করোনার সম্ভাব্য টিকার ৩০ কোটি ডোজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করল যুক্তরাষ্ট্র

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পরাশক্তিগুলো যখন তাদের অর্থনীতি পুনরায় সচল করার জন্য প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের ওষুধ পেতে মরিয়া তখন যুক্তরাষ্ট্র রোগটির একটি পরীক্ষামূলক টিকার ৩০ কোটি ডোজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। ব্রিটিশ কোম্পানি আস্ট্রাজেনেকার সম্ভাব্য এ করোনা টিকার প্রথম দফার ১০০ কোটি ডোজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই পাবে দেশটি। এজন্য ইতোমধ্যেই ওয়াশিংটন কোম্পানিটিকে ১২০ কোটি ডলার দেয়ার চুক্তি করেছে। রয়টার্স।

জনস হপকিন্স বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া বৃহস্পতিবারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে নতুন করে আরও ১ হাজার ২৫৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এনিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৯৪ হাজার ৬৬১ জনে দাঁড়াল।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও কার্যকর কার্যকর কোনও ওষুধ উদ্ভাবিত হয়নি। তাই এ মহামারী মোকাবিলায় টিকার ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশকে। স্থবির অর্থনীতি পুনরায় সচল করতে এই টিকাকেই মূল চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্ব নেতারা। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশের সরকার, ওষুধ নির্মাতা ও গবেষকরা প্রায় ১০০টি টিকা উদ্ভাবন কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। সবগুলোই পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনার টিকা দাবি করার পর দেশটির স্বাস্থ্য ও মানবসেবা (এইচএসএস) কর্তৃপক্ষ ব্রিটিশ ওষুধ নির্মার্তা আস্ট্রাজেনেকাকে ১২০ কোটি ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ৩০ কোটি ডোজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। এর আগে সম্ভাব্য এ টিকাটি চ্যাডওক্স এনকোভ-১৯ নামে পরিচিত ছিল। এখন এজেডডি১২২ বলে নামকরণ করা হয়েছে। টিকাটি উদ্ভাবন করেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও লাইসেন্স পেয়েছে আস্ট্রাজেনেকা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোম্পানিটির এ চুক্তির ফলে টিকাটির পরীক্ষা তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করবে। এতে করে দেশটির ৩০ হাজার মানুষের ওপর করোনা টিকার মানবদেহে পরীক্ষা (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) হবে। তবে এ টিকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনিশ্চিত বলে জানা গেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ কোটি ডোজ প্রাপ্তি প্রসঙ্গে মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলেক্স আজার বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে একটি নিরাপদ, কার্যকর ও ব্যাপকভাবে প্রাপ্ত করোনার টিকার জন্য আস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে চুক্তি অপারেশন ওয়ার্প স্পিডের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। অপরদিকে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজভিত্তিক আস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ৪০ কোটি টিকার ডোজ বিক্রির চুক্তি তারা সম্পন্ন করেছে। ১০০ কোটি ডোজ উৎপাদনের সামর্থ্য রয়েছে তাদের। আগামী সেপ্টেম্বরে প্রথম সরবরাহ শুরু হবে।

আস্ট্রাজেনেকা ব্রিটিশ নাগরিকদেরকে ১০ কোটি ডোজ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩ কোটি ডোজ প্রদান করবে। ব্রিটিশ মন্ত্রীদের কোম্পানিটি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যই তাদের প্রথম টিকা পাবে।

প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুসারে, করোনা মহামারী থেকে বাঁচতে নিরাপদ ও কার্যকর রোগ প্রতিরোধী টিকা উদ্ভাবনে ১২-১৮ মাস সময় লাগতে পারে। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি টিকার মানবদেহে পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যায়ে টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। বেশিরভাগ টিকাই এ পর্যায়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটেছে উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ ৭৭ হাজার। আর মৃত্যু হয়েছে ৯৪ হাজার ৭০২ জনের।

শনিবার, ২৩ মে ২০২০ , ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭, ২৯ রমজান ১৪৪১

করোনার সম্ভাব্য টিকার ৩০ কোটি ডোজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করল যুক্তরাষ্ট্র

সংবাদ ডেস্ক |

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পরাশক্তিগুলো যখন তাদের অর্থনীতি পুনরায় সচল করার জন্য প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের ওষুধ পেতে মরিয়া তখন যুক্তরাষ্ট্র রোগটির একটি পরীক্ষামূলক টিকার ৩০ কোটি ডোজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। ব্রিটিশ কোম্পানি আস্ট্রাজেনেকার সম্ভাব্য এ করোনা টিকার প্রথম দফার ১০০ কোটি ডোজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই পাবে দেশটি। এজন্য ইতোমধ্যেই ওয়াশিংটন কোম্পানিটিকে ১২০ কোটি ডলার দেয়ার চুক্তি করেছে। রয়টার্স।

জনস হপকিন্স বিশ^বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া বৃহস্পতিবারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে নতুন করে আরও ১ হাজার ২৫৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এনিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৯৪ হাজার ৬৬১ জনে দাঁড়াল।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, করোনার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও কার্যকর কার্যকর কোনও ওষুধ উদ্ভাবিত হয়নি। তাই এ মহামারী মোকাবিলায় টিকার ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশকে। স্থবির অর্থনীতি পুনরায় সচল করতে এই টিকাকেই মূল চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্ব নেতারা। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশের সরকার, ওষুধ নির্মাতা ও গবেষকরা প্রায় ১০০টি টিকা উদ্ভাবন কর্মসূচি নিয়ে কাজ করছে। সবগুলোই পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনার টিকা দাবি করার পর দেশটির স্বাস্থ্য ও মানবসেবা (এইচএসএস) কর্তৃপক্ষ ব্রিটিশ ওষুধ নির্মার্তা আস্ট্রাজেনেকাকে ১২০ কোটি ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ৩০ কোটি ডোজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। এর আগে সম্ভাব্য এ টিকাটি চ্যাডওক্স এনকোভ-১৯ নামে পরিচিত ছিল। এখন এজেডডি১২২ বলে নামকরণ করা হয়েছে। টিকাটি উদ্ভাবন করেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও লাইসেন্স পেয়েছে আস্ট্রাজেনেকা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোম্পানিটির এ চুক্তির ফলে টিকাটির পরীক্ষা তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করবে। এতে করে দেশটির ৩০ হাজার মানুষের ওপর করোনা টিকার মানবদেহে পরীক্ষা (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) হবে। তবে এ টিকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনিশ্চিত বলে জানা গেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ কোটি ডোজ প্রাপ্তি প্রসঙ্গে মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলেক্স আজার বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে একটি নিরাপদ, কার্যকর ও ব্যাপকভাবে প্রাপ্ত করোনার টিকার জন্য আস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে চুক্তি অপারেশন ওয়ার্প স্পিডের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। অপরদিকে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজভিত্তিক আস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ৪০ কোটি টিকার ডোজ বিক্রির চুক্তি তারা সম্পন্ন করেছে। ১০০ কোটি ডোজ উৎপাদনের সামর্থ্য রয়েছে তাদের। আগামী সেপ্টেম্বরে প্রথম সরবরাহ শুরু হবে।

আস্ট্রাজেনেকা ব্রিটিশ নাগরিকদেরকে ১০ কোটি ডোজ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩ কোটি ডোজ প্রদান করবে। ব্রিটিশ মন্ত্রীদের কোম্পানিটি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যই তাদের প্রথম টিকা পাবে।

প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুসারে, করোনা মহামারী থেকে বাঁচতে নিরাপদ ও কার্যকর রোগ প্রতিরোধী টিকা উদ্ভাবনে ১২-১৮ মাস সময় লাগতে পারে। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি টিকার মানবদেহে পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যায়ে টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। বেশিরভাগ টিকাই এ পর্যায়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছে। এদিকে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটেছে উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ ৭৭ হাজার। আর মৃত্যু হয়েছে ৯৪ হাজার ৭০২ জনের।