অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল চিকিৎসক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ঢাকার শাহবাগের আইপিজিএমআরকে উন্নীত করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এই প্রাপ্তি আমাদের দেশের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। মেডিকেল উচ্চশিক্ষা উন্নত গবেষণার মাধ্যমে দেশের মানুষকে উন্নত বিশ্বের ন্যায় স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এ উদ্যেগ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এবার বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তেইশ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩০ এপ্রিল। ২০২০ এমন এক সময়ে যখন সারাবিশ্বসহ বাংলাদেশের জনগণ ঘরবন্দী বা লকডাউন একটি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র করোনায় প্রায় ৩০ লাখের বেশি লোক আক্রান্ত আর মৃত্যুর মিছিলেজোগ দিয়েছেন প্রায় ২ লাখের বেশি লাখ মানুষ।
চিকিৎসা শিক্ষায় স্নাতকোত্তর কোর্স প্রদান ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় শাহবাগ হোটেলের জায়গায় ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রির্সাচ (আইপিজিএমআর) প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণার দায়িত্ব প্রাপ্ত হলে এই প্রতিষ্ঠান ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা ছিল না। ডিগ্রি প্রদান করতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ২ লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক পূনর্বাসন ও উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দেশে চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা প্রবর্তন করে দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে আইপিজিএমআর প্রতিষ্ঠিত হয়। এদেশের মানুষের রক্তের প্রয়োজনে নিরাপদ রক্ত সরবরাহ ও নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য বঙ্গবন্ধু তৎকালীন আইপিজিএমআর এ প্রথম ব্লাড ব্যাংক স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে এই ব্লাড ব্যাংকের উদ্বোধন করেন, আজও বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে বিদ্যমান। বঙ্গবন্ধুই প্রথম এদেশের চিকিৎসকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাদের চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশের ছাত্র-যুবক, শিক্ষক-চিকিৎসক কৃষক-শ্রমিক-জনতাসহ সকল পেশার মানুষে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে বাংলদেশ স্বাধীন করেছিল। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি চক্রান্তে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে লক্ষ্যচ্যুত হয় বাংলাদেশ। আবার এদেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় অগণতান্ত্রিক সামরিক স্বৈরশাসন। স্বৈরতান্ত্রিক অপশাসনের ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে, স্বাস্থ্য খাত তার মধ্যে অন্যতম। স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার বঙ্গবন্ধু তা সংবিধানে সন্নিবেশিত করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বে তৎকালীন সময়ে দেশের ১৩টি সরকারি ও ৫টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং নিপসমসহ ০৫টি পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেশের চিকিৎসক শিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান উন্নয়নের যথেষ্ট ভূমিকা পালনে সক্ষম হচ্ছিল না। বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন দেশে একটি স্বতন্ত্র ও গবেষণা সমৃদ্ধ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও সকল মেডিক্যাল কলেজের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, ৬৯ এর ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দেওয়া ১১দফার মধ্যেও চিকিৎসকদের দাবির কথা উল্লেখ ছিল। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ মেডিক্যাল শিক্ষক সমিতি ফেহারেশনও আইপিজিএমআর শিক্ষক সমিতি একটি স্বতন্ত্র ও গবেষণাসমৃদ্ধ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। প্রত্যেকটি সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। বাঙ্গালীর নয়নের মনি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কোন সরকারই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশের চিকিৎসক সমাজ এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নে তাদের সকল প্রত্যাশা পূরণের ভরসাস্থলের সন্ধান পান। সংবিধান স্বীকৃত জনগণের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা এবং দেশের চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন আইপিজিএমআর কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত করার মধ্যে দিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রথম স্বতন্ত্র পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক এম এ কাদেরী স্যারের সঙ্গে এই নিবন্ধকার সে সময়ে ১ম প্রশাসনিক রেজিস্ট্রার হিসাবে কাজে সহায়তা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এদেশের চিকিৎসক সমাজের দীর্ঘ দিনের ন্যায্য দাবি যেমন বাস্তবায়ন হয়েছে, তেমনি এদশের উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অগ্রযাত্রার সূচনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম স্বতন্ত্র পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান চিকিৎসক সমাজ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চির দিন স্মরণ করবে।
বর্তমানে দেশে ৪টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় : জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ আন্তর্জাতিক মান অর্জন করে দেশের আপামর জনসাধারণের সুচিকিৎসায় নিয়োজিত হবেন এ আকাক্সক্ষা নিয়ে যে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরের মাথায় ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তণের পর কেবলমাত্র হীন রাজনৈতিক সংকীর্ণতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে আবারো আইপিজিএমআর করার উদ্যোগ নেয় বিএনপি-জামাত জোট সরকার। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করেছিলাম তাদের বিরুদ্ধে নানাবিধ মামলা হামলা করেছিল তৎকালীন সরকারের লেজুড়ভিত্তিক চিকিৎসক সংগঠন ড্যাব ও কর্মচারী গোষ্ঠী। এহেন ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা কর্মচারীসহ দেশের সকল পেশাজীবী ও আপামর জনসাধারণ তীব্র ক্ষোভ ও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
তীব্র আন্দোলনের ফলে বিএনপি-জামাত সরকার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবুও ক্ষোভের বশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলে সংক্ষেপে বিএসএমএমইউ লিখে পরিচিতি দেয়। এমনকি তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকা থেকে গাজীপুর, টুঙ্গিপাড়া বা অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার হীন উদ্যোগ গ্রহণ করে। এদেশের জনসাধারণের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আবারও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সেলেন্সে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের জন্য দেয়া হয় বারডেম সংলগ্ন বেতার ভবনের জমি ও হাসপাতালের উত্তর পার্শ্বের ১২ বিঘা জমির স্থায়ী বন্দোবস্ত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে ৫২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ফলে খুব দ্রুত নতুন কেবিন ব্লক সম্প্রসারণ, অনকোলজি ভবন, নতুন বহিঃবিভাগ, আধুনিক আইসিইউ, ওটি কমপ্লেক্স, মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এমএ কাদেরী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিরলস পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আধুনিক ও উন্নত মানের করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ভাইস চ্যান্সেলর এম এ কাদরী এর আমলে যে রেসিডেন্সি কোর্স চালু হয়। দেশের সকল চিকিৎসসা প্রতিষ্ঠানে রেসিডেন্সী প্রোগ্রাম চালু হওয়ায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর সকল ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে কতজন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন সে অনুসারে উচ্চশিক্ষার প্রসার দরকার। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে অনেক দুর অগ্রসর হয়েছে, বর্তমানে দেশের সকল মেডিক্যাল কলেজসহ সকল পোস্ট-গ্রাজুয়েট চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহকে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে দেশের সকল উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা ডিগ্রী ও কোর্সসমূহকে একই মানে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে দেশের উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন ও প্রসার ঘটেছে। একই সঙ্গে সেবার মান বেড়েছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অধ্যাপকদের প্রতিষ্ঠানিক বৈকালিক প্র্যাকটিস, ২৪ ঘণ্টা ল্যাবরেটরি সুবিধা চালুর মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষ স্বল্প অর্থ ব্যয় করে উন্নত বিশ্বের ন্যায় আধুনিক ও মান সম্পন্ন সেবা পাচ্ছে। জরুরী বিভাগ চালুকরা, শিক্ষক-চিকিৎসকদের ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা করা, শুধু মাত্র অপশন প্রদানকারী সকল চিকিৎসকদের প্রানোদনা ভাতা প্রদান, শিক্ষকদের যানবাহন প্রদান করা, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
বর্তমান প্রশাসনের প্রায় তিন বছর হতে চললো। এ সময়ের মধ্যে বেতার ভবনকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ ছিল। কনভেনশন সেন্টার চালু না হওয়ায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হল। ডরমিটরি চালু না হওয়ায় আসবাবসহ বিল্ডিং এর নির্মান ধংসের পথে। কোরিডোর সম্প্রসারন হলেও জরুরি বিভাগ চালু হোল না। এমনকি শিক্ষক চিকিৎসকের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার হয়নি। নতুন নিয়োগ কৃত চিকিৎসকদের কেউই জয়বাংলা বলে কিনা এ নিয়ে সংশয় আছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কর্ম এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন সময়ের দাবি।
সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কোরিয়া সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট কোরিয়া মৈত্রী বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে; যা এ সরকারের আরও একটি সফল্য।
উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান উন্নত চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সংযুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা সবার। সবাই মিলে যার যে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সফল হবেই।
সারা বিশ্বে করোনার এই দুর্যোগে সবকিছু স্থগির হওয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী, মহান স্বাধীনতা দিবস, মুজিবনগর দিবসসহ সকল জাতীয় অনুষ্ঠান এখন জনসমাগম এড়ানোর উদ্দেশ্যে বন্ধ করা হয়েছে। সারা বিশ্বে সকল জাতীয় অনুষ্ঠান ও বন্ধ রয়েছে।
আগামী বছর ৩০ এপ্রিল ২০২১ সালে আমরা আশা করি করোনা মুক্ত আবার এমন একটি সুন্দর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পাবো যখন কবির ভাষায় বলতে হয়Ñ
‘আবার জমবে মেলা, বটতলা হাটখোলা
অঘ্রাণে নবান্নের উৎসবে।’
মহান আল্লাহ তায়ালার কৃপায় আমরা করোনার ছোবল থেকে রক্ষা পাবো নিশ্চয়ই এবং এই দুর্যোগ কাটিয়ে আমরা করোনা বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে আবার সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবো। সঙ্গে সঙ্গে এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে একত্রে কাজ করব।
চিকিৎসা, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা ও উন্নত গবেষণার মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্য খাতকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে সক্ষম হব বলে আশা করি। এটাই হোক এ বছরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রত্যাশা।
[লেখক : সাবেক উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]
বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২০ , ১৬ বৈশাখ ১৪২৭, ৬ রমাজান ১৪৪১
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল চিকিৎসক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ঢাকার শাহবাগের আইপিজিএমআরকে উন্নীত করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এই প্রাপ্তি আমাদের দেশের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। মেডিকেল উচ্চশিক্ষা উন্নত গবেষণার মাধ্যমে দেশের মানুষকে উন্নত বিশ্বের ন্যায় স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এ উদ্যেগ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এবার বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তেইশ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩০ এপ্রিল। ২০২০ এমন এক সময়ে যখন সারাবিশ্বসহ বাংলাদেশের জনগণ ঘরবন্দী বা লকডাউন একটি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র করোনায় প্রায় ৩০ লাখের বেশি লোক আক্রান্ত আর মৃত্যুর মিছিলেজোগ দিয়েছেন প্রায় ২ লাখের বেশি লাখ মানুষ।
চিকিৎসা শিক্ষায় স্নাতকোত্তর কোর্স প্রদান ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় শাহবাগ হোটেলের জায়গায় ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রির্সাচ (আইপিজিএমআর) প্রতিষ্ঠিত হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা ও গবেষণার দায়িত্ব প্রাপ্ত হলে এই প্রতিষ্ঠান ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা ছিল না। ডিগ্রি প্রদান করতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ২ লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক পূনর্বাসন ও উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। দেশে চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা প্রবর্তন করে দেশের চিকিৎসা শিক্ষা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে আইপিজিএমআর প্রতিষ্ঠিত হয়। এদেশের মানুষের রক্তের প্রয়োজনে নিরাপদ রক্ত সরবরাহ ও নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য বঙ্গবন্ধু তৎকালীন আইপিজিএমআর এ প্রথম ব্লাড ব্যাংক স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে এই ব্লাড ব্যাংকের উদ্বোধন করেন, আজও বঙ্গবন্ধুর হাতের ছোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে বিদ্যমান। বঙ্গবন্ধুই প্রথম এদেশের চিকিৎসকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাদের চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশের ছাত্র-যুবক, শিক্ষক-চিকিৎসক কৃষক-শ্রমিক-জনতাসহ সকল পেশার মানুষে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে বাংলদেশ স্বাধীন করেছিল। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি চক্রান্তে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে লক্ষ্যচ্যুত হয় বাংলাদেশ। আবার এদেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় অগণতান্ত্রিক সামরিক স্বৈরশাসন। স্বৈরতান্ত্রিক অপশাসনের ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে, স্বাস্থ্য খাত তার মধ্যে অন্যতম। স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার বঙ্গবন্ধু তা সংবিধানে সন্নিবেশিত করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বে তৎকালীন সময়ে দেশের ১৩টি সরকারি ও ৫টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং নিপসমসহ ০৫টি পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেশের চিকিৎসক শিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান উন্নয়নের যথেষ্ট ভূমিকা পালনে সক্ষম হচ্ছিল না। বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন দেশে একটি স্বতন্ত্র ও গবেষণা সমৃদ্ধ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও সকল মেডিক্যাল কলেজের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে আসছিল। এখানে উল্লেখ্য যে, ৬৯ এর ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দেওয়া ১১দফার মধ্যেও চিকিৎসকদের দাবির কথা উল্লেখ ছিল। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ মেডিক্যাল শিক্ষক সমিতি ফেহারেশনও আইপিজিএমআর শিক্ষক সমিতি একটি স্বতন্ত্র ও গবেষণাসমৃদ্ধ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। প্রত্যেকটি সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। বাঙ্গালীর নয়নের মনি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কোন সরকারই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এদেশের চিকিৎসক সমাজ এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নে তাদের সকল প্রত্যাশা পূরণের ভরসাস্থলের সন্ধান পান। সংবিধান স্বীকৃত জনগণের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা এবং দেশের চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা ও সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন আইপিজিএমআর কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত করার মধ্যে দিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রথম স্বতন্ত্র পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক এম এ কাদেরী স্যারের সঙ্গে এই নিবন্ধকার সে সময়ে ১ম প্রশাসনিক রেজিস্ট্রার হিসাবে কাজে সহায়তা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এদেশের চিকিৎসক সমাজের দীর্ঘ দিনের ন্যায্য দাবি যেমন বাস্তবায়ন হয়েছে, তেমনি এদশের উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অগ্রযাত্রার সূচনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম স্বতন্ত্র পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান চিকিৎসক সমাজ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চির দিন স্মরণ করবে।
বর্তমানে দেশে ৪টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় : জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ আন্তর্জাতিক মান অর্জন করে দেশের আপামর জনসাধারণের সুচিকিৎসায় নিয়োজিত হবেন এ আকাক্সক্ষা নিয়ে যে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরের মাথায় ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তণের পর কেবলমাত্র হীন রাজনৈতিক সংকীর্ণতায় বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে আবারো আইপিজিএমআর করার উদ্যোগ নেয় বিএনপি-জামাত জোট সরকার। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করেছিলাম তাদের বিরুদ্ধে নানাবিধ মামলা হামলা করেছিল তৎকালীন সরকারের লেজুড়ভিত্তিক চিকিৎসক সংগঠন ড্যাব ও কর্মচারী গোষ্ঠী। এহেন ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা কর্মচারীসহ দেশের সকল পেশাজীবী ও আপামর জনসাধারণ তীব্র ক্ষোভ ও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
তীব্র আন্দোলনের ফলে বিএনপি-জামাত সরকার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবুও ক্ষোভের বশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলে সংক্ষেপে বিএসএমএমইউ লিখে পরিচিতি দেয়। এমনকি তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকা থেকে গাজীপুর, টুঙ্গিপাড়া বা অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার হীন উদ্যোগ গ্রহণ করে। এদেশের জনসাধারণের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আবারও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সেলেন্সে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের জন্য দেয়া হয় বারডেম সংলগ্ন বেতার ভবনের জমি ও হাসপাতালের উত্তর পার্শ্বের ১২ বিঘা জমির স্থায়ী বন্দোবস্ত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে ৫২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। ফলে খুব দ্রুত নতুন কেবিন ব্লক সম্প্রসারণ, অনকোলজি ভবন, নতুন বহিঃবিভাগ, আধুনিক আইসিইউ, ওটি কমপ্লেক্স, মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এমএ কাদেরী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিরলস পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আধুনিক ও উন্নত মানের করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ভাইস চ্যান্সেলর এম এ কাদরী এর আমলে যে রেসিডেন্সি কোর্স চালু হয়। দেশের সকল চিকিৎসসা প্রতিষ্ঠানে রেসিডেন্সী প্রোগ্রাম চালু হওয়ায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর সকল ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে কতজন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন সে অনুসারে উচ্চশিক্ষার প্রসার দরকার। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে অনেক দুর অগ্রসর হয়েছে, বর্তমানে দেশের সকল মেডিক্যাল কলেজসহ সকল পোস্ট-গ্রাজুয়েট চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহকে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে দেশের সকল উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা ডিগ্রী ও কোর্সসমূহকে একই মানে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে দেশের উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন ও প্রসার ঘটেছে। একই সঙ্গে সেবার মান বেড়েছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অধ্যাপকদের প্রতিষ্ঠানিক বৈকালিক প্র্যাকটিস, ২৪ ঘণ্টা ল্যাবরেটরি সুবিধা চালুর মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষ স্বল্প অর্থ ব্যয় করে উন্নত বিশ্বের ন্যায় আধুনিক ও মান সম্পন্ন সেবা পাচ্ছে। জরুরী বিভাগ চালুকরা, শিক্ষক-চিকিৎসকদের ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা করা, শুধু মাত্র অপশন প্রদানকারী সকল চিকিৎসকদের প্রানোদনা ভাতা প্রদান, শিক্ষকদের যানবাহন প্রদান করা, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
বর্তমান প্রশাসনের প্রায় তিন বছর হতে চললো। এ সময়ের মধ্যে বেতার ভবনকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা উচিৎ ছিল। কনভেনশন সেন্টার চালু না হওয়ায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হল। ডরমিটরি চালু না হওয়ায় আসবাবসহ বিল্ডিং এর নির্মান ধংসের পথে। কোরিডোর সম্প্রসারন হলেও জরুরি বিভাগ চালু হোল না। এমনকি শিক্ষক চিকিৎসকের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার হয়নি। নতুন নিয়োগ কৃত চিকিৎসকদের কেউই জয়বাংলা বলে কিনা এ নিয়ে সংশয় আছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কর্ম এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন সময়ের দাবি।
সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কোরিয়া সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট কোরিয়া মৈত্রী বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে; যা এ সরকারের আরও একটি সফল্য।
উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান উন্নত চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সংযুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা সবার। সবাই মিলে যার যে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সফল হবেই।
সারা বিশ্বে করোনার এই দুর্যোগে সবকিছু স্থগির হওয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী, মহান স্বাধীনতা দিবস, মুজিবনগর দিবসসহ সকল জাতীয় অনুষ্ঠান এখন জনসমাগম এড়ানোর উদ্দেশ্যে বন্ধ করা হয়েছে। সারা বিশ্বে সকল জাতীয় অনুষ্ঠান ও বন্ধ রয়েছে।
আগামী বছর ৩০ এপ্রিল ২০২১ সালে আমরা আশা করি করোনা মুক্ত আবার এমন একটি সুন্দর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পাবো যখন কবির ভাষায় বলতে হয়Ñ
‘আবার জমবে মেলা, বটতলা হাটখোলা
অঘ্রাণে নবান্নের উৎসবে।’
মহান আল্লাহ তায়ালার কৃপায় আমরা করোনার ছোবল থেকে রক্ষা পাবো নিশ্চয়ই এবং এই দুর্যোগ কাটিয়ে আমরা করোনা বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে আবার সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবো। সঙ্গে সঙ্গে এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে একত্রে কাজ করব।
চিকিৎসা, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা ও উন্নত গবেষণার মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্য খাতকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে সক্ষম হব বলে আশা করি। এটাই হোক এ বছরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রত্যাশা।
[লেখক : সাবেক উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়]