতরণে তাদের যুক্ত করার দাবিটি তো নানা মহল থেকেই উঠেছিল। তবে কি তারা অনিচ্ছুক? নাকি এর পেছনেও আছে ভিন্ন কোন রাজনীতি?

এই সরকারের দর্শন, মতলব, আকাক্সক্ষা-কোন কিছুই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না! সংকট মোকাবিলার কোন মরিয়া প্রয়াস এখনও চোখে পড়েনি। যা চলছে, যেভাবে চলছে, সেটাকেই ‘সহি’ মনে করা হচ্ছে। যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে এত এত অদক্ষতা, অযোগ্যতা, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাদেরও সরিয়ে দেয়া হচ্ছে না! মানবিক দুর্যোগে সরকার এই লোকগুলোর প্রতি কী অসীম মানবিকতা প্রদর্শন করে চলেছে!

ভেতরের সব গলদ ঢেকে রেখে জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে দেশ পরিচালনা করা হচ্ছে, যা শুধুই আরও বেশি অব্যবস্থাপনা আর নৈরাজ্যকেই আমন্ত্রণ জানাচ্ছে! সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতা, আর সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে একদিকে বিপুল মানুষের করোনায় মৃত্যুর আশঙ্কা, অন্যদিকে গরিব মানুষের না-খেয়ে মরার বাস্তবতা তৈরি করে দেশকে নিশ্চিত জাহান্নামের পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

তবে কি আমরা বেঁচে আছি আসন্ন মৃত্যু-উৎসব দেখার জন্য? ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই’ এই আপ্তবাক্য আওড়ানোর জন্য?

ফেসবুক থেকে