ফুলের ঝাড়ু, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান আনা হচ্ছে রাজধানীতে। অভিনব কৌশলে এসব চালান মাদক ব্যবসায়ীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা মাদক কারবারিদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। করোনা সংক্রমণের মধ্যে মাদকের চাহিদা থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে এমন কৌশল নিয়েছে ইয়াবা সরবরাহের ক্ষেত্রে। শুধু ফুলের ঝুড়ি বা কাভার্ড ভ্যানেই নয়, যাত্রীবাহী পরিবহন, পন্যবাহী ট্রাক, মাছের ঝুড়ি, কাঁচা তরকারিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের চালানের সঙ্গে ইয়াবা আনা হচ্ছে। রাজধানীর ধানমন্ডি এবং কারওয়ান বাজারে পৃথক অভিযান চালিয়ে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব -২। এ সময় মিজানুর রহমান (২৫) এবং মো. জাকির হোসেন নামে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত মাদক পরিবহনে নিত্য নতুন ও অভিনব কৌশল অবলম্বন করে আসছে। মায়ানমার থেকে নৌপথে আনা ইয়াবা ট্যাবলেটের চালানগুলো কক্সবাজার থেকে সড়ক, রেল ও বিমানপথে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। র্যাব এসব মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
র্যাব জানায়, র্যাব-২ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে কক্সবাজার থেকে ফুলের ঝাড়ুর মধ্যে অভিনব পন্থায় লুকিয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা একটি সাইকেলে করে নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে ধানমন্ডি এলাকায় আসিতেছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর ধানমন্ডি থানার ১৩ এ রোডের ২৩/ এ নম্বর বাসার সামনে অবস্থান নেয় র্যাব। এমন সময় মাদক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বাইসাইকেলে করে র্যাবের তল্লাশি চৌকি পার হওয়ার চেষ্টা করলে তার গতিরোধ করা হয়। সাইকেলের পিছনে রাখা ফুলের ঝাড়ুর মধ্যে কৌশলে লুকিয়ে রাখা ১৫ হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়। ফুলের ঝাড়ুর মধ্যে ইয়াবা পাচারের অভিযোগে মিজানুর রহমানকে আটক করা হয়। জব্দ করা ইয়াবার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা হবে।
গ্রেফতারকৃত মিজান জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে দীর্ঘদিন যাবৎ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, টেকনাফ সীমান্ত এলাকা হতে মাদকদ্রব্য (ইয়াবা) ক্রয় করে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের অন্তরালে নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য (ইয়াবা ট্যাবলেট) সুকৌশলে ঢাকায় নিয়ে এসে সরবরাহ ও বিক্রয় করে আসছিল। করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে তরুণ ও যুবকদের কাছে ইয়াবার ব্যাপক চাহিদা থাকায় চড়া দামে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তারা পরস্পর যোগসাজসে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিত্যনতুন কৌশল ব্যবহার করে (নিষিদ্ধ মাদক) ইয়াবা ট্যাবলেট রাজধানীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ ও বিক্রয় করে আসছে এবং ইতিপূর্বেও বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান সফলতার সহিত সরবরাহ করেছে বলে জানায়।
গ্রেফতার মিজানুর রহমান কক্সবাজারের রামু থানার শৌলভীরকাটা এলাকার আবদুল আলমের ছেলে। সে ভাটারা এলাকায় থাকে।
গ্রেফতার হওয়া জাকির জানায়, ইয়াবার চালানটির মুল মালিক রায়হান নামের এক ব্যক্তি। যে গত ৩ মার্চ র্যাবের হাতে ধরা পড়েছিল পাকস্থলীতে করে বিশেষ কায়দায় ২০ হাজার ইয়াবা পাচারের সময়। ওই চালানটি রায়হান গাজীপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য যাত্রীবাহী বাসে করে আসার সময় ধরা পড়ে। জাকির জানায়, কাভার্ড ভ্যানটির মালিক রায়হান পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। ঢাকায় পাচারের জন্য কাভার্ড ভ্যানের দরজায় ঝালাই করে বিশেষ কায়দায় ইয়াবাগুলো আনা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে স্যাভলন সাবানের প্যাকেটে ইয়াবাগুলো প্যাকেট করে রাখা হয়েছিল। ধৃত আসামি জাকির জানায়, রোহিঙ্গাদের জন্য বিনামূল্যে যেসব সাবান সরবরাহ করা হয় তা হাত ঘুরে কালো বাজারে চলে আসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য কালোবাজারে আসা সেসব সাবানের প্যাকেট মাদক ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে তাতে বিশেষ কায়দায় ইয়াবার প্যাকেট ভরে গাড়ির বডির ভিতর ঢুকিয়ে ঝালাই করে নিয়ে আসে।
বুধবার, ০৩ জুন ২০২০ , ২০ জৈষ্ঠ ১৪২৭, ১০ শাওয়াল ১৪৪১
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
ফুলের ঝাড়ু, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান আনা হচ্ছে রাজধানীতে। অভিনব কৌশলে এসব চালান মাদক ব্যবসায়ীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরা মাদক কারবারিদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। করোনা সংক্রমণের মধ্যে মাদকের চাহিদা থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে এমন কৌশল নিয়েছে ইয়াবা সরবরাহের ক্ষেত্রে। শুধু ফুলের ঝুড়ি বা কাভার্ড ভ্যানেই নয়, যাত্রীবাহী পরিবহন, পন্যবাহী ট্রাক, মাছের ঝুড়ি, কাঁচা তরকারিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের চালানের সঙ্গে ইয়াবা আনা হচ্ছে। রাজধানীর ধানমন্ডি এবং কারওয়ান বাজারে পৃথক অভিযান চালিয়ে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব -২। এ সময় মিজানুর রহমান (২৫) এবং মো. জাকির হোসেন নামে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত মাদক পরিবহনে নিত্য নতুন ও অভিনব কৌশল অবলম্বন করে আসছে। মায়ানমার থেকে নৌপথে আনা ইয়াবা ট্যাবলেটের চালানগুলো কক্সবাজার থেকে সড়ক, রেল ও বিমানপথে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। র্যাব এসব মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
র্যাব জানায়, র্যাব-২ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে কক্সবাজার থেকে ফুলের ঝাড়ুর মধ্যে অভিনব পন্থায় লুকিয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা একটি সাইকেলে করে নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে ধানমন্ডি এলাকায় আসিতেছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর ধানমন্ডি থানার ১৩ এ রোডের ২৩/ এ নম্বর বাসার সামনে অবস্থান নেয় র্যাব। এমন সময় মাদক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বাইসাইকেলে করে র্যাবের তল্লাশি চৌকি পার হওয়ার চেষ্টা করলে তার গতিরোধ করা হয়। সাইকেলের পিছনে রাখা ফুলের ঝাড়ুর মধ্যে কৌশলে লুকিয়ে রাখা ১৫ হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়। ফুলের ঝাড়ুর মধ্যে ইয়াবা পাচারের অভিযোগে মিজানুর রহমানকে আটক করা হয়। জব্দ করা ইয়াবার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা হবে।
গ্রেফতারকৃত মিজান জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে দীর্ঘদিন যাবৎ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, টেকনাফ সীমান্ত এলাকা হতে মাদকদ্রব্য (ইয়াবা) ক্রয় করে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের অন্তরালে নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য (ইয়াবা ট্যাবলেট) সুকৌশলে ঢাকায় নিয়ে এসে সরবরাহ ও বিক্রয় করে আসছিল। করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতিতে তরুণ ও যুবকদের কাছে ইয়াবার ব্যাপক চাহিদা থাকায় চড়া দামে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তারা পরস্পর যোগসাজসে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিত্যনতুন কৌশল ব্যবহার করে (নিষিদ্ধ মাদক) ইয়াবা ট্যাবলেট রাজধানীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ ও বিক্রয় করে আসছে এবং ইতিপূর্বেও বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান সফলতার সহিত সরবরাহ করেছে বলে জানায়।
গ্রেফতার মিজানুর রহমান কক্সবাজারের রামু থানার শৌলভীরকাটা এলাকার আবদুল আলমের ছেলে। সে ভাটারা এলাকায় থাকে।
গ্রেফতার হওয়া জাকির জানায়, ইয়াবার চালানটির মুল মালিক রায়হান নামের এক ব্যক্তি। যে গত ৩ মার্চ র্যাবের হাতে ধরা পড়েছিল পাকস্থলীতে করে বিশেষ কায়দায় ২০ হাজার ইয়াবা পাচারের সময়। ওই চালানটি রায়হান গাজীপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য যাত্রীবাহী বাসে করে আসার সময় ধরা পড়ে। জাকির জানায়, কাভার্ড ভ্যানটির মালিক রায়হান পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। ঢাকায় পাচারের জন্য কাভার্ড ভ্যানের দরজায় ঝালাই করে বিশেষ কায়দায় ইয়াবাগুলো আনা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে স্যাভলন সাবানের প্যাকেটে ইয়াবাগুলো প্যাকেট করে রাখা হয়েছিল। ধৃত আসামি জাকির জানায়, রোহিঙ্গাদের জন্য বিনামূল্যে যেসব সাবান সরবরাহ করা হয় তা হাত ঘুরে কালো বাজারে চলে আসে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য কালোবাজারে আসা সেসব সাবানের প্যাকেট মাদক ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে তাতে বিশেষ কায়দায় ইয়াবার প্যাকেট ভরে গাড়ির বডির ভিতর ঢুকিয়ে ঝালাই করে নিয়ে আসে।