পোশাক কারখানা খোলার আগে যেসব বিষয় নিয়ে ভাবা প্রয়োজন

সাঈদ চৌধুরী

আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে পোশাক শিল্পগুলোতে আবার কাজ শুরু করা। সুতরাং কতদিন আমরা এগুলো বন্ধ রাখতে পারব এটাও বড় একটি প্রশ্ন। একদিকে অর্থনীতি এবং অন্যদিকে করোনাভাইরাসের মতো বিপর্যয়! সব কিছু মিলে আমরা যে ইচ্ছে করলেও বসে থাকতে পারব না তা কিন্তু স্পষ্টই। কারণ ইতোমধ্যেই বলা হচ্ছে এখন অর্থনীতির চাকা যেভাবে থেমে আছে তাতে করে জিডিপি অর্ধেক পর্যন্ত কমে যেতে পারে। যদি তাই হয় তবে করোনার মতো বিপর্যয়ের পরও কিছু কিছু কারখানা চালু করতেই হবে। তাছাড়া শুধু পোশাক শিল্প নয় এর সঙ্গে অনেক শিল্পও চালু করার প্রয়োজন হয়ে পড়বে। দেশকে বাঁচানোর স্বার্থে যখন আমাদের সব শিল্প খোলার প্রয়োজন পড়বে তখন অনেকগুলো বিষয় কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে।

সবার আগে যখন স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ব্যাপারটিই আসবে তখন সে বিষয়টিই সবার প্রথম আলোচনা করা প্রয়োজন। যেহেতু এই বন্ধের সময় সব শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে সুতরাং এদের নিয়ে আসাটা বড় চ্যালেঞ্জ। নিয়ে আসার আগেই যে কাজটি করতে হবে তা হলো এদের সবার করোনার টেস্ট সম্পন্ন করা। যখন সবার করোনা টেস্ট সম্পন্ন হয়ে যাবে তখন সরকার নির্ধারিত বাসের মধ্যে একটি ফ্যাক্টরির সবাই একই দিনে চলে আসবে। যখন তারা তাদের ফ্যাক্টরিতে যোগদানের জন্য চলে আসবে তখন থেকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবে। অর্থাৎ যদি আগামী মাসের ১০ তারিখ ফ্যাক্টরি খুলতে হয় তবে এ মাসের ২৫ তারিখের মধ্যেই তাদের নিয়ে আসতে হবে এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

ফ্যাক্টরিগুলোতে স্ক্রিনিং ব্যবস্থা শতভাগ করতে হবে। ঢোকার সময় যাতে প্রতিজন শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবাণুনাশক বক্সের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে পারে ও ডিজিটাল থার্মোমিটারের মাধ্যমে তাপমাত্রা মাপতে পারে এজন্য গেটেই জীবাণুনাশক বক্স তৈরি করতে হবে। ভেতরে প্রবেশের পর হাত ধুয়ে নিতে হবে এবং সবারই হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে প্রতিদিনের মাস্ক যেন ধোয়া ও পরিচ্ছন্ন হয় এবং গ্লাভসগুলো যাতে নতুন হয়। ফ্লোরগুলোতে দাগাঙ্কিত করে দিতে হবে যাতে তারা এক পথে ঢুকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে অন্য পথে বের হয়ে যেতে পারে। প্রতিটি ফ্যাক্টরিতেই একটি মেডিকেল টিম থাকবে। এ মেডিকেল টিমটি হবে দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগে থাকবে চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিতকরণ ও শ্রমিকদের এন্ট্রি পুরোপুরি সুরক্ষিতকরণ। আরেকটি ভাগ থাকবে সারাদিন কেউ যাতে কোন অনিয়ম অমান্য না করে সে বিষয়টি। প্রয়োজনে এক সিফট করে চালানোর ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এবং এক সিফট চালালে শ্রমিকরা ফ্যাক্টরিতেও অবস্থান করার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। তাতে করে কেউ বাইরে না গেলে করোনাভাইরাস সংক্রমন কমানো সম্ভব বলে মনে করি।

প্রতিটি ফ্যাক্টরির উচিত হবে পূর্ব নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া এতে করে পরে কোন ধরনের সমস্যা ঘটার সম্ভাবনা কমে যায়। আরেকটি বিষয় খুব লক্ষণীয় তা হলো স্ক্রিনিং যদি সঠিক না হয় তবে কখনই নিরাপত্তা সম্ভব নয়। অনেক টেম্পারেচার মাপার যন্ত্রটিই ক্যালিব্রেটেড থাকে না যার কারণে সঠিক রিডিং দেয় না আর এজন্য থার্মোমিটারটি ভালো করে চেক করে নেয়া প্রয়োজন।

অর্থনৈতিক দিকে খেয়াল রেখে হয়ত আমাদের কাজে যেতে হবে তবে সবার আগে জীবন তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি হতে হবে একেবারে সুক্ষরুপ। শিল্প মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে তারপর শিল্প কারখানা খোলার ব্যাপারে কাজ করবেন প্রত্যাশা এটাই।

[লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর]

শনিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২০ , ১১ বৈশাখ ১৪২৭, ১ রমাজান ১৪৪১

পোশাক কারখানা খোলার আগে যেসব বিষয় নিয়ে ভাবা প্রয়োজন

সাঈদ চৌধুরী

আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে পোশাক শিল্পগুলোতে আবার কাজ শুরু করা। সুতরাং কতদিন আমরা এগুলো বন্ধ রাখতে পারব এটাও বড় একটি প্রশ্ন। একদিকে অর্থনীতি এবং অন্যদিকে করোনাভাইরাসের মতো বিপর্যয়! সব কিছু মিলে আমরা যে ইচ্ছে করলেও বসে থাকতে পারব না তা কিন্তু স্পষ্টই। কারণ ইতোমধ্যেই বলা হচ্ছে এখন অর্থনীতির চাকা যেভাবে থেমে আছে তাতে করে জিডিপি অর্ধেক পর্যন্ত কমে যেতে পারে। যদি তাই হয় তবে করোনার মতো বিপর্যয়ের পরও কিছু কিছু কারখানা চালু করতেই হবে। তাছাড়া শুধু পোশাক শিল্প নয় এর সঙ্গে অনেক শিল্পও চালু করার প্রয়োজন হয়ে পড়বে। দেশকে বাঁচানোর স্বার্থে যখন আমাদের সব শিল্প খোলার প্রয়োজন পড়বে তখন অনেকগুলো বিষয় কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে।

সবার আগে যখন স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ব্যাপারটিই আসবে তখন সে বিষয়টিই সবার প্রথম আলোচনা করা প্রয়োজন। যেহেতু এই বন্ধের সময় সব শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে সুতরাং এদের নিয়ে আসাটা বড় চ্যালেঞ্জ। নিয়ে আসার আগেই যে কাজটি করতে হবে তা হলো এদের সবার করোনার টেস্ট সম্পন্ন করা। যখন সবার করোনা টেস্ট সম্পন্ন হয়ে যাবে তখন সরকার নির্ধারিত বাসের মধ্যে একটি ফ্যাক্টরির সবাই একই দিনে চলে আসবে। যখন তারা তাদের ফ্যাক্টরিতে যোগদানের জন্য চলে আসবে তখন থেকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবে। অর্থাৎ যদি আগামী মাসের ১০ তারিখ ফ্যাক্টরি খুলতে হয় তবে এ মাসের ২৫ তারিখের মধ্যেই তাদের নিয়ে আসতে হবে এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

ফ্যাক্টরিগুলোতে স্ক্রিনিং ব্যবস্থা শতভাগ করতে হবে। ঢোকার সময় যাতে প্রতিজন শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবাণুনাশক বক্সের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে পারে ও ডিজিটাল থার্মোমিটারের মাধ্যমে তাপমাত্রা মাপতে পারে এজন্য গেটেই জীবাণুনাশক বক্স তৈরি করতে হবে। ভেতরে প্রবেশের পর হাত ধুয়ে নিতে হবে এবং সবারই হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে প্রতিদিনের মাস্ক যেন ধোয়া ও পরিচ্ছন্ন হয় এবং গ্লাভসগুলো যাতে নতুন হয়। ফ্লোরগুলোতে দাগাঙ্কিত করে দিতে হবে যাতে তারা এক পথে ঢুকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে অন্য পথে বের হয়ে যেতে পারে। প্রতিটি ফ্যাক্টরিতেই একটি মেডিকেল টিম থাকবে। এ মেডিকেল টিমটি হবে দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগে থাকবে চিকিৎসা প্রদান নিশ্চিতকরণ ও শ্রমিকদের এন্ট্রি পুরোপুরি সুরক্ষিতকরণ। আরেকটি ভাগ থাকবে সারাদিন কেউ যাতে কোন অনিয়ম অমান্য না করে সে বিষয়টি। প্রয়োজনে এক সিফট করে চালানোর ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। এবং এক সিফট চালালে শ্রমিকরা ফ্যাক্টরিতেও অবস্থান করার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। তাতে করে কেউ বাইরে না গেলে করোনাভাইরাস সংক্রমন কমানো সম্ভব বলে মনে করি।

প্রতিটি ফ্যাক্টরির উচিত হবে পূর্ব নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া এতে করে পরে কোন ধরনের সমস্যা ঘটার সম্ভাবনা কমে যায়। আরেকটি বিষয় খুব লক্ষণীয় তা হলো স্ক্রিনিং যদি সঠিক না হয় তবে কখনই নিরাপত্তা সম্ভব নয়। অনেক টেম্পারেচার মাপার যন্ত্রটিই ক্যালিব্রেটেড থাকে না যার কারণে সঠিক রিডিং দেয় না আর এজন্য থার্মোমিটারটি ভালো করে চেক করে নেয়া প্রয়োজন।

অর্থনৈতিক দিকে খেয়াল রেখে হয়ত আমাদের কাজে যেতে হবে তবে সবার আগে জীবন তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি হতে হবে একেবারে সুক্ষরুপ। শিল্প মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে তারপর শিল্প কারখানা খোলার ব্যাপারে কাজ করবেন প্রত্যাশা এটাই।

[লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর]