রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণের সীমা বাড়ল

বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে একজন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক এখন থেকে তিন কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং সুদের হার কমানোর পর গতকাল ঋণ সীমা বাড়ানোর এই ঘোষণা দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, রপ্তানি আয়ের ‘খরা’ কাটাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ২১ মে’র নির্দেশনা অনুযায়ী, উৎপাদনকারী-রপ্তানিকারকদের জন্য উপকরণাদি আমদানির ক্ষেত্রে অনুমোদিত ডিলার রপ্তানি ঋণপত্র/নিশ্চিত চুক্তি/অভ্যন্তরীণ ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ এবং বস্ত্র শিল্প মিল মালিকদের সংগঠন বিটিএমই’র একজন সদস্য ইডিএফ থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ গ্রহণ করতে পারত। এখন এই সীমা বাড়িয়ে ৩ কোটি ডলার করা হলো। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন তারা।

এদিকে গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, ইডিএফের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলারে (৫ বিলিয়ন) উন্নীত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সঙ্গে রপ্তানিকারকদের জন্য তহবিল থেকে ঋণের সুদের হার কমিয়ে ২ শতাংশে বেঁধে দেয়া হয়েছে। এতদিন ইডিএফ থেকে কোন রপ্তানিকারক ঋণ নিলে লাইবর (লন্ডন ইন্টারব্যাংক অপার রেট) এর সঙ্গে ১ দশমিক ৫ শতাংশ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হতো। সেক্ষেত্রে লাইবর রেট প্রতিদিনই উঠানামা করায় সুদের হার ৩ থেকে ৪ শতাংশের মতো পড়ে যেতো।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ এপ্রিল পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন তাতে ইডিএফ ফান্ড ৩ দশক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করার কথা বলেছিলেন। স্বাধীনতার পর বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার নিয়ে ইডিএফ গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের রপ্তানি আয় বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই তহবিল বাড়তে বাড়তে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বাড়াতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিটিএমএ, নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএসহ অন্য রপ্তানিকারক সংগঠনের সদস্যরা ইডিএফ থেকে ঋণ পেয়ে থাকেন।

বিশ্বের অর্থনীতিই ওলট-পালট এখন কোভিড-১৯ মহামারীতে। তার ধাক্কায় উল্টে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির সব হিসাবনিকাশও। ওলট-পালটের এই সময়ে বাংলাদেশে এই প্রথম কোন মাসে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্সের চেয়ে পণ্য রপ্তানি আয় কম হয়েছে। শুধু কমই নয়, অর্ধেকে নেমেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে মাত্র ৫২ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই একই মাসে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি যে রপ্তানি আয় রেমিট্যান্সের চেয়ে কম হয়েছে।

সোমবার, ১৮ মে ২০২০ , ৪ জৈষ্ঠ্য ১৪২৭, ২৪ রমাজান ১৪৪১

রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে ঋণের সীমা বাড়ল

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে একজন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক এখন থেকে তিন কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং সুদের হার কমানোর পর গতকাল ঋণ সীমা বাড়ানোর এই ঘোষণা দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, রপ্তানি আয়ের ‘খরা’ কাটাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ২১ মে’র নির্দেশনা অনুযায়ী, উৎপাদনকারী-রপ্তানিকারকদের জন্য উপকরণাদি আমদানির ক্ষেত্রে অনুমোদিত ডিলার রপ্তানি ঋণপত্র/নিশ্চিত চুক্তি/অভ্যন্তরীণ ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্রের বিপরীতে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ এবং বস্ত্র শিল্প মিল মালিকদের সংগঠন বিটিএমই’র একজন সদস্য ইডিএফ থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঋণ গ্রহণ করতে পারত। এখন এই সীমা বাড়িয়ে ৩ কোটি ডলার করা হলো। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন তারা।

এদিকে গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী, ইডিএফের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলারে (৫ বিলিয়ন) উন্নীত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সঙ্গে রপ্তানিকারকদের জন্য তহবিল থেকে ঋণের সুদের হার কমিয়ে ২ শতাংশে বেঁধে দেয়া হয়েছে। এতদিন ইডিএফ থেকে কোন রপ্তানিকারক ঋণ নিলে লাইবর (লন্ডন ইন্টারব্যাংক অপার রেট) এর সঙ্গে ১ দশমিক ৫ শতাংশ যোগ করে সুদের হার নির্ধারণ করা হতো। সেক্ষেত্রে লাইবর রেট প্রতিদিনই উঠানামা করায় সুদের হার ৩ থেকে ৪ শতাংশের মতো পড়ে যেতো।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ এপ্রিল পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় মোট ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন তাতে ইডিএফ ফান্ড ৩ দশক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করার কথা বলেছিলেন। স্বাধীনতার পর বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার নিয়ে ইডিএফ গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের রপ্তানি আয় বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই তহবিল বাড়তে বাড়তে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বাড়াতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ, বিটিএমএ, নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএসহ অন্য রপ্তানিকারক সংগঠনের সদস্যরা ইডিএফ থেকে ঋণ পেয়ে থাকেন।

বিশ্বের অর্থনীতিই ওলট-পালট এখন কোভিড-১৯ মহামারীতে। তার ধাক্কায় উল্টে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির সব হিসাবনিকাশও। ওলট-পালটের এই সময়ে বাংলাদেশে এই প্রথম কোন মাসে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্সের চেয়ে পণ্য রপ্তানি আয় কম হয়েছে। শুধু কমই নয়, অর্ধেকে নেমেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে মাত্র ৫২ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই একই মাসে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি যে রপ্তানি আয় রেমিট্যান্সের চেয়ে কম হয়েছে।