হংকংয়ে বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন চালুর পরিকল্পনা চীনের

নতুন আইনের বিরুদ্ধে হংকংয়ে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক গণতন্ত্রপন্থিদের

চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালুর পরিকল্পনা করেছে চীন। বিতর্কিত এ আইনটি চালুর বিষয় নিয়ে দেশটির পার্লামেন্ট এনপিসি’র গতকাল শুক্রবারের গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে বিতর্ক অনুষ্ঠান করবে। এদিকে করোনা মহামারীর মধ্যেই বিতর্কিত এ আইন পাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীরা। বিবিসি।

এদিকে সংবাদ মাধ্যমটি এ তথ্য জানিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি)-এর গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক রাজনৈতিক সভায় গতকাল বিতর্কিত এ আইন উপস্থাপন করতে যাচ্ছে দেশটির কমিউনিস্ট সরকার। ‘এস্ট্যাবলিশিং অ্যান্ড ইমপ্রুভিং দ্য লিগ্যাল সিস্টেম অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ম্যাকানিজম অব হংকং’ শিরোনামে বিষয়টি এনপিসি’র আলোচ্যসূচিতে স্থান পেয়েছে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, সাধারণত চীনের শীর্ষ নেতার নেয়া সিদ্ধান্তগুলোরই চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয় কংগ্রেসের এ বার্ষিক সভায়। নতুন এ আইন চীন মৌলিক আইনের তৃতীয় পরিশিষ্টে যুক্ত করতে পারে। ফলে হংকংয়ে আইন বা নির্দেশ জারির মাধ্যমে অবশ্যই প্রয়োগ করা জাতীয় আইনের একটিতে পরিণত হবে এটি।

‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতি চালু থাকা চীনের ‘বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল’ হংকংয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ, বিদ্রোহ, সহিংসতা, সন্ত্রাস, বৈদেশিক হস্তক্ষেপসহ স্বাধীনতাপন্থি শক্তির উত্থান ঠেকাতে আইনটি চালু করতে চাইছে চীন। মানবাধিকার কর্মীদের আশঙ্কা, এ আইন হংকংয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতার টুঁটি চিপে ধরতে পারে।

তবে হংকংয়ের মিনি সংবিধানের (বেসিক ল) আর্টিকেল ২৩ অনুযায়ী, চীন সরকারের বিরুদ্ধে কোনোরকম বিদ্রোহ প্রতিহত করতে এ জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালুর বিধান আছে। তবে এতে মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতার মতো অধিকারগুলো ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কার কারণে এ আইন সেখানে কখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি হংকংয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থি এদিকে আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠায় বিতর্কিত এ বিল আবার টেবিলে এল।

এদিকে নতুন করে আবার এ আইন করার চেষ্টায় উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থিরা ইতোমধ্যেই প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছেন। হংকং সরকারের অননুমোদিত এই প্রতিবাদ মিছিল গতকাল শুক্রবার দুপুর নাগাদ শুরু হওয়ার কথা। ধারণা করা হচ্ছে, এ আইন করা হলে করোনা মহামারীর মধ্যেই আবারও ফুঁসে উঠতে পারেন হংকয়ের গণতন্ত্রকামী জনগণ।

হংকংয়ের স্থানীয় গণতন্ত্রকামী আইনপ্রণেতারা বৃহস্পতিবার রাতে চীনের নতুন আইন পরিকল্পনার সমালোচনা করে বার্তা দিয়েছেন। এক টুইটার বার্তায় বার্তায় হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী নেতা জসুয়া ওং বলেন, বিক্ষোভকারীরা ভালোভাবে জানেন যে আমরা শক্তিশালী হওয়ায় বিক্ষোভ করছি না আমাদের আর কোন উপায় নেই।

প্রসঙ্গত, গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনে কয়েকমাস ধরেই উত্তাল থাকা হংকংয়ে নতুন করে এ নিরাপত্তা আইন চালুর পদক্ষেপ জোরালো বিরোধিতার মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হংকং সরকার এর আগে ২০০৩ সালে আইনটি চালু করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে। সেসময় রাস্তায় ৫ লাখ মানুষের প্রতিবাদের পর আইন চালুর পদক্ষেপ নেয়া থেকে সরে দাড়ায় চীন সরকার। আটকে থাকা ওই আইনই গত ১৫ এপ্রিলে হংকংয়ে জরুরি ভিত্তিতে চালুর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান স্থানীয় বেইজিং লিয়াজোঁ অফিসের শীর্ষ চীনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, হংকংকে জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং হংকং যাতে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে না ওঠে তা নিশ্চিত করতে হবে।

গত জুনে বেইজিং প্রস্তাবিত একটি অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। পরে চীন এ বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। তারপরও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক হংকংয়ের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গণতন্ত্রপন্থিদের দাবি, চীনের নতুন আইন হংকংয়ের ‘ইতি টানবে’ অর্থাৎ অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার অবসান ঘটাবে। এমন পরিস্থিতিতে হংকংয়ের নির্বাচিত শীর্ষ আইনপ্রণেতাদের মতামত ছাড়াই আইনটি প্রণয়ন করতে পারে চীন।

শনিবার, ২৩ মে ২০২০ , ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৯ রমজান ১৪৪১

হংকংয়ে বিতর্কিত নিরাপত্তা আইন চালুর পরিকল্পনা চীনের

সংবাদ ডেস্ক |

নতুন আইনের বিরুদ্ধে হংকংয়ে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক গণতন্ত্রপন্থিদের

চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালুর পরিকল্পনা করেছে চীন। বিতর্কিত এ আইনটি চালুর বিষয় নিয়ে দেশটির পার্লামেন্ট এনপিসি’র গতকাল শুক্রবারের গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে বিতর্ক অনুষ্ঠান করবে। এদিকে করোনা মহামারীর মধ্যেই বিতর্কিত এ আইন পাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন হংকংয়ের গণতন্ত্রকামীরা। বিবিসি।

এদিকে সংবাদ মাধ্যমটি এ তথ্য জানিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি)-এর গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক রাজনৈতিক সভায় গতকাল বিতর্কিত এ আইন উপস্থাপন করতে যাচ্ছে দেশটির কমিউনিস্ট সরকার। ‘এস্ট্যাবলিশিং অ্যান্ড ইমপ্রুভিং দ্য লিগ্যাল সিস্টেম অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ম্যাকানিজম অব হংকং’ শিরোনামে বিষয়টি এনপিসি’র আলোচ্যসূচিতে স্থান পেয়েছে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, সাধারণত চীনের শীর্ষ নেতার নেয়া সিদ্ধান্তগুলোরই চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয় কংগ্রেসের এ বার্ষিক সভায়। নতুন এ আইন চীন মৌলিক আইনের তৃতীয় পরিশিষ্টে যুক্ত করতে পারে। ফলে হংকংয়ে আইন বা নির্দেশ জারির মাধ্যমে অবশ্যই প্রয়োগ করা জাতীয় আইনের একটিতে পরিণত হবে এটি।

‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতি চালু থাকা চীনের ‘বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল’ হংকংয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ, বিদ্রোহ, সহিংসতা, সন্ত্রাস, বৈদেশিক হস্তক্ষেপসহ স্বাধীনতাপন্থি শক্তির উত্থান ঠেকাতে আইনটি চালু করতে চাইছে চীন। মানবাধিকার কর্মীদের আশঙ্কা, এ আইন হংকংয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতার টুঁটি চিপে ধরতে পারে।

তবে হংকংয়ের মিনি সংবিধানের (বেসিক ল) আর্টিকেল ২৩ অনুযায়ী, চীন সরকারের বিরুদ্ধে কোনোরকম বিদ্রোহ প্রতিহত করতে এ জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালুর বিধান আছে। তবে এতে মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতার মতো অধিকারগুলো ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কার কারণে এ আইন সেখানে কখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি হংকংয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থি এদিকে আন্দোলন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠায় বিতর্কিত এ বিল আবার টেবিলে এল।

এদিকে নতুন করে আবার এ আইন করার চেষ্টায় উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির গণতন্ত্রপন্থিরা ইতোমধ্যেই প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছেন। হংকং সরকারের অননুমোদিত এই প্রতিবাদ মিছিল গতকাল শুক্রবার দুপুর নাগাদ শুরু হওয়ার কথা। ধারণা করা হচ্ছে, এ আইন করা হলে করোনা মহামারীর মধ্যেই আবারও ফুঁসে উঠতে পারেন হংকয়ের গণতন্ত্রকামী জনগণ।

হংকংয়ের স্থানীয় গণতন্ত্রকামী আইনপ্রণেতারা বৃহস্পতিবার রাতে চীনের নতুন আইন পরিকল্পনার সমালোচনা করে বার্তা দিয়েছেন। এক টুইটার বার্তায় বার্তায় হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী নেতা জসুয়া ওং বলেন, বিক্ষোভকারীরা ভালোভাবে জানেন যে আমরা শক্তিশালী হওয়ায় বিক্ষোভ করছি না আমাদের আর কোন উপায় নেই।

প্রসঙ্গত, গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনে কয়েকমাস ধরেই উত্তাল থাকা হংকংয়ে নতুন করে এ নিরাপত্তা আইন চালুর পদক্ষেপ জোরালো বিরোধিতার মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হংকং সরকার এর আগে ২০০৩ সালে আইনটি চালু করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে। সেসময় রাস্তায় ৫ লাখ মানুষের প্রতিবাদের পর আইন চালুর পদক্ষেপ নেয়া থেকে সরে দাড়ায় চীন সরকার। আটকে থাকা ওই আইনই গত ১৫ এপ্রিলে হংকংয়ে জরুরি ভিত্তিতে চালুর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান স্থানীয় বেইজিং লিয়াজোঁ অফিসের শীর্ষ চীনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, হংকংকে জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং হংকং যাতে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে না ওঠে তা নিশ্চিত করতে হবে।

গত জুনে বেইজিং প্রস্তাবিত একটি অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। পরে চীন এ বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। তারপরও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আগ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক হংকংয়ের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। গণতন্ত্রপন্থিদের দাবি, চীনের নতুন আইন হংকংয়ের ‘ইতি টানবে’ অর্থাৎ অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার অবসান ঘটাবে। এমন পরিস্থিতিতে হংকংয়ের নির্বাচিত শীর্ষ আইনপ্রণেতাদের মতামত ছাড়াই আইনটি প্রণয়ন করতে পারে চীন।