টাঙ্গাইলে

ধলেশ্বরীতে জেগে ওঠা চর কেটে বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা

দেশে যখন করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে প্রশাসন ব্যতিব্যস্ত তখন এমপির নাম ভাঙিয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জেগে উঠা ধলেশ্বরী নদীর চর কেটে বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। থানা ঘাট হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানা সংলগ্ন সরাতৈল, বিয়ারামারুয়া ও কুর্শাবেনুর ধলেশ্বরী নদীর চর অবৈধভাবে কেটে বিক্রি করছে তারা। তবে বালু ব্যবসায়ীদের দাবি, নদীতে জেগে উঠা চর কেটে বিক্রি করা হচ্ছে এমপির অনুমতি আর প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সরাতৈল গ্রামের প্রভাবশালী জুহুরুল মণ্ডল, আনোয়ার মণ্ডল ও চান মিয়া ধলেশ্বরী নদীতে জেগে উঠা চর বেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে কেটে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করছে। গ্রামের অসহায় মানুষের জমি জোরপূর্বক নিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য রাস্তা বানিয়েছে। দিন-রাত শত শত ট্রাকযোগে চর কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় উত্তরবঙ্গে যাওয়া গ্যাস লাইন পাইপের ওপর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে ট্রাক চলাচল করছে। এতে হুমকিতে রয়েছে গ্যাস পাইপ লাইন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, মেসার্স মণ্ডল বাড়ি বালুর ঘাট নাম দিয়ে সরাতৈল বিয়ারামারুয়া ও কুর্শাবেনুর ধলেশ্বরী নদীর চর দীর্ঘদিন যাবত কেটে বিক্রি করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন সেটি বন্ধে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে বালু খেকোরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বেকু দিয়ে চর কেটে বিক্রি করছে। তবে এর আগে জেগে উঠা ওই চরে স্থানীয়রা বিভিন্ন ধরনের সবজিসহ কলার আবাদ শুরু করেছে। সেই অবাদ করা ফসল নষ্ট করে জমির মাটি কাটা হচ্ছে। ওই বালু ব্যবসায়িরা সরকার দলীয় লোকজন হওয়ায় তাদের ভয়ে কৃষকসহ মুখ খুলতে সাহস পান না স্থানীয়রা। করোনাভাইরাসের কারণে দেশে পণ্যবাহী ব্যতিত সব যানবাহন বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। এরপরও এ ব্যবসায়ীদের ছত্রছায়ায় বালুবাহী ট্রাকগুলো মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে।

ভুক্তভোগী সরাতৈল গ্রামের মৃত আবদুল মজিদের স্ত্রী হাসনা বেওয়া বলেন, জোরপূর্বক প্রভাবশালীরা বাড়ির উপর দিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য রাস্তা বানিয়েছে। এতে ট্রাকের শব্দে এবং ধুলার কারণে রাতে ঘুম আসে না। আমার একটি মাত্র ছেলে নাতি নিয়ে বাধ্য হয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। থানায় অভিযোগ দেয়ার পরও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ইমরান নামের আরেকজন বলেন, বিগত ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এলাকাবাসী চলাচলের জন্য মহাসড়ক পর্যন্ত মাটির রাস্তা তৈরি করেছিল। কিন্তু অবৈধভাবে বালু খেকোরা প্রভাব খাটিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে জেগে উঠা চর কেটে বিক্রি করছে। অথচ এই মাটির রাস্তার নিচ দিয়ে উত্তরবঙ্গে গ্যাস সরবরাহের জন্য গ্যাস লাইনের পাইপ রয়েছে।

মেসার্স মণ্ডল বাড়ি বালুর ঘাটের মালিক জহুরুল মণ্ডল বলেন, স্থানীয় এমপি, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজনকে অবহিত করেই ঘাটটি চালাচ্ছেন তারা। সবাই ঘাট থেকে নিয়মিত মাসোহারাও পাচ্ছেন। এছাড়াও তাদের মৌখিক অনুমতি নিয়েই ধলেশ্বরীর চর কেটে বিক্রি করছি। আপনারা সংবাদ লিখে কি আর করবেন।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি কাজী আইয়ুবুর রহমান বলেন, থানা সংলগ্ন হলেও ঘাট নিয়ে আমাদের কোন কাজ নেই। আমরা শুধু মহাসড়ক দেখাশুনা করি। ঘাট নিয়ে ভাবার সময় নেই।

কালিহাতী থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, ঘাট মালিকরা যে অভিযোগ করেছে সেটা মিথ্যা। ঘাট পরিচালনার বিষয়টি আমাদের জানা নেই।

বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বরত বিবিএ’র সহকারী প্রকৌশলী এসানুল কবির পাভেল বলেন, নদীর বালু উত্তোলনের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব তাদের নয়। এক্ষেত্রে অনুমতি দেয়ার বিষয়টিও তাদের নয়। যদি কেউ নদী থেকে বালু উত্তোলন করে থাকেন তাহলে সেটি দেখবেন উপজেলা প্রশাসন।

অবৈধ এ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আরা নীপা।

বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়ার কথা অস্বীকার করে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী বলেন, সুবিধাবাদীরা এখন তার নাম হাটবাজারে বিক্রি করা শুরু করেছে। এ কারণে বালু ব্যবসায়ীরা সুবিধা আদায়ের জন্য তার অনুমতি দেয়ার কথা বলছেন। তবে এ ধরনের কোন কাজের জন্য জেলা বা উপজেলা প্রশাসনকে সুপারিশ করেননি বলেও জানান তিনি।

image

টাঙ্গাইল : বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানাসংলগ্ন সরাতৈল, বিয়ারামারুয়া ও কুর্শাবেনুর ধলেশ্বীর নদীর চর অবৈধভাবে কেটে ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে -সংবাদ

আরও খবর
ফিরছে স্বরূপে
বিমান চলাচল শুরু
মালিকদের স্বার্থে বাসভাড়া বাড়ানো অমানবিকতা ফখরুল
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ৭ নির্দেশনা
খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে কৃষিমন্ত্রী
ভোগান্তি নিরসনে নাগরিক পর্যবেক্ষণ জোরদারের দাবি
করোনাজয়ী শতাধিক পুলিশ সদস্যকে সংবর্ধনা
করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ সংখ্যা বরিশালে
২২ কোটি ৬৯ লাখ টাকার চোরাচালান ও মাদক জব্দ
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের করোনা টেস্ট করানোর নির্দেশ
চট্টগ্রামে করোনা ইউনিটের আয়ার মৃত্যু
করোনা আক্রান্ত হয়ে ঢাবি শিক্ষকের মৃত্যু
ধর্ষণের শিকার এক সন্তানের জননী গ্রেফতার ৩

মঙ্গলবার, ০২ জুন ২০২০ , ১৯ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ৯ শাওয়াল ১৪৪১

টাঙ্গাইলে

ধলেশ্বরীতে জেগে ওঠা চর কেটে বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা

জেলা বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

image

টাঙ্গাইল : বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানাসংলগ্ন সরাতৈল, বিয়ারামারুয়া ও কুর্শাবেনুর ধলেশ্বীর নদীর চর অবৈধভাবে কেটে ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে -সংবাদ

দেশে যখন করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে প্রশাসন ব্যতিব্যস্ত তখন এমপির নাম ভাঙিয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জেগে উঠা ধলেশ্বরী নদীর চর কেটে বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। থানা ঘাট হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব থানা সংলগ্ন সরাতৈল, বিয়ারামারুয়া ও কুর্শাবেনুর ধলেশ্বরী নদীর চর অবৈধভাবে কেটে বিক্রি করছে তারা। তবে বালু ব্যবসায়ীদের দাবি, নদীতে জেগে উঠা চর কেটে বিক্রি করা হচ্ছে এমপির অনুমতি আর প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সরাতৈল গ্রামের প্রভাবশালী জুহুরুল মণ্ডল, আনোয়ার মণ্ডল ও চান মিয়া ধলেশ্বরী নদীতে জেগে উঠা চর বেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে কেটে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করছে। গ্রামের অসহায় মানুষের জমি জোরপূর্বক নিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য রাস্তা বানিয়েছে। দিন-রাত শত শত ট্রাকযোগে চর কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় উত্তরবঙ্গে যাওয়া গ্যাস লাইন পাইপের ওপর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে ট্রাক চলাচল করছে। এতে হুমকিতে রয়েছে গ্যাস পাইপ লাইন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, মেসার্স মণ্ডল বাড়ি বালুর ঘাট নাম দিয়ে সরাতৈল বিয়ারামারুয়া ও কুর্শাবেনুর ধলেশ্বরী নদীর চর দীর্ঘদিন যাবত কেটে বিক্রি করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন সেটি বন্ধে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে বালু খেকোরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বেকু দিয়ে চর কেটে বিক্রি করছে। তবে এর আগে জেগে উঠা ওই চরে স্থানীয়রা বিভিন্ন ধরনের সবজিসহ কলার আবাদ শুরু করেছে। সেই অবাদ করা ফসল নষ্ট করে জমির মাটি কাটা হচ্ছে। ওই বালু ব্যবসায়িরা সরকার দলীয় লোকজন হওয়ায় তাদের ভয়ে কৃষকসহ মুখ খুলতে সাহস পান না স্থানীয়রা। করোনাভাইরাসের কারণে দেশে পণ্যবাহী ব্যতিত সব যানবাহন বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। এরপরও এ ব্যবসায়ীদের ছত্রছায়ায় বালুবাহী ট্রাকগুলো মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে।

ভুক্তভোগী সরাতৈল গ্রামের মৃত আবদুল মজিদের স্ত্রী হাসনা বেওয়া বলেন, জোরপূর্বক প্রভাবশালীরা বাড়ির উপর দিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য রাস্তা বানিয়েছে। এতে ট্রাকের শব্দে এবং ধুলার কারণে রাতে ঘুম আসে না। আমার একটি মাত্র ছেলে নাতি নিয়ে বাধ্য হয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। থানায় অভিযোগ দেয়ার পরও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ইমরান নামের আরেকজন বলেন, বিগত ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এলাকাবাসী চলাচলের জন্য মহাসড়ক পর্যন্ত মাটির রাস্তা তৈরি করেছিল। কিন্তু অবৈধভাবে বালু খেকোরা প্রভাব খাটিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে জেগে উঠা চর কেটে বিক্রি করছে। অথচ এই মাটির রাস্তার নিচ দিয়ে উত্তরবঙ্গে গ্যাস সরবরাহের জন্য গ্যাস লাইনের পাইপ রয়েছে।

মেসার্স মণ্ডল বাড়ি বালুর ঘাটের মালিক জহুরুল মণ্ডল বলেন, স্থানীয় এমপি, পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজনকে অবহিত করেই ঘাটটি চালাচ্ছেন তারা। সবাই ঘাট থেকে নিয়মিত মাসোহারাও পাচ্ছেন। এছাড়াও তাদের মৌখিক অনুমতি নিয়েই ধলেশ্বরীর চর কেটে বিক্রি করছি। আপনারা সংবাদ লিখে কি আর করবেন।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি কাজী আইয়ুবুর রহমান বলেন, থানা সংলগ্ন হলেও ঘাট নিয়ে আমাদের কোন কাজ নেই। আমরা শুধু মহাসড়ক দেখাশুনা করি। ঘাট নিয়ে ভাবার সময় নেই।

কালিহাতী থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, ঘাট মালিকরা যে অভিযোগ করেছে সেটা মিথ্যা। ঘাট পরিচালনার বিষয়টি আমাদের জানা নেই।

বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বরত বিবিএ’র সহকারী প্রকৌশলী এসানুল কবির পাভেল বলেন, নদীর বালু উত্তোলনের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব তাদের নয়। এক্ষেত্রে অনুমতি দেয়ার বিষয়টিও তাদের নয়। যদি কেউ নদী থেকে বালু উত্তোলন করে থাকেন তাহলে সেটি দেখবেন উপজেলা প্রশাসন।

অবৈধ এ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আরা নীপা।

বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়ার কথা অস্বীকার করে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী বলেন, সুবিধাবাদীরা এখন তার নাম হাটবাজারে বিক্রি করা শুরু করেছে। এ কারণে বালু ব্যবসায়ীরা সুবিধা আদায়ের জন্য তার অনুমতি দেয়ার কথা বলছেন। তবে এ ধরনের কোন কাজের জন্য জেলা বা উপজেলা প্রশাসনকে সুপারিশ করেননি বলেও জানান তিনি।