আগাম প্রস্তুতি হিসেবে খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার

জাতিসংঘ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বড় আকারের দুর্ভিক্ষ হতে পারে এবং এতে প্রায় তিন কোটি মানুষ অনাহারে প্রাণ হারাতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বর্তমানে যথেষ্ট খাদ্যের মজুদ রয়েছে। আগামীতেও যেন খাদ্যের কোন সংকট না হয় তাই সরকারি গুদামেও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে খাদ্যশস্য মজুত করছে সরকার। ইতোমধ্যে পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত দুই লাখ মেট্রিকটন চাল দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস হতে সংগ্রহ করছে সরকার। পাশাপাশি দেড় লাখ মেট্রিকটন গম দেশের বাইরে থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থ ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে করোনায় দেশে খাদ্য নিরাপত্তা থাকলেও প্রয়োজন বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ মে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে দুই লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের জন্য চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৭২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত হতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চাল ক্রয় খাতে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে এ চাল ক্রয় বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান ও নিয়মাচার যথাযথভাবে প্রতিপালনের শর্ত দেয়া হয়েছে। এর আগে রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে ইতোমধ্যেই দুই লাখ মেট্রিকটন গম কেনার সমঝোতা হয়েছে এবং জুলাইয়ের মধ্যে সে গম এসে পৌঁছাবে দেশে। ইতোমধ্যে রাশিয়া গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলেও ঘোষণার আগেই জি-টু-জি অর্থাৎ দুই দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল, ফলে গম যথাসময়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১২ মে পর্যন্ত সময়ে খাদ্যশস্যের সরকারি গুদামজাতকৃত মোট মজুত ১২ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে চাল ৯ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিকটন এবং গম ২ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিকটন। গত বছর একই সময়ে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য মজুত ছিল ১২ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিকটন। অর্থাৎ গত বছরের তুলানায় বর্তমানে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য ৩৪ হাজার মেট্রিকটন বেশি রয়েছে।

এছাড়া গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষকের ধানের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি এবং করোনা সময়কালে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, দেড় লাখ মেট্রিকটন আতপ চাল, ১০ লাখ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল, এবং ৭৫ হাজার মেট্রিকটন গমসহ ২০ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য কিনবে সরকার।

গত বছর ১৬ লাখ মেট্রিকটন কিনেছিল সরকার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর চার লাখ ২৫ হাজার মেট্রিকটন চল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত আরও দুই মেট্রিকটন চাল ও দুই মেট্রিকটন গম সংগ্রহ করছে সরকার। এদিকে গত আমন মৌসুমে এক কোটি ৫৫ লাখ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি বোরোতে আমরা দুই কোটি মেট্রিকটনের বেশি ফলন আশা করছে সরকার। তাই সংকট বা দানা জাতীয় খাবারের সংকট হবে না বলে আশা করছে সরকার। এছাড়া আলু, শাকসবজি, তেলবীজসহ বেশির ভাগ পণ্যেই বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফলে খাদ্যসংকটের কোন আশঙ্কা নেই। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, করোনার কারণে অন্তত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হবে। তারা কর্মহীন হবে এবং খাদ্যের সরবরাহ থাকলেও তা কেনার সামর্র্থ্য থাকবে না অনেকের। এ সময়ে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা নিরবচ্ছিন্ন রাখাই হবে সরকারের চ্যালেঞ্জ।

শনিবার, ১৬ মে ২০২০ , ২ জৈষ্ঠ্য ১৪২৭, ২২ রমাজান ১৪৪১

আগাম প্রস্তুতি হিসেবে খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

জাতিসংঘ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রভাবে বড় আকারের দুর্ভিক্ষ হতে পারে এবং এতে প্রায় তিন কোটি মানুষ অনাহারে প্রাণ হারাতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বর্তমানে যথেষ্ট খাদ্যের মজুদ রয়েছে। আগামীতেও যেন খাদ্যের কোন সংকট না হয় তাই সরকারি গুদামেও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে খাদ্যশস্য মজুত করছে সরকার। ইতোমধ্যে পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত দুই লাখ মেট্রিকটন চাল দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস হতে সংগ্রহ করছে সরকার। পাশাপাশি দেড় লাখ মেট্রিকটন গম দেশের বাইরে থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থ ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে করোনায় দেশে খাদ্য নিরাপত্তা থাকলেও প্রয়োজন বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ মে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে দুই লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের জন্য চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৭২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত হতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চাল ক্রয় খাতে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে এ চাল ক্রয় বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান ও নিয়মাচার যথাযথভাবে প্রতিপালনের শর্ত দেয়া হয়েছে। এর আগে রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে ইতোমধ্যেই দুই লাখ মেট্রিকটন গম কেনার সমঝোতা হয়েছে এবং জুলাইয়ের মধ্যে সে গম এসে পৌঁছাবে দেশে। ইতোমধ্যে রাশিয়া গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলেও ঘোষণার আগেই জি-টু-জি অর্থাৎ দুই দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল, ফলে গম যথাসময়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১২ মে পর্যন্ত সময়ে খাদ্যশস্যের সরকারি গুদামজাতকৃত মোট মজুত ১২ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। এরমধ্যে চাল ৯ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিকটন এবং গম ২ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিকটন। গত বছর একই সময়ে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য মজুত ছিল ১২ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিকটন। অর্থাৎ গত বছরের তুলানায় বর্তমানে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য ৩৪ হাজার মেট্রিকটন বেশি রয়েছে।

এছাড়া গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষকের ধানের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি এবং করোনা সময়কালে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, দেড় লাখ মেট্রিকটন আতপ চাল, ১০ লাখ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল, এবং ৭৫ হাজার মেট্রিকটন গমসহ ২০ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিকটন খাদ্যশস্য কিনবে সরকার।

গত বছর ১৬ লাখ মেট্রিকটন কিনেছিল সরকার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর চার লাখ ২৫ হাজার মেট্রিকটন চল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত আরও দুই মেট্রিকটন চাল ও দুই মেট্রিকটন গম সংগ্রহ করছে সরকার। এদিকে গত আমন মৌসুমে এক কোটি ৫৫ লাখ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি বোরোতে আমরা দুই কোটি মেট্রিকটনের বেশি ফলন আশা করছে সরকার। তাই সংকট বা দানা জাতীয় খাবারের সংকট হবে না বলে আশা করছে সরকার। এছাড়া আলু, শাকসবজি, তেলবীজসহ বেশির ভাগ পণ্যেই বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফলে খাদ্যসংকটের কোন আশঙ্কা নেই। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, করোনার কারণে অন্তত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হবে। তারা কর্মহীন হবে এবং খাদ্যের সরবরাহ থাকলেও তা কেনার সামর্র্থ্য থাকবে না অনেকের। এ সময়ে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা নিরবচ্ছিন্ন রাখাই হবে সরকারের চ্যালেঞ্জ।