হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা : ছুটির মধ্যে দেশ ছাড়েন দুই ভাই

ব্যাংক কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছেন শিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দুই সহোদর। গত ২৫ মে ঈদের ছুটির মধ্যে শিকাদার গ্রুপের মালিকানাধীন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষু রোগী পরিচয়ে রন হক শিকদার এবং তার ভাই দিপু শিকদার দেশ ছেড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা, মারধরসহ বেশকিছু অভিযোগে গত ১৯ মে গুলশান থানায় মামলা করেছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে গুলশান বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, শিকদার গ্রুপ থেকে একটি প্রকল্পের জন্য এক্সিম ব্যাংকের কাছে বড় অঙ্কের ঋণ চাওয়া হয়েছিল। কাগজে-কলমে কোন প্রস্তাব পাঠানো না হলেও মৌখিকভাবে কথাবার্তা হচ্ছিল ঋণের জন্য। প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা ঋণ চাওয়া হয়। পরে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডি তাদের বলেন, আমরা প্রকল্প দেখতে যাবো। কথামতো শিকদার গ্রুপের এমডি ও ব্যাংকের এমডিসহ তারা গত ৭ মে পূর্বাঞ্চল এলাকায় প্রকল্প দেখতে যান। সেখানে ঋণ নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়। যে পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে চাওয়া হয়েছিল তা প্রকল্প মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় বনিবনা হচ্ছিল না। পরে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডি আলোচনা শেষ না করে চলে আসতে চাচ্ছিলেন।

শিকদার গ্রুপের এমডি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে বনানী শিকদার গ্রুপের অফিসে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেও রোজা থাকায় তারা অফিসে চলে যেতে চাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে চলে যাওয়ার সময় ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডির গাড়ির গতিরোধ করে তাদের গালিগালাজ করেন শিকদার গ্রুপের এমডি এবং তার ভাই। পরে ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডি বনানীর অফিসে গিয়ে শিকদার গ্রুপের মালিকদের সঙ্গে ইফতার করেন এবং নানা আলোচনা করেন। কিন্তু ১৯ মে ব্যাংকের পক্ষ থেকে শিকদার গ্রুপের মালিক দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয় শিকদার গ্রুপের এমডি ও তার ভাই এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডিকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে এবং মারধর করা হয়েছে বলে জানান। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

ডিসি জানান, মামলার পর পুলিশ তদন্ত করে গাড়ি আটকানো এবং গালিগালাজ করার সত্যতা পেলেও গুলি করে হত্যাচেষ্টা বা মারধর করার কোন অভিযোগ পাননি। এছাড়া ব্যাংক ঋণের জন্য লিখিত কোন প্রস্তাব না থাকায় কত টাকা ঋণ চেয়েছেন সে তথ্য-প্রমাণও পাওয়া যায়নি। মামলার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে তদবির শুরু হয়। দুই পক্ষই প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সতর্ক থেকে তদন্ত করছিল। এর মধ্যে রোগী সেজে দুই ভাই দেশ ত্যাগ করেছে। বিষয়টি অতি গোপনে হয়েছে। এখানে পুলিশের কিছু করার ছিল না। কারণ মামলা তদন্তের আগে আসামিদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছিল না।

একটি সূত্র জানায়, শিকদার গ্রুপের নিজস্ব এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ‘মুমূর্ষু রোগী’ হিসেবে সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার দেশ ছেড়েছেন। ২৫ মে সকাল ৯টা ১৩ মিনিটের দিকে সরকার অনুমোদিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ফ্লাইটটি ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি থাইল্যান্ডে অবতরণের অনুমতি দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ মে সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয় থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস। ওই দিনই তাদের অনুমোদন দেয়া হলে ঢাকায় অবস্থিত থাই দূতাবাসে একটি চিঠি দেয়া হয়। যেখানে দুইজনকে মেডিকেল ভিসা দেয়ার অনুরোধ করা হয়। ২৪ মে ভিসা ইস্যু করা হয় এবং পরের দিন (২৫ মে) তারা ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দেয়। সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে আব্দুল বাছেত মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদারকে সামাজিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রবিবার, ৩১ মে ২০২০ , ১৭ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ৭ শাওয়াল ১৪৪১

হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা : ছুটির মধ্যে দেশ ছাড়েন দুই ভাই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ব্যাংক কর্মকর্তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় আসামি হয়ে দেশ ছেড়েছেন শিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দুই সহোদর। গত ২৫ মে ঈদের ছুটির মধ্যে শিকাদার গ্রুপের মালিকানাধীন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষু রোগী পরিচয়ে রন হক শিকদার এবং তার ভাই দিপু শিকদার দেশ ছেড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা, মারধরসহ বেশকিছু অভিযোগে গত ১৯ মে গুলশান থানায় মামলা করেছিল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে গুলশান বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, শিকদার গ্রুপ থেকে একটি প্রকল্পের জন্য এক্সিম ব্যাংকের কাছে বড় অঙ্কের ঋণ চাওয়া হয়েছিল। কাগজে-কলমে কোন প্রস্তাব পাঠানো না হলেও মৌখিকভাবে কথাবার্তা হচ্ছিল ঋণের জন্য। প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা ঋণ চাওয়া হয়। পরে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডি তাদের বলেন, আমরা প্রকল্প দেখতে যাবো। কথামতো শিকদার গ্রুপের এমডি ও ব্যাংকের এমডিসহ তারা গত ৭ মে পূর্বাঞ্চল এলাকায় প্রকল্প দেখতে যান। সেখানে ঋণ নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়। যে পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে চাওয়া হয়েছিল তা প্রকল্প মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় বনিবনা হচ্ছিল না। পরে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডি আলোচনা শেষ না করে চলে আসতে চাচ্ছিলেন।

শিকদার গ্রুপের এমডি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে বনানী শিকদার গ্রুপের অফিসে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেও রোজা থাকায় তারা অফিসে চলে যেতে চাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে চলে যাওয়ার সময় ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডির গাড়ির গতিরোধ করে তাদের গালিগালাজ করেন শিকদার গ্রুপের এমডি এবং তার ভাই। পরে ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডি বনানীর অফিসে গিয়ে শিকদার গ্রুপের মালিকদের সঙ্গে ইফতার করেন এবং নানা আলোচনা করেন। কিন্তু ১৯ মে ব্যাংকের পক্ষ থেকে শিকদার গ্রুপের মালিক দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয় শিকদার গ্রুপের এমডি ও তার ভাই এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডিকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে এবং মারধর করা হয়েছে বলে জানান। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

ডিসি জানান, মামলার পর পুলিশ তদন্ত করে গাড়ি আটকানো এবং গালিগালাজ করার সত্যতা পেলেও গুলি করে হত্যাচেষ্টা বা মারধর করার কোন অভিযোগ পাননি। এছাড়া ব্যাংক ঋণের জন্য লিখিত কোন প্রস্তাব না থাকায় কত টাকা ঋণ চেয়েছেন সে তথ্য-প্রমাণও পাওয়া যায়নি। মামলার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে তদবির শুরু হয়। দুই পক্ষই প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সতর্ক থেকে তদন্ত করছিল। এর মধ্যে রোগী সেজে দুই ভাই দেশ ত্যাগ করেছে। বিষয়টি অতি গোপনে হয়েছে। এখানে পুলিশের কিছু করার ছিল না। কারণ মামলা তদন্তের আগে আসামিদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছিল না।

একটি সূত্র জানায়, শিকদার গ্রুপের নিজস্ব এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ‘মুমূর্ষু রোগী’ হিসেবে সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদার দেশ ছেড়েছেন। ২৫ মে সকাল ৯টা ১৩ মিনিটের দিকে সরকার অনুমোদিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ফ্লাইটটি ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি থাইল্যান্ডে অবতরণের অনুমতি দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ মে সেখানকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয় থাইল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস। ওই দিনই তাদের অনুমোদন দেয়া হলে ঢাকায় অবস্থিত থাই দূতাবাসে একটি চিঠি দেয়া হয়। যেখানে দুইজনকে মেডিকেল ভিসা দেয়ার অনুরোধ করা হয়। ২৪ মে ভিসা ইস্যু করা হয় এবং পরের দিন (২৫ মে) তারা ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দেয়। সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে আব্দুল বাছেত মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদারকে সামাজিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।