বিচার ব্যবস্থায় নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থে নতুন আইন চাই

সিরাজ প্রামাণিক

ফাতেমা খাতুন (ছদ্মনাম)। বিয়ের পর ফাতেমার আপত্তি সত্ত্বেও নেশাগ্রস্ত স্বামী অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ভিডিও ধারণ করে। এক পর্যায়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ফাতেমা তার স্বামীকে তালাক প্রদান করে নতুন করে পড়াশুনায় মনোযোগী হন। নেশাখোর স্বামী অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ধারণকৃত ভিডিও ফাতেমার কলেজ গেটের কম্পিউটারের মাধ্যমে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। ফাতেমা বাধ্য হয়ে সম্ভ্রম রক্ষায় থানায় এজাহার দায়ের করেন। পরে মামলাটি সেশন কোর্টে বিচার হয়। মামলার তিনটি বিচার্য বিষয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮(২) ও (৩) ধারায় চার বছর সশ্রম কারাদ- ও ২৫ হাজার টাকা করে শাস্তি প্রদান করেন আদালত। এ আইনের অধীনে মামলা বিচার করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, তদন্ত কর্মকর্তা ও বিচারককেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। কারণ এ মামলার সত্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিজ্ঞ আইনজীবী, মাননীয় আদালতকে একবারের জন্য হলেও ভিডিওটি অবলোকন করতে হয়েছে, যা তাদের জন্য ছিল রীতিমতো বিব্রতকর পরিস্থিতি।

এভাবে দেনমোহর মামলা থেকে শুরু করে ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফি অথবা যৌন হয়রানিতেও নারীকে সম্ভ্রম হারিয়ে বিচার চাইতে এসে কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হতে হয়। প্রথমে শারীরিকভাবে, এরপর মেডিকেল রিপোর্ট তৈরিতে, তদন্তের সময়, চার্জশিট তৈরিতে, শুনানির সময়, জবানবন্দিতে, জেরার সময় ইত্যাদি। নারীর এই বারবার ধর্ষণের শিকার হওয়ার একমাত্র কারণ প্রায় সব কাজেই পুরুষের উপস্থিতি। অথচ আমাদের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে নারী ও পুরুষের অধিকার চর্চার বিষয়ে সমতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আবার অনুচ্ছেদ ১৯(৩) বলেছে, জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। অন্যদিকে অনুচ্ছেদ ২৮(২) নিশ্চয়তা দিয়েছে যে রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে।

পাশাপাশি আমাদের সংবিধান কেবল সমতার নিশ্চয়তাই বিধান করেনি, ন্যায়পরায়ণতার নিশ্চয়তাও দিয়েছে বেশ কিছু অনুচ্ছেদে। তার মধ্যে অনুচ্ছেদ ২৮(৪) এবং ২৯(৩) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অনুচ্ছেদ ২৮(৪) নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, সরকার নারী ও শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে পারবে, যেখানে ২৮ অনুচ্ছেদ বাধা হবে না। অন্যদিকে অনুচ্ছেদ ২৯(৩) বলেছে, যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেরকম যে কোনো শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা থেকে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না। সুতরাং একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ন্যায়পরায়ণতার বিষয়টিকে অন্যান্য বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে পুরুষদের জন্য বিশেষ কোনো আইন নেই, কেবল নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্যই রয়েছে আইন। যেমন- বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-১৯২৯ (সংশোধিত ২০১৭), যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ (সংশোধিত ২০১৮), নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩), এসিড অপরাধ দমন আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১। নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থে এত আইন তৈরি হলেও বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে রীতিমতো ব্যর্থ হচ্ছে। বিচার চাইতে এসে নারীকে প্রতিনিয়ত চোখের জল ফেলতে হচ্ছে, অপমাণিত হতে হচ্ছে প্রতি পদে পদে।

ওহফরধহ ঊারফবহপব অপঃ, ১৮৭২ এর নতুন সংযোজিত ধারা ৫৩ এর বিধান মতে, যৌন হয়রানি, বিবস্ত্র করা বা চেষ্টা করার জন্য বল প্রয়োগ, গোপন যৌন ক্রিয়া অবলোকন, যোগাযোগের গোপন চেষ্টা ও শান্তি নষ্ট, যৌন আঘাত, যৌন আঘাত করে হত্যা বা বোধশক্তিহীন করা, সেপারেশন সময়ে স্ত্রীকে যৌন আঘাত, বিশ্বস্ত ব্যক্তি, সরকারি কর্মচারী, জেল বা রিমান্ড হোমে যৌন সঙ্গম, একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক একত্রে যৌন আঘাত, কৃত অপরাধের পুনরাবৃত্তি বা এগুলোর চেষ্টা সংক্রান্ত মামলায় ভিকটিমের সম্মতি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে, সেক্ষত্রে ভিকটিমের চরিত্র বা অতীত যৌন অভিজ্ঞতা বিষয়ে কোন সাক্ষ্য প্রাসঙ্গিক হবে না। ধারা ১৪৬-তে নতুন সংযোজিত অনুশর্তের বিধান মতে, ভিকটিমের সাধারণ অনৈতিক চরিত্র বিষয়ে বা অতীত যৌন অভিজ্ঞতা নিয়ে সাক্ষ্য দেয়া এবং ভিকটিমকে জেরা করা যাবে না।

অথচ আমাদের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারাই যেখানে বিচারপ্রার্থী নারীকে দুশ্চরিত্রা হিসেবে উপস্থাপনের লাগামহীন সনদ দিয়ে দিচ্ছে, সেখানে ওই নারীকে অপমানিত হওয়া থেকে আদালত কোনভাবেই রক্ষা করতে পারছে না। এই ধারাটি ব্যাপকভাবে নারী অধিকার সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোকে প্রভাবিত করে চলেছে। এমনকি অপরাধী তার অপরাধ স্বীকার করার পর এই ধারাটির কাধে ভর করে বেকসুর খালাস পাওয়ার উদাহরণও রয়েছে যথেষ্ট। এ ধারায় বলা আছে যে, কোনো ব্যক্তি যখন ধর্ষণ বা বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারিণী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা। এ সুযোগে ধর্ষণের মামলায় জেরা করার সময় ধর্ষণের শিকার নারীকে অনেক সময় অনভিপ্রেত, অনাকাক্সিক্ষত, অপ্রাসঙ্গিক, রুচিহীন ও আপত্তিকর প্রশ্নের মাধ্যমে চরিত্র হনন করা হয়। এ কারণে ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবার মামলা করতে নিরুৎসাহিত হন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন।

পৃথিবীতে এমন কোন সভ্য দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে আইনের বিকাশ হয়নি। সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে ‘আইন’ ধারণাটিরও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তিত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে আইন তার কার্যকারিতা হারায়। প্রয়োজন হয় সে আইনকে সময় উপযোগী করে তোলা। গঠনমূলক সমালোচনার মধ্যেই আইন তার অস্তিত্বের সন্ধান পায়। যাই হোক, আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮(৪) অনুযায়ী নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীবান্ধব বিচার ব্যবস্থা বা আদালত প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

[লেখক : আইনজীবী]

seraj.pramanik@gmail.com

মঙ্গলবার, ০২ জুন ২০২০ , ১৯ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ৯ শাওয়াল ১৪৪১

বিচার ব্যবস্থায় নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থে নতুন আইন চাই

সিরাজ প্রামাণিক

ফাতেমা খাতুন (ছদ্মনাম)। বিয়ের পর ফাতেমার আপত্তি সত্ত্বেও নেশাগ্রস্ত স্বামী অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ভিডিও ধারণ করে। এক পর্যায়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ফাতেমা তার স্বামীকে তালাক প্রদান করে নতুন করে পড়াশুনায় মনোযোগী হন। নেশাখোর স্বামী অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ধারণকৃত ভিডিও ফাতেমার কলেজ গেটের কম্পিউটারের মাধ্যমে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। ফাতেমা বাধ্য হয়ে সম্ভ্রম রক্ষায় থানায় এজাহার দায়ের করেন। পরে মামলাটি সেশন কোর্টে বিচার হয়। মামলার তিনটি বিচার্য বিষয় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এর ৮(২) ও (৩) ধারায় চার বছর সশ্রম কারাদ- ও ২৫ হাজার টাকা করে শাস্তি প্রদান করেন আদালত। এ আইনের অধীনে মামলা বিচার করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, তদন্ত কর্মকর্তা ও বিচারককেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। কারণ এ মামলার সত্যতা প্রমাণ করতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিজ্ঞ আইনজীবী, মাননীয় আদালতকে একবারের জন্য হলেও ভিডিওটি অবলোকন করতে হয়েছে, যা তাদের জন্য ছিল রীতিমতো বিব্রতকর পরিস্থিতি।

এভাবে দেনমোহর মামলা থেকে শুরু করে ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফি অথবা যৌন হয়রানিতেও নারীকে সম্ভ্রম হারিয়ে বিচার চাইতে এসে কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হতে হয়। প্রথমে শারীরিকভাবে, এরপর মেডিকেল রিপোর্ট তৈরিতে, তদন্তের সময়, চার্জশিট তৈরিতে, শুনানির সময়, জবানবন্দিতে, জেরার সময় ইত্যাদি। নারীর এই বারবার ধর্ষণের শিকার হওয়ার একমাত্র কারণ প্রায় সব কাজেই পুরুষের উপস্থিতি। অথচ আমাদের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে নারী ও পুরুষের অধিকার চর্চার বিষয়ে সমতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। আবার অনুচ্ছেদ ১৯(৩) বলেছে, জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে। অন্যদিকে অনুচ্ছেদ ২৮(২) নিশ্চয়তা দিয়েছে যে রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে।

পাশাপাশি আমাদের সংবিধান কেবল সমতার নিশ্চয়তাই বিধান করেনি, ন্যায়পরায়ণতার নিশ্চয়তাও দিয়েছে বেশ কিছু অনুচ্ছেদে। তার মধ্যে অনুচ্ছেদ ২৮(৪) এবং ২৯(৩) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অনুচ্ছেদ ২৮(৪) নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, সরকার নারী ও শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে পারবে, যেখানে ২৮ অনুচ্ছেদ বাধা হবে না। অন্যদিকে অনুচ্ছেদ ২৯(৩) বলেছে, যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেরকম যে কোনো শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা থেকে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না। সুতরাং একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ন্যায়পরায়ণতার বিষয়টিকে অন্যান্য বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে পুরুষদের জন্য বিশেষ কোনো আইন নেই, কেবল নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্যই রয়েছে আইন। যেমন- বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-১৯২৯ (সংশোধিত ২০১৭), যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ (সংশোধিত ২০১৮), নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩), এসিড অপরাধ দমন আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১। নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থে এত আইন তৈরি হলেও বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে রীতিমতো ব্যর্থ হচ্ছে। বিচার চাইতে এসে নারীকে প্রতিনিয়ত চোখের জল ফেলতে হচ্ছে, অপমাণিত হতে হচ্ছে প্রতি পদে পদে।

ওহফরধহ ঊারফবহপব অপঃ, ১৮৭২ এর নতুন সংযোজিত ধারা ৫৩ এর বিধান মতে, যৌন হয়রানি, বিবস্ত্র করা বা চেষ্টা করার জন্য বল প্রয়োগ, গোপন যৌন ক্রিয়া অবলোকন, যোগাযোগের গোপন চেষ্টা ও শান্তি নষ্ট, যৌন আঘাত, যৌন আঘাত করে হত্যা বা বোধশক্তিহীন করা, সেপারেশন সময়ে স্ত্রীকে যৌন আঘাত, বিশ্বস্ত ব্যক্তি, সরকারি কর্মচারী, জেল বা রিমান্ড হোমে যৌন সঙ্গম, একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক একত্রে যৌন আঘাত, কৃত অপরাধের পুনরাবৃত্তি বা এগুলোর চেষ্টা সংক্রান্ত মামলায় ভিকটিমের সম্মতি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে, সেক্ষত্রে ভিকটিমের চরিত্র বা অতীত যৌন অভিজ্ঞতা বিষয়ে কোন সাক্ষ্য প্রাসঙ্গিক হবে না। ধারা ১৪৬-তে নতুন সংযোজিত অনুশর্তের বিধান মতে, ভিকটিমের সাধারণ অনৈতিক চরিত্র বিষয়ে বা অতীত যৌন অভিজ্ঞতা নিয়ে সাক্ষ্য দেয়া এবং ভিকটিমকে জেরা করা যাবে না।

অথচ আমাদের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারাই যেখানে বিচারপ্রার্থী নারীকে দুশ্চরিত্রা হিসেবে উপস্থাপনের লাগামহীন সনদ দিয়ে দিচ্ছে, সেখানে ওই নারীকে অপমানিত হওয়া থেকে আদালত কোনভাবেই রক্ষা করতে পারছে না। এই ধারাটি ব্যাপকভাবে নারী অধিকার সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোকে প্রভাবিত করে চলেছে। এমনকি অপরাধী তার অপরাধ স্বীকার করার পর এই ধারাটির কাধে ভর করে বেকসুর খালাস পাওয়ার উদাহরণও রয়েছে যথেষ্ট। এ ধারায় বলা আছে যে, কোনো ব্যক্তি যখন ধর্ষণ বা বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারিণী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা। এ সুযোগে ধর্ষণের মামলায় জেরা করার সময় ধর্ষণের শিকার নারীকে অনেক সময় অনভিপ্রেত, অনাকাক্সিক্ষত, অপ্রাসঙ্গিক, রুচিহীন ও আপত্তিকর প্রশ্নের মাধ্যমে চরিত্র হনন করা হয়। এ কারণে ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবার মামলা করতে নিরুৎসাহিত হন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন।

পৃথিবীতে এমন কোন সভ্য দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে আইনের বিকাশ হয়নি। সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে ‘আইন’ ধারণাটিরও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তিত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে আইন তার কার্যকারিতা হারায়। প্রয়োজন হয় সে আইনকে সময় উপযোগী করে তোলা। গঠনমূলক সমালোচনার মধ্যেই আইন তার অস্তিত্বের সন্ধান পায়। যাই হোক, আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮(৪) অনুযায়ী নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীবান্ধব বিচার ব্যবস্থা বা আদালত প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

[লেখক : আইনজীবী]

seraj.pramanik@gmail.com