কৃষকদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন কর্মকর্তারা

বোরো ধান সংগ্রহ হুমকির মুখে পড়েছে। বাজারে দাম বেশি থাকায় লটারিতে বিজয়ী হওয়ার পরও কৃষক সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে যাচ্ছেন না। এ কারণে কৃষি ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কৃষকের কাছে ধরনা দিতে হচ্ছে। অথচ গত আমন মৌসুমে কৃষক এক রকম ‘পাগল’ হয়ে গিয়েছিল খাদ্যগুদামে সরকারি দামে ধান বিক্রির জন্যে। চলতি বোরো মৌসুমে অবস্থা এমন পর্যায়ে রয়েছে যে, খাদ্য কর্মকর্তারা ভাবছেন কৃষকের কাছে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে বলবেন। সেক্ষেত্রে সদর উপজেলার বিভিন্ন ধানের হাটে যাওয়ার চিন্তা করছেন তারা।

যশোর সদর উপজেলায় এ বছর বোরো ধান সংগ্রহের টার্গেট রয়েছে তিন হাজার ছয়শ’ ৯৬ মেট্রিক টন। আর গোটা জেলায় ২২ হাজার তিনশ’ ৭৪ মে.টন বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে আবেদনের পর লটারিতে যারা বিজয়ী হয়েছেন কেবলমাত্র তারাই সরকার নির্ধারিত এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রির সুযোগ পাবেন।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার সরকারি মূল্যে বোরো ধান বিক্রির জন্যে সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকে আট হাজার ছয়শ’র মতো কৃষক আবেদন করেন। এরমধ্যে লটারিতে বিজয়ী হয়েছেন দু’হাজার আটশ’ ৬২ জন। বিজয়ীদের মধ্যে তিন ক্যাটাগরির কৃষক রয়েছেন। এরা হচ্ছেন, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড়। লটারিতে এক হাজার আটশ’ ৫০ জন ক্ষুদ্র, ছয়শ’ ৯৫ জন মাঝারি এবং তিনশ’ ১৭ জন বড় কৃষকের ভাগ্যের শিঁকে ছিড়েছে। ক্ষুদ্র কৃষক সর্বোচ্চ ২৫ মণ, মাঝারি কৃষক সর্বোচ্চ ৪০ মণ এবং বড় কৃষক সর্বোচ্চ ৬০ মণ করে ধান খাদ্যগুদামে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১৮ মে লটারি সম্পন্ন হওয়ার পর বিজয়ী কৃষকের মোবাইল ফোন নম্বরে এসএমএস গেছে। এসএমএসে খাদ্যগুদামে গিয়ে ধান দেয়ার কথা বলা হয়েছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার পর্যন্ত একজন কৃষকও ধান নিয়ে আসেননি। এ কারণে তারা কিছুটা হলেও হতাশার মধ্যে রয়েছেন।

কৃষি ও খাদ্যবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বাজারে ধানের দাম অন্য বছরের তুলনায় বেশি। মোটা ধান সাড়ে সাত থেকে আটশ’ এবং চিকন ধান সাড়ে নয়শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই কৃষক কোন রকম বাধ্যবাধকতা ছাড়াই তুলনামূলক কম শুকনো ধান উল্লেখিত দামে বিক্রি করতে পারছেন নগদ টাকায়। এ কারণে তারা খাদ্যগুদামমুখী হচ্ছেন না। খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে হলে নির্দিষ্ট মাত্রার আর্দ্রতা থাকতে হবে। শহরের মধ্যে নসিমন ঢুকতে না দেয়ায় ধান আনতে পিকআপ ভাড়া করতে হবে বেশি টাকা দিয়ে। এরপর গুদামে গিয়ে সিরিয়ালে ধান দিয়ে স্লিপ নিয়ে যেতে হবে ব্যাংকে। তারপর টাকা আসবে কৃষকের হাতে। সহজ সরল কৃষক এসব ঝামেলা বহন করতে চাচ্ছেন না। সাইফুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, হোসেন আলী, আবদুল গফফার ও আবদুল করিম নামে কয়েকজন কৃষক জানান, বর্তমানে বাজারে যে দাম তাতে কৃষক খাদ্যগুদামে বিক্রি করার চেয়ে বেশি লাভবান হবেন। তাদের দাবি, এখনই খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করলে মণে তাদের একশ’ টাকার মতো লোকসান হবে। কারণ নির্দিষ্ট আর্দ্রতায় ধান শুকিয়ে গাড়িভাড়া করে নিয়ে গেলে প্রতি মণে একশ’ টাকার বেশি খরচ হবে। সেক্ষেত্রে বাজারে বিক্রি করা লাভজনক বলে মনে করছেন কৃষক। কেবল সদর উপজেলায় এই অবস্থা না। অন্য জায়গায়ও একই রকম অবস্থা বিরাজ করছে।

এসব বিষয়ে সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম বেশি থাকার কারণে কৃষক আসছেন না। তারপরও আমরা কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি গুদামে ধান আনার জন্য। আমরা চিন্তা করছি ছোট ছোট বাজারে গিয়ে কৃষককে বোঝানোর।’ তিনি বলেন, করোনার কারণে অধিকাংশ কৃষক ধান মজুত করে রাখছেন নিজের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এ কারণে দাম একটু বেশি। তবে, দাম কমে যাবে বলে মনে করেন এই খাদ্য কর্মকর্তা। তখন কৃষক গুদামে আসবেন বলে আশাবাদী তিনি। আশরাফুজ্জামান বলেন, যেহেতু বর্তমানে মোটা ধানের দাম বাজারে কিছুটা কম। ফলে, কৃষকের কাছ থেকে মোটা ধানগুলো কেনা যায় কিনা সেই চেষ্টা করা হবে।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি থাকার কারণে কৃষক গুদামে আসছেন না। যশোরে শতকরা ১০ ভাগ জমিতে মোটা ধানের চাষ হয় বলে জানান তিনি। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, লটারিতে বিজয়ী কৃষকের তালিকা প্রতিটি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া হয়েছে। তারা তালিকা ধরে কৃষকের কাছে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আমরা গুদাম খোলা রেখেছি। কৃষক ধান নিয়ে এলে আমরা তা নেব। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ করার সময় নির্ধারণ করা রয়েছে। এর বাইরে আমার আর কোন বক্তব্য নেই।

রবিবার, ৩১ মে ২০২০ , ১৭ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ৭ শাওয়াল ১৪৪১

বোরো ধান সংগ্রহ হুমকির মুখে

কৃষকদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন কর্মকর্তারা

যশোর অফিস

বোরো ধান সংগ্রহ হুমকির মুখে পড়েছে। বাজারে দাম বেশি থাকায় লটারিতে বিজয়ী হওয়ার পরও কৃষক সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে যাচ্ছেন না। এ কারণে কৃষি ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কৃষকের কাছে ধরনা দিতে হচ্ছে। অথচ গত আমন মৌসুমে কৃষক এক রকম ‘পাগল’ হয়ে গিয়েছিল খাদ্যগুদামে সরকারি দামে ধান বিক্রির জন্যে। চলতি বোরো মৌসুমে অবস্থা এমন পর্যায়ে রয়েছে যে, খাদ্য কর্মকর্তারা ভাবছেন কৃষকের কাছে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে বলবেন। সেক্ষেত্রে সদর উপজেলার বিভিন্ন ধানের হাটে যাওয়ার চিন্তা করছেন তারা।

যশোর সদর উপজেলায় এ বছর বোরো ধান সংগ্রহের টার্গেট রয়েছে তিন হাজার ছয়শ’ ৯৬ মেট্রিক টন। আর গোটা জেলায় ২২ হাজার তিনশ’ ৭৪ মে.টন বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় অ্যাপের মাধ্যমে আবেদনের পর লটারিতে যারা বিজয়ী হয়েছেন কেবলমাত্র তারাই সরকার নির্ধারিত এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রির সুযোগ পাবেন।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার সরকারি মূল্যে বোরো ধান বিক্রির জন্যে সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকে আট হাজার ছয়শ’র মতো কৃষক আবেদন করেন। এরমধ্যে লটারিতে বিজয়ী হয়েছেন দু’হাজার আটশ’ ৬২ জন। বিজয়ীদের মধ্যে তিন ক্যাটাগরির কৃষক রয়েছেন। এরা হচ্ছেন, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড়। লটারিতে এক হাজার আটশ’ ৫০ জন ক্ষুদ্র, ছয়শ’ ৯৫ জন মাঝারি এবং তিনশ’ ১৭ জন বড় কৃষকের ভাগ্যের শিঁকে ছিড়েছে। ক্ষুদ্র কৃষক সর্বোচ্চ ২৫ মণ, মাঝারি কৃষক সর্বোচ্চ ৪০ মণ এবং বড় কৃষক সর্বোচ্চ ৬০ মণ করে ধান খাদ্যগুদামে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১৮ মে লটারি সম্পন্ন হওয়ার পর বিজয়ী কৃষকের মোবাইল ফোন নম্বরে এসএমএস গেছে। এসএমএসে খাদ্যগুদামে গিয়ে ধান দেয়ার কথা বলা হয়েছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার পর্যন্ত একজন কৃষকও ধান নিয়ে আসেননি। এ কারণে তারা কিছুটা হলেও হতাশার মধ্যে রয়েছেন।

কৃষি ও খাদ্যবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বাজারে ধানের দাম অন্য বছরের তুলনায় বেশি। মোটা ধান সাড়ে সাত থেকে আটশ’ এবং চিকন ধান সাড়ে নয়শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই কৃষক কোন রকম বাধ্যবাধকতা ছাড়াই তুলনামূলক কম শুকনো ধান উল্লেখিত দামে বিক্রি করতে পারছেন নগদ টাকায়। এ কারণে তারা খাদ্যগুদামমুখী হচ্ছেন না। খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে হলে নির্দিষ্ট মাত্রার আর্দ্রতা থাকতে হবে। শহরের মধ্যে নসিমন ঢুকতে না দেয়ায় ধান আনতে পিকআপ ভাড়া করতে হবে বেশি টাকা দিয়ে। এরপর গুদামে গিয়ে সিরিয়ালে ধান দিয়ে স্লিপ নিয়ে যেতে হবে ব্যাংকে। তারপর টাকা আসবে কৃষকের হাতে। সহজ সরল কৃষক এসব ঝামেলা বহন করতে চাচ্ছেন না। সাইফুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, হোসেন আলী, আবদুল গফফার ও আবদুল করিম নামে কয়েকজন কৃষক জানান, বর্তমানে বাজারে যে দাম তাতে কৃষক খাদ্যগুদামে বিক্রি করার চেয়ে বেশি লাভবান হবেন। তাদের দাবি, এখনই খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করলে মণে তাদের একশ’ টাকার মতো লোকসান হবে। কারণ নির্দিষ্ট আর্দ্রতায় ধান শুকিয়ে গাড়িভাড়া করে নিয়ে গেলে প্রতি মণে একশ’ টাকার বেশি খরচ হবে। সেক্ষেত্রে বাজারে বিক্রি করা লাভজনক বলে মনে করছেন কৃষক। কেবল সদর উপজেলায় এই অবস্থা না। অন্য জায়গায়ও একই রকম অবস্থা বিরাজ করছে।

এসব বিষয়ে সদর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম বেশি থাকার কারণে কৃষক আসছেন না। তারপরও আমরা কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি গুদামে ধান আনার জন্য। আমরা চিন্তা করছি ছোট ছোট বাজারে গিয়ে কৃষককে বোঝানোর।’ তিনি বলেন, করোনার কারণে অধিকাংশ কৃষক ধান মজুত করে রাখছেন নিজের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এ কারণে দাম একটু বেশি। তবে, দাম কমে যাবে বলে মনে করেন এই খাদ্য কর্মকর্তা। তখন কৃষক গুদামে আসবেন বলে আশাবাদী তিনি। আশরাফুজ্জামান বলেন, যেহেতু বর্তমানে মোটা ধানের দাম বাজারে কিছুটা কম। ফলে, কৃষকের কাছ থেকে মোটা ধানগুলো কেনা যায় কিনা সেই চেষ্টা করা হবে।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার এসএম খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি থাকার কারণে কৃষক গুদামে আসছেন না। যশোরে শতকরা ১০ ভাগ জমিতে মোটা ধানের চাষ হয় বলে জানান তিনি। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, লটারিতে বিজয়ী কৃষকের তালিকা প্রতিটি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া হয়েছে। তারা তালিকা ধরে কৃষকের কাছে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘আমরা গুদাম খোলা রেখেছি। কৃষক ধান নিয়ে এলে আমরা তা নেব। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহ করার সময় নির্ধারণ করা রয়েছে। এর বাইরে আমার আর কোন বক্তব্য নেই।