ডব্লিউএইচও ৭৩তম অধিবেশন

করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধানে ‘নিরপেক্ষ’ তদন্তে সম্মত চীন

নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি প্রাকৃতিকভাবে নাকি কোন গবেষণাগার থেকে এটি ছড়িয়ে পড়েছে সে সন্দেহ দূর করতে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জোরালো আহ্বানের মুখে এবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাতে সমর্থন জানালেন।

তিনি বলেন, ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে চলে এলে পরে বিষয়টি সামগ্রিকভাবে খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এ ধরনের তদন্ত অবশ্যই ‘বস্তুনিষ্ঠ এবং নিরপেক্ষভাবে’ হতে হবে।

সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গভর্নিং বডি ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির’ (ডব্লিউএইচএ) বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে একথা বলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়টি তদন্ত করে দেখার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে একজোট হয়েছে আরও ১শ’টির বেশি দেশ।

করোনাভাইরাস কোথা থেকে এল, তা তদন্তে যৌথভাবে খসড়া প্রস্তাবনা এনেছে অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তাতে সমর্থন দিয়েছে জাপান, কানাডা, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল এবং ভারতসহ আরও বহু দেশ।

এ প্রস্তাবনায় সুনির্দিষ্টভাবে চীনের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য লুকোচাপা করার জন্য বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে। করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ৩ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে।

চীন তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ এবং ভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ চীনকে দোষারোপ করারই চেষ্টা বলে অভিযোগ করে এসেছে। বিরোধিতা করে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার তদন্তের আহ্বানেরও। এবার দেশটি সে অবস্থান থেকে সরে এল।

সোমবার জেনেভায় ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির বার্ষিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি বলেন, ২০১৯ সালের শেষে হুবেই প্রদেশে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস নিয়ে চীন খোলামেলা ছিল এবং স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে বিষয়টির আন্তর্জাতিক তদন্তও সমর্থন করে তার দেশ।

তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ মুহূর্তে এ ভাইরাস সংক্রমণ দূর করা এবং সহযোগিতা করার ওপরই জোর দেয়া উচিত- সে কথাও ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন শি। করোনাভাইরাস মোকাবিলার লড়াইয়ে চীন ২শ’ কোটি ডলার সহায়তা দেবে বলেও জানান তিনি।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তি তদন্তের যৌথ প্রস্তাব নিয়ে সোমবারই ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। তবে চীন এতে ভোট দেবে কিনা সে ব্যাপারে শি তার বক্তব্যে কোন আভাস দেননি।

ওদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সোমবার এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে তদন্ত শুরুর সময় এখনও আসেনি।

তিনিও প্রেসিডেন্ট শি’র মতো এ মুহূর্তে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে আনার দিকে মনোনিবেশ করার ওপর গুরুত্ব দেন এবং মহামারীর বর্তমান পরিস্থিতিতে তদন্ত চালানোর সঠিক সময় এটি নয় বলে মত দেন।

জেনেভার ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে শুধু করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে তদন্তই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার বিষয়টি নিয়েও তদন্তের আহ্বান এসেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সে তদন্তেও সমর্থন জানিয়েছেন এবং সেটিও মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসার পর করার পক্ষে মত দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দেয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং সংস্থাটি ‘চীন ঘেঁষা’ বলেও অভিযোগ করেছিলেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) খসড়া প্রস্তাবে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি এবং এ মহামারী ঠেকাতে কতটা নিরপেক্ষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল- দু’য়েরই স্বাধীন ও সবিস্তার তদন্ত করা এবং প্রয়োজনে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ডব্লিউএইচও কে করণীয় ঠিক করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

বুধবার, ২০ মে ২০২০ , ৬ জৈষ্ঠ্য ১৪২৭, ২৬ রমাজান ১৪৪১

ডব্লিউএইচও ৭৩তম অধিবেশন

করোনাভাইরাসের উৎস সন্ধানে ‘নিরপেক্ষ’ তদন্তে সম্মত চীন

রয়টার্স

image

নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি প্রাকৃতিকভাবে নাকি কোন গবেষণাগার থেকে এটি ছড়িয়ে পড়েছে সে সন্দেহ দূর করতে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জোরালো আহ্বানের মুখে এবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাতে সমর্থন জানালেন।

তিনি বলেন, ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে চলে এলে পরে বিষয়টি সামগ্রিকভাবে খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এ ধরনের তদন্ত অবশ্যই ‘বস্তুনিষ্ঠ এবং নিরপেক্ষভাবে’ হতে হবে।

সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গভর্নিং বডি ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির’ (ডব্লিউএইচএ) বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে একথা বলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়টি তদন্ত করে দেখার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে একজোট হয়েছে আরও ১শ’টির বেশি দেশ।

করোনাভাইরাস কোথা থেকে এল, তা তদন্তে যৌথভাবে খসড়া প্রস্তাবনা এনেছে অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তাতে সমর্থন দিয়েছে জাপান, কানাডা, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল এবং ভারতসহ আরও বহু দেশ।

এ প্রস্তাবনায় সুনির্দিষ্টভাবে চীনের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য লুকোচাপা করার জন্য বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে। করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ৩ লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে।

চীন তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ এবং ভাইরাসের উৎপত্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ চীনকে দোষারোপ করারই চেষ্টা বলে অভিযোগ করে এসেছে। বিরোধিতা করে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার তদন্তের আহ্বানেরও। এবার দেশটি সে অবস্থান থেকে সরে এল।

সোমবার জেনেভায় ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির বার্ষিক বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি বলেন, ২০১৯ সালের শেষে হুবেই প্রদেশে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস নিয়ে চীন খোলামেলা ছিল এবং স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে বিষয়টির আন্তর্জাতিক তদন্তও সমর্থন করে তার দেশ।

তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ মুহূর্তে এ ভাইরাস সংক্রমণ দূর করা এবং সহযোগিতা করার ওপরই জোর দেয়া উচিত- সে কথাও ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন শি। করোনাভাইরাস মোকাবিলার লড়াইয়ে চীন ২শ’ কোটি ডলার সহায়তা দেবে বলেও জানান তিনি।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তি তদন্তের যৌথ প্রস্তাব নিয়ে সোমবারই ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। তবে চীন এতে ভোট দেবে কিনা সে ব্যাপারে শি তার বক্তব্যে কোন আভাস দেননি।

ওদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সোমবার এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে তদন্ত শুরুর সময় এখনও আসেনি।

তিনিও প্রেসিডেন্ট শি’র মতো এ মুহূর্তে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে আনার দিকে মনোনিবেশ করার ওপর গুরুত্ব দেন এবং মহামারীর বর্তমান পরিস্থিতিতে তদন্ত চালানোর সঠিক সময় এটি নয় বলে মত দেন।

জেনেভার ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে শুধু করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে তদন্তই নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার বিষয়টি নিয়েও তদন্তের আহ্বান এসেছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সে তদন্তেও সমর্থন জানিয়েছেন এবং সেটিও মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসার পর করার পক্ষে মত দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দেয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং সংস্থাটি ‘চীন ঘেঁষা’ বলেও অভিযোগ করেছিলেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) খসড়া প্রস্তাবে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি এবং এ মহামারী ঠেকাতে কতটা নিরপেক্ষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল- দু’য়েরই স্বাধীন ও সবিস্তার তদন্ত করা এবং প্রয়োজনে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ডব্লিউএইচও কে করণীয় ঠিক করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।