মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
মেগাসিটি ঢাকার জনসংখ্যা আজ ২ কোটির মতো। সর্বশেষ তথ্য মতে জানা যায়, ঢাকা এবং এর আশেপাশের চারটি সিটি করপোরেশন (ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর) এবং দুটি বড় শহর (সাভার ও কেরানীগঞ্জ), চারটি সেনানিবাস (ঢাকা, মিরপুর, সাভার ও রাজেন্দ্রপুর) এবং কয়েকটি ছোট শহর এলাকা মিলিয়ে আজ ঢাকা মেগাসিটির মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ। এখানে গত বিশ বছরে মানুষ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। তাই রাজধানী ঢাকা আজ মেগাসিটি। কেননা জাতিসংঘের বসতিবিষয়ক সংস্থা ইউএনহ্যাবিট্যাটের মতে, কোন শহরের জনসংখ্যা ১ কোটির বেশি হলেই তাকে মেগাসিটি বলা হয়। আরবিবিএস ও ইউএনএফবিএ বলছে, ঢাকা মেগাসিটি দেশের সবচেয়ে বড় পুঞ্জীভূত নগর এলাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের পরিসংখ্যানে আরও জানা যায়, প্রতিদিন ঢাকায় নতুন ১ হাজার ৭০০ মানুষ যোগ হচ্ছে। আর পুরো বাংলাদেশে বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ হলেও ঢাকা মেগাসিটিতে এ হার ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। এমনকি এ হার মহানগরীর কোথাও প্রায় ২০ শতাংশের বেশি। দেশের বেশিরভাগ মানুষ আজ রাজধানীমুখী। মফস্বল শহরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল। ভালো লেখাপড়া এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পেতে উচ্চ ও উচ্চ মধ্যবিত্তেরা রাজধানীতে বসবাসে নিরাপদ বোধ করেন। ভালো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, উন্নতমানের হাসপাতাল, ক্লিনিক সবই রয়েছে রাজধানীতে। দেশের প্রায় সব অফিসের সদর দপ্তর রাজধানীতে থাকায় অন্যান্য শহর, গ্রামগঞ্জের মানুষকে দাপ্তরিক কাজেও ছুটে আসতে হয় এখানে। গ্রামগঞ্জ, ছোট্টশহরে তেমন কোন কাজকর্ম নেই। দেশজুড়ে বাড়তি জনসংখ্যার চাপে চাষযোগ্য জমি কমে গেছে, কৃষক হয়েছে কর্মহীন। নদনদীর জল শুকিয়ে গেছে। পানি দূষণের কারণে অবশিষ্ট জলাধার আজ মাছশূন্য।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জেলে সম্প্রদায় আজ বেকার। নিম্নবিত্তের মানুষ জীবিকার তাগিদে ছুটে আসছেন ঢাকায়। পৈতৃক ভিটামাটি ছেড়ে ঠাঁই করে নেবার একমাত্র ভরসাস্থল রাজধানী ঢাকা শহর। সেখানে ফুটপাত আছে। রেলস্টেশনে বা লঞ্চ টার্মিনালে বউ বাচ্চা নিয়ে গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে বাঁচার নিরন্তর প্রচেষ্টা। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিত্য নতুন চাহিদা সামাল দিতে ঢাকায় অবিরাম গড়ে উঠছে বৈধ-অবৈধ স্থাপনা, বাজারঘাট। দিনদিন বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। কিন্তু রাস্তাঘাটের পরিধি তেমনটা বাড়ছে না। মোটভূমির মোট ২৫ শতাংশ রাস্তার বদলে এখন আছে অনেক কম। অতটুকু রাস্তাও চলে যাচ্ছে হকারদের দখলে। জীবন-জীবিকার তাগিদে ফুটপাতে বসছে পণ্যের পসরা। দিনে দিনে যানজট নিচ্ছে এক ভয়াবহ রূপ। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হিমসিম খাচ্ছেন ঢাকাবাসী। জনসংখ্যার ভারে আর পরিবেশ দূষণে রাজধানী ঢাকার প্রকৃতি আজ ভারাক্রান্ত, নগরবাসীর জীবন দুর্বিষহ। দুঃসহ গরমের মাঝে বিদ্যুৎ ও পানি সংকটে প্রাণপ্রায় ওষ্ঠাগত। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তি জনজীবনে গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে। শহরজুড়ে শুধু ইট-পাথরের তৈরি ভবনের আড়ালে রুদ্ধ আলো-বাতাস। তৈরি হচ্ছে ফ্লাইওভার, দিনরাত চলছে কাজ। যানবাহন চলছে অবিরাম, যানজটে আটকেপড়া অসহায় মানুষের ছবি। যন্ত্র দানবের বিকট শব্দে দুর্বিষহ নগর জীবন।
৪০০ বছরের পুরোনো এ শহর বাংলাদেশের রাজধানী হয়েছে আজ প্রায় পাঁচ দশক। এ ক’বছরে কেমন বদলে গেছে শহরটা! স্বাচ্ছন্দ্যে ডুব সাঁতার খেলার মতো টলটলে নীলজলে ভরা প্রিয় বুড়িগঙ্গার জলে আজ কালোরঙের শুধু বিষ। দেখতে দেখতে হারিয়ে গেল ঢাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় ৩০টি খালের টলমল স্রোতধারা। যান্ত্রিকতার দুঃসহ ডামাডোলে বিবর্ণ সেদিনের সবুজ শ্যামল ঢাকা মহানগরী। প্রতিদিনের যানজট, জলাবদ্ধতা, ভয়াবহ বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণে জনজীবন দুর্বিসহ। ইট-পাথরের তৈরি উত্তপ্ত সুউচ্চ ভবনের চাপে বাতাস চলাচলের ন্যূনতম স্থান নেই। নিঃশ্বাস নেয়ার মতো অক্সিজেনের পড়েছে অভাব। এ মহানগরীতে এতটুকু নিঃশ্বাস নেয়ার মতো নির্মল বাতাস নেই। স্নিগ্ধ রেসকোর্স, রমনাবাগান কেমন ফ্যাকাসে, শ্রীহীন। পত্রপল্লবে, ফুলেফলে জ্বালানি দহনের পাতায়পাতায় কালচে দাগ। সেখানে মানুষের পদচারণায় নেই উচ্ছ্বাস। রেলস্টেশন, টার্মিনালে ছিন্নমূল মানুষের ভিড়। সারা রাজধানী চাপা পড়ে গেছে ইট-পাথরে গাঁথা বিশাল বিশাল ভবন নামের আবদ্ধ খাঁচায়। এখানে শিশু রাজা নালা গলিয়ে এতটুকু আকাশ দেখার সুযোগ পায় না। ওদের জন্য খোলা মাঠ নেই। খেলার জন্য নেই সামান্যতম জায়গা।
স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছরে রাজধানী শহরের পরিধি বেড়েছে অনেক। দেশে মানুষ বাড়বে, সময়ের প্রয়োজনে বাড়বে নগর অবকাঠামো, যানবাহন। কিন্তু তার জন্য থাকবে সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনা। দেশে আজ নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল। এ সবই আশার কথা। যে অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে আজ রাজধানী মেগাসিটি ও এর আশেপাশের এ দৈন্যদশা তাকে ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই। সবচেয়ে জরুরি কর্মসংস্থানের বিকেন্দ্রীকরণ। ঢাকার বাইরে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে সেখানে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাদের বাসস্থান ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবাকে রাজধানীর বাইরের শহর এমনকি গ্রামগঞ্জে পৌঁছে দিতে হবে। এ লক্ষ্যে ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ গড়ে তুলে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। উন্নতমানের হাসপাতাল, ক্লিনিক স্থাপনসহ গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত করতে পারলে মানুষ ঢাকার বাইরে বসবাসে উৎসাহী হবে। গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানি সরবাহও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করে তুলতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়াতে হবে পরিসেবার মান। দেশব্যাপী সবুজায়ন প্রক্রিয়াকে জোরদার করতে হবে। বাড়াতে হবে জলাধারের পরিমাণ। ঢাকায় যানবাহনের চাপ কমাতে চারপাশে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করতে হবে। রাজধানী ঢাকা থেকে অন্যান্য শহরে গমনা গমনের পথ সুগম করা তোলাও জরুরি।
সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে মানুষ ঢাকা থেকে চলে গেছে বাইরে। যারা ঢাকায় আছেন তারাও আজ গৃহবন্দী। রাস্তাঘাট আজ ফাঁকা। যানবাহন নেই। নেই বাতাসে জ্বালানি দহনের উৎকট গন্ধ। নেই শব্দ দূষণও। অথচ মানুষ বসবাসের মধ্যেও শহরকে দূষণমুক্ত রাখা যায়। এ জন্য প্রয়োজন ব্যবস্থাপনা আর মানুষের সচেতনতা। ১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ধরিত্রী দিবসে প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ গ্রাম, শহর ও আশেপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রেখে গোটা বিশ্বকে বাসযোগ্য করে তোলায় অঙ্গীকারাবদ্ধ।
শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০ , ১১ বৈশাখ ১৪২৭, ২৯ শাবান ১৪৪
মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ
মেগাসিটি ঢাকার জনসংখ্যা আজ ২ কোটির মতো। সর্বশেষ তথ্য মতে জানা যায়, ঢাকা এবং এর আশেপাশের চারটি সিটি করপোরেশন (ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর) এবং দুটি বড় শহর (সাভার ও কেরানীগঞ্জ), চারটি সেনানিবাস (ঢাকা, মিরপুর, সাভার ও রাজেন্দ্রপুর) এবং কয়েকটি ছোট শহর এলাকা মিলিয়ে আজ ঢাকা মেগাসিটির মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ। এখানে গত বিশ বছরে মানুষ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। তাই রাজধানী ঢাকা আজ মেগাসিটি। কেননা জাতিসংঘের বসতিবিষয়ক সংস্থা ইউএনহ্যাবিট্যাটের মতে, কোন শহরের জনসংখ্যা ১ কোটির বেশি হলেই তাকে মেগাসিটি বলা হয়। আরবিবিএস ও ইউএনএফবিএ বলছে, ঢাকা মেগাসিটি দেশের সবচেয়ে বড় পুঞ্জীভূত নগর এলাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের পরিসংখ্যানে আরও জানা যায়, প্রতিদিন ঢাকায় নতুন ১ হাজার ৭০০ মানুষ যোগ হচ্ছে। আর পুরো বাংলাদেশে বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ হলেও ঢাকা মেগাসিটিতে এ হার ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। এমনকি এ হার মহানগরীর কোথাও প্রায় ২০ শতাংশের বেশি। দেশের বেশিরভাগ মানুষ আজ রাজধানীমুখী। মফস্বল শহরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল। ভালো লেখাপড়া এবং উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পেতে উচ্চ ও উচ্চ মধ্যবিত্তেরা রাজধানীতে বসবাসে নিরাপদ বোধ করেন। ভালো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, উন্নতমানের হাসপাতাল, ক্লিনিক সবই রয়েছে রাজধানীতে। দেশের প্রায় সব অফিসের সদর দপ্তর রাজধানীতে থাকায় অন্যান্য শহর, গ্রামগঞ্জের মানুষকে দাপ্তরিক কাজেও ছুটে আসতে হয় এখানে। গ্রামগঞ্জ, ছোট্টশহরে তেমন কোন কাজকর্ম নেই। দেশজুড়ে বাড়তি জনসংখ্যার চাপে চাষযোগ্য জমি কমে গেছে, কৃষক হয়েছে কর্মহীন। নদনদীর জল শুকিয়ে গেছে। পানি দূষণের কারণে অবশিষ্ট জলাধার আজ মাছশূন্য।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জেলে সম্প্রদায় আজ বেকার। নিম্নবিত্তের মানুষ জীবিকার তাগিদে ছুটে আসছেন ঢাকায়। পৈতৃক ভিটামাটি ছেড়ে ঠাঁই করে নেবার একমাত্র ভরসাস্থল রাজধানী ঢাকা শহর। সেখানে ফুটপাত আছে। রেলস্টেশনে বা লঞ্চ টার্মিনালে বউ বাচ্চা নিয়ে গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে বাঁচার নিরন্তর প্রচেষ্টা। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিত্য নতুন চাহিদা সামাল দিতে ঢাকায় অবিরাম গড়ে উঠছে বৈধ-অবৈধ স্থাপনা, বাজারঘাট। দিনদিন বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। কিন্তু রাস্তাঘাটের পরিধি তেমনটা বাড়ছে না। মোটভূমির মোট ২৫ শতাংশ রাস্তার বদলে এখন আছে অনেক কম। অতটুকু রাস্তাও চলে যাচ্ছে হকারদের দখলে। জীবন-জীবিকার তাগিদে ফুটপাতে বসছে পণ্যের পসরা। দিনে দিনে যানজট নিচ্ছে এক ভয়াবহ রূপ। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হিমসিম খাচ্ছেন ঢাকাবাসী। জনসংখ্যার ভারে আর পরিবেশ দূষণে রাজধানী ঢাকার প্রকৃতি আজ ভারাক্রান্ত, নগরবাসীর জীবন দুর্বিষহ। দুঃসহ গরমের মাঝে বিদ্যুৎ ও পানি সংকটে প্রাণপ্রায় ওষ্ঠাগত। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তি জনজীবনে গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে। শহরজুড়ে শুধু ইট-পাথরের তৈরি ভবনের আড়ালে রুদ্ধ আলো-বাতাস। তৈরি হচ্ছে ফ্লাইওভার, দিনরাত চলছে কাজ। যানবাহন চলছে অবিরাম, যানজটে আটকেপড়া অসহায় মানুষের ছবি। যন্ত্র দানবের বিকট শব্দে দুর্বিষহ নগর জীবন।
৪০০ বছরের পুরোনো এ শহর বাংলাদেশের রাজধানী হয়েছে আজ প্রায় পাঁচ দশক। এ ক’বছরে কেমন বদলে গেছে শহরটা! স্বাচ্ছন্দ্যে ডুব সাঁতার খেলার মতো টলটলে নীলজলে ভরা প্রিয় বুড়িগঙ্গার জলে আজ কালোরঙের শুধু বিষ। দেখতে দেখতে হারিয়ে গেল ঢাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় ৩০টি খালের টলমল স্রোতধারা। যান্ত্রিকতার দুঃসহ ডামাডোলে বিবর্ণ সেদিনের সবুজ শ্যামল ঢাকা মহানগরী। প্রতিদিনের যানজট, জলাবদ্ধতা, ভয়াবহ বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণে জনজীবন দুর্বিসহ। ইট-পাথরের তৈরি উত্তপ্ত সুউচ্চ ভবনের চাপে বাতাস চলাচলের ন্যূনতম স্থান নেই। নিঃশ্বাস নেয়ার মতো অক্সিজেনের পড়েছে অভাব। এ মহানগরীতে এতটুকু নিঃশ্বাস নেয়ার মতো নির্মল বাতাস নেই। স্নিগ্ধ রেসকোর্স, রমনাবাগান কেমন ফ্যাকাসে, শ্রীহীন। পত্রপল্লবে, ফুলেফলে জ্বালানি দহনের পাতায়পাতায় কালচে দাগ। সেখানে মানুষের পদচারণায় নেই উচ্ছ্বাস। রেলস্টেশন, টার্মিনালে ছিন্নমূল মানুষের ভিড়। সারা রাজধানী চাপা পড়ে গেছে ইট-পাথরে গাঁথা বিশাল বিশাল ভবন নামের আবদ্ধ খাঁচায়। এখানে শিশু রাজা নালা গলিয়ে এতটুকু আকাশ দেখার সুযোগ পায় না। ওদের জন্য খোলা মাঠ নেই। খেলার জন্য নেই সামান্যতম জায়গা।
স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছরে রাজধানী শহরের পরিধি বেড়েছে অনেক। দেশে মানুষ বাড়বে, সময়ের প্রয়োজনে বাড়বে নগর অবকাঠামো, যানবাহন। কিন্তু তার জন্য থাকবে সুষ্ঠু নগর পরিকল্পনা। দেশে আজ নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল। এ সবই আশার কথা। যে অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে আজ রাজধানী মেগাসিটি ও এর আশেপাশের এ দৈন্যদশা তাকে ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই। সবচেয়ে জরুরি কর্মসংস্থানের বিকেন্দ্রীকরণ। ঢাকার বাইরে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে সেখানে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাদের বাসস্থান ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবাকে রাজধানীর বাইরের শহর এমনকি গ্রামগঞ্জে পৌঁছে দিতে হবে। এ লক্ষ্যে ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ গড়ে তুলে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। উন্নতমানের হাসপাতাল, ক্লিনিক স্থাপনসহ গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত করতে পারলে মানুষ ঢাকার বাইরে বসবাসে উৎসাহী হবে। গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানি সরবাহও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করে তুলতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়াতে হবে পরিসেবার মান। দেশব্যাপী সবুজায়ন প্রক্রিয়াকে জোরদার করতে হবে। বাড়াতে হবে জলাধারের পরিমাণ। ঢাকায় যানবাহনের চাপ কমাতে চারপাশে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করতে হবে। রাজধানী ঢাকা থেকে অন্যান্য শহরে গমনা গমনের পথ সুগম করা তোলাও জরুরি।
সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে মানুষ ঢাকা থেকে চলে গেছে বাইরে। যারা ঢাকায় আছেন তারাও আজ গৃহবন্দী। রাস্তাঘাট আজ ফাঁকা। যানবাহন নেই। নেই বাতাসে জ্বালানি দহনের উৎকট গন্ধ। নেই শব্দ দূষণও। অথচ মানুষ বসবাসের মধ্যেও শহরকে দূষণমুক্ত রাখা যায়। এ জন্য প্রয়োজন ব্যবস্থাপনা আর মানুষের সচেতনতা। ১৯৭০ সালের ২২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ধরিত্রী দিবসে প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ গ্রাম, শহর ও আশেপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রেখে গোটা বিশ্বকে বাসযোগ্য করে তোলায় অঙ্গীকারাবদ্ধ।