চট্টগ্রামে করোনা ইউনিটের আয়ার মৃত্যু

মারা গেলেন পুলিশ ও ব্যবসায়ীসহ আরও ৩ জন

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনা ইউনিটের আয়ার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।

করোনায় মৃত আয়ার নাম হাসিনা বেগম (৬০)। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী ছিলেন। তিনি করোনা ইউনিটের আয়ার দায়িত্বে ছিলেন। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তির পিতা হাবিবুল্লাহ (৮৫)-এর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন এছহাক ব্রাদার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী মোহাম্মদ ইউনুছও মারা গেছেন। অন্যদিকে মারা গেলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) কর্মরত কনস্টেবল (নং-৭৫৫) মামুন উদ্দিন (২৮)। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, জেনারেল হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব। তিনি জানান, গত রোববার আমাদের হাসপাতালের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) উপসর্গ নিয়ে এক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। গতকাল সকাল ৮টার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স জানান, হাসিনা বেগম দীর্ঘদিন যাবত চুক্তিভিত্তিক জেনারেলর হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ইউনিটের পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি করোনা ইউনিটের গেটের বাইরে থেকে রোগীদের কিছু প্রয়োজন হলে সংগ্রহ করে দিতেন।

এছাড়া গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তির পিতার মৃত্যু হয়েছে। সকালে নগরীর আকবরশাহ থানার মাজার গেট নিজ বাসভবনে তিনি মারা যান। চট্টগ্রাম মহানগর যুদবল সহ সভাপতি শাহেদ আকবর জানান, করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিন তিনি। পরে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি আইসিইউ সাপোর্টের দরকার হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ সাপোর্ট প্রদানে অপরাগতা জানান। এদিকে, পিতার দেখভাল করতে গিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি নিজেও করোনাবাইরাসে আক্রান্ত হন। বর্তমানে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

এছহাক ব্রাদার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী মোহাম্মদ ইউনুছও আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। করোনা সন্দেহে নগরের কোন বেসরকারি হাসপাতাল আইসিইউ সাপোর্ট দিতে এগিয়ে আসেনি।

শেষ পর্যন্ত রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেই রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হঠাৎ অসুস্থতাবোধ করলে পরিবারের সদস্যরা প্রথমে তাকে নিয়ে যান নগরের জিইসি মোড়স্থ মেডিকেল সেন্টারে। সেখানে দুই ঘণ্টা অপেক্ষায় রেখে শেষ পর্যন্ত ভর্তি করা যাবে না জানিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে রাত ৮টায় তাকে নেয়া হয় মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। অনেক আকুতির পর সেখানে ভর্তি নেয়া হয়। তবে তাৎক্ষণিক আইসিইউ সাপোর্ট না পাওয়ায় তার অবস্থার ক্রমাবনতি হতে থাকে।

এ অবস্থায় সেখানে অক্সিজেন সাপোর্টের ব্যবস্থা করে চট্টগ্রাম নগরের আইসিইউ সম্বলিত সব বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে আইসিইউ, সম্ভব না হলে এইচডিও শয্যা চাওয়া হয়। কিন্তু করোনা সন্দেহে কোন হাসপাতালই আইসিইউ সাপোর্ট দিতে এগিয়ে আসেনি। শেষ পর্যন্ত আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে সেখানেই রাত ৯টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে থেকে তিনি ডায়াবেটিস, কিডনি এবং হাপানিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ২৫ মার্চ ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে সুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম ফিরেন।

সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) কর্মরত কনস্টেবল (নং-৭৫৫) মামুন উদ্দিন (২৮) গতকাল বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হবার জন্য মৃত্যুর পর তার নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল বাদ জোহর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানসহ সিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন এবং তার মরদেহের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। জানাজা শেষে দাফনের জন্য সিএমপির ব্যবস্থাপনায় তার মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে প্রেরণ করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরাম থানাধীন নিজকালিকাপুর গ্রামে। তিনি ২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।

মঙ্গলবার, ০২ জুন ২০২০ , ১৯ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ৯ শাওয়াল ১৪৪১

চট্টগ্রামে করোনা ইউনিটের আয়ার মৃত্যু

মারা গেলেন পুলিশ ও ব্যবসায়ীসহ আরও ৩ জন

চট্টগ্রাম ব্যুরো

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনা ইউনিটের আয়ার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।

করোনায় মৃত আয়ার নাম হাসিনা বেগম (৬০)। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী ছিলেন। তিনি করোনা ইউনিটের আয়ার দায়িত্বে ছিলেন। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তির পিতা হাবিবুল্লাহ (৮৫)-এর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন এছহাক ব্রাদার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী মোহাম্মদ ইউনুছও মারা গেছেন। অন্যদিকে মারা গেলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) কর্মরত কনস্টেবল (নং-৭৫৫) মামুন উদ্দিন (২৮)। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, জেনারেল হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব। তিনি জানান, গত রোববার আমাদের হাসপাতালের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) উপসর্গ নিয়ে এক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। গতকাল সকাল ৮টার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স জানান, হাসিনা বেগম দীর্ঘদিন যাবত চুক্তিভিত্তিক জেনারেলর হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) ইউনিটের পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি করোনা ইউনিটের গেটের বাইরে থেকে রোগীদের কিছু প্রয়োজন হলে সংগ্রহ করে দিতেন।

এছাড়া গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তির পিতার মৃত্যু হয়েছে। সকালে নগরীর আকবরশাহ থানার মাজার গেট নিজ বাসভবনে তিনি মারা যান। চট্টগ্রাম মহানগর যুদবল সহ সভাপতি শাহেদ আকবর জানান, করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিন তিনি। পরে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি আইসিইউ সাপোর্টের দরকার হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ সাপোর্ট প্রদানে অপরাগতা জানান। এদিকে, পিতার দেখভাল করতে গিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি নিজেও করোনাবাইরাসে আক্রান্ত হন। বর্তমানে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

এছহাক ব্রাদার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী মোহাম্মদ ইউনুছও আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। করোনা সন্দেহে নগরের কোন বেসরকারি হাসপাতাল আইসিইউ সাপোর্ট দিতে এগিয়ে আসেনি।

শেষ পর্যন্ত রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেই রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হঠাৎ অসুস্থতাবোধ করলে পরিবারের সদস্যরা প্রথমে তাকে নিয়ে যান নগরের জিইসি মোড়স্থ মেডিকেল সেন্টারে। সেখানে দুই ঘণ্টা অপেক্ষায় রেখে শেষ পর্যন্ত ভর্তি করা যাবে না জানিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে রাত ৮টায় তাকে নেয়া হয় মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। অনেক আকুতির পর সেখানে ভর্তি নেয়া হয়। তবে তাৎক্ষণিক আইসিইউ সাপোর্ট না পাওয়ায় তার অবস্থার ক্রমাবনতি হতে থাকে।

এ অবস্থায় সেখানে অক্সিজেন সাপোর্টের ব্যবস্থা করে চট্টগ্রাম নগরের আইসিইউ সম্বলিত সব বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে আইসিইউ, সম্ভব না হলে এইচডিও শয্যা চাওয়া হয়। কিন্তু করোনা সন্দেহে কোন হাসপাতালই আইসিইউ সাপোর্ট দিতে এগিয়ে আসেনি। শেষ পর্যন্ত আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে সেখানেই রাত ৯টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে থেকে তিনি ডায়াবেটিস, কিডনি এবং হাপানিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ২৫ মার্চ ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে সুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম ফিরেন।

সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) কর্মরত কনস্টেবল (নং-৭৫৫) মামুন উদ্দিন (২৮) গতকাল বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হবার জন্য মৃত্যুর পর তার নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল বাদ জোহর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানসহ সিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন এবং তার মরদেহের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। জানাজা শেষে দাফনের জন্য সিএমপির ব্যবস্থাপনায় তার মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে প্রেরণ করা হয়। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার পরশুরাম থানাধীন নিজকালিকাপুর গ্রামে। তিনি ২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।